শ্রদ্ধেয় এক রাজনীতিক বড় ভাই বড় আফসোস করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন "ইয়াং জেনারেশন আজকাল ফেসবুকে ফ্যাশন করে লিখে রাখে আই হেট পলিটিক্স! অথচ এই ইয়াং জেনারেশন পারে একটি জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে, তারপর তাদের এই ফ্যাশন মার্কা লেখার জন্য কিছুটা ভৎসনা দিয়েছেন।
আমি শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের সাথে একমত এভাবে ইয়াং জেনারেশন রাজনীতি বিমুখ হলে নোংরা মানুষদের দখলে চলে যাবে রাজনীতি। এ দেশে ইতিমধ্যে তা শুরু হয়েছে।
এখন কিছু প্রশ্ন চলে আসে, ইয়াং জেনারেশন কেন আজ রাজনীতি বিমুখ? কেন তারা লিখছে আমি রাজনীতি ঘৃণা করি? তাদের এই রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য দায়ী কারা?
যদি এক কথায় বলি, তাহলে বলবো আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় ভাইরা দায়ী, যারা আজ আফসোস করে বলছেন ইয়াং জেনারেশন ফ্যাশন করে লিখে আমি রাজনীতি ঘৃণা করি সেই বড়রা দায়ী। একজন ছেলে-মেয়ে রাজনীতি করবে কি আশা নিয়ে? যখন দলের সবকিছু বন্ধী থাকে একটি পরিবারের হাতে! যতই যোগ্যতা থাকুক সে রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না কারণ ঐ পদ দলের নিয়ন্ত্রক পরিবারের জন্য বরাদ্দ! এমপি, মন্ত্রী বা দলের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ আপনি নিজের যোগ্যতায় পাবেন না, আপনাকে এ সব পদ পেতে হলে ঐ নিয়ন্ত্রক পরিবারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখাতে হবে, যে যত বেশি মোসাহেবি করতে পারবে তার জন্য প্রস্তুত ততো বড় পদ পদবী।
এ দেশে মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান হয়েও যদি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে, পাশের দেশে জীবিকার তাগিদে পড়াশোনার পাশাপাশি চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি যদি রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে তাহলে একজন মেধাবী ছেলে কেন রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারবে না?
অথচ আমাদের সমাজে এই বড়রাই এমন ধারণা জন্ম দিয়েছে, এই পরিবার ছাড়া কেউ যোগ্য নয় রাষ্ট্র চালানোর, তাদের কাছেই থাকবে দলের চাবি, এইজন্য সুবিধা লোভীরা চামচামি করে পড়ে থাকে নিজের আখের গোছানোর জন্য আর যারা এগুলো অপছন্দ করে তারা দুঃখে লিখে আমি রাজনীতি ঘৃণা করি।
যারা লিখে আমি রাজনীতি ঘৃণা করি তাদের বলবো এর পরের লাইনে লিখে রাখতে আমাদের সিনিয়ারদের ছোট মানুষিকতা আমাদের এই কথা লিখতে বাধ্য করেছে, কারণ আমাদের জন্য একটি সুন্দর গনতন্ত্র জন্ম দিয়ে রাখেনি, জন্ম দিয়েছে পরিবারতন্ত্র নামের এক দানব চিন্তা।
এখন হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে, পরিবারতন্ত্র কি সুষ্ঠু গনতন্ত্র চর্চার একমাত্র বাঁধা? আমি বলবো, না, সুষ্ঠু গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা আছে তবে সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে এই পরিবারতন্ত্র।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এই বাধা ডিঙিয়ে নতুন দিগন্ত আনায় তো ইয়াং জেনারেশনের কাজ! তারা কেন পরিবারতন্ত্রের জাল ছিঁড়ে নব যুগের সূচনা করছে না? আসলে আমাদের সমাজে আজ এত বেশি মোসাহেবের জন্ম হয়েছে তাদের ডিঙিয়ে কিছু করা প্রায় হিমালয় টপকিয়ে যাওয়ার মত। তবুও আমি আশাবাদী একদিন এই বাধা ডিঙিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৬