somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর খোলস পরিবর্তন করতে সামান্য সময়ও লাগে না।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টার মিডিয়েট এ পড়ার সময় কিছু অতিরিক্ত চঞ্জল বন্ধু পেয়েছিলাম। যাদের হাত ধরে এমন কিছু করেছি যা করা আমার মত গো বেচারার একার পক্ষে কোনদিন সম্ভব ছিল না। আমরা বিজ্ঞান বিভাগের ষ্টুডেন্ট। একদিন ঠিক করলাম, আমরা মানবিক বিভাগের ক্লাস করব। আমরা ৬ জন বন্ধু মানবিকের ক্লাস করার জন্য ঢুকে পড়লাম। কলেজে আমাদের গ্রুপটাকে সবাই ডানপিটে হিসেবে চিনে। তাই মানবিকের কোন ষ্টুডেন্ট কোন প্রশ্ন বা প্রতিবাদ করল না। স্যার নাম প্রেজেন্ট করে ক্লাস শুরু করলেন। ক্লাসটা ছিল সম্ভবত পৌরনীতি। ক্লাসের এক পর্যায়ে হঠাৎ গনতন্ত্র নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। স্যার হঠাৎ চোখ মুখ লাল করে বললেন,“ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন কিছু পাঠ্য বিষয় রয়েছে,যেগুলোর সঙ্গে বাস্তব জীবনে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তা শুধু বইয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তেমনই একটি বিষয় হল গনতন্ত্র”। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাও হয়েছিল এই গনতান্ত্রিক মুক্তির আন্দোলন থেকে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর কি হল? আমরা রক্ষিবাহিনীর হাতে জিম্মি হলাম। আগে আমরা জিম্মি ছিলাম পাকিস্তানী সেনাবহিনীর হাতে আর এখন নিজ দেশের রক্ষিবাহিনীর হাতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও গনতন্ত্রের মুক্তি না দিয়ে বাকশাল করে তা চিরতরে হত্যাই করতে চেয়েছিলেন।

কিছুদিন আগে এক বয়বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন,বল তো শেখ মুজিবুর রহমান কবে মৃত্যু বরন করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর তো কিন্টার গার্ডেনের প্লে গ্রুপের একটা বাচ্চাও জানে। বললাম, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট। উনি কিছুটা আশাহত ভঙ্গিতে বললেন,তুমি পড়াশুনা জানা মানুষ! ভেবেছিলাম, অনুধাবন মূলক এই প্রশ্নের তুমি সঠিক ‍উত্তর দিতে পারবা! বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালেই মারা গেছেন। যেদিন তিনি দেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পাক বাহিনীর হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন সেদিনই তার মৃত্যু ঘটেছে। এরপর তিনি আর জনগনের বন্ধু ছিলেন না। দেশ স্বাধীনের পরের সময়টা নাকি এমন ছিল, ঝড় বৃষ্টির রাতে যখন বজ্রপাত ঘটত তখন নাকি সাধারন মানুষ আক্ষেপ করে বলত, আল্লাহ ঠাডাটা(বজ্রপাত) মুজিবরের মাথায় পড়ে না ক্যা? আর মানুষের এই চরম বিরক্তির কারনটা ছিল গনতান্ত্রিক মুক্তি না থাকার কারনে।

সেই গনতান্ত্রিক মুক্তি আজও ঘটেনি। আজকের এই দিনটিকে নূর হোসেন দিবস অথবা গনতান্ত্রিক মুক্তিদিবস বলা হলেও আমরা কি গনতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারছি? আমরা কি ভোটের অধিকার পেয়েছি? ভোটার হবার পরও সংসদ নির্বাচনে নিজের মতামতটা দিতে পারলাম না। তার আগেই বিনা ভোটে জয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। তাহলে কোথায় আজ সেই গনতন্ত্র?



শুধু ব্যনার ফেষ্টুন আর খালি গায়ে মিছিল করলেই তাকে গনতন্ত্রের মুক্তি বলা যায় না। গনতন্ত্রের মুক্তি বলা যায় তখনই যখন মানুষ নিজের পূর্ন অধিকারটুুকু ভোগ করতে পারে। একজন পার্লামেন্ট সদস্য মাতাল হয়ে শিশুকে গুলি করার পরও যখন স্বসম্মানে মুক্তি পায় তখন তাকে গনতান্ত্রিক মুক্তি বলা যায় না। নিজ স্বার্থে পুলিশ বাহিনীর দ্বারা বিরোধী দলের উপর দমন নিপিড়ন এবং গন গ্রেফতার চালিয়ে এবং মুখে গনতন্ত্র গনতন্ত্র বলে ফেনা তুললেও তা গনতান্ত্রিক কর্মের অংশ হয়ে যায় না।



নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং বিনাভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা পৃথক পৃথক গনতান্ত্রিক বিবৃতি দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ জন্মগতভাবে গণতন্ত্রপ্রিয়। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংসভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলার জনগণ আন্দোলন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ এই স্লোগান শরীরে ধারণ করে সাহসী নূর হোসেন ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। মিছিলের পুরোভাগে থাকা এই অকুতোভয় যোদ্ধা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন।’

কিন্তু সেই অকুতোভয় যোদ্ধার আত্নঃত্যাগ কি সফল হয়েছে? সেকথা বুকে হাত দিয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি কি বলতে পারবেন?

শহিদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান উৎকীর্ণ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে, তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। বুলেট নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। তঁর এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলকে বেগবান করে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় ভোট ও ভাতের অধিকার।’

বাংলাদেশের মানুষ কি প্রকৃত অর্থে ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে? সেদিন গনতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আওয়ামিলীগ ভূমিকা পালন করলেও আজ কিন্তু সেই আওয়ামিলীগই গনতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার সমস্ত বন্দোবস্ত সম্পন্য করেছে।

হায় সেলুকাস!সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর খোলস পরিবর্তন করতে সামান্য সময়ও লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×