somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

√√ Must Read √√ কথিত রেশমী রুমাল আন্দোলন √√ Must Read √√

২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক ও দেওবন্দীদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব

উপমহাদেশের মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু যারা, তাদের মধ্যে কমিউনিস্টদের উল্লেখ থাকবে প্রথমেই। বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা কমিউনিজমের কাঁধে সওয়ার হয়ে থাকে তাদের সাম্প্রদায়িক কর্মকা-কে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নামে বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে। আমাদের দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বাজারে যতগুলো বই দেখা যায়, তার প্রায় সবই কমিউনিস্টদের লেখা। শুধু উপমহাদেশ কিংবা বাংলাদেশ নয়, কমিউনিজম গোটা বিশ্বের মুসলমান উনাদের জন্য একটি মূর্তিমান অভিশাপতুল্য।

অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের উপমহাদেশে এই কমিউনিজমের বীজ রোপিত হয়েছিল মুসলমান ঘরের সেসব সন্তানদের দ্বারা, যারা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে দেওবন্দী মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সহযোগী তথা রেশমি রুমাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীবৃন্দ। এই কর্মীরা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর নেতৃত্বে গিয়েছিল দ্বীন ইসলাম উনার পক্ষে কাজ করার জন্য, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু আফসোস, সিন্ধীর কথিত ‘জিহাদে’র ডাকে দেশত্যাগ করা মুসলমান ঘরের এসব সন্তানেরা ফিরে এসেছিল কমিউনিস্ট হয়ে। নাস্তিক হয়ে, ধর্মদ্রোহী হয়ে!

দেওবন্দীদের সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন যে দেওবন্দীরা তাদের এই কথিত ‘রেশমী রুমাল আন্দোলন’ নিয়েই সবচেয়ে বেশি গর্ব করে থাকে। এমনকি রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রকে দেওবন্দের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ¦ল(!) অধ্যায় বলতেও তাদের অনেকে দ্বিধা করে না। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই ষড়যন্ত্রে যারা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সহযোগী হিসেবে লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুল গিয়েছিল, তাদের একটি অংশই পরবর্তীতে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম দেয়। যার পেছনে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না, কারণ সিন্ধীই তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। লেনিনের সাথে দেখা করার জন্য রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সেখানে অবস্থান করেছিল এই ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী। তার কর্মকা-ের মাধ্যমেই তার শিষ্যরা প্ররোচিত হয়েছিল কমিউনিস্ট মতবাদে দীক্ষিত হওয়ার জন্য। তার দলিলভিত্তিক ইতিহাসই নিচে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হচ্ছে।

**রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র: পটভূমিকা ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস**
রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আফগানিস্তানের কাবুলে মুহাজির বা দেশত্যাগী নেতাদের নিয়ে গঠিত অস্থায়ী ভারত সরকারের মাধ্যমে। ১৯১৫ ও১৯১৬ সালে বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে এ উপমহাদেশ ত্যাগ করে। এদের মধ্যে ছিল লাহোর কলেজের ১৫ জন মুসলমান ছাত্র (এরাই কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক)। তারা গোপনে আফগানিস্তানে হিজরত করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে গমন করা এবং ব্রিটিশ যাঁতাকল থেকে ভারতকে মুক্ত করা। সেখানে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তাদের সাথে মিলিত হয়। ১৯১৫ সালে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে ভারতীয়-তুর্কি-জার্মান মিশন ইরানের মধ্য দিয়ে কাবুলে পৌঁছায় এবং এ দলের সঙ্গে মিলিত হয়। এ মিশনের উদ্দেশ্য ছিল আফগান কর্তৃপক্ষকে ভারত আক্রমণে উৎসাহ প্রদান করা এবং এর সাহায্যে ব্রিটিশ বাহিনীকে সীমান্তে ব্যস্ত রাখা। এ ব্যবস্থা করে ব্রিটেনের মিত্র রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তুর্কি ও জার্মান বাহিনীর হাত শক্ত করাই ছিল এ মিশনের প্রধান কাজ।
যে-কোন উপায়ে তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য একটি দল দারুল উলুম দেওবন্দের কথিত শায়খুল হিন্দ মালানা মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে হেজাজ উনার উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগ করে। তাদের সেখানে অবস্থানকালে হেজাজ উনাতে নিযুক্ত তুর্কি সামরিক গভর্নর গালিব পাশা জিহাদের ঘোষণা প্রদান করে। এ ঘোষণার উদ্দেশ্য তুর্কি লোকবল, অর্থ বা যে কোন উপায়ে ভারতীয় মুসলমানদেরকে সাহায্য করা। এদিকে মাহমুদ হাসান আরবে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময় কাবুলে অবস্থান করছিল মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, সে কাবুল থেকে একটি রেশমের রুমালে তার কর্মপন্থা লিপিবদ্ধ করে গোপনে তা হেজাজ উনাতে অবস্থানরত মাহমুদ হাসানের নিকট প্রেরণ করে। কিন্তু প্রাপকের নিকট পৌঁছার পূর্বেই পত্রটি সরকারের হাতে পড়ে যায় এবং সরকার একে ‘রেশমি রুমাল ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে।
[সূত্র: ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ড. ইনাম উল হক, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ১৪০]

১৫ জন ছাত্রের লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুল যাওয়ার বিস্তারিত ইতিহাস
উপরের আলোচনার প্রথমেই ১৫জন ছাত্রের কথা বলা হয়েছে, যারা লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুলে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সাথে যোগ দিয়েছিল। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট রাজনীতির প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহমদ তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গ্রন্থে উক্ত ছাত্রদের তালিকা ও তাদের ইতিহাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে।

উক্ত ছাত্রদের একজন ছিল খুশি মুহম্মদ, ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট রাজনীতির ইতিহাসে যে কমরেড খুশি মুহম্মদ নামেই পরিচিত। প্রখ্যাত সাংবাদিক, একাত্তরের চরমপত্র অনুষ্ঠানের পাঠক এমআর আখতার মুকুল রচিত ‘গয়রহ’ নামক প্রবন্ধগ্রন্থে উক্ত কমরেড খুশি মুহম্মদকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ রয়েছে ‘কমরেড খুশি মুহম্মদের অমর কাহিনী’ নামে। উক্ত প্রবন্ধের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ
“খুশি মুহম্মদ লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে এস এস সি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় লাহোর মেডিকেল কলেজে। এখানেই সে কথিত ‘বিপ্লবী’দের সংস্পর্শে আসে। অবশ্য এই বিপ্লবীদের ধরণটা কিছুটা ভিন্নতর। এদের নেতা ছিল মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী এবং তারই ছাত্র সাংবাদিক খাজা আবদুল হাই। সিন্ধীর বক্তব্য একটাই এবং তা হচ্ছে, যে ভাবেই হোক ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করতেই হবে। এই আদর্শকে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ‘জিহাদ’ নামে তার শিষ্যদের নিকট অভিহিত করলো।

এসময় তুর্কীর খলিফা, জার্মানির কাইজার এবং আফগানিস্তানের আমীর এরা সবাই ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে। তাই এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংরেজদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনবোধে বিদেশী শক্তির সাহায্য নিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে ১৯১৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৫ জন ছাত্রের একটি দল পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আফগান সীমান্ত অতিক্রমের জন্য লাহোর ত্যাগ করলো। ইংরেজ পুলিশের খাতায় এদের ‘মুজাহিদ ছাত্র’ বা ‘পলাতক ছাত্র’ হিসেবে রেকর্ড করে রাখা হয়। নীচে এদের নাম ও পরিচয় দেয়া হলোঃ
১) আবদুল বারী এম এ ক্লাসের ছাত্র
২) আবদুল কাদির ঐ
৩) আবদুল মজিদ খান বিএ ক্লাসের ছাত্র
৪) আল্লাহ নেওয়াজ খান ঐ
৫) আবদুল্লাহ ঐ
৬) আবদুর রশিদ ঐ
৭) গোলাম হুসাইন ঐ
৮) জাফর হাসসান এবক ঐ
৯) আবদুল খালিক ঐ
১০) মুহম্মদ হাসসান ঐ
১১) খুশি মুহম্মদ মেডিকেল ছাত্র
১২) আবদুল হামিদ ঐ
১৩) রহমত আলী ঐ
১৪) সুজাউল্লাহ ঐ
১৫) আল্লাহ নেওয়াজ খান কলেজের ছাত্র
[তালিকাটি কমরেড মুজফ্ফর আহমদ রচিত ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত]

ঘটনা পরম্পরায় এরা কাবুলে পৌঁছাবার পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের গুরু সিন্ধীর কথিত ‘জিহাদ’ সংগঠন করতে পারেনি। সেখানে প্রথমেই এদেরকে নজরবন্দী করে রাখা হয়। পরে কাবুলে অবস্থানরত রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের সুপারিশে আফগানিস্তানের আমীর এসব ভারতীয় ছাত্রকে মুক্তি প্রদান করেন।

১৯১৫ সালের ১লা ডিসেম্বর কাবুলে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে যে নির্বাসিত বা অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিলো, এই পলাতক ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে তার সঙ্গে জড়িত হয়। এই অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিল রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ ও মালানা বারাকাতুল্লাহ ও ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ছিল যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তরুণ যুবক খুশি মুহম্মদ ছিল এই মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য।”

অস্থায়ী সরকারের রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ফাঁস ও পরবর্তী ঘটনা।
আলোচনার শুরুতে রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের যে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের বর্ণনা রয়েছে তাতে আমরা দেখতে পাই যে, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কাবুলের এই অস্থায়ী সরকারের ব্রিটিশবিরোধী কর্মপরিকল্পনাসমূহ একটি রেশমের রুমালে লিখে তা হিজাজ উনাতে অবস্থানরত মাহমুদ হাসানের নিকট প্রেরণের করে। কিন্তু সেই চিঠি শেষমেষ ব্রিটিশদের হাতে পড়ে যায় এবং তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
ব্রিটিশদের নিকট অস্থায়ী সরকারের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশদের প্রচেষ্টায় কাবুলের অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম শেষপর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং অস্থায়ী সরকার বিলুপ্ত হয়। ফলশ্রুতিতে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তার পরবর্তী কর্মকা- হিসেবে গ্রহণ করে কমিউনিজমকে। সে সোভিয়েত রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে গমন করে এবং সেখানকার রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধায় কমিউনিজম নিয়ে একবছর পড়াশোনা করে। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় দেওবন্দীদের প্রধান সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নিজস্ব প্রকাশনা Deoband Ulemas Movement for the Freedom of India-তে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

the British Government had foiled this attempt also. After some time, the work of the Provisional Government was also banned. Sindhi then had to forma Congress Party in Kabul. It was the first party formed outside the British Empire. On the one hand the tyranny of the British was at its peak during thesedays and on the other the poitical situation of the world had become more turbulent. Sindhi then decided to go to Moscow to study about the Russian Revolution.

Study of Socialism
In 1922 Sindhi went to Moscow and with the help of non-resident Indians there he studied Socialism.Since Russia had a pact with the Indian National Congress, she treated him as special guest and made all the arrangements for his stay. He succeeded in devising ways and means to protect his religious movement from the onslaught of materialistic and worldly concepts. Sindhi was grateful to the Indian National Congress,non-resident Indians and last but not the least the Russian Government, for extending their help and cooperation.
[সূত্র: Deoband Ulemas Movement for the Freedom of India, প্রকাশনায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, রচয়িতা ড. ফারহাত তাবাসসুম, বিভাগীয় প্রধান, ইতিহাস বিভাগ, স্যার সাইয়েদ কলেজ, আওরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র, ভারত, পৃষ্ঠা নং ১৩২]
বইটির পিডিএফ লিঙ্ক:
Click This Link

অর্থাৎ রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার কিছু সময় পর কাবুলের অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম বিলুপ্ত হয়, যে কারণে সিন্ধীকে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবার লক্ষ্যে কাবুলে কংগ্রেস পার্টি চালু করতে হয়। এটিই ছিল ভারতীয় ভূ-খ-ের বাইরে কংগ্রেস পার্টির সর্বপ্রথম কার্যক্রম। কিন্তু কাবুলে তখন ব্রিটিশদের প্রভাব অত্যধিক বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং বিশ্বরাজনীতিতেও পটপরিবর্তন ঘটছিল(মূলত রাশিয়ায় কমিউনিস্টদের ক্ষমতালাভের কারণে)। সিন্ধী তখন কাবুল ত্যাগ করে রাশিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সেখানকার কমিউনিস্ট অভ্যুত্থান নিয়ে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে। (অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশশাসন উৎখাতের তর্জতরীক্বা রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের মতাদর্শ থেকে যোগাড় করা, যেভাবে তার বর্তমান সময়ের উত্তরসূরীরা গণতন্ত্রের মাঝে সমাধান খুঁজতে যায়)

১৯২২ সালে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী মস্কোতে যায় এবং সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের সহায়তায় সে সমাজতন্ত্র তথা কমিউনিজম নিয়ে পড়াশোনা করে। যেহেতু রাশিয়ার সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের চুক্তি ছিল, সেহেতু রাশিয়ান সরকার ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীকে ‘বিশেষ অতিথি’ হিসেবে গ্রহণ করে এবং তার রাশিয়ায় থাকার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেয়। ভারতের জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ কর্তৃক প্রকাশিত উক্ত বইটিতে আরও লেখা রয়েছে, সেখানে সে নাকি কমিউনিজমের মধ্যে তার ‘ধর্মীয় বিপ্লব’ সাধনের উপকরণ বের করতে সমর্থ হয়! সিন্ধী তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রতি, সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি এবং পরিশেষে রাশিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের প্রতি, যে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীকে সমূহ সহযোগিতা করেছিল (কমিউনিজম নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য)।

ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর আরও উদ্দেশ্য ছিল লেনিনের সাথে দেখা করা, কিন্তু লেনিন অসুস্থ থাকায় তার সে আশা পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে তুরস্কের রাজধানী আংকারায় গমন করে। পাকিস্তানী দৈনিক ‘দি ডন’ এ প্রকাশিত একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে
From Russia Sindhi traveled to Turkey and it was fromIstanbul that he began to give shape to his ideas of Islamic Socialism througha series of writings especially aimed at the Muslims of India
[অর্থাৎ সিন্ধী রাশিয়া থেকে তুরস্কে রওয়ানা হয়েছিল এবং ইস্তাম্বুল থেকে সে তার কথিত ‘ইসলামী সমাজতন্ত্রে’র রূপরেখা প্রণয়ন করতে শুরু করেছিল তার লেখালেখির দ্বারা, এবং তার লেখার লক্ষ্যবস্তু ছিল ভারতীয় মুসলিম সমাজ।]
সূত্র:
Click This Link

সিন্ধীর পলাতক ১৫ জন শিষ্য গুরুর পদাঙ্ক অনুসরণ করলো
সিন্ধীর হাত ধরে পালিয়ে আসা ১৫ জন ছাত্রের তালিকা ও তাদের পলায়নের বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর সিন্ধীর সাথে কমিউনিস্টদের দহরম-মহরম শিষ্যদের মনেও প্রভাব ফেলে, তাছাড়া মাতৃভূমি ছেড়ে আসা এসব মুসলিম পরিবারের সন্তানদের নিকট সিন্ধীই ছিল একমাত্র অবলম্বন। ফলশ্রুতিতে উক্ত ১৫জন ছাত্রের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে একেকজন সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মীতে পরিণত হয়। পূর্বে আলোচিত এমআর আখতার মুকুলের প্রবন্ধটিতে সে সম্পর্কে যা আলোচনা
রয়েছে তা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ

“রাশিয়ায় সর্বহারাদের বিপ্লব সফল হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯১৫ সালে লাহোর থেকে কাবুলে আগত সেই ১৫ জন ছাত্রের মধ্যে আদর্শের প্রশ্নে বেশ মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। খুশি মুহম্মদ ওরফে মুহম্মদ আলী ওরফে আহমদ হাসান এসময় নিজেকে সমাজতন্ত্রের আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে ঘোষণা করে। তার অন্তরঙ্গ বন্ধু গোলাম হুসাইনও (তালিকার ৭ নম্বর ব্যক্তি) মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। মেডিকেল এর ছাত্র আবদুল হামিদ (১২ নং) মস্কো চলে যায় এবং সেখানে শ্রমজীবী প্রাচ্যের কমিউনিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে। পলাতক ছাত্রদের মধ্যে মেডিকেলের আরেক ছাত্র রহমত আলীও (১৩ নং) নিজেকে কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ১৯১৯ সালের ৯ই জুন তারিখে তাসখন্দ-এ অনুষ্ঠিত তুর্কিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে ভারতের পক্ষ থেকে বক্তৃতাদান করেছিল। পরবর্তীতে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই মেডিকেলের ছাত্র রহমত আলী ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে। তার থিসিসের বিষয় ছিল “মার্কসীয় দৃষ্টিতে ভারতের হিন্দু-মুসলমান সমস্যা” এবং ভাষা ছিল ফরাসী।

আর ১৯২০ সালের ১৭ই অক্টোবর তাসখন্দ নগরীতে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ৭ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম ছিল উপরোক্ত খুশি মুহম্মদ ওরফে মুহম্মদ আলী। সে তার সমস্ত জীবন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িত থেকে মস্কো থেকে প্যারিস পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছে।”
ভারতের কমিউনিস্ট রাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কিত বইগুলোতে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ও তাদের অনুসারীদের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। কমরেড মুজফ্ফর আহমদ তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’-তে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ৭জন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে খুশি মুহম্মদ ছাড়াও মুহম্মদ শফীক নামে আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছে। মুহম্মদ শফীক ছিল তাসখন্দে অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সভার নির্বাচিত সেক্রেটারী, তথা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিরই প্রথম সেক্রেটারী। ১৫জন ছাত্রের তালিকার বাইরে অবস্থানকারী এই কমরেড শফীকও ছিল ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর অনুসারী এবং কাবুলে হিজরতকারী। (উক্ত গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৭৪-৭৬)

পরিশিষ্ট: উপরোক্ত আলোচনায় আমরা দেওবন্দীদের কর্মকান্ড- ও তাদের কথিত আন্দোলনগুলোর বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল সম্পর্কে নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।

১) যে ভাবেই হোক, দেওবন্দীরা ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে চাইত বলে তাদের দাবি। সেজন্য কমিউনিস্টদের দারস্থ হওয়া থেকে শুরু করে দ্বীন ইসলাম উনার সুমহান আদর্শের সাথে সাংঘার্ষিক হেন জিনিসটি নেই, যা তারা করেনি। আজও তারা তাদের সেই পুরাতন কর্মপদ্ধতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যবহার করছে আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, মাও সেতুংয়ের লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল(অর্থাৎ হোক ইসলামিক বা অনৈসলামিক যে ভাবেই হোক!)। দ্বীন ইসলাম বহির্ভূত কাফিরদের এসব তর্জতরীক্বা তারা পালন করছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনারই দোহাই দিয়ে। (নাউযুবিল্লাহ) কিন্তু শেষমেষ পবিত্র দ্বীন ইসলাম, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিছুই থাকে না। শেষমেষ থাকে নির্ভেজাল গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র, যেভাবে পবিত্র জিহাদ উনার দোহাই দিয়ে শুরু করা রেশমী রুমাল আন্দোলন শেষপর্যন্ত পর্যবসিত হয়েছে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূতিকাগারে।

২) দেওবন্দীদের সমস্ত আন্দোলনের ফলাফল একইরকম। তাদের আন্দোলনে মুসলমান উনাদের কোন লাভ তো হয়ই নি, বরং মুসলিম উম্মাহ বারংবার স্থায়ীভাবে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপরীতে লাভবান হয়েছে দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী কাফির-মুশরিকরা। উদাহরণস্বরূপ এই রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা তার জন্মের পর থেকেই ভারতবর্ষের মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। ভারতভাগ থেকে আরম্ভ করে হেন জিনিসটি নেই, যেখানে কমিউনিস্টরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং হিন্দুদের পক্ষে যায়নি। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বিভিন্ন বইসমূহ তো এই কমিউনিস্টদেরই লেখা!
অনুরূপ ফলাফল আমরা দেখি হুসাইন মদনির পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে, তার কারণেই আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বহু মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল বাংলাদেশের অন্তুর্ভূক্ত হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে হিন্দুদের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীন মুসলমানদের মতো আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা পারেনি তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে। সেসব জায়গায় আজও মুসলমানদের চাকরিবাকরিতে কোন সুযোগ দেয়া হয় না, উপরন্তু দাঙ্গার সময় তাদের ওপর হত্যা-সম্ভ্রমহা নি চালানো হয় দেদারসে। স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষের মুসলমান উনাদেরকে হিন্দুদের নিকট পরাধীন করে দিয়ে যে ক্ষতিটি করেছে এই হুসাইন মদনি, তা অকল্পনীয়! ভারতের লাখ লাখ মুসলিম মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর কাফফারা এই হুসাইন মদনি গংকেই দিতে হবে, সে খোদ কংগ্রেসের দ্বারা পাকিস্তানের অস্তিত্ব মেনে নেয়ার পরও পাকিস্তানবিরোধী জিদের বশে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের প্ররোচিত করেছিল পাকিস্তানে যোগ না দেয়ার জন্য। মুলোমুলি করে এই মদনীই বাংলাদেশ থেকে আসামকে কেড়ে নিয়ে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করেছিল, সিলেট তার হাত থেকে অল্পের জন্য রেহাই পেয়েছিল বলা চলে।
বর্তমান সময়ে শায়খুল হদছ ও মুফতি কমিনী থেকে শুরু করে তেঁতুল হুজুরদের ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম নেই। এরা সবাই দ্বীন ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে কাফিরদের প্ররোচনায় এমনসব আন্দোলন করছে, যার ফলশ্রুতিতে মুসলমান উনাদের অত্যন্ত গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

৩) আমরা দেখতে পাই, দেওবন্দী মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ও মাহমুদ হাসানদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একদল যুবক দেশত্যাগ করে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল দ্বীন ইসলাম উনার জন্য কাজ করা, দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা। কিন্তু উলামায়ে সূ-দের সাথে চলার ফলশ্রুতিতে তারা শেষপর্যন্ত হয়েছিল কমিউনিস্ট, দ্বীন ইসলাম উনার সাথে কোন সম্পর্কই আর তাদের অবশিষ্ট ছিল না।
ঠিক সেভাবে বর্তমানেও দেওবন্দীরা যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে তাদের দিয়ে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ করাচ্ছে। এসব যুবকরা ভাবছে তারা দ্বীন ইসলাম উনার পথেই রয়েছে, যদিও হাক্বীকতে তারা পালন করছে কাফিরদের তর্জতরীক্বা, যার ফলে তারা দ্বীন ইসলাম উনার থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করানোর লোভ দেখিয়ে মুসলিম ঘরের যুবকদের দ্বারা তারা কাফিরদের খিদমত করিয়ে নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ‘জিহাদ’ উনার দোহাই দিয়ে মুসলমান যুবকদের দ্বারা উপমহাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, আর তার উত্তরসূরীরা এখন করছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। মুসলিম যুবকদের দুনিয়া ও আখিরাত তারা আগেও বরবাদ করেছিল, এখনও করে যাচ্ছে।

৪) দেওবন্দীরা এখনো হায় আফসোস করে, কেন তাদের রেশমী রুমাল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো না! সেটা হলে নাকি ভারত সাতচল্লিশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নয়, বরং ত্রিশবছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই নাকি স্বাধীনতা লাভ করত!
কিন্তু সমঝদার পাঠকগণ ফিকির করলেই খেয়াল করবেন যে, রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র যখন করা হয়েছিল তখনও কিন্তু ভারতবর্ষে মুসলমান উনাদের স্বাধীন আবাসভূমির কোন দাবি গড়ে উঠেনি। পাকিস্তান আন্দোলন তখনও জন্মলাভ করেনি। সুতরাং তখন যদি ভারতবর্ষ ব্রিটিশশাসনের হাত থেকে মুক্ত হতো, তাহলে ভারতে মুসলমান উনাদের কোন দেশ থাকত কী? বাংলাদেশ, পাকিস্তান এসব থাকত কী?
মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কাবুলের যেই অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্ রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল, সেই অস্থায়ী সরকারের প্রধান কিন্তু ছিল একজন হিন্দু, রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ। এই মহেন্দ্র প্রতাপ শুধু হিন্দুই ছিল না, বরং স্বদেশী আন্দোলন সমর্থনকারী কট্টরপন্থী হিন্দু ছিল। উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, এই মহেন্দ্র প্রতাপ ছিল বালগঙ্গাধর তিলকসহ অন্যান্য উগ্র হিন্দু নেতাদের ভাবশিষ্য, যারা প্রকাশ্য সভায় স্পেনের মুসলমানদের ন্যায় ভারতীয় মুসলমানদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়ার কথা উচ্চারণ করত। যারা একটি অখণ্ড হিন্দুভারতের স্বপ্ন দেখত, যেখানে কোন মুসলমানের অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের প্রতিনিধি হিসেবেই সে কাবুলের অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিল। অর্থাৎ যদি রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতো, আল্লাহ পাক না করুন আজকে ভারতে কোন মুসলমানের অস্তিত্বও হয়তো থাকত না। আল্লাহ পাক তিনি যা করেন, ভালর জন্যই করেন।

৫) আমাদের দেশে কমিউনিস্ট বলতে বোঝায় হিন্দুত্বের প্রতি অনুগত একদল ব্যক্তিকে, যারা দাড়িটুপি দেখলেই নাক সিঁটকায়, বিপরীতে পূজার মৌসুম আসলে দেবীমূর্তির সামনে ধুতি পড়ে গড়াগড়ি খায়। বাঙালি হিন্দুদের মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে সুগারকোট দেয়ার জন্য কমিউনিজমকে ব্যবহার করা হয়। ফলশ্রুতিতে বাঙালি কমিউনিস্টদের গুরু হিসেবে মণি সিংহসহ কতগুলো হিন্দুর নামই কেবল শোনা যায়, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কিংবা এদের নাম শোনা যায় না।
তবে পাকিস্তান বা বাঙালি সংস্কৃতির আওতার বাইরে যেসব অঞ্চল রয়েছে, সেসব অঞ্চলের কমিউনিস্টরা এখনো সিন্ধীকে তাদের জন্মদাতা পিতা হিসেবেই জ্ঞান করে। তারা তাকে ভুলে যায় নি। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী দৈনিক ডন তাদের কলামে (সূত্র: Click This Link) যা উল্লেখ করেছে তা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি-
IS Islam compatible with socialism? The question is asked because tomany ‘socialism’ means an atheistic philosophy, and at the very core of Islamicteaching s is the belief in one God. How can then Islam and socialism gotogether?
However, this is not the correct view. Many noted ulema had acceptedsociali sm as an essential part of Islamic teachings. In India, Maulana HasratMohani and Maulana Ubaidullah Sindhi enthusiasticall y supported the communistmoveme nt. Maulana Mohani was one of the founders of the Communist Party ofIndia.

মূল লিখাঃ-
Click This Linkওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক ও দেওবন্দীদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব

উপমহাদেশের মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু যারা, তাদের মধ্যে কমিউনিস্টদের উল্লেখ থাকবে প্রথমেই। বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা কমিউনিজমের কাঁধে সওয়ার হয়ে থাকে তাদের সাম্প্রদায়িক কর্মকা-কে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নামে বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে। আমাদের দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বাজারে যতগুলো বই দেখা যায়, তার প্রায় সবই কমিউনিস্টদের লেখা। শুধু উপমহাদেশ কিংবা বাংলাদেশ নয়, কমিউনিজম গোটা বিশ্বের মুসলমান উনাদের জন্য একটি মূর্তিমান অভিশাপতুল্য।

অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের উপমহাদেশে এই কমিউনিজমের বীজ রোপিত হয়েছিল মুসলমান ঘরের সেসব সন্তানদের দ্বারা, যারা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে দেওবন্দী মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সহযোগী তথা রেশমি রুমাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীবৃন্দ। এই কর্মীরা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর নেতৃত্বে গিয়েছিল দ্বীন ইসলাম উনার পক্ষে কাজ করার জন্য, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু আফসোস, সিন্ধীর কথিত ‘জিহাদে’র ডাকে দেশত্যাগ করা মুসলমান ঘরের এসব সন্তানেরা ফিরে এসেছিল কমিউনিস্ট হয়ে। নাস্তিক হয়ে, ধর্মদ্রোহী হয়ে!

দেওবন্দীদের সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন যে দেওবন্দীরা তাদের এই কথিত ‘রেশমী রুমাল আন্দোলন’ নিয়েই সবচেয়ে বেশি গর্ব করে থাকে। এমনকি রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রকে দেওবন্দের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ¦ল(!) অধ্যায় বলতেও তাদের অনেকে দ্বিধা করে না। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই ষড়যন্ত্রে যারা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সহযোগী হিসেবে লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুল গিয়েছিল, তাদের একটি অংশই পরবর্তীতে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম দেয়। যার পেছনে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না, কারণ সিন্ধীই তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। লেনিনের সাথে দেখা করার জন্য রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সেখানে অবস্থান করেছিল এই ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী। তার কর্মকা-ের মাধ্যমেই তার শিষ্যরা প্ররোচিত হয়েছিল কমিউনিস্ট মতবাদে দীক্ষিত হওয়ার জন্য। তার দলিলভিত্তিক ইতিহাসই নিচে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হচ্ছে।

**রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র: পটভূমিকা ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস**
রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আফগানিস্তানের কাবুলে মুহাজির বা দেশত্যাগী নেতাদের নিয়ে গঠিত অস্থায়ী ভারত সরকারের মাধ্যমে। ১৯১৫ ও১৯১৬ সালে বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে এ উপমহাদেশ ত্যাগ করে। এদের মধ্যে ছিল লাহোর কলেজের ১৫ জন মুসলমান ছাত্র (এরাই কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক)। তারা গোপনে আফগানিস্তানে হিজরত করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে গমন করা এবং ব্রিটিশ যাঁতাকল থেকে ভারতকে মুক্ত করা। সেখানে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তাদের সাথে মিলিত হয়। ১৯১৫ সালে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে ভারতীয়-তুর্কি-জার্মান মিশন ইরানের মধ্য দিয়ে কাবুলে পৌঁছায় এবং এ দলের সঙ্গে মিলিত হয়। এ মিশনের উদ্দেশ্য ছিল আফগান কর্তৃপক্ষকে ভারত আক্রমণে উৎসাহ প্রদান করা এবং এর সাহায্যে ব্রিটিশ বাহিনীকে সীমান্তে ব্যস্ত রাখা। এ ব্যবস্থা করে ব্রিটেনের মিত্র রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তুর্কি ও জার্মান বাহিনীর হাত শক্ত করাই ছিল এ মিশনের প্রধান কাজ।
যে-কোন উপায়ে তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য একটি দল দারুল উলুম দেওবন্দের কথিত শায়খুল হিন্দ মালানা মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে হেজাজ উনার উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগ করে। তাদের সেখানে অবস্থানকালে হেজাজ উনাতে নিযুক্ত তুর্কি সামরিক গভর্নর গালিব পাশা জিহাদের ঘোষণা প্রদান করে। এ ঘোষণার উদ্দেশ্য তুর্কি লোকবল, অর্থ বা যে কোন উপায়ে ভারতীয় মুসলমানদেরকে সাহায্য করা। এদিকে মাহমুদ হাসান আরবে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময় কাবুলে অবস্থান করছিল মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, সে কাবুল থেকে একটি রেশমের রুমালে তার কর্মপন্থা লিপিবদ্ধ করে গোপনে তা হেজাজ উনাতে অবস্থানরত মাহমুদ হাসানের নিকট প্রেরণ করে। কিন্তু প্রাপকের নিকট পৌঁছার পূর্বেই পত্রটি সরকারের হাতে পড়ে যায় এবং সরকার একে ‘রেশমি রুমাল ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে।
[সূত্র: ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ড. ইনাম উল হক, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ১৪০]

১৫ জন ছাত্রের লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুল যাওয়ার বিস্তারিত ইতিহাস
উপরের আলোচনার প্রথমেই ১৫জন ছাত্রের কথা বলা হয়েছে, যারা লাহোর থেকে পালিয়ে কাবুলে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর সাথে যোগ দিয়েছিল। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট রাজনীতির প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহমদ তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গ্রন্থে উক্ত ছাত্রদের তালিকা ও তাদের ইতিহাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে।

উক্ত ছাত্রদের একজন ছিল খুশি মুহম্মদ, ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট রাজনীতির ইতিহাসে যে কমরেড খুশি মুহম্মদ নামেই পরিচিত। প্রখ্যাত সাংবাদিক, একাত্তরের চরমপত্র অনুষ্ঠানের পাঠক এমআর আখতার মুকুল রচিত ‘গয়রহ’ নামক প্রবন্ধগ্রন্থে উক্ত কমরেড খুশি মুহম্মদকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ রয়েছে ‘কমরেড খুশি মুহম্মদের অমর কাহিনী’ নামে। উক্ত প্রবন্ধের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ
“খুশি মুহম্মদ লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে এস এস সি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় লাহোর মেডিকেল কলেজে। এখানেই সে কথিত ‘বিপ্লবী’দের সংস্পর্শে আসে। অবশ্য এই বিপ্লবীদের ধরণটা কিছুটা ভিন্নতর। এদের নেতা ছিল মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী এবং তারই ছাত্র সাংবাদিক খাজা আবদুল হাই। সিন্ধীর বক্তব্য একটাই এবং তা হচ্ছে, যে ভাবেই হোক ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করতেই হবে। এই আদর্শকে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ‘জিহাদ’ নামে তার শিষ্যদের নিকট অভিহিত করলো।

এসময় তুর্কীর খলিফা, জার্মানির কাইজার এবং আফগানিস্তানের আমীর এরা সবাই ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে। তাই এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইংরেজদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনবোধে বিদেশী শক্তির সাহায্য নিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে ১৯১৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৫ জন ছাত্রের একটি দল পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আফগান সীমান্ত অতিক্রমের জন্য লাহোর ত্যাগ করলো। ইংরেজ পুলিশের খাতায় এদের ‘মুজাহিদ ছাত্র’ বা ‘পলাতক ছাত্র’ হিসেবে রেকর্ড করে রাখা হয়। নীচে এদের নাম ও পরিচয় দেয়া হলোঃ
১) আবদুল বারী এম এ ক্লাসের ছাত্র
২) আবদুল কাদির ঐ
৩) আবদুল মজিদ খান বিএ ক্লাসের ছাত্র
৪) আল্লাহ নেওয়াজ খান ঐ
৫) আবদুল্লাহ ঐ
৬) আবদুর রশিদ ঐ
৭) গোলাম হুসাইন ঐ
৮) জাফর হাসসান এবক ঐ
৯) আবদুল খালিক ঐ
১০) মুহম্মদ হাসসান ঐ
১১) খুশি মুহম্মদ মেডিকেল ছাত্র
১২) আবদুল হামিদ ঐ
১৩) রহমত আলী ঐ
১৪) সুজাউল্লাহ ঐ
১৫) আল্লাহ নেওয়াজ খান কলেজের ছাত্র
[তালিকাটি কমরেড মুজফ্ফর আহমদ রচিত ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত]

ঘটনা পরম্পরায় এরা কাবুলে পৌঁছাবার পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের গুরু সিন্ধীর কথিত ‘জিহাদ’ সংগঠন করতে পারেনি। সেখানে প্রথমেই এদেরকে নজরবন্দী করে রাখা হয়। পরে কাবুলে অবস্থানরত রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের সুপারিশে আফগানিস্তানের আমীর এসব ভারতীয় ছাত্রকে মুক্তি প্রদান করেন।

১৯১৫ সালের ১লা ডিসেম্বর কাবুলে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে যে নির্বাসিত বা অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিলো, এই পলাতক ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে তার সঙ্গে জড়িত হয়। এই অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিল রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ ও মালানা বারাকাতুল্লাহ ও ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ছিল যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তরুণ যুবক খুশি মুহম্মদ ছিল এই মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য।”

অস্থায়ী সরকারের রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ফাঁস ও পরবর্তী ঘটনা।
আলোচনার শুরুতে রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের যে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের বর্ণনা রয়েছে তাতে আমরা দেখতে পাই যে, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কাবুলের এই অস্থায়ী সরকারের ব্রিটিশবিরোধী কর্মপরিকল্পনাসমূহ একটি রেশমের রুমালে লিখে তা হিজাজ উনাতে অবস্থানরত মাহমুদ হাসানের নিকট প্রেরণের করে। কিন্তু সেই চিঠি শেষমেষ ব্রিটিশদের হাতে পড়ে যায় এবং তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
ব্রিটিশদের নিকট অস্থায়ী সরকারের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশদের প্রচেষ্টায় কাবুলের অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম শেষপর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং অস্থায়ী সরকার বিলুপ্ত হয়। ফলশ্রুতিতে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী তার পরবর্তী কর্মকা- হিসেবে গ্রহণ করে কমিউনিজমকে। সে সোভিয়েত রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে গমন করে এবং সেখানকার রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধায় কমিউনিজম নিয়ে একবছর পড়াশোনা করে। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় দেওবন্দীদের প্রধান সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নিজস্ব প্রকাশনা Deoband Ulemas Movement for the Freedom of India-তে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

the British Government had foiled this attempt also. After some time, the work of the Provisional Government was also banned. Sindhi then had to forma Congress Party in Kabul. It was the first party formed outside the British Empire. On the one hand the tyranny of the British was at its peak during thesedays and on the other the poitical situation of the world had become more turbulent. Sindhi then decided to go to Moscow to study about the Russian Revolution.

Study of Socialism
In 1922 Sindhi went to Moscow and with the help of non-resident Indians there he studied Socialism.Since Russia had a pact with the Indian National Congress, she treated him as special guest and made all the arrangements for his stay. He succeeded in devising ways and means to protect his religious movement from the onslaught of materialistic and worldly concepts. Sindhi was grateful to the Indian National Congress,non-resident Indians and last but not the least the Russian Government, for extending their help and cooperation.
[সূত্র: Deoband Ulemas Movement for the Freedom of India, প্রকাশনায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, রচয়িতা ড. ফারহাত তাবাসসুম, বিভাগীয় প্রধান, ইতিহাস বিভাগ, স্যার সাইয়েদ কলেজ, আওরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র, ভারত, পৃষ্ঠা নং ১৩২]
বইটির পিডিএফ লিঙ্ক:
Click This Link

অর্থাৎ রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার কিছু সময় পর কাবুলের অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম বিলুপ্ত হয়, যে কারণে সিন্ধীকে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবার লক্ষ্যে কাবুলে কংগ্রেস পার্টি চালু করতে হয়। এটিই ছিল ভারতীয় ভূ-খ-ের বাইরে কংগ্রেস পার্টির সর্বপ্রথম কার্যক্রম। কিন্তু কাবুলে তখন ব্রিটিশদের প্রভাব অত্যধিক বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং বিশ্বরাজনীতিতেও পটপরিবর্তন ঘটছিল(মূলত রাশিয়ায় কমিউনিস্টদের ক্ষমতালাভের কারণে)। সিন্ধী তখন কাবুল ত্যাগ করে রাশিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সেখানকার কমিউনিস্ট অভ্যুত্থান নিয়ে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে। (অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশশাসন উৎখাতের তর্জতরীক্বা রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের মতাদর্শ থেকে যোগাড় করা, যেভাবে তার বর্তমান সময়ের উত্তরসূরীরা গণতন্ত্রের মাঝে সমাধান খুঁজতে যায়)

১৯২২ সালে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী মস্কোতে যায় এবং সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের সহায়তায় সে সমাজতন্ত্র তথা কমিউনিজম নিয়ে পড়াশোনা করে। যেহেতু রাশিয়ার সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের চুক্তি ছিল, সেহেতু রাশিয়ান সরকার ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীকে ‘বিশেষ অতিথি’ হিসেবে গ্রহণ করে এবং তার রাশিয়ায় থাকার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেয়। ভারতের জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ কর্তৃক প্রকাশিত উক্ত বইটিতে আরও লেখা রয়েছে, সেখানে সে নাকি কমিউনিজমের মধ্যে তার ‘ধর্মীয় বিপ্লব’ সাধনের উপকরণ বের করতে সমর্থ হয়! সিন্ধী তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রতি, সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি এবং পরিশেষে রাশিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের প্রতি, যে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীকে সমূহ সহযোগিতা করেছিল (কমিউনিজম নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য)।

ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর আরও উদ্দেশ্য ছিল লেনিনের সাথে দেখা করা, কিন্তু লেনিন অসুস্থ থাকায় তার সে আশা পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে তুরস্কের রাজধানী আংকারায় গমন করে। পাকিস্তানী দৈনিক ‘দি ডন’ এ প্রকাশিত একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে
From Russia Sindhi traveled to Turkey and it was fromIstanbul that he began to give shape to his ideas of Islamic Socialism througha series of writings especially aimed at the Muslims of India
[অর্থাৎ সিন্ধী রাশিয়া থেকে তুরস্কে রওয়ানা হয়েছিল এবং ইস্তাম্বুল থেকে সে তার কথিত ‘ইসলামী সমাজতন্ত্রে’র রূপরেখা প্রণয়ন করতে শুরু করেছিল তার লেখালেখির দ্বারা, এবং তার লেখার লক্ষ্যবস্তু ছিল ভারতীয় মুসলিম সমাজ।]
সূত্র:
Click This Link

সিন্ধীর পলাতক ১৫ জন শিষ্য গুরুর পদাঙ্ক অনুসরণ করলো
সিন্ধীর হাত ধরে পালিয়ে আসা ১৫ জন ছাত্রের তালিকা ও তাদের পলায়নের বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর সিন্ধীর সাথে কমিউনিস্টদের দহরম-মহরম শিষ্যদের মনেও প্রভাব ফেলে, তাছাড়া মাতৃভূমি ছেড়ে আসা এসব মুসলিম পরিবারের সন্তানদের নিকট সিন্ধীই ছিল একমাত্র অবলম্বন। ফলশ্রুতিতে উক্ত ১৫জন ছাত্রের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে একেকজন সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মীতে পরিণত হয়। পূর্বে আলোচিত এমআর আখতার মুকুলের প্রবন্ধটিতে সে সম্পর্কে যা আলোচনা
রয়েছে তা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ

“রাশিয়ায় সর্বহারাদের বিপ্লব সফল হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯১৫ সালে লাহোর থেকে কাবুলে আগত সেই ১৫ জন ছাত্রের মধ্যে আদর্শের প্রশ্নে বেশ মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। খুশি মুহম্মদ ওরফে মুহম্মদ আলী ওরফে আহমদ হাসান এসময় নিজেকে সমাজতন্ত্রের আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে ঘোষণা করে। তার অন্তরঙ্গ বন্ধু গোলাম হুসাইনও (তালিকার ৭ নম্বর ব্যক্তি) মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। মেডিকেল এর ছাত্র আবদুল হামিদ (১২ নং) মস্কো চলে যায় এবং সেখানে শ্রমজীবী প্রাচ্যের কমিউনিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে। পলাতক ছাত্রদের মধ্যে মেডিকেলের আরেক ছাত্র রহমত আলীও (১৩ নং) নিজেকে কমিউনিস্ট কর্মী হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ১৯১৯ সালের ৯ই জুন তারিখে তাসখন্দ-এ অনুষ্ঠিত তুর্কিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে ভারতের পক্ষ থেকে বক্তৃতাদান করেছিল। পরবর্তীতে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই মেডিকেলের ছাত্র রহমত আলী ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে। তার থিসিসের বিষয় ছিল “মার্কসীয় দৃষ্টিতে ভারতের হিন্দু-মুসলমান সমস্যা” এবং ভাষা ছিল ফরাসী।

আর ১৯২০ সালের ১৭ই অক্টোবর তাসখন্দ নগরীতে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ৭ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম ছিল উপরোক্ত খুশি মুহম্মদ ওরফে মুহম্মদ আলী। সে তার সমস্ত জীবন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িত থেকে মস্কো থেকে প্যারিস পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছে।”
ভারতের কমিউনিস্ট রাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কিত বইগুলোতে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ও তাদের অনুসারীদের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। কমরেড মুজফ্ফর আহমদ তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’-তে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ৭জন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে খুশি মুহম্মদ ছাড়াও মুহম্মদ শফীক নামে আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছে। মুহম্মদ শফীক ছিল তাসখন্দে অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সভার নির্বাচিত সেক্রেটারী, তথা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিরই প্রথম সেক্রেটারী। ১৫জন ছাত্রের তালিকার বাইরে অবস্থানকারী এই কমরেড শফীকও ছিল ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর অনুসারী এবং কাবুলে হিজরতকারী। (উক্ত গ্রন্থের পৃষ্ঠা ৭৪-৭৬)

পরিশিষ্ট: উপরোক্ত আলোচনায় আমরা দেওবন্দীদের কর্মকান্ড- ও তাদের কথিত আন্দোলনগুলোর বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল সম্পর্কে নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।

১) যে ভাবেই হোক, দেওবন্দীরা ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে চাইত বলে তাদের দাবি। সেজন্য কমিউনিস্টদের দারস্থ হওয়া থেকে শুরু করে দ্বীন ইসলাম উনার সুমহান আদর্শের সাথে সাংঘার্ষিক হেন জিনিসটি নেই, যা তারা করেনি। আজও তারা তাদের সেই পুরাতন কর্মপদ্ধতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যবহার করছে আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, মাও সেতুংয়ের লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল(অর্থাৎ হোক ইসলামিক বা অনৈসলামিক যে ভাবেই হোক!)। দ্বীন ইসলাম বহির্ভূত কাফিরদের এসব তর্জতরীক্বা তারা পালন করছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনারই দোহাই দিয়ে। (নাউযুবিল্লাহ) কিন্তু শেষমেষ পবিত্র দ্বীন ইসলাম, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিছুই থাকে না। শেষমেষ থাকে নির্ভেজাল গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র, যেভাবে পবিত্র জিহাদ উনার দোহাই দিয়ে শুরু করা রেশমী রুমাল আন্দোলন শেষপর্যন্ত পর্যবসিত হয়েছে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূতিকাগারে।

২) দেওবন্দীদের সমস্ত আন্দোলনের ফলাফল একইরকম। তাদের আন্দোলনে মুসলমান উনাদের কোন লাভ তো হয়ই নি, বরং মুসলিম উম্মাহ বারংবার স্থায়ীভাবে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপরীতে লাভবান হয়েছে দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী কাফির-মুশরিকরা। উদাহরণস্বরূপ এই রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা তার জন্মের পর থেকেই ভারতবর্ষের মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। ভারতভাগ থেকে আরম্ভ করে হেন জিনিসটি নেই, যেখানে কমিউনিস্টরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং হিন্দুদের পক্ষে যায়নি। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বিভিন্ন বইসমূহ তো এই কমিউনিস্টদেরই লেখা!
অনুরূপ ফলাফল আমরা দেখি হুসাইন মদনির পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে, তার কারণেই আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বহু মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল বাংলাদেশের অন্তুর্ভূক্ত হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে হিন্দুদের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীন মুসলমানদের মতো আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা পারেনি তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে। সেসব জায়গায় আজও মুসলমানদের চাকরিবাকরিতে কোন সুযোগ দেয়া হয় না, উপরন্তু দাঙ্গার সময় তাদের ওপর হত্যা-সম্ভ্রমহা নি চালানো হয় দেদারসে। স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষের মুসলমান উনাদেরকে হিন্দুদের নিকট পরাধীন করে দিয়ে যে ক্ষতিটি করেছে এই হুসাইন মদনি, তা অকল্পনীয়! ভারতের লাখ লাখ মুসলিম মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর কাফফারা এই হুসাইন মদনি গংকেই দিতে হবে, সে খোদ কংগ্রেসের দ্বারা পাকিস্তানের অস্তিত্ব মেনে নেয়ার পরও পাকিস্তানবিরোধী জিদের বশে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের প্ররোচিত করেছিল পাকিস্তানে যোগ না দেয়ার জন্য। মুলোমুলি করে এই মদনীই বাংলাদেশ থেকে আসামকে কেড়ে নিয়ে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করেছিল, সিলেট তার হাত থেকে অল্পের জন্য রেহাই পেয়েছিল বলা চলে।
বর্তমান সময়ে শায়খুল হদছ ও মুফতি কমিনী থেকে শুরু করে তেঁতুল হুজুরদের ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম নেই। এরা সবাই দ্বীন ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে কাফিরদের প্ররোচনায় এমনসব আন্দোলন করছে, যার ফলশ্রুতিতে মুসলমান উনাদের অত্যন্ত গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

৩) আমরা দেখতে পাই, দেওবন্দী মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ও মাহমুদ হাসানদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একদল যুবক দেশত্যাগ করে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল দ্বীন ইসলাম উনার জন্য কাজ করা, দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা। কিন্তু উলামায়ে সূ-দের সাথে চলার ফলশ্রুতিতে তারা শেষপর্যন্ত হয়েছিল কমিউনিস্ট, দ্বীন ইসলাম উনার সাথে কোন সম্পর্কই আর তাদের অবশিষ্ট ছিল না।
ঠিক সেভাবে বর্তমানেও দেওবন্দীরা যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে তাদের দিয়ে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ করাচ্ছে। এসব যুবকরা ভাবছে তারা দ্বীন ইসলাম উনার পথেই রয়েছে, যদিও হাক্বীকতে তারা পালন করছে কাফিরদের তর্জতরীক্বা, যার ফলে তারা দ্বীন ইসলাম উনার থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করানোর লোভ দেখিয়ে মুসলিম ঘরের যুবকদের দ্বারা তারা কাফিরদের খিদমত করিয়ে নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী ‘জিহাদ’ উনার দোহাই দিয়ে মুসলমান যুবকদের দ্বারা উপমহাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, আর তার উত্তরসূরীরা এখন করছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। মুসলিম যুবকদের দুনিয়া ও আখিরাত তারা আগেও বরবাদ করেছিল, এখনও করে যাচ্ছে।

৪) দেওবন্দীরা এখনো হায় আফসোস করে, কেন তাদের রেশমী রুমাল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো না! সেটা হলে নাকি ভারত সাতচল্লিশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নয়, বরং ত্রিশবছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই নাকি স্বাধীনতা লাভ করত!
কিন্তু সমঝদার পাঠকগণ ফিকির করলেই খেয়াল করবেন যে, রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র যখন করা হয়েছিল তখনও কিন্তু ভারতবর্ষে মুসলমান উনাদের স্বাধীন আবাসভূমির কোন দাবি গড়ে উঠেনি। পাকিস্তান আন্দোলন তখনও জন্মলাভ করেনি। সুতরাং তখন যদি ভারতবর্ষ ব্রিটিশশাসনের হাত থেকে মুক্ত হতো, তাহলে ভারতে মুসলমান উনাদের কোন দেশ থাকত কী? বাংলাদেশ, পাকিস্তান এসব থাকত কী?
মালানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কাবুলের যেই অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্ রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল, সেই অস্থায়ী সরকারের প্রধান কিন্তু ছিল একজন হিন্দু, রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ। এই মহেন্দ্র প্রতাপ শুধু হিন্দুই ছিল না, বরং স্বদেশী আন্দোলন সমর্থনকারী কট্টরপন্থী হিন্দু ছিল। উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, এই মহেন্দ্র প্রতাপ ছিল বালগঙ্গাধর তিলকসহ অন্যান্য উগ্র হিন্দু নেতাদের ভাবশিষ্য, যারা প্রকাশ্য সভায় স্পেনের মুসলমানদের ন্যায় ভারতীয় মুসলমানদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দেয়ার কথা উচ্চারণ করত। যারা একটি অখণ্ড হিন্দুভারতের স্বপ্ন দেখত, যেখানে কোন মুসলমানের অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের প্রতিনিধি হিসেবেই সে কাবুলের অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিল। অর্থাৎ যদি রেশমী রুমাল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতো, আল্লাহ পাক না করুন আজকে ভারতে কোন মুসলমানের অস্তিত্বও হয়তো থাকত না। আল্লাহ পাক তিনি যা করেন, ভালর জন্যই করেন।

৫) আমাদের দেশে কমিউনিস্ট বলতে বোঝায় হিন্দুত্বের প্রতি অনুগত একদল ব্যক্তিকে, যারা দাড়িটুপি দেখলেই নাক সিঁটকায়, বিপরীতে পূজার মৌসুম আসলে দেবীমূর্তির সামনে ধুতি পড়ে গড়াগড়ি খায়। বাঙালি হিন্দুদের মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে সুগারকোট দেয়ার জন্য কমিউনিজমকে ব্যবহার করা হয়। ফলশ্রুতিতে বাঙালি কমিউনিস্টদের গুরু হিসেবে মণি সিংহসহ কতগুলো হিন্দুর নামই কেবল শোনা যায়, ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী কিংবা এদের নাম শোনা যায় না।
তবে পাকিস্তান বা বাঙালি সংস্কৃতির আওতার বাইরে যেসব অঞ্চল রয়েছে, সেসব অঞ্চলের কমিউনিস্টরা এখনো সিন্ধীকে তাদের জন্মদাতা পিতা হিসেবেই জ্ঞান করে। তারা তাকে ভুলে যায় নি। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী দৈনিক ডন তাদের কলামে (সূত্র: Click This Link) যা উল্লেখ করেছে তা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি-
IS Islam compatible with socialism? The question is asked because tomany ‘socialism’ means an atheistic philosophy, and at the very core of Islamicteaching s is the belief in one God. How can then Islam and socialism gotogether?
However, this is not the correct view. Many noted ulema had acceptedsociali sm as an essential part of Islamic teachings. In India, Maulana HasratMohani and Maulana Ubaidullah Sindhi enthusiasticall y supported the communistmoveme nt. Maulana Mohani was one of the founders of the Communist Party ofIndia.

মূল লিখাঃ-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×