somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। একসময় ট্রাম্প ছিলেন ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, হঠাৎ সব ওলট–পালট হওয়ার রহস্য কী

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্কগুলোর একটি সংকটে পড়েছে।

এক সিকি (এক-চতুর্থাংশ) শতাব্দীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে শোনা যাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে ট্রাম্পের ফোন ধরেননি।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ককে বলেন ‘পুরোপুরি একপেশে বিপর্যয়’। এমনকি এ বছর আরও পরের দিকে কোয়াড সম্মেলনে (ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের জোট) যোগ দিতে ভারত সফরের পরিকল্পনাও তিনি বাতিল করেছেন বলে খবর এসেছে।

এত দ্রুত, এত খারাপ

এভাবে সম্পর্কের অবনতির কথা কেউ ভাবেননি। গত বছর ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর নয়াদিল্লিতে অনেকে খুশি হয়েছিলেন। মোদি সামাজিক যোগযোগমাধ্যম এক্সে ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ বলে শুভেচ্ছা জানান, দুজনের আলিঙ্গনের ও হাত ধরার ছবিও প্রকাশ করেন।ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অন্য দেশগুলো ট্রাম্পের ফেরত আসা নিয়ে হয়তো ‘শঙ্কিত’, কিন্তু ভারত নয়।

আত্মবিশ্বাসী হয়ে মোদি ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ওয়াশিংটনে যান, কিন্তু সেই বৈঠক ভালোভাবে হয়নি।হোয়াইট হাউসে মোদি প্রতিশ্রুতি দেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও অস্ত্র, তেল ও গ্যাস কিনবেন। একই সঙ্গে অনুরোধ করেন, ভারতের ওপর যেন শাস্তিমূলক শুল্ক চাপানো না হয়। কিন্তু মোদি সে আশ্বাস অর্জন করতে ব্যর্থ হন।

কয়েক সপ্তাহ পর, ট্রাম্প ঘোষণা করেন, বোঝাপড়ায় আসতে না পারলে ভারতকে ২৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এ হার ছিল চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের চেয়েও অনেক বেশি (১০ শতাংশ)।কাশ্মীর সংকট

বাধ্য হয়ে নয়াদিল্লি বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এপ্রিলে ভারত সফর করেন এবং দুই পক্ষই ইতিবাচক মন্তব্য করে। তবে তখনই নতুন সংকটে পড়ে ভারত।

২২ এপ্রিল কাশ্মীরে বন্দুকধারীরা ২৬ জনকে হত্যা করেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু পর্যটক। এতে ভারত-পাকিস্তানের পুরোনো সংঘাতপ্রবণ এ অঞ্চল আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোদি সরকার ঘোষণা দেয়, আগের মতো এবারও শক্ত হাতে জবাব দেওয়া হবে।৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীর’ শিবিরে হামলা চালায়। এরপর দ্রুত অপ্রত্যাশিত সংঘাত শুরু হয়। দুই পক্ষই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে–অপরকে আক্রমণ করে।

পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। সবাই সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানায়। অবশেষে ১০ মে ভোরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।‘শান্তিদূতের’ ভূমিকায় ট্রাম্প

ভারত বা পাকিস্তান সরকার কিছু বলার আগেই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন, তিনি উভয় দেশকে সমঝোতায় এনেছেন। পরদিন তিনি দাবি করেন, খুব শিগগির ভারত ও পাকিস্তান তাঁর মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসবে এবং কাশ্মীর সমস্যার (পেহেলগামে হামলার ঘটনা নিয়ে দুই দেশের সংঘাত) সমাধান করবে।

পাকিস্তান এতে খুশি হলেও নয়াদিল্লি ক্ষুব্ধ হয়। ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান, কাশ্মীর প্রশ্ন দ্বিপক্ষীয়ভাবে মেটাতে হবে, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় নয়। যুক্তরাষ্ট্রও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থানকে সমর্থন করে এসেছে, কিন্তু এবার ট্রাম্প ভিন্নপথে হাঁটলেন।
ট্রাম্পের এ দাবি মোদিকে একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারি বজায় রাখা ও শাস্তিমূলক শুল্ক এড়াতে ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করতে চাননি তিনি।

কিন্তু ট্রাম্পের দাবি মানতেও পারছিলেন না মোদি। কেননা, তাতে ভারতের নীতির এক মৌলিক অবস্থানকে অস্বীকার করতে হতো। তাই মোদি ওয়াশিংটনে ফোন করে জানান, কাশ্মীর নিয়ে কোনো মধ্যস্থতা ভারত মেনে নেবে না।

শেষ ধাক্কা

অন্যদিকে পাকিস্তান এটিকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বাড়াতে ও ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায়।

ট্রাম্প যে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে আগ্রহী, সেটি বুঝে পাকিস্তান তাঁকে মনোনয়ন দেয়। উৎসাহিত হয়ে ট্রাম্প ১৭ জুন মোদিকে ফোন করেন। মোদিকে অনুরোধ করেন, কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শেষে ফেরার পথে ওয়াশিংটনে থেমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করতে।খবরে বলা হয়েছে, এটাই ছিল মোদির জন্য ‘শেষ ধাক্কা’। তিনি স্পষ্টই ট্রাম্পের দুই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তার পর থেকে দুজনের মধ্যে আর কথা হয়নি।

রুষ্ট হয়ে ট্রাম্প ভারতের ওপর শাস্তি দেন, রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের শুল্কহার ৫০ শতাংশে বাড়িয়ে দেন এবং বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেন।

উভয় সংকটে নয়াদিল্লি

ট্রাম্পের এসব কাজে সাধারণ ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ এবং সরকারের কাছে শক্ত পদক্ষেপ দাবি করছেন। কিন্তু মোদি সরকারের সামনে ভালো বিকল্প নেই।

চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে নরেন্দ্র মোদিকে দুর্বল দেখাবে। বিরোধীরা তাঁকে আগে থেকেই ‘নারেন্ডার সারেন্ডার’ বলে কটাক্ষ করছেন। অথচ ভারতের বাজার, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, অস্ত্র ও কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বড় শক্তিশালী দেশ নেই।এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে। ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে এ সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনের।

গত ৩১ আগস্ট সাত বছর পর মোদি চীন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে হাত মেলান। সি বলেন, ‘হাতি আর ড্রাগন একসঙ্গে নাচুক।’ তবে ভারত-চীন সম্পর্কের মধ্যে এখনো আস্থার বড় ঘাটতি রয়েছে।

মোদির বেশি ভরসা রাশিয়ার ওপর। চীন সফরে মোদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁর লিমুজিনে আলাপ করেন। এ বছরের শেষ দিকে পুতিনকে আবার ভারত আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপে রাশিয়া এখনো একঘরে, সহায়তার ক্ষমতাও সীমিত।জাপানের মতো অন্য দেশও ভারতের সহায় হতে পারে। চীন যাওয়ার পথে মোদি টোকিওতেও গেছেন। তারা নয়াদিল্লির বর্তমান সংকট কাটাতে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট শক্তি রাখে না।

সব মিলিয়ে, মোদি আবার ট্রাম্পের মন জয় করার উপায় যদি বের করতে না পারেন, তবে ভারতের সামনের কয়েক বছর খুবই কঠিন হতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×