বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর পত্রিকাগুলো বেশ কয়েক দিন ধরেই চীনে মুসলমানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে বলে ফলাও করে প্রচার করছে। চীনে জিনজিয়াং প্রদেশের রাস্তায় রাস্তায় মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের অপমানিত করা হচ্ছে, স্থাণিয় কর্তৃপক্ষ দোকানগুলো থেকে আরবী ব্যানার নামিয়ে ফেলছে, অনেক নারী-পুরুষকে অন্তরীন রেখে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। এমন খবর নাড়া দিয়েছে আমার মতো অনেককেই। চীনের মুসলমানদের ইতিহাস হাজার বছরের। এই শত শত বছরে সেই দেশের মানুষদের মাঝে অনেক গোত্রীয় লড়াই হয়েছে। কিন্তু, তাই বলে শুধুই মুসলমানদের উপর আক্রমন, এ কেমন কথা! প্রশ্নটা অনেকের মতো আমারও ছিলো।
একটু ইন্টারনেটে পত্রিকা ঘাটতেই বিপরীত কিছু চিত্র বেরিয়ে এলো। চীনের মুসলমানরা মূলতঃ দু'টি গোত্রে বিভক্ত- হুই এবং উইঘুর। হুই-রাই চীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। তাঁরা সারা দেশে ছেয়ে আছেন। চীনের রাজধানী বেইজিং-এও হুই মুসলমানদের সংখ্যা কম নয়। পুরো চীনে হুই-দের সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি।
অন্য দিকে, উইঘুর-রা মূলতঃ চীনেরতীব্বত-ঘেষা জিনজিয়াং প্রদেশেই বাস করেন। এই প্রদেশের অনেক বাসিন্দা গত কয়েক বছর ধরেই 'পুরো পৃথিবী জুড়ে এক ইসলামী রাজ্য' নামক যে আন্দোলন চলছে তাতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। সেই আন্দোলনে গা ভাসিয়ে তারা জিনজিয়াংবাসীদের মাঝে আলাদা এক স্বত্বা গড়ে তুলছিলেন। যদিও, তাতে চীনের হুই মুসলমানদের সায় ছিলো না। সেজন্যে, হুই অধ্যুসিত এলাকাতেও এই আন্দোলনের রেশ-মাত্র পাওয়া যায়নি।
চীনে মুসলমানদের মেইনস্ট্রিম হুইরা এখনো নিজেদের ধর্ম স্বাধীন ভাবেই পালন করে যাচ্ছেন। এমনকি চীনের কমিউনিস্ট সরকার এতে কোন বাধা দিচ্ছে বলে কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে আমি একবার এক হুই মুসলমানকে জিগগাসা করেছিলাম তাঁরা রোজা রাখতে পারেন কি না। উত্তরে তিনি বলেছিলেন - ''অবশ্যই! শুধু আমি নই, অন্যান্য হুইরাও রাখেন। এটা তো আমাদের উপর ফরজ কাজ।''
যদিও, উইঘুরদের উপর চীনা সরকারের চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করা যাবে না। এটা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের কারণে হচ্ছে, তা অবশ্য মনে না করার অনেক কারণ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪০