সময় রাত ১১.১৯ মিনিট, আমার মোবাইল ফোন ভেসে উঠে Calling……tonne ।অনেক দিন এই নাম্বার থেকে আমার ফোন কোন কল আসে না । প্রায় আড়াই বছর । কল টা ধরব কি ধরব না, এইটা নিয়ে দ্বিধা থাকলাম । কলটা আর ধরা হল না । একবার ভাবলাম কলব্যাক করি । কিন্তু শেষ বার যখন তন্বীকে ফোন দিই, তখন আমার সাথে সে যে ব্যবহার করে ছিল, তাতে আমার সাহস হয় না আবার ওকে ফোন দেই । যাই হোক অনেক সাহসে ভর করে, ফোন ব্যাক করলাম । আমাদের কথোপকথন ছিল এমনই (আমাদের সম্পর্ক তুমিতে ছিল, কিন্তু ওর সাথে এখন কথা হল আপনিতে, হয়ত দীর্ঘ বিরতির ফসল এই টা )
-কেমন আছেন ?
-আমি ভাল । আপনি ?
-আমি বেশী ভাল নেই ।
-কেন ? কি হয়েছে ?
-কিভাবে বলি কথাটা । আমি এই সাহায্য টার জন্য আপনাকে ছাড়া আর কারও কথা মনে আসল না ।
-দেখেন দ্বিধা করবেন না । আপনি এখন আমার কাছে আগের চেয়ে কোন অংশে কম না ।
- আমার খুব সমস্যা । আমার তিন হাজার টাকা দরকার । দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না । আমি আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দিব । যদি পারেন তাহলে জানাবেন, যদি না পারেন তাও জানাবেন । প্লিজ
- আচ্ছা, আমি ব্যবস্থা করব ।
তন্বী, এক সময়ের আমার হৃদয় রানি । একে পাওয়ার জন্য কি না করেছি । ওর এক টা ফোন কলের জন্য আমি সারা রাত জেগে থাকতাম । সারা রাত পার করে দিতাম ওর সাথে কথা বলতে বলতে । এখনও অনেক ভালবাসি ওকে । আমার প্রতিদিনের প্রত্যেক টা কথার সাথে একবার না একবার ও আসবে । তবে এখন আমার ভালবাসা অনেক নিয়ত্রিত । অনেক হিসাবি । ওর কথা মনে আসলেও মুখে বলি না । যাই হোক তন্বীর এই হাঠৎ ফোন কল নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম । ওর মত বিত্তবান পিতার কন্য বাংলাদেশে খুবি কম । আমি ওকে বলতাম, হুমায়ান আহমেদের রুপা । ওর মত মেয়ে “আমার মত নুন আনতে পান্তা ফুরায়” এই টাইপের ছেলের কাছে টাকা চাইবে, আমার কাছে এটা স্বপ্নের মত । বিশ্বাস হয় না আমার । ওর কি এমন সমস্যা, যার জন্য আমার কাছে দীর্ঘ দিন পর ফোন করার প্রয়োজন পরল । ও যে ভাবে আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে ছিল, তাতে ধরে নিয়ে ছিলাম যে, ও আর কখন আমার জীবনে ফিরে আসবে না । যাই হোক আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি ওকে হেল্প করব । যতটা পারি । তারপরও মনের মধ্য একটা আগ্রহ থেকে গেল, কি এমন বিপদ যে আমাকে ফোন দিতে বাধ্য হল । যাই হোক সকাল বেলা ঘুম থেকে টাকাটা ওকে বিকাশ করলাম । তারপর ওকে ফোন দিলাম । ওকে ফোন দিয়ে জানাতে পারলাম মূল কাহিনী টা । আমাদের খুবই পরিচিত কাহিনী । এমন গল্প গুলো খুব হরামেশা আমাদের ফেসবুক বা ব্লগ এর মাধ্যমে জানতে পারি । কিন্তু শেষ টা আমাদের পরিচিত গল্প গুলোর মত না । তাই আপনাদের কাছে শেয়ার না করে পারলাম না ।
তার আগে বলে রাখি তন্বী এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করল । ও একটা স্বনামধন্য কলেজে পড়ত । গল্প টা ওর কলেজের এক বান্ধবীকে নিয়ে । বান্ধবী কে নিয়ে মূল গল্প টা । ধরে নিই ওর বান্ধবীর নাম শিউলি । রাজশাহী থেকে ঢাকা শহরে পড়তে আসে। শিউলির বাবা আর্মিতে চাকরি করে, মা গৃহিণী । আর এক মাত্র বড় ভাই প্রবাসী । ঢাকা শহরে কাছের কোন আত্মীয় না থাকায়, শিউলির ঠিকানা হয় কলেজের হোস্টেলে । তো আর দশটা মেয়ের মত ফেসবুক আর মোবাইলের সহায়তায়, বেসরকারি ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া এক স্মার্ট ছেলের প্রেমে পড়ে । তাদের ভালবাসার উত্তাপ বিছানা পর্যন্ত পৌঁছায় । তাদের কোন এক সময়ের অসতর্কতার কারণে শিউলি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে । বোকা শিউলি ব্যপারটা বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলে । বুঝতে পারে যখন, তখন অনেক জল প্রবাহিত হয়ে গেছে । ভ্রুনের বয়স তখন তিন মাস । আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাকি মাত্র তিন দিন । ততদিনে স্মার্ট প্রেমিক তার বাসস্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে, মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ করে দেয় । ফলে ঢাকা শহরে শিউলি একা হয়ে পড়ে । তখন সে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে ???? এই সময় তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তার স্বল্প পরিচিত বান্ধবী তন্বী । কিন্তু শিউলির অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ভ্রুন নষ্ট করার সময় শেষ হয়ে যায় । এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যায় । এই অবস্থায় শিউলি গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য কলেজ হোস্টেল পরিবর্তন করে একটা প্রাইভেট হোস্টেলে রুম নেয় বিবাহিত এই পরিচয়ে । হোস্টেল থেকে পরীক্ষা দেয় শিউলি । কিন্তু তাদের ভুলের কারনে নিষ্পাপ শিশু টা কে হত্যা করতে রাজি হয় না শিউলি । তন্বী সহ ওর গুটি কয়েক বান্ধবী কোন ভাবে রাজি করাতে পারে না । এদিকে শিউলি নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি । নিজের ভুলের মাশুল নিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । কয়েক বার সুইসাইড করতে গিয়েও ফিরে আসে শিউলি । তার এক মাত্র কারন তার গর্ভের শিশু । তার যুক্তি ছিল একটায় , তার ভুলের কারনে কেন শিশুটিকে হত্যা করা হবে । কিন্তু যুক্তি দিয়ে তো আর পেট ভরে না, শিশুটিকে পৃথিবীতে আনতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে হবে । এর জন্য অনেক গুলো টাকা খরচ । এত টাকা বাসা থেকে আনতে গেলে প্রশ্ন উঁঠবে । আর তাই ওর সব বান্ধবী মিলে টাকা যোগাড় শুরু করেছে । আর এই টাকার জন্য তন্বী আমাকে ফোন দিয়েছিল।
প্রিয় পাঠক, গল্প টা আপনাদের কাছে অবাস্তব মনে হতে পারে । কিন্তু আসলে সত্য । শিউলির বাচ্চাটা ডেলিভারি হয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে । নতুন শিশুটার জন্মের পরপরই এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নিয়ে নেয় । শিউলি ও শিশু দুইজনে আল্লাহর রহমতে ভাল আছে । আল্লাহ নিষ্পাপ শিশুটার জীবন রক্ষা করেছেন ।