somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূপেন হাজারিকার সে মানুষ, আজকের সমাজে কি একজনও নেই ?

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত আনুমানিক ১২ টা। গেল সপ্তাহে বাসায় ফেরার জন্য বাসের অপেক্ষা করছি। বাণিজ্যিক এলাকা হবার কারনে মাঝ রাতেও বাস পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম বিধায়, ঠান্ডার আগমনটা একটু হলেও অনূভব করতে চিলাম। বাসগুলো পাশ কাটিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস শরীরে আঘাত হানতেছে। আর শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠতেছে। ঐ জায়গায় আমি নতুন। এর আগে কখনো সেখানে যাওয়া হয় নি বিধায় চারদিকে অনুসন্ধানি দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছিলাম। যেন পরবর্তিতে আসলেও জায়গাটিকে স্মরনে রাখতে পারি। আমার চোখ গিয়ে পড়ল একটি বিল্ডিং এর বারান্দায় শুয়ে থাকা তিনটি মানুষের প্রতি। যার মধ্যে একজন স্বতন্ত্রভাবে আলাদা বিছানা করে ঘুমিয়েছে। আর দুই জন একই বিছানায় শুয়ে পাতলা একটা বেড শীট নিয়ে টানাটানি করছে। একজনের গায়ে বেডশীট জড়ালে আর একজনের পিঠ পর্যন্ত বিডশীট পৌছায় না। আর এভাবেই তাদের টানাটানি চলতেছিল। এক পর্যায়ে তারা দু’জনেই বেডশীট টানাটানিতে ক্ষ্যান্ত দিল। দু’জন পাশাপাশি আষ্টেপৃষ্টে একে অপরকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল যেন বেডশীডটা দু’জনেরই গায়ে থাকে এবং ঠান্ডাটা একটু হলেও কম লাগে।
এখনও সর্বত্র জানান দিয়ে শীতের আগমন না ঘটলেও এসব খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে শীতের উপদ্রব আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ফলে তাদের জীবনে রাতটা ভয়ানক হয়ে উঠতেছে(!)



গত মাসে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল দিয়ে হেটে হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। ফকিরাপুল (ফকিরেরপুল) এলাকায় এসে ডাষ্টবিনের পাশের একটি দৃশ্য দেখে ধমকে দাঁড়ালাম। ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়া চিকেন ফ্রাই দুইহাতে জড়িয়ে আপন মনে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ খাচ্ছে। যে খাবার আমাদের অভিজাত শ্রেণীর মানুষরা বড়লোকি করে ফেলে দেয়, তা কিছু মানুষের জন্য হয়ে উঠে চরম আকাঙ্খার। হায়রে শ্রেণী বৈষম্য এবং পুঁজিবাদীদের রাজত্ব! আর ডাষ্টবিন থেকে খাবার খুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য প্রায়শ কোন না কোন পত্রিকায় ছাপানো হলেও কোন প্রতিকা হয় না! যে লাউ সেই কদুই থেকে যায়(!) একদিন হয়তো দেখা যাবে ডাষ্টবিন থেকে কুড়িয়ে খাওয়া মানুষ গুলো রফিক আজাদের কবিতার সাথে সুর মিলিয়ে বলবে,“ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো”।
দেখুন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সেই বিখ্যাত ছবি এবং আজকের সভ্য সমাজের ডিজিটাল ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি মানুষদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়েছে কি?



যাদের পরকালীন চিন্তাভাবনা আছে তারা কি রাসূল (সঃ) এর এই হাদীস কোনদিন পড়েননি,‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)

আসুন না নিজেদের বিবেকটাকে জাগ্রত করবার চেষ্ঠা করি। আপনার নিজের সন্তানের জন্য প্রতি বছর নতুন নতুন হরক রকমের শীতের জামা কিনতেছেন। সেখান থেকে তুলনামূলক কম টাকায় হলেও একটি পথ শিশুকে শীতের জামা কিনে বোর চেষ্ঠা করুন। অথবা পুরনো জামা গুলোকে আপনার নিকটবর্তি দুস্থ অসহায় মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিন। আপনি নিজে এগিয়ে আসুন এবং আপনার প্রতিবেশীকে এগিযে আসতে উৎসাহিত করুন। আপনার বাসার বাসী খাবার গুলো নষ্ট হবার আগেই নিকটবর্তি অসহায় কোন পরবিারকে দেয় দেবার চেষ্ঠা করুন।

এ দেশ আমার আপনার এবং আমাদের। আর আমরা একটু চেষ্ঠা করলেই আমাদের দেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষ গুলোও হয়তো ভালো থাকতে পারবে। আসুন না ভূপেন হাজারিকার সেই গানটিকে আর একটিবার হৃদয় দিয়ে উপলবদ্ধি করবার চেষ্ঠা করি।



“মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না, ও বন্ধু।।

মানুষ মানুষকে পণ্য করে,
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে,
পুরোনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না, ও বন্ধু”।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×