- কিরে বেইশ্যার পুত, তুই নাকি দ্যাশ রক্ষা করবি?
- হ হুজুর।
- ক্যামনে করবি?
- মিলিটারিগো লগে মিইল্যা।
ওয়াক থু করে থু থু ফেলে সেলিম চেয়ারম্যান। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। দক্ষিণ ঘরের কোণায় বসে গরুর জন্য নাড়া তৈরি করছে তারেক।
- ওই তারেইক্যা, হুনসশ? বইক্যা চোরাই নাকি মিলিটারিগো লগে মিইল্যা দ্যাশ রক্ষা করবো?
তারেক একবার সেলিম চেয়ারম্যানের দিকে তাকায়। একবার বকতিয়ারের দিকে। এরপর খালি হে হে করে হাসে। শরীরের সব রক্ত যেন বকতিয়ারের চোখে ভর করেছে। সময় এখন খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। একদিকে মিলিটারি, আরেক দিকে মুক্তি। রাতের বেলা কাজকর্ম প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা জিনিস হাপিশ করতে পারলেও খদ্দের মেলে না।
দুইটা মুড়ি খাওয়ার আশায় সকাল থেকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে বসে আছে বকতিয়ার। মুড়ির কোনো বালাই নাই, চোরা বইলা গাল দেয়। মুড়ির কথা মনে পড়ায় ক্ষিধাটা যেন আবার চাগান দিয়ে উঠলো। মাটিতে বসে খড়ের কুটো চিবায় বকতিয়ার। আর ভাবে ‘হালার চেয়ারম্যানের পাছায় লাত্থি দিমুনি!’
- চোখ লাল ক্যানরে? সারা রাত চুরি করছস নাকি?
উঠে দাঁড়াতে যায় বকতিয়ার। যা থাকে কপালে, চেয়ারম্যানের পাছায় আজ লাথি মারবেই। চোখ আটকে যায় কাঁচারি ঘরের বারান্দায়। চেয়ারম্যানের মেয়েটাকে দেখলেই কেমন জানি উথালপাথাল করে বকতিয়ারের। বয়সটা একটু কম। তাতে কি? গায়ে গতরে বাড়ন্ত। কোৎ করে একটা আওয়াজ বেরোয় বকতিয়ারের মুখ থেকে। মনে হয় পিঠের ওপর যেন পুরো ঘর ভেঙ্গে পড়লো।
- হারামজাদা, চায়া চায়া কি দ্যাখোস? চেয়ারম্যানের চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরুচ্ছে।
ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে বকতিয়ার। স্বপ্নগুলো ইদানিং প্রায়ই দেখছে। ডাক কি তবে এসেই গেলো? গলা শুকিয়ে কাঠ। কাঁপা হাতের ধাক্কায় উল্টে যায় পানির গ্লাস। আবছা আলোয় নিজের হাতকেই মনে হয় অশরীরী। বাগানে ল্যাম্পপোস্টের ঘোলা আলোর দিকে একবার তাকায় বকতিয়ার। আলুথালু দাড়ি হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে। তলপেটের চাপটা বাড়ে। কিন্তু বিছানা থেকে নামতে ভয় করে। অসুবিধা কি! মিলিটারি ক্যাম্পে যেদিন গিয়েছিলো সেদিনও তো লুঙ্গি পড়েই কাজ সেরে দিয়েছিলো। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো ভয়ে-লজ্জায় কুঁকড়ে যায় বকতিয়ার।
সোনাডাঙ্গা খাল সাঁতরে মিলিটারি ক্যাম্পে গিয়েছিলো বইক্যা চোরা। ক্যাম্পের সীমানায় যেতেই দুটি বন্দুকের নল চেপে ধরে তার মাথা। সামনেই খাটিয়ায় আধশোয়া মিলিটারি অফিসারের হুঙ্কার, ‘তুম কৌন?’
ভয়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় বকতিয়ারের। দুই উরুর মাঝখান দিয়ে যেন গরম সীসা পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে পায়ের তলার মাটি। হাসিতে ফেটে পড়ছে গোটা ক্যাম্প। বকতিয়ারের ইচ্ছে হয়, মিলিটারি শালার পাছায় কষে একটা লাথি মারতে। মুখ দিয়ে কোনো রকমে বের হয়, ‘বকতিয়ার, হুজুর।’
- বকতিয়ার মতলব? তুম ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বকতিয়ার?
মতলব বোঝে না বকতিয়ার। শুধু বোঝে এ নিশ্চয় বিখ্যাত কারো নাম! সেই থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন বকতিয়ার নামেই তাকে চেনে দেশের মানুষ। বিদেশের কেউ কেউও।
(চলবে)........

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



