somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনের শেষে-১৯

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত অনেক হয়েছে। পড়া শেষ করে ঘুমুতে যাবো । এমন সময় ফেসবুকে একটু ঢু মারলাম। বন্ধুদর সাথে চ্যাট করছি। মামুন আমার সহপাঠী। চ্যাটের এক পর্যায়ে আমাকে বলল তুমি যাবে? হালতির বিলে। মামুন আমাকে বলল- আমরা কয়েক বন্ধু নাটোরের হালতির বিলে যাচিছ। বিলের পানিতে গোছল করতে আর সেখানে পানিতে খেলা করব। খেলার জন্য একটি ছোট বলও কেনা হয়েছে। এদিকে ক্যাম্পাস পূজোর বন্ধ দিয়েছে চারদিন। অনেক বন্ধুরা ঘুরতে গেছে । কেউ গেছে বাসায়। স্বয়ং আমার রুমমেট তার কয়েকবন্ধুরা মিলে সুন্দরবন গেছে। এদিকে ছুটির তিন দিন চলে গেছে।অনেকটা বিরক্তি ভাব চলে এসেছে। তাই মামুনের অফারটা সাথে সাথেই আমি গ্রহণ করলাম। পরদিন সকালে আমি, মামুন, সোহাগ, সোহাইব চারজন মিলে সকাল সাড়ে ছয়টার ট্রেন ধরে নাটোরের হালতির বিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দলাম। ওখানে মামুনের নানুর বাসা। ওর নানুর বাসার পাশেই হালতির বিল অবস্থিত। আমরা আগে ওর নানুর বাসায় যাবো। তারপর এলাকাটি ঘুরে দেখে পানিতে গোসল করব। ট্রেন ছাড়ল ঠিক সকাল সাড়ে ছয়টায়। চারজন বন্ধু খুব মজা করলাম। সকাল দশটার দিকে আমরা মাধনগর ট্রেন স্টেশনে পৌছলাম। আমাদেরকে রিসিভ করল মামুনের ছোট মামা । তার নাম ফয়সাল কবির ছোটন। ওদের নানুর বাড়ি যেতে আমাদের বিল পেরিয়ে যেতে হবে। ট্রেন থেকে নেমে ছোটন মামার পিছন পিছন কিছুক্ষণ হাঁটলাম। পরে দেখি আমাদের জন্য একটি ট্রলার ভাড়া করে রেখেছে। ট্রলারে করে আমরা সবাই রওয়ানা দিলাম। ট্রলারের ঘট ঘট শব্দ, বিলের নীলাভ স্বচ্ছ পানি, আমরা খুব উপভোগ করলাম। ট্রলারটি বিলের মাঝখানে আসামাত্রই আমরা সবাই ছবি উঠাতে লাগলাম। ট্রলার যাচেছ এগিয়ে সেই সাথে দেখা যাচেছ বিলের দু ধারের গ্রামগুলো। মাঝে মাঝে কয়েকটি নৌকা মাছ ধরছে। সোহাগ সেই দৃশ্য ধারণ করছে। প্রায় ২০/২৫ মিনিট পর আমরা মামুনের নানুর বাসায় গিয়ে পৌছলাম। ট্রলারটি একেবারে ওর নানুর বাড়ির ঘাটায় গিয়ে থামল। বাড়িটি আমার কাছে ভালো লাগল। পানির মাঝে অবস্থিত। আমরা ঘরে পৌছা মাত্রই ওর খালাম্মা আমাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। মামুন আমাদের সবাইকে ওর খালাম্মা ও মামাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তার কিছুক্ষণ পরই ওর খালাম্মা কয়েক প্রকারের পিঠা নিয়ে আসল। সেই সাথে মিষ্টিও । আমরা দেখে তো অবাক! আমাদের জন্য এতো আয়োজন। হালকা নাস্তা করে আমরা রওয়ানা দিলাম রাজবাড়ি হাজার দুয়ারী’র দিকে। ছোটন মামা আমাদেরকে রাজবাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। তখন প্রায় বেলা ১১ টা । । আমরা মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচিছ। হাঁটছি আর দেখছি গ্রাম। সূর্যের প্রখর রোদ। আমার খুব কষ্ট হচিছল। যাওয়ার পথে ছোটন মামা আমাদেরকে এক কুমারের বাসায় নিয়ে গেলেন। কিন্তু ঐদিন ছিল ৬ অক্টোবর। হিন্দুদের শারদীয় দূর্গা পূজা। তাছাড়া ঐদিন ছিল বিজয়া দশমী। তাই কেউ কোন কাজ করছে না। ছোটন মামার অনুরোধে আমাদেরকে এক কুমার হাড়ি পাতিল তৈরীর পদ্ধতি দেখালেন। কিভাবে চাকা ঘুড়াতে হয়, কিভাবে মাটিগুলোকে বিভিন্ন আকার দেওয়া হয়। দেখে খুব ভাল লাগল। এই প্রথম আমরা স্বচক্ষে অবলোকন করলাম কিভাবে কুমাররা হাড়ি পাতিল বানায়। এসবই দেখালেন কুমারের ছেলে কমেস্বর। সেখান থেকে আমরা চলে গেলাম রাজবাড়ির দিকে। দশমিনিট পরই পৌঁছলাম। হাজার দোয়ারী রাজবাড়িতে। বাড়িটি এক হাজার দরজা দিয়ে তৈরী তাই এর নাম রাখা হয়েছে হাজার দুয়ারী। দু’তলা বিশিষ্ট বাড়িটি। আমরা পুরো বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বেশ কিছু মূল্যবান পাথর ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। বাড়িটি অনেক পুরনো। ক্ষয় হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায়ই পড়ে আছে। সরকার এর সংরক্ষণে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কি আশ্চর্য!!! এতো বড় একটি বাড়ি। অথচ সরকার বা স্থানীয় লোকজন এটিকে কোন কাজে ব্যবহার করেনি। কিন্তু যুগের পর যুগ বাড়িটি এভাবেই পড়ে রয়েছে। আমরা এখানে বেশী দেরী না করে নানুর বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে হালকা বিশ্রাম নিয়ে আমরা আমাদের আকর্ষণীয় ইভেন্টে চলে এলাম। খেলার বলটি নিয়ে আমরা সবাই বিলের পানিতে নামলাম। আমি কখনো বিলের পানিতে গোছল করিনি। কিন্তু আমি সাতার জানি। ওরাও সাতার জানে। আমরা বিলের কাছাকাছি থাকলাম। বেশী দূরে যাইনি। একটু দূরে পানির গভীরতা অনেক। বলটি নিয়ে খেলা করলাম। পানিতে নামার আগে মোবাইলটি এক ছোট ছেলের কাছে দিয়ে আসা হল। ওকে দেখিয়ে দেয়া হল কিভাবে ছবি ওঠাতে হয়। ও কয়েকটি ছবি ওঠাল। কিন্তু ঐগুলো স্পস্ট হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই ছেলেটির হাত থেকে মোবাইলটি নিয়ে পানিতে নামলাম। ওরা আমাকে বার বার নিষেধ করছে মোবা্‌ইল নিয়ে পানিতে না নামতে। আম ওদের নিষেধ শুনলাম না। মোবাইলটি পানিতে এসে খুব সাবধানে অনেকগুলো ছবি উঠালাম। প্রায় দেড় ঘন্টা আমরা পানিতে ডুবালাম। এসময়টুকু আমরা বল নিয়ে নানান ধরনের খেলা করলাম। একটি বিষয় আমার খুব ভাল লাগল। আমরা গোছল করছি আমাদের পার্শ্বে সারাক্ষণ দাড়িয়েছিলেন মামুনের মেঝো মামা আনোয়ার। পানিতে না জানি আমাদের কোন সমস্যা হয়। এটি দেখে আমি খুব অভিভূত হলাম। পানি থেকে ওঠৈ আমরা আবার টিউবওয়েলের পানি দিয়ে গোছলা করলাম। কিছুক্ষণ পরই আমরা দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। খাবারের নানা আয়োজন করা হয়েছিল। খালাম্মা আমাদের খুব আদর করে খাওয়ালেন।তাদের আতিথেয়তায় আমি অবাক হলাম। আমাদের অনেক আদর, স্নেহ, আন্তরিকতা প্রদর্শনে তাদের কোন কমতি ছিল না। আমরা ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওয়ানা দিলাম।
শাকির আহমাদ
৬ অক্টোবর ২০১১
শের-ই-বাংলা হল
রাবি
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×