গত বছর পর্যন্ত চীনে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা যা সেখানকার হুই ও উইঘুর মুসলমানরা পছন্দ করেনি-
ঘটনা ০১ঃ চীনের 'লিটিল মক্কা'' খ্যাত গুয়ানসু প্রদেশের লিনজিয়া শহরে এখনো সবুজ গম্বুজওয়ালা মসজিদটি টিকে আছে। কিন্তু, মসজিদটির আঙ্গিনায় এখন আর মুসলিম শিশুরা খেলা করে না। তারা সেখানে আসে না আরবী ক্লাস আর নামাজ পড়ার জন্যে।
ঘটনা ০২ঃ ধর্মীয় উগ্রবাদ আর বিচ্ছিন্নতাবাদী মতবাদে ছেয়ে গিয়েছে বলে চীনের আরেকটি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা জিনজিয়াং-এর মুসলমান তরুণ-তরুণীদের বিশেষ 'রি-এডুকেশন ক্যাম্প'- এ পাঠানো হচ্ছে যেখানে কোরআন সাথে রাখা নিষিদ্ধ। সাথে সাথে দাঁড়ি রাখাও।
ঘটনা ০৩ঃ ষোল বছরের উপরে মুসলিম তরুণদের মাঝে যারা মসজিদে গিয়ে কোরআন শিক্ষা নিতে আগ্রহী তাদের সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রনের মাঝে রেখেছে চীনের সরকার। নতুন ইমামদের রেজিস্ট্রশন প্রসেস নিয়ন্ত্রন করে আগের চেয়ে কম ইমামদের কর্মক্ষেত্রে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনা ০৪ঃ মসজিদ্গুলোতে চীনের পতাকা উড়ানো আর শব্দ করে আজান দিয়ে 'শব্দ দূষণ' না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে একটি এলাকার ৩৫৫টি মসজিদ থেকে লাউড স্পিকার অপসারণ করা হয়েছে।
এসব ঘটনা মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না চীনের মুসলমানেরা। আমার এক বন্ধু'র ছোট বোন তা-ই বললেন। সেই দেশের একজন ইমামের সাথে সে কথা বলে এসব ঘটনা জানতে পারে আমার বন্ধুর ছোট বোনটি। ঐ ইমাম আরো জানান যে, সরকার এইসব নীতি অনুসরণের ফলে তরুণরা ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। ইসলামকে তার মূল বা জড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতেই এসব করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মসজিদে ১০০০-এরও বেশি শিশু কোরআন পড়তে আসতো। এখন সেই কম-বয়সী শিশুদের এমনকি মসজিদে আসতেও বাধা দেওয়া হয়। তাঁর মসজিদটিতে এখনো সৌদি আরব থেকে আসা কোরআনগুলো আছে। অথচ, বর্তমানে তাঁর মসজিদে ১৬ বছরের উপর বয়সী তরুণের সংখ্যা মাত্র ২০ জন।
আর, এভাবেই মুসলমানদের উপর চাপ প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করেছে বর্তমান চীন সরকার। চীনের মুসলমানরা এটা কিভাবে গ্রহণ করছেন? এমনই এক প্রশ্নের জবাবে মসজিদের এক নারী কেয়ারটেকার কাঁদতে কাঁদতে জানালেন যে, তাঁরা খুবই ভয় পাচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে এক বা দুই জেনারেশন পর চীনে ইসলামী ঐতিহ্য বলে কিছু থাকবে না। তাঁর ১০ বছর বয়সী ছেলেটি আগে ৫ ঘণ্টা করে মসজিদে যেতো। তিনি তাঁকে একজন ইমাম বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ছেলেটির স্কুলের শিক্ষক তাকে কিভাবে টাকা বানানো যায় আর কমিউনিস্ট পার্টির একজন ক্যাডার হওয়া যায়, সেই শিক্ষা দিচ্ছেন।
চীনের সর্বত্রই বুঝি এমনটা ঘটছে। এমনকি হুই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও। যদিও হুইরা নিজেদেরকে উইঘুরদের চেয়ে আলাদা মনে করেন। এমনই একজন হলেন লিনজিয়া শহরের এক হেয়ারড্রেসার- মা জিয়ানসাই। তাঁর মতে, উইঘুররা ইসলাম পালন করলেও খুবই উগ্র আর রক্তপিপাসু। তারপরো সরকার আমাদের উপর এমন দমন নীতি চাপিয়ে দিচ্ছে!
চীনের বর্তমান সরকারের এমন নীতি কিভাবে চীনকে একুশ শতকে এক মহান দেশে পরিণত করছে তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫২