somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে দরকার এক মহাপরিকল্পনা

১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা আমাদের অবশ্যই দরকার। কিন্তু, কি ধরণের শিক্ষা? শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য থাকা দরকার। কি কাজে লাগবে ঐ শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অথবা ভবিষ্যত গড়ার জন্যে? সেইটা কি 'কর্মমূখী শিক্ষা' নাকি 'জ্ঞানার্জনের জন্যে শিক্ষা' নাকি শুধুই 'পড়তে হয় বলেই শিক্ষা '(যেমন- শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য বলে একটি কর্মসূচি ছিল তেমন)?



প্রশ্নগুলো অফটপিক মনে হতে পারে। কিন্তু, বর্তমানে সমাজে চলমান সমস্যাগুলোর সাথে এর অতি গূঢ় যোগাযোগ আছে। বলছি।

প্রথমেই আসি, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে অনেক টাকা প্রয়োজন, শিক্ষকদের ভাতা তার একটি। সরকারকে যদি এই ব্যয় ভার বহন করতে হয়, তখন, সরকারেরও একটি চিন্তা থাকা উচিৎ যে, যাদের পেছনে জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যায় করা হচ্ছে, সেই শিক্ষার্থীরা দেশের কি কাজে লাগবে? তারা দেশ থেকে যে সাহায্য পাচ্ছে, সেইটা কিভাবে, কেমন করে দেশকে ফেরত দিবে? ফেরতের কথা এই জন্যেই আসছে যে, ঐ ফেরত দেওয়া টাকাটাই কিন্তু সরকার পরবর্তীতে অন্য শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে। অর্থাৎ, আয়-ব্যয়ের হিসাবও খুব জরূরী একটা ব্যাপার এখানে।

অথচ, দেখুন, আমরা যারা সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা করেছি, দেশ যে লক্ষ লক্ষ টাকটা আমাদের পিছনে খরচ করেছে, আমরা এখন কোথায়? গত দুই দশকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেধাবীদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে গিয়েছে, এখনো যাচ্ছেন। অন্য দেশের উন্নয়নে সেই মেধা কাজে লাগছে।

আমি এইটা বলছি না যে আমাদের মেধারা অন্য দেশের কাজে লাগানো যাবে না। আমরা যেমন একজন জাতীর অংশ, তেমনি আমরা বিশ্ব নাগরিকও বটে। কিন্তু, যেহেতু, বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন জাতিসত্বার ভিত্তিতে বিভক্ত, আমাদেরকে তো নিজেদের স্বার্থের কথাটাও ভাবতে হবে, তাই না!

সেজন্যে, সরকারের উচিৎ, জনগণের পরিশ্রমের টাকা যাদের পিছনে খরচ করা হচ্ছে, তাদেরকে কিভাবে দেশের কাজে লাগানো যাবে, সেই অনুযায়ী শিক্ষার কারিকু্লামগুলো তৈরী করা। আর, সেই সাথে এই শিক্ষার্থীরা পাশ করার পর তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেশের উন্নয়নমূলক কাজে নিযুক্ত রাখা যতক্ষণ না তাদের পিছনে দেশের ব্যয় করা টাকা উঠে আসে।



কেমন করে তা সম্ভব?

ধরুন, সরকার ঠিক করলো যে, আগামী ৫০ বছর পর একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। এখন, একটি উন্নত দেশের মানুষের কি কি জিনিস দরকার? তাদের মাথাপিছু আয় কত হওয়া উচিৎ? শুধু আয় হলে তো হবে না, তাদের উন্নত স্বাস্থ্য দরকার, খাবার দরকার, কাপড় দরকার, বাসস্থান দরকার, উন্নত চরিত্র দরকার।

আর, এগুলোকে নিশ্চিতকরনের জন্যে দরকার দক্ষ জনবল যাদের কেউ হবে ডাক্তার, কেই হবে ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, আবার কেউবা ব্যবসায়ী, ছোট-বড় চাকুরীজীবি/শ্রমিক বা কৃষক। আমাদের কিন্তু, বাস/ট্রেন ড্রাইভার কিংবা রিক্সা-চালকও দরকার। আর সেই সাথে দরকার, মোবাইল/রিক্সা/গাড়ি ম্যাকানিক বা ছুতার মিস্ত্রী।

এখন, একটি উন্নত দেশ হতে হলে কোন ধরণের মানুষ কি পরিমাণে দরকার হবে, সেইটা যদি সরকার একবার ঠিক করে ফেলতে পারে, আর সেই ভাবে যদি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠে, তাহলে কিন্তু আর ঝামেলা থাকে না। সরকারের ব্যয়কৃত টাকা উঠে আসতেও সময় লাগবে না।

এখানে একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর, তা হচ্ছে- মাথা-পিছু বা পরিবার-পিছু আয় বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যদি প্রতি পরিবারে গড়ে ৫-জন সদস্য থেকে থাকে, তাহলে, দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩.৫ কোটি। শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করলে একটি পরিবারের প্রতি মাসের ব্যয় কত হতে পারে?

ধরি, সঠিক ডায়েট অবলম্বন করে করে প্রতিদিন যদি খাদ্যের জন্যে মাথাপিছু ৩০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে মাসে একটি পরিবারের লাগবে ৪৫,০০০ টাকা যা বছরে ৫,৪০,০০০ গিয়ে দাঁড়াবে। এভাবে, বাংলাদেশের ৩.৫ কোটি জনগণের জন্যে ১৫৭৫ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন হবে শুধু খাদ্য যোগানের জন্যে।

সবার যদি বছরে ছেলেদের দু'টি করে শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি, সোয়েটার, চাদর, পাঞ্জাবী গেঞ্জি, আন্ডারপ্যান্ট, জুতো, স্যান্ডেল আর ১টি করে স্যুট, সেই সঙ্গে মেয়েদের দরকারী কাপড়্গুলো সম-ভাবে লাগে, তাহলে বছরে প্রত্যেক পরিবারের গড়ে প্রায় ২০,০০০ টাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে বছরে বাংলাদেশের সব পরিবারের মোট ৭০০০ বিলিয়ন টাকার প্রয়োজন।



এবারে আসি, বাসস্থানের ক্ষেত্রে। প্রতি ৫ জনের একটি তিন বেড রুমের বাসার বর্তমান ভাড়া গড়ে ২৫,০০০ টাকা। সেই সাথে গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি, পানি, সার্ভিস আর সিকিউরিটি-সহ আরো ১৫,০০০ টাকা হলে, মোট খরচ হবে ৪০,০০০ টাকা। সেই হিসেবে, বাসস্থান বাবদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রয়োজন প্রায় ১৪০০ বিলিয়ন টাকার।

শিক্ষা ও চিকিৎসা যদি ফ্রি করে দেওয়া হয় বাংলাদেশে, তাহলেও শিক্ষক, চিকিৎসক, সরঞ্জাম আর অবকাঠামোর জন্যে একটা খরচ লাগবেই। এক্ষেত্রে, সুইজারল্যান্ডকে আমরা যদি অনুসরণ করি, তাহলে, প্রতি ১০০০ জনের জন্যে লাগবে ৩.৬০ জন ডাক্তার। সেই হিসেবে ৬ লক্ষ ১২ হাজার ডাক্তার প্রয়োজন আমাদের।

দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ লক্ষ। প্রতি ২৫ জনের জন্যে একজন শিক্ষক দরকার হলে ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন।

আর, সরকার যদি এই সকল শিক্ষক ও ডাক্তারের ব্যয় বহন করে এবং প্রত্যেকের বেতন বছরে গড়ে ১২ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে বাংলাদেশে ২৫১০ বিলিয়ন টাকার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, রেজিস্ট্রার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী যা এই হিসেবে ৭-৮ গুণ। এভাবে আরো ১০,০০০ বিলিয়ন টাকার দরকার হবে।

আর, প্রতি ১০০০ জনের জন্যে ৩টি হসপিটাল ব্যাডের প্রয়োজন হলে, প্রায় ৫ লক্ষ ১০ হাজার হসপিটাল ব্যাড আর ১,০২০টি হসপিটাল প্রয়োজন হবে যার একেকটিতে থাকবে ৫০০ ব্যাড। এই অত্যাধুনিক হসপিটালগুলো একেকটি বানাতে ১০০ কোটি টাকা খরচ হলে ১০২০ বিলিয়ন টাকার প্রয়োজন। এভাবে, বছরে যদি একেক জনের গড়ে ৫০০০ টাকার ওষুধ লাগে, তাহলে, ৮৫০ বিলিয়ন টাকার ঔষধ লাগবে।

আর, বিনা-মূল্যে বই-পত্রের জন্যেও খরচ দরকার। সকল খরচ হিসাব করলে আর সুইডেনকে অনুসরণ করলে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যে প্রয়োজন বছরে ১১,৪০০ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ১৩,৬৮,০০০ টাকা। এই হিসেবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ লাগবে ১৫০,৬১৬ বিলিয়ন টাকার সম পরিমাণ অর্থ।

আর, চিকিৎসা খাতে, সুইডেনকে অনুসরণ করলে, মাথাপিছু ৮,২৮,১২০ টাকা লাগবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণের জন্যে প্রয়োজন ১,৪০,৭৮০ বিলিয়ন টাকা।

এই বিশাল ব্যয়বার বহন করা কোন ব্যাপারই হবে না যদি বাংলাদেশ সরকার উন্নত বিশ্বের সমান করে মাথাপিছু আয়ের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশের কর্মক্ষম ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১১ কোটিরও বেশি। প্রতিটি মানুষ মাথাপিছু বছরে গড়ে ১২ লক্ষ টাকা আয় করে, তাহলে, তার উপর ১০% ট্যাক্স বসালে সরকারের মাথাপিছু আয় হবে ১,২০,০০০ লক্ষ টাকা। আর, বছরে সরকারের এ খাত থেকে আসবে ১৩,২০০ বিলিয়ন টাকা! এরপর, রয়েছে করপোরেট ট্যাক্স।

এভাবে, জনগণের জন্যে সরকার যে টাকা খরচ করবে, সেই টাকা আবার সরকারের ব্যাংকে ফিরে আসতে ৫-৬ বছরও লাগবে না। বাংলাদেশ কোন সরকার পারবে কি এমন কোন মহাপরিকল্পনা নিতে?

সময়ই তা বলে দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×