
লালন শাহ ছিলেন একজন বাঙালি দার্শনিক, অতীন্দ্রিয়বাদী, কবি, গায়ক এবং সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লালন শাহ ব্রিটিশ ভারতের ঝিনাইদহের হরিশপুরে ১৭৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। লালনের শিক্ষা মানবতা এবং সহনশীলতার উপর জোর দিয়েছে এবং হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের দ্বারাই তিনি একজন সাধু হিসাবে সম্মানিত।
লালন খুব অল্প বয়সে এতিম হয়েছিলেন। এরপরে, তাঁর মামা তাঁকে লালনপালন করেন। লালন শাহ অল্প বয়সে গান গাইতে ও কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। লালন শাহ, যিনি লালন ফকির নামেও পরিচিত, বাংলা লোকসংগীতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। লালনের গান সহজ কিন্তু গভীর, এবং সেগুলো প্রায়ই ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
তাঁর গানের লাইনগুলোকে কখনো কখনো ফার্সী মহাকবি রুমি বা হাফিজের কবিতার সাথে তুলনা করা হয়। লালনের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। যদিও মনে করা হয় যে, তিনি একটি মাদ্রাসায় আরবি এবং ফারসি ভাষায় কিছু দিন শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরে তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্রিটিশ বাংলা ও তার বাইরের এলাকাগুলো ভ্রমণ করে কাটিয়েছেন।
লালন শাহ ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে একজন প্রবক্তা ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত ধর্মই ঈশ্বরের কাছে সমানভাবে বৈধ পথ। তিনি বাহ্যিক আচার বা মতবাদের চাইতে অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। লালন শিখিয়েছিলেন যে, প্রতিটি ব্যক্তিরই আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর গান ও লেখা হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের কাছেই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ছিল এবং তিনি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পেরেছেন।
লালন কোনো এক সময়ে আউলিয়া আল্লাহ নামে একজন সুফি সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং মিয়া ইসমাইল হুজুর নামে আরেকজন অতিন্দ্রিয়বাদী’র কাছেও পড়াশোনা করেন। এরপরে, লালনের বাংলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো শুরু হয়। নিজের লেখা গান গেয়ে গেয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে মিশে গিয়ে প্রেম ও সহনশীলতার বার্তা শেখান। গ্রামীণ জনগণের মধ্যে তাঁর একটি বড় অনুসারী দল ছিলো, যারা তার সহজ কিন্তু শক্তিশালী বার্তাগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।
লালন ১৮৯০ সালের ১৭অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর সমাধি এখন অনেক বাঙালির জন্যে তীর্থস্থান। লালন শাহ আজও তাঁর লেখনীর মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। আজকের সময়ে যেখানে চারদিকে ধর্মীয় বিভাজন চলছে, সেখানে লালন শাহদের পূনর্জন্ম বড় প্রয়োজন!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




