- ভাইসব, আমাগো গ্যারামডারেতো রক্ষা করতে অইবো। মিলিটারিরা যেইভাবে সারা দ্যাশে মানুষ মারতাছে, তাতেতো গ্যারাম অ্যাকেবারে সাফা অয়া যাইবো। নাকি কন আপনারা?
ভীড়ের দিকে একবার ভুরু কুঁচকে তাকায় সেলিম চেয়ারম্যান। বুঝতে পারে না মানুষের মনের কথা। তবে একটা বিষয় ঠিকই বোঝে, এই দুর্দিনে গ্রামের মানুষ তার কাছ থেকেই একটা কিছু উপায় চায়। খুকখুক করে কাশে বইক্যা চোরা। চেয়ারম্যান বোঝে, এটা তার ইচ্ছা কাশি। ভাবটা এমন, কি কইবার চান কয়া ফালান। ইচ্ছা হয় থাপ্পর মারে।
- যারা মুক্তি অইবার গ্যাছে তাগো কথা ভুইল্যা যান। জান বাঁচাইন ফরজ। কি কও দুলাল মেম্বার?
ভীড়ের মধ্য থেকে কোনো জবাব আসে না। চেয়ারম্যানের সাহস আরেকটু বাড়ে।
- তাইলে মিয়ারা, ওই কথাই থাকলো। মিলিটারিগো লগে ভাব রাইখ্যা চলতে অইবো। হুনছি, হ্যারা নাকি পিস কমিটি করবো। আমরা তাইলে কয়জনের নাম ঠিক কইর্যা ক্যাম্পে দিয়া আসি।
মৃদু গুঞ্জন ওঠে ভীড়ের মধ্যে। স্পষ্ট কিছু বোঝা যায় না। চিকন ঘাম দেখা যায় চেয়ারম্যানের কপালে। তবে কী তার প্রস্তাব পছন্দ করলো না কেউ? চোখের সামনে মেয়েটার কচি মুখ ভাসে। মিলিটারিরা নাকি মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তাদের আর খোঁজ মেলে না। থরথর করে কেঁপে ওঠে চেয়ারম্যান।
- কি অইলো মিয়ারা? কথা কও না ক্যান?
- ঠিকই কইছেন চেয়ারম্যান সাব। মনে অয় পিস কমিটিতে নাম ল্যাখাইলে গ্যারামডা বাঁইচ্যা যাইবো।
দুলাল মেম্বারের কথা শেষ হতে পারে না। তার আগেই মুখ থেকে একদলা ঘাস ফেলে খাল পাড়ের দিকে হাঁটা দেয় বকতিয়ার। কী এক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে চেয়ারম্যানের বুক।
আসসালাতু খাইরুম মিনাননাউম....
ফজরের আযানে সম্বিত ফিরে পায় বকতিয়ার। গন্ডগোলের বছর থেকেই নামাজ পড়া শুরু। তখন ছিলো লোক দেখানো। এখন পুরোটাই অভ্যাস। সেই একটা সময় এসেছিলো। বকতিয়ারের পুরো দুনিয়াটাই ওলটপালট করে দিয়ে গেছে।
চুরি ছাড়লেও রাতের আঁধার ছাড়তে পারেনি বকতিয়ার। যেসব বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলো, প্রত্যেকটিকেই মিলিটারিদের কাছে মুক্তিবাহিনীর বাড়ি বানিয়ে দেয় সে। ভারী বুটের আওয়াজ, নারী-শিশুর ভয়ার্ত চিৎকার, রাইফেলের ঠা ঠা। নেশায় পেয়ে বসে বকতিয়ারকে। মানুষের রক্তে কেমন যেন একটা নেশা নেশা ভাব! কেমন পাগল করা!
আকাশটা বুঝি একটু ফর্সা হলো। অভ্যাসবশেই বিছানা ছাড়ে বকতিয়ার। অনেক সময় নিয়ে ওজু করে। ঘোর লাগা ভাব নিয়েই জায়নামাজে দাঁড়ায়। নামাজ শেষে দু’হাত তুলে সব ভুলে যায় বকতিয়ার। কী চাইবে আল্লাহ’র কাছে? কী চাইবার আছে তার? ঘোর নিয়েই বিছানায় উঠে বসে মানুষটা। ভুলে যায় সব কিছু। ভুলে যায় খানিক আগে এই কাপড়েই বিছানা নষ্ট করেছে। শুধু নাকে লেগে আছে সেই গন্ধ! মানুষের রক্তের গন্ধ!
(চলবে..................)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



