somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেনা গল্প, অচেনা সমাপ্তি

২১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় রাত ১১.১৯ মিনিট, আমার মোবাইল ফোন ভেসে উঠে Calling……tonne ।অনেক দিন এই নাম্বার থেকে আমার ফোন কোন কল আসে না । প্রায় আড়াই বছর । কল টা ধরব কি ধরব না, এইটা নিয়ে দ্বিধা থাকলাম । কলটা আর ধরা হল না । একবার ভাবলাম কলব্যাক করি । কিন্তু শেষ বার যখন তন্বীকে ফোন দিই, তখন আমার সাথে সে যে ব্যবহার করে ছিল, তাতে আমার সাহস হয় না আবার ওকে ফোন দেই । যাই হোক অনেক সাহসে ভর করে, ফোন ব্যাক করলাম । আমাদের কথোপকথন ছিল এমনই (আমাদের সম্পর্ক তুমিতে ছিল, কিন্তু ওর সাথে এখন কথা হল আপনিতে, হয়ত দীর্ঘ বিরতির ফসল এই টা )
-কেমন আছেন ?
-আমি ভাল । আপনি ?
-আমি বেশী ভাল নেই ।
-কেন ? কি হয়েছে ?
-কিভাবে বলি কথাটা । আমি এই সাহায্য টার জন্য আপনাকে ছাড়া আর কারও কথা মনে আসল না ।
-দেখেন দ্বিধা করবেন না । আপনি এখন আমার কাছে আগের চেয়ে কোন অংশে কম না ।
- আমার খুব সমস্যা । আমার তিন হাজার টাকা দরকার । দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না । আমি আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দিব । যদি পারেন তাহলে জানাবেন, যদি না পারেন তাও জানাবেন । প্লিজ
- আচ্ছা, আমি ব্যবস্থা করব ।
তন্বী, এক সময়ের আমার হৃদয় রানি । একে পাওয়ার জন্য কি না করেছি । ওর এক টা ফোন কলের জন্য আমি সারা রাত জেগে থাকতাম । সারা রাত পার করে দিতাম ওর সাথে কথা বলতে বলতে । এখনও অনেক ভালবাসি ওকে । আমার প্রতিদিনের প্রত্যেক টা কথার সাথে একবার না একবার ও আসবে । তবে এখন আমার ভালবাসা অনেক নিয়ত্রিত । অনেক হিসাবি । ওর কথা মনে আসলেও মুখে বলি না । যাই হোক তন্বীর এই হাঠৎ ফোন কল নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম । ওর মত বিত্তবান পিতার কন্য বাংলাদেশে খুবি কম । আমি ওকে বলতাম, হুমায়ান আহমেদের রুপা । ওর মত মেয়ে “আমার মত নুন আনতে পান্তা ফুরায়” এই টাইপের ছেলের কাছে টাকা চাইবে, আমার কাছে এটা স্বপ্নের মত । বিশ্বাস হয় না আমার । ওর কি এমন সমস্যা, যার জন্য আমার কাছে দীর্ঘ দিন পর ফোন করার প্রয়োজন পরল । ও যে ভাবে আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে ছিল, তাতে ধরে নিয়ে ছিলাম যে, ও আর কখন আমার জীবনে ফিরে আসবে না । যাই হোক আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি ওকে হেল্প করব । যতটা পারি । তারপরও মনের মধ্য একটা আগ্রহ থেকে গেল, কি এমন বিপদ যে আমাকে ফোন দিতে বাধ্য হল । যাই হোক সকাল বেলা ঘুম থেকে টাকাটা ওকে বিকাশ করলাম । তারপর ওকে ফোন দিলাম । ওকে ফোন দিয়ে জানাতে পারলাম মূল কাহিনী টা । আমাদের খুবই পরিচিত কাহিনী । এমন গল্প গুলো খুব হরামেশা আমাদের ফেসবুক বা ব্লগ এর মাধ্যমে জানতে পারি । কিন্তু শেষ টা আমাদের পরিচিত গল্প গুলোর মত না । তাই আপনাদের কাছে শেয়ার না করে পারলাম না ।
তার আগে বলে রাখি তন্বী এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করল । ও একটা স্বনামধন্য কলেজে পড়ত । গল্প টা ওর কলেজের এক বান্ধবীকে নিয়ে । বান্ধবী কে নিয়ে মূল গল্প টা । ধরে নিই ওর বান্ধবীর নাম শিউলি । রাজশাহী থেকে ঢাকা শহরে পড়তে আসে। শিউলির বাবা আর্মিতে চাকরি করে, মা গৃহিণী । আর এক মাত্র বড় ভাই প্রবাসী । ঢাকা শহরে কাছের কোন আত্মীয় না থাকায়, শিউলির ঠিকানা হয় কলেজের হোস্টেলে । তো আর দশটা মেয়ের মত ফেসবুক আর মোবাইলের সহায়তায়, বেসরকারি ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া এক স্মার্ট ছেলের প্রেমে পড়ে । তাদের ভালবাসার উত্তাপ বিছানা পর্যন্ত পৌঁছায় । তাদের কোন এক সময়ের অসতর্কতার কারণে শিউলি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে । বোকা শিউলি ব্যপারটা বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলে । বুঝতে পারে যখন, তখন অনেক জল প্রবাহিত হয়ে গেছে । ভ্রুনের বয়স তখন তিন মাস । আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাকি মাত্র তিন দিন । ততদিনে স্মার্ট প্রেমিক তার বাসস্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে, মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ করে দেয় । ফলে ঢাকা শহরে শিউলি একা হয়ে পড়ে । তখন সে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে ???? এই সময় তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তার স্বল্প পরিচিত বান্ধবী তন্বী । কিন্তু শিউলির অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ভ্রুন নষ্ট করার সময় শেষ হয়ে যায় । এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যায় । এই অবস্থায় শিউলি গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য কলেজ হোস্টেল পরিবর্তন করে একটা প্রাইভেট হোস্টেলে রুম নেয় বিবাহিত এই পরিচয়ে । হোস্টেল থেকে পরীক্ষা দেয় শিউলি । কিন্তু তাদের ভুলের কারনে নিষ্পাপ শিশু টা কে হত্যা করতে রাজি হয় না শিউলি । তন্বী সহ ওর গুটি কয়েক বান্ধবী কোন ভাবে রাজি করাতে পারে না । এদিকে শিউলি নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি । নিজের ভুলের মাশুল নিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । কয়েক বার সুইসাইড করতে গিয়েও ফিরে আসে শিউলি । তার এক মাত্র কারন তার গর্ভের শিশু । তার যুক্তি ছিল একটায় , তার ভুলের কারনে কেন শিশুটিকে হত্যা করা হবে । কিন্তু যুক্তি দিয়ে তো আর পেট ভরে না, শিশুটিকে পৃথিবীতে আনতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে হবে । এর জন্য অনেক গুলো টাকা খরচ । এত টাকা বাসা থেকে আনতে গেলে প্রশ্ন উঁঠবে । আর তাই ওর সব বান্ধবী মিলে টাকা যোগাড় শুরু করেছে । আর এই টাকার জন্য তন্বী আমাকে ফোন দিয়েছিল।
প্রিয় পাঠক, গল্প টা আপনাদের কাছে অবাস্তব মনে হতে পারে । কিন্তু আসলে সত্য । শিউলির বাচ্চাটা ডেলিভারি হয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে । নতুন শিশুটার জন্মের পরপরই এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নিয়ে নেয় । শিউলি ও শিশু দুইজনে আল্লাহর রহমতে ভাল আছে । আল্লাহ নিষ্পাপ শিশুটার জীবন রক্ষা করেছেন ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×