somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ ইন সিঙ্গাপুর

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ মুখে সিঙ্গাপুর এসে স্বস্তি পাচ্ছিলামনা। দেশের বাইরে এ’টি আমার চার নম্বর ঈদ। তিন নম্বরটা গত বছর দিল্লীতে করেছিলাম Md Abdul Hamid আর Ivy ভাবীর বদান্যতায় ঈদটি খারাপ কাটেনি।ইন্টারনেটে সিঙ্গাপুরের ঈদের আয়োজনকে জমকালো মনে হলেও গতকাল আধাবেলা পর অফিস ছুটি হবার আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ঈদ ঈদ ভাবটা আসেনি। যে সব বাঙালি পরিবারের সাথে জানাশোনা আছে, তাদের ঈদের কেনা কাটা হয়েছে বাংলাদেশে। ঈদের জামাতের সময় না জেনেই রাতে ঘুমোতে গিয়েছি।
সকালে খবর পেলাম ৬৯টি মসজিদসহ মোট ১০৮টি জায়গায় ঈদের জামাত হচ্ছে। জামাতের সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে। বাঙালিরা জামাতের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ৭টি মসজিদে। এর মধ্যে ক্লেমেন্টির দারুস সালাম মসজিদে খোতবা হয় বাংলায়। ঠিক করলাম দারুস সালাম মসজিদে যাবো।ওখানে জামাত ন’টায়।
সিঙ্গাপুরে এখন সূর্য ওঠে সাতটা দুইয়ে। যত দেরিতে ন্টা বাজবে ভেবেছিলাম, মনে হল তারও আগেই ঘড়ির কাটা ছুটছে। ইন্টারনেট জানিয়েছে, ট্যাক্সিতে ইয়ু চু ক্যাং রোড থেকে দারুস সালাম মসজিদে যেতে মিনিট পঞ্চাশেক লাগবে। সোয়া আটটায় ট্যাক্সি ডেকে নিচে নেমে এলাম।
অগোছলা একট্যাক্সি নিয়ে মহাজ্ঞানী এক ট্যাক্সি ওয়ালা আমার সাজ পোষাক দেখে সেলামত রাইয়া বলতে দরজা খুললো। কিছু না বুঝে বললাম দারুস সালাম মস্ক 3002 কমনোয়েলথ। মুখে একটা সব জান্তা হাসি দিয়ে আবার তিনি বললেন সেলামত রাইয়া। কথাটা আরও দু’য়েক জায়গায় লেখা দেখেছি। কথাটা হচ্ছে সেলামত হারি রাইয়া। অনেকটা আমাদের ঈদ মোবারকের মালয়ি পরিভাষা। চালক ভদ্রলোক রাইয়া টুকু বাদ দিয়ে বলায় প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। এবার আমিও বললাম ঈদ মোবারাক। তিনি কিছু একটা অনুমান করে গাড়ি ছুটালেন। তারমুখও ছুটতে থাকলো সমানে। বলল, আপনার ধারে কাছে মসজিদ রেখে এত দূরে চললেন কেন?
আমি জানি আনমোকিও (আমোকিও)’র দিকে একটি মসজিদ আছে। এর আগের যাত্রায় একবার জুম্মার নামাজও পড়েছিলাম সেখানে। সেসব না বলে তাকে বললাম, ক্লেমেন্তির মসজিদটা সুন্দর শুনেছি।
তিনি বললেন দেয়ার আর সিক্সটি নাইন মস্কস ইন সিঙ্গাপুর।আই হার্ড অল অব দোজ আর নাইস। বললাম, তোমাকে কে বলল?
আমার জন্ম মালোয়িদের এলাকায়। থাকিও সেখানে। আমার বন্ধুদের অনেকেই মুসলিম বললেন তিনি।
ততক্ষণে ট্যাক্সি হল্যান্ড রোডে পড়েছে। এমআরটিতে যাওয়া আসার সময় কমনোয়েলথ এভিনিউ এত দূরে মনে হয়নি। চীনা ড্রাইভাররা শুনেছি ইচ্ছে করে ঘুর পথে যায়, মিটার বাড়ানোর জন্যে। বললাম, তুমি ঠিক মত শুনেছিলে তো! আমি কিন্তু দারুস সালাম মস্কে যাবো।
মুচকি হাসি দিয়ে তিনি বললেন, য়ুই আর গোয়িং দেয়ার। স্যার ডিড য়ু সি দ্যা সুলতান মস্ক?
বললাম, না। এখন দেখতেও চাইনা। আমার নামাজ নয়টায়।
সে বলল, নো, নট টেলিং ইয়ু নাও। দ্যাট ইজ এ টু হান্ড্রেড ইয়ার ওল্ড মস্ক। ইয়ু ক্যান কল মি লেটার।
এই কথাবার্তার ফাঁকে একসময় হাতের বামে কমনোয়েলথ এভিনিউও চলে গেলো। ঘড়িতে বাজে ৮টা ৫৫ ভাবলাম, নামাজ মিস হয়ে গেলো বোধ হয়। বললাম, দ্য মস্ক ইজ ইন ৩০০২ কমন...। কথা শেষ হবার আগেই তিনি বললেন। ডু নট ওরি, দেখলাম ক্লেমেন্টি এম আরটি দানে রেখে গাড়ি ঢুকছে বায়ের রাস্তায়। অসংখ্য নারী পুরুষ রাস্তার পাশের একটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। মসজিদের গায়ে লেখা দারুস সালাম মসজিদ। আমার মনে হল মসজিদতো পেলাম, কিন্তু নামাজ ?
বাঙালি চেহারার দু’জন লোক সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে মসজিদের গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই নামাজ কী শেষ? একজন বললেন, দ্বিতীয় জামাত শুরু হবে একটু পর। ভাই বসে যান।



দারুসসালাম মসজিদের ইতিহাস আমি কিছু জানিনা। মসজিদটা দেখে ভালো লাগলো। দোতলা মসজিদ। মেয়েদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। ইমামের কথা বার্তা শুনে মুগ্ধহয়ে গেলাম। টিপিক্যাল ইমামদের মত নন। ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে বয়ান দিচ্ছেন। তাঁর কথাতেই জানলাম নামাজের খোতবা ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল বা মাজলিস উজামা ইসলাম সিঙ্গাপুরা (MJIS) কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মসজিদে ইমাম সাহেবরা MUIS নির্ধারিত খোতবা পাঠ করেন।
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব পেষায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী, তাঁর বয়ান গতানুগতিক নয়।
সিঙ্গাপুরের ১৫ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করে। পালনকারী জনসংখ্যার হিসাবে হিসাবে বৌদ্ধ (৩৩ শতাংশ), আর খৃষ্টান (১৮ শতাংশ)ধর্মের পরেই ইসলামের অবস্থান।


ইমাম সাহেবের কথায় জানাগেলো কয়েক বছর আগে এই মসজিদেই প্রথম বাংলা খুতবা পাঠ শুরু হয়েছিলো। এখন সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমতি নিয়েই বাংলায় খুতবা পাঠ হচ্ছে আরও কয়েকটি মসজিদে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সিঙ্গাপুরের বুকে একটুকরো বাংলাদেশ। নামাজের পর সেই পরিচিত কোলাকুলি, কুশল বিনিময়, দেখতে ভালোই লাগছিলো। আমি ছাড়া এখানে প্রায় সবাই সবার চেনা । ছবি তুলছিলাম। বাসা থেকে বের হবার আগে Kollins Khan আর Sabbir Rizvi কে ফোন দিয়েছিলাম। কোন ফোনই গ্রাহোক খুঁজে পায়নি তাড়া হুড়োর কারনে আমি আর চেষ্টাও করিনি।

হঠাত শুনি কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকছেন। কাছে যেতেই কোলাকুলি করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন চিনতে পেরেছো?



আমি হ্যা, নার মাঝামঝি থাকার চেষ্টা করছি। উনি বললেন চিনতে পারোনি? আমি জহির। বাসায় চলো। আমি বিস্মিত হলাম। Mohammad Zahirul Islam ভাই আমাদের কলেজের ফিফথ ইনটেকের। ওনারা পাশ করে বেরিয়ে যাবার দু’বছর পর আমরা কলেজে ঢুকেছি। কোনদিন দেখা পর্যন্ত হয়নি। অথচ উনি আমাকে প্রথমবার দেখেই আপন করে নিলেন। জহির ভাইয়ের টেলিফোন নম্বর নিয়ে ক্লিমেন্টি এমআরটি স্টেশনের দিকে পা বাড়ালাম।

বাসায় যেয়ে বউ বাচ্চাকে জহির ভাইয়ের কথা বলে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×