ফেসবুক
অবন্তী আর আরমানের পরিচয়টা হয়েছিল ফেসবুকেই। ফেসবুক প্রোফাইলে অবন্তীর একটা ছবি ছিল। কমনীয় এক মুখ। অবন্তী এককথায় সুন্দরী। তাই যে-কেউ ওকে ফেসবুকের বন্ধুর তালিকায় রাখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আরমান বারবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছিল। কয়েকবার ‘না’ করে দিয়ে পরে দ্বিধান্বিতভাবে ওকে বন্ধু বানাতে রাজি হয়েছিল অবন্তী।
আরমান চাকরি করত আরব আমিরাতে, সে বাঙালি ছিল না।
চ্যাট করতে করতে, মাঝেমধ্যে টেলিফোনে দীর্ঘ আলাপ-সালাপে আরমানকে ওর ভালো লেগে যায়। অবন্তীর কোনো মুঠোফোন ছিল না, আরমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যই মুঠোফোন কিনেছিল। এভাবেই দিনগুলো এগোয়। আরমান অবন্তীকে ভালোবাসার কথা জানায়নি, বরং সরাসরি বলেছিল, ‘আমায় বিয়ে করবে?’ চমকে উঠেছিল অবন্তী। কোনো ছেলে কি এমনভাবে বলে? লজ্জায় কিছু বলেনি। উত্তর না পেয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আরমান। অবন্তী অবশ্য ভেতরে ভেতরে ওকে মিস করত, ভীষণভাবে মিস করত। রাতের যে সময় আরমান টেলিফোন করত, ঠিক সে সময়েই ঘুম ভেঙে যেত, তারপর নিদ্রাহীন রাত। দিনগুলো যেন শূন্য মনে হতো।
অবন্তী নীল রং খুব পছন্দ করত, কবিতা লিখত, কবিতার ভেতর ‘নীল সমুদ্র’, ‘নীল জল’ শব্দগুলো বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে, কিন্তু নীল কোনো পোশাক বা নীল শাড়ি কখনোই সে পরেনি। কী এক দুঃখ লুকিয়ে আছে ওই ‘নীল’ শব্দটার মধ্যে! আরমানের লম্বা চুল পছন্দ। এ কথা জানতে পেরে অবন্তী চুল কাটা বন্ধ করে হাঁটুর নিচে নামিয়ে এনেছিল। আরমান বলত, ‘আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা আসব।’ আরও বলত, প্রথম যেদিন দেখা হবে, অবন্তী যেন নীল শাড়ি পরে আসে। অবন্তীর নীল শাড়ি ছিল না। ইডেন কলেজ ছুটির পর নিউমার্কেটের সব দোকান ঘুরে ঘুরে মনের মতো একটা নীল শাড়ি কিনেছিল। কিন্তু আরমান কখনো ঢাকায় আসেনি, কখনো না। নীল শাড়ি আর পরা হয়নি অবন্তীর। শাড়িটা যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে।
অবন্তীর সঙ্গে আরমানের দেখা হয়নি।
তবে প্রায়ই ওরা দুজন দুজনকে দেখত ওয়েভ ক্যামেরার মধ্য দিয়ে। দুজনের সামনাসামনি দেখা হয়নি, দুজন দুজনের র্স্পশ পায়নি। অবন্তীর দিক থেকে কোনো ঘাটতি ছিল না। এটা বুঝতে পেরে সতর্ক হয় আরমান। খেলাটা অনেক দূর গড়িয়েছে। বোধহয় খেলা ভাঙতেই বলে, ‘যদি আমায় বিয়ে করো, তবে তোমার ন্যাশনালিটি পরিবর্তন করতে হবে, করবে তো?’ বিয়ে করলে ন্যাশনালিটি কেন পরিবর্তন করতে হবে, এটা বোধগম্য নয়। কিন্তু অবন্তী ওর কারণে সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিল। আরমানের দেশি রান্নাও শিখে ফেলেছিল নেট থেকে দেখে দেখে। অবন্তী ওর মাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল। এরমধ্যে হঠাৎ আরমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফেসবুকে সাড়া নেই। হয়তো ভেবেছিল, অবন্তী পিছিয়ে আসবে। যোগাযোগ নেই প্রায় দুই মাস। এই দুই মাস আরমানকে উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজেছে অবন্তী। দুই মাস পর আরমান যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু আরমান আর আগের আরমান ছিল না। এর মধ্যে সে আরব আমিরাত থেকে তার দেশে গেছে তার পূর্বনির্ধারিত পাত্রীর সঙ্গেই ‘মাংনি’ করেছে। অবন্তী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছে, ‘আর কী বলব? ও তো এখন আর আমার না, আর কোনো দিন হবে না, কিছুই হলো না।’ মাংনির খবরটা আরমান ওকে এসএমএস করে জানিয়েছিল, ‘আমি তোমায় এনগেজমেন্টের ছবি পাঠাব। চিন্তা কোরো না, সময় নষ্ট না করে অন্য কাউকে খুঁজে নাও।’
খবরটা পেয়ে বিশ্বাস করেনি অবন্তী।
দেশে যাওয়ার আগেও আরমান জানিয়েছিল, ‘তুমি চিন্তা করো না। আমার এনগেজমেন্ট হবে না। তুমি তো জানো, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ ওর কথায় বিশ্বাস করেছিল অবন্তী। কিন্তু খবরটা যখন সত্যি হলো, তখন সে দিশেহারা হয়ে স্নানঘরে গিয়ে পানির পর পানি ঢেলেছে মাথায়। তারপর দু-চোখ বেয়ে নেমে এসেছে অশ্রুধারা। গুমরে গুমরে কেঁদেছে দিনের পর দিন। মাকে বিষয়টা জানিয়েছিল এক সপ্তাহ পর। মা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন, তারপর অবন্তীকে টেনে নিয়েছিলেন বুকে। সে সময় ওই আশ্রয়টুকুই প্রয়োজন ছিল অবন্তীর।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




