আমার সকালগুলো
ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙ্গে আমার। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সাড়ে পাঁচটায় বের হয়ে পড়ি সকালের ক্যাম্পাস দেখার জন্য। প্রতিদিনকার কর্মসূচি এটি। পুরো প্যারিসরোডটি চক্কর দিই। শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা থেকে শের ই বাংলা হলের গেট পর্যন্ত পুরো প্যারিস রোডে হাঁটা হাঁটি করি। কুয়াসা এখনও শীত পুরোপুরি জেকে বসেনি। তবুও কুয়াসাচ্ছন্ন সকালের ক্যাম্পাস দেখতে খুবই ভালো লাগে। দিন রাতের নানা আংশিক সময়ের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসের রুপ দেখা হয়েছে। ক্যাম্পাসকে দেখেছি মধ্য দুপুরে, মধ্য রাতে, সকাল-সন্ধায়, বেলা অবেলায়। এই সময় গুলোতে ক্যম্পাসের একেক ধরনের রুপে থাকে। নানা রুপে নানা সময়ে দেখেছি ক্যাম্পাসকে। আমার সাথে সাদিয়াও সকালে হাঁটতে বেরোয়। ও ইংলিশে পড়ে। আমার ইয়ারেই। স্বনন করে। খুব সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। কবিতা ও লেখে। ও বিবাহিত। স্বামী খুলনা থাকে। শুনেছি আজকে ক্যাম্পাসে আসবে।
আমরা দু’জনে একসাথে হাঁটি। সকালে হাটার সময় প্যারিসরোডের সুউচ্চ গাছগুলোতে চোখ তুলে তাকাতেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সাদিয়া একটু স্বাস্থ্যবান ও খুব মোটা। ও একটু হাটলেই ক্লান্ত হয়ে যায়। টপ টপ করে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে। ক্লান্ত হয়ে পড়লে ইবলিশ চত্ত্বরের পুকুর পাড়েরর সিড়িতে বসি। ও বসে বিশ্্রাম নেয়। আর আমি ওকে কবিতা শুনাই। কোথায় কি সেন্স দিতে হবে, কোন লাইনটি কোন প্যারাটি নরম, গম্ভীর করে পড়তে হবে খুব সুন্দর করে আমাকে দেখিয়ে দেয়। আমার উচ্চারণে ভয়াবহ সমস্যা। পড়ার সাথে সাথেই আমার ভুলটি ধরিয়ে দেয়। আমিও ভুল শব্দটি পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে নিই। শুধরাতে চেষ্টা করি। অনেকটা এগিয়েছি বটে। পুকুর পাড়ে বসে পানকৌড়িদের মাছ শিকার দেখতে খুব ভাল লাগে। পুকুরপাড়ঘেষে একজন ঘাস কাটছে। পুকুরের ঘা ঘেসে বকুল গাছে প্রায়দিনই টিয়া পাখি দেখি। এমন সুন্দর প্রতিটি সকাল আমি উপভোগ করি। ওর ক্লান্তি কেটে গেলে শুরু হয় আবার প্যারিস রোড ধরে হাটাহাটি। রোডে ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও তাদের সঙগীনিদেরও হাটার ভির লেগে যায়। আমাদের ডিপার্টমেন্টের সঞ্জিব স্যারকেও নিয়মিত হাঁটতে দেখি। আমরা হাঁটছি আর প্যারিস রোডের সৌন্দর্য্য নিয়ে নানা কথা বলছি। সেই সাথে ও মাঝে মাঝে ওর স্বামীকে মোবাইলে কল দিয়ে নানা খোঁজ খবর নিচ্ছে। এমন সময় রোডের রেইনট্রি গাছের ডালের ফাঁকে সূর্য্যি মামা উকি দেয়। তখন ক্যাম্পাসের সকালের দর্শকদের ভির কমতে থাকে। বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর আনাগোনা। আমি আবার রুমে ফিরে ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসি ।
শাকির ইকরাম
২১০ নং কক্ষ
শের ই বাংলা হল
সময়: ৭:৫০
১৫.১০.১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



