২৪ আগস্ট, ২০১১। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের একটি অনুষ্ঠান থেকে দাবি তোলা হলো, ৩১ আগস্টের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে মান্যবর যোগাযোগমন্ত্রীকে। নইলে শহীদ মিনারেই ঈদ করার ঘোষণা দিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। পত্রিকার পাতায় যখন তিনি নিবন্ধ বা কলাম লেখেন, সেটি তার একান্ত বিশ্বাস আর পর্যবেক্ষণ থেকেই লিখে থাকেন। কিন্তু শহীদ মিনারে ঈদ করার ঘোষণা তার একার কোনো ইচ্ছে নয়। এটি একটি সামগ্রিক বোধের প্রকাশ। উপস্থিত সব ছাত্র, শিক্ষক আর নানা পেশার মানুষের মনের কথাটিকে আবুল মকসুদ প্রকাশ করেছেন মাত্র। হলফ করে বলতে পারি, তার ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে তিনি সাধারণের ওপর চাপিয়ে দেননি।
সেদিনের সেই সমাবেশের উদ্দেশ্য কী ছিলো, একবার কেউ ভেবেছেন কী? সৈয়দ আবুল মকসুদ এবিসি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে যথার্থই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমরা সরকার বা কারও প্রতিপক্ষ নই। আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক। এই দেশের রাজনীতিবিদেরা ঘুমিয়ে আছেন। আমরা তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে চাই।'
সাধারণ মানুষ আজ আসলে এটিই চাইছে। কারণ লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠেছে আমাদের। মহাসড়কে চলছে মহা দুরাবস্থা। নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। যে কোনো সময় ঘাতক বাস কিংবা ট্রাক কেড়ে নিতে পারে যে কারো প্রাণ। এতসব কিছুতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু কর্তাব্যক্তিদের, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দেখে মনে হচ্ছে, তারা ঘুমিয়েই আছেন। সে কারণেই আমরা তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে চাই। আমরা আপনাদের ঘুম হারাম করতে চাই না। শুধু চাই, চোখ দু'টি খুলুন। দেখুন আমাদের কষ্ট। সেই কষ্টের কিছুটা লাঘব করুন। তারপর আবার ঘুমান। আমরাও শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
কিন্তু মন্ত্রীরা সম্ভবত সাধারণ মানুষের নাড়ির স্পন্দর বুঝতে পারছেন না। কিংবা না বোঝার ভান করছেন। তাই দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী, যিনি কি না সরকারি দলের সম্পাদকও বটে সৈয়দ আবুল মকসুদদের নিয়ে করলেন ব্যাঙ্গোক্তি। বললেন, আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নাকি আন্না হাজারে হতে চাইছেন। তাতে নাকি লাভ হবে না। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এই বিদ্রুপে খানিকটা উতসাহ পেয়েছেন নানা বিষয়ে নানা কথা বলতে পারঙ্গম আইন প্রতিমন্ত্রীও। তিনি বরং সৈয়দ আশরাফকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মাননীয় অ্যাডভোকেট সাহেব, যে দেশে পুলিশের নির্যাতনে আইনজীবীর মৃত্যু হয়, যে দেশে দু- এক মাসের ব্যবধানে গণপিটুনিতে একাধিক নিরপরাধ মানুষ মারা যায়, সে দেশে আন্না হাজারেদের প্রয়োজন আছে। সেই প্রয়োজনে আপনার সমর্থন থাকুক আর নাই থাকুক। ওতে সাধারণ মানুষের কিছু আসে যায় না। কারণ আপনি বা আপনার সহকর্মীরা হয়তো ভুলে গেছেন, সাধারণ মানুষ কিন্ত ভোলেনি। আর সেটি হলো আপনাদের ওই বিশেষ পদবী আর ক্ষমতায় কিন্তু সাধারণ মানুষই বসায়। এখনো আড়াই বছর সময় আছে। মানুষ কিন্তু এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছে। কাজেই সাধারণ মানুষের ভাবনাকে মূল্য দিন। তাদের মনের কথা শুনুন। আপনাদের ইচ্ছেমতো দেশ চালালে খেসারত দিতে হতে পারে। যেমনটা দিতে হয়েছে বিএনপি-জামাত জোট সরকারকে। জনগণের চাওয়ার উল্টো পথে হঁাটার কারণেই কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। আর আপনারা পেয়েছেন প্রায় অসম্ভব একটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা। জনগণ চাইলে কিন্তু আগামী নির্বাচনে তাদের সেই সমর্থন আমপনাদের ওপর থেকে উঠিয়ে নিতে পারে। কাজেই সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্গ না করে গণতান্ত্রিক আচরণ করুন। মানুষের ভালো হয়, এমন কিছু করুন। তাহলে আর ঈদের দিনে সব আনন্দ ফেলে মানুষকে শহীদ মিনারে বসে থাকতে হবে না। আপনাদের প্রতি সমর্থনও অটুট থাকবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



