somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা-অকবিতাঃ ছন্দহীন কবিতা-ছড়া ও গান!

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছন্দ, মাত্রা, তাল-লয় না থাকলে কিসের কবিতা? মুক্তছন্দের নামে অন্ত্যমিলবর্জিত কবিতাও যে ছন্দহীন কবিতা নয়–তা বোঝেনা আজকালকার অনেক তথাকথিত কবি।

আসলেই আবৃত্তির অযোগ্য কবিতা কখনোই ভালোকবিতা হতে পারেনা। ভালো কবি মানেই ভালো গীতিকার- এটাও সত্য। এখানে আরেকটি কথা বলে রাখি, যারা যতোবেশি ছন্দে পণ্ডিত, তারা ততোবেশি ভালো ছড়াকার। আর পারদর্শী ছড়াকাররাই মূলতঃ মানোত্তীর্ণ ছড়া-কবিতা ও গানলেখায় পটু হয়ে থাকে। প্রকৃত মানোত্তীর্ণ কবিতার আবৃত্তিও সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী হতে বাধ্য; আবার ছন্দহীন অকবিতার আবৃত্তি সুন্দর হতেই পারেনা। জোর করে আবৃত্তির চেষ্টা যতোই করা হোকনা কেনো?

ছন্দবিহীন কবিতা অনেক আগেও ছিল-একজনের এমন কথা শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম! আসলে ছন্দ কী, আগে আমাদের তা বুঝতে হবে? তার কথায় মনে হলো–ছন্দসম্পর্কে তার সঠিক ধারণা নেই। ছন্দছাড়া কবিতা-ছড়া-গান হয়না, হতেই পারেনা; এটা অনেকেই বুঝতে চাননা।

অনেকেই হয়তো অন্ত্যমিলকেই ছন্দ বলেন। কিন্তু কবি মধুসুদন দত্ত বলেছেন–শব্দে শব্দে বিয়ে (অন্ত্যমিল) হলেই কিন্তু কবিতা হয়না। এটাও সঠিক কথা। শুধু অন্ত্যমিল থাকলে তাকে বড়জোর পদ্য বলা যেতে পারে।

কবিতার ভাষা বা শব্দ ও বাক্য হতে হয় সহজ-সাবলীল। তবে কবিতায় কঠিন শব্দ থাকতেই পারে। কিন্তু তা হতে হয় ছান্দিক বা ঝংকৃত বা রিদমিক অথবা শ্রুতিমধুর শব্দ, যা কবিতার ছন্দসৃষ্টিতে সহায়ক হয়। যেমন- আধুনিক শব্দটা খুব শ্রুতিমধুর না হলেও এটি অন্ত্যমিলযুক্ত বা অন্ত্যমিবিহীন উভয় কবিতায় ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু আধুনিকতা শব্দটা আদৌ কবিতার জন্য উপযুক্ত নয়। এ জাতীয় শব্দকে কবিতা-ছড়া বা গানে অবশ্যই পরিহার করা দরকার। এজাতীয় শব্দ গদ্যের জন্য উপযুক্তমাত্র। নজরুল বা রবীঠাকুরসহ নামীদামী কবিদের কোনো ছন্দহীন কবিতা ছিলোনা। তবে গদ্যকবিতা বা মুক্তছন্দের কবিতা তাদের আছে, যা আবার ছন্দোবদ্ধতো বটেই।

আসলে ছন্দ জিনিসটা উপলদ্ধির বিষয়, দেখার জিনিস নয়। ছন্দের সাথে ভাষার ব্যাকরণেরও কোনো যোগ নেই। সুন্দর ও সাবলীল ধ্বনি, শব্দ এবং বাক্যের সাথে মাত্রা, তাল, লয়, উৎপ্রেক্ষা, রূপকতা ইত্যাদি মিলিয়ে গঠিত হয় ছন্দ। আর কবিতা-ছড়া-গান আবৃত্তি করলেই কানে অনুরণিত হতে থাকে একপ্রকার রিদম বা সুর যা হৃদয়কে ভাল্লাগায় নাচাতে থাকে–এটাই মূলতঃ ছন্দ। আবার ছন্দের আছে সুনির্দিষ্ট ও সুগঠিত একটা ব্যাকরণ বা নিয়ম।

একটা উদাহরণ দিলে ছন্দের ধারণা পরিষ্কার হবে-পিচঢালা মসৃণ রাস্তায় গাড়িচালাতে খুব আরামবোধ হয়, কোনো ঝাঁকুনি না থাকায় ঘুমও পায় যাত্রীর। এই যে আরামবোধ বা সুখানুভূতি-এটাই ছন্দ। এজন্যই গানের সুরে অনেকের ঘুম পায়। আবার এবড়োথেবড়ো, ভাঙ্গাচোরা বন্ধুর পথে গাড়ি চালিয়ে কি আপনি সেই সুখানুভূতি বা ছন্দ পাবেন? আপনি চরমভাবে বিরক্তিবোধ করবেন। এমনকি গাড়িতে ঘুমালেও সে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আপনি রেগে যাবেন অবশ্যই। ছন্দহীন কবিতাপাঠেও পাঠকের তেমন বিরক্তি আসেই।

আমরা ছন্দ না জেনেই অনেকেই কবিতা লিখতে গিয়ে অকবিতা লিখি, যা পাঠককে বিভ্রান্ত করে; কবিতাবিমুখ করে তোলে। এতে কবিতার দোষ নেই, দোষ হচ্ছে তথাকথিত কবির, যারা পত্রিকার কলামের আদলে স্রেফ কিছু বাক্যসাজিয়ে কবিতা লিখতে চায়। ফলে তা আর কবিতা হয়না যদিও দেখতে কবিতার মতো। অথবা বেশ দুর্বোধ্য শব্দসম্ভারে ভারী করে তোলে কবিতার শরীর, যা পড়তে ও বুঝতে চাইলে ডাকতে ইচ্ছে করে সেই কবিকেই।

আসলে ছড়া আর গানের ক্ষেত্রে কেউ কিন্তু ছন্দ বা ছন্দহীনতার প্রসঙ্গ কখনো আনেনা। সাক্ষর-নিরক্ষর সবাই যেনো জানেই যে, ছড়া ও গান বা সঙ্গীত ছন্দছাড়া হয়না। কিন্তু কবিতা শব্দটি এবং এর ইতিহাসের মধ্যেই ছন্দের বাধ্যবাধকতা এবং অপরিহার্যতা থাকলেও আমাদের পূর্বসূরি কিছু কবিই গদ্যছন্দ-গদ্যকবিতা বা মুক্তছন্দের আবিষ্কার করায় ঘটেছে এই বিভ্রাট।

যদিও তারাও কখনো বলেননি যে, গদ্যকবিতা হবে ছন্দহীন;তবুও আমাদের এই বিভ্রান্তির কারণে আজ কবিতার কোনো কদর নেই। অথচ একসময় আমরা দেখেছি হাটে-ঘাটে-বাজারে পয়ারছন্দে রচিত গেঁয়ো কবিদের কী হৃদয়গ্রাহী প্রেম বা লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনাসম্বলিত পদ্য? তারা তা ছাপিয়ে আবৃত্তি করেকরে বিক্রি করতো এবং তাদের ছন্দোবদ্ধ সেই কবিতার হৃদয়গ্রাহী আবৃত্তি শুনে আমরাও কিনে নিয়ে তা পড়তাম। এটা খুব বেশিদিনের কথা নয়, অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা। আর আজ সেই ছন্দের এবং কবিতার কী দুর্দিন! জানিনে কতদিন আর কবিতার ওপর চলবে এমন অন্যায়-অবিচার!!

আবার গদ্যকবিদের অনেকেরই বানানের দশা দেখে খুব হাসি পায় আমার। যারা ভাষা জানেনা, বাক্যগঠনে বেশ দুর্বল এমনকি শুদ্ধবানানসম্পর্কে উদাসীন, তারা কোন সাহসে কবিতা লিখতে আসে-এটা আমার বোধগম্য হয়না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×