একটা সময় নৌপথে খুব দুর্ঘটনা হতো। কদিন পরপরই শোনা যেতো লঞ্চ ডুবির কথা। নৌপথের যাত্রীরাতো বটেই, সাধারণ মানুষও আতঙ্কে থাকতেন। কখোন যানি আবার একটি দুর্ঘটনার খবর দেখতে হয় টিভিতে। তখন নৌপরিবহন মন্ত্রীকে ভালোবেসে (আসলে খেদ থেকে) ছাগলমন্ত্রী উপাধি দিয়েছিলো মানুষ। কারণ নৌ দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে একটি করে ছাগল দেয়া হতো।
দিল পাল্টেছে। কারণ দেশে এখন দিন বদলের সনগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ছাগলের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন নৌমন্ত্রীরা। তারা এখন ফ্রি লাইসেন্সের ব্যবসা করছেন। এই লাইসেন্স আবার যা তা না। একেবারে লাইসেন্স টু কিল। সহজ শর্তে লাইসেন্স দিতে হবে গাড়ি চালকদের। এটা কিন্তু আমাদের বর্তমান নৌমন্ত্রীর কোনো আবদার না। একেবারে দাবি। খবর বেরিয়েছে (প্রথম আলো, ১৯শে আগস্ট, ২০১১) বিএনিপ-আওয়ামী লীগ দু আমলেই নাকি শাজাহান খানের সুপারিশে এক লাখ ৯০ হাজার চালককে বিনা পরীক্ষায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। বিআরটিএতে এই চালকরা 'খানসেনা' হিসেবে পরিচিত। আবেদন করা হয়েছে আরো ২৮ হাজারের জন্য। মন্ত্রী ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, লেখাপড়া জানার দরকার নেই। রাস্তাঘাটে গরু-ছাগল, মানুষ চিনতে পারলেই হলো। অশিক্ষিত ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়া হোক। প্রশ্ন হচ্ছে, যার মধ্যে শিক্ষার আলো নেই, তার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয় কিভাবে। আর যে ড্রাইভার সচেতন নন, তার হাতে যাত্রীদের জানমাল কতটা নিরাপদ? শুধু গরু-ছাগল-মানুষ আর সিগন্যালের চিহ্ন দেখলেই কি সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়? শাজাহান কি তবে অশিক্ষিত চালকদের মানুষ মারার লাইসেন্স দিয়ে দিতে চাইছেন? ইতিহাসে অবশ্য খান সেনা সব সময়ই মানুষ মারার লাইসেন্স পেয়েছে। যেমনটা পেয়েছিলো একাত্তরে। নতুন যুগের খাস সেনাদেরো দেয়া হচ্ছে সেই একই লাইসেন্স। তবে হাতিয়ার আলাদা। একাত্তরের খানসেনাদের হাতে মরেছিলো মুনীর চৌধুরী। আর নতুন খানসেনাদের হাতে মরলো তারই ছেলে মিশুক মুনীর। একাত্তরের খান সেনারা মেরেছিলো জহির রায়হানকে। আর ২০১১-র খান সেনারা মারলো তারেক মাসুদকে। আমাদের কি তবে যুগে যুগে এই সব খান সেনাদের হাতে মরতে হবে? একাত্তরের খানসেনাদের আমরা হারাতে পেরেছি। নতুন এই খান সেনাদের কবে হারাতে পারবো?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



