somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক কি জিনিস তা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুক

অবন্তী আর আরমানের পরিচয়টা হয়েছিল ফেসবুকেই। ফেসবুক প্রোফাইলে অবন্তীর একটা ছবি ছিল। কমনীয় এক মুখ। অবন্তী এককথায় সুন্দরী। তাই যে-কেউ ওকে ফেসবুকের বন্ধুর তালিকায় রাখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আরমান বারবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছিল। কয়েকবার ‘না’ করে দিয়ে পরে দ্বিধান্বিতভাবে ওকে বন্ধু বানাতে রাজি হয়েছিল অবন্তী।
আরমান চাকরি করত আরব আমিরাতে, সে বাঙালি ছিল না।
চ্যাট করতে করতে, মাঝেমধ্যে টেলিফোনে দীর্ঘ আলাপ-সালাপে আরমানকে ওর ভালো লেগে যায়। অবন্তীর কোনো মুঠোফোন ছিল না, আরমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যই মুঠোফোন কিনেছিল। এভাবেই দিনগুলো এগোয়। আরমান অবন্তীকে ভালোবাসার কথা জানায়নি, বরং সরাসরি বলেছিল, ‘আমায় বিয়ে করবে?’ চমকে উঠেছিল অবন্তী। কোনো ছেলে কি এমনভাবে বলে? লজ্জায় কিছু বলেনি। উত্তর না পেয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আরমান। অবন্তী অবশ্য ভেতরে ভেতরে ওকে মিস করত, ভীষণভাবে মিস করত। রাতের যে সময় আরমান টেলিফোন করত, ঠিক সে সময়েই ঘুম ভেঙে যেত, তারপর নিদ্রাহীন রাত। দিনগুলো যেন শূন্য মনে হতো।
অবন্তী নীল রং খুব পছন্দ করত, কবিতা লিখত, কবিতার ভেতর ‘নীল সমুদ্র’, ‘নীল জল’ শব্দগুলো বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে, কিন্তু নীল কোনো পোশাক বা নীল শাড়ি কখনোই সে পরেনি। কী এক দুঃখ লুকিয়ে আছে ওই ‘নীল’ শব্দটার মধ্যে! আরমানের লম্বা চুল পছন্দ। এ কথা জানতে পেরে অবন্তী চুল কাটা বন্ধ করে হাঁটুর নিচে নামিয়ে এনেছিল। আরমান বলত, ‘আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা আসব।’ আরও বলত, প্রথম যেদিন দেখা হবে, অবন্তী যেন নীল শাড়ি পরে আসে। অবন্তীর নীল শাড়ি ছিল না। ইডেন কলেজ ছুটির পর নিউমার্কেটের সব দোকান ঘুরে ঘুরে মনের মতো একটা নীল শাড়ি কিনেছিল। কিন্তু আরমান কখনো ঢাকায় আসেনি, কখনো না। নীল শাড়ি আর পরা হয়নি অবন্তীর। শাড়িটা যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে।
অবন্তীর সঙ্গে আরমানের দেখা হয়নি।
তবে প্রায়ই ওরা দুজন দুজনকে দেখত ওয়েভ ক্যামেরার মধ্য দিয়ে। দুজনের সামনাসামনি দেখা হয়নি, দুজন দুজনের র্স্পশ পায়নি। অবন্তীর দিক থেকে কোনো ঘাটতি ছিল না। এটা বুঝতে পেরে সতর্ক হয় আরমান। খেলাটা অনেক দূর গড়িয়েছে। বোধহয় খেলা ভাঙতেই বলে, ‘যদি আমায় বিয়ে করো, তবে তোমার ন্যাশনালিটি পরিবর্তন করতে হবে, করবে তো?’ বিয়ে করলে ন্যাশনালিটি কেন পরিবর্তন করতে হবে, এটা বোধগম্য নয়। কিন্তু অবন্তী ওর কারণে সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিল। আরমানের দেশি রান্নাও শিখে ফেলেছিল নেট থেকে দেখে দেখে। অবন্তী ওর মাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল। এরমধ্যে হঠাৎ আরমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফেসবুকে সাড়া নেই। হয়তো ভেবেছিল, অবন্তী পিছিয়ে আসবে। যোগাযোগ নেই প্রায় দুই মাস। এই দুই মাস আরমানকে উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজেছে অবন্তী। দুই মাস পর আরমান যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু আরমান আর আগের আরমান ছিল না। এর মধ্যে সে আরব আমিরাত থেকে তার দেশে গেছে তার পূর্বনির্ধারিত পাত্রীর সঙ্গেই ‘মাংনি’ করেছে। অবন্তী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছে, ‘আর কী বলব? ও তো এখন আর আমার না, আর কোনো দিন হবে না, কিছুই হলো না।’ মাংনির খবরটা আরমান ওকে এসএমএস করে জানিয়েছিল, ‘আমি তোমায় এনগেজমেন্টের ছবি পাঠাব। চিন্তা কোরো না, সময় নষ্ট না করে অন্য কাউকে খুঁজে নাও।’
খবরটা পেয়ে বিশ্বাস করেনি অবন্তী।
দেশে যাওয়ার আগেও আরমান জানিয়েছিল, ‘তুমি চিন্তা করো না। আমার এনগেজমেন্ট হবে না। তুমি তো জানো, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ ওর কথায় বিশ্বাস করেছিল অবন্তী। কিন্তু খবরটা যখন সত্যি হলো, তখন সে দিশেহারা হয়ে স্নানঘরে গিয়ে পানির পর পানি ঢেলেছে মাথায়। তারপর দু-চোখ বেয়ে নেমে এসেছে অশ্রুধারা। গুমরে গুমরে কেঁদেছে দিনের পর দিন। মাকে বিষয়টা জানিয়েছিল এক সপ্তাহ পর। মা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন, তারপর অবন্তীকে টেনে নিয়েছিলেন বুকে। সে সময় ওই আশ্রয়টুকুই প্রয়োজন ছিল অবন্তীর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×