দিনের সকল একাডেমিক কর্মকান্ড শেষে সন্ধ্যায় রাকসু ভবনে আসলাম। আগামীকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ফুলের ডালা বানাতে হবে। জোটের সভাপতি আরিফ ভাই সকলকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন কে ফুল ছিড়তে যাবে, কে ফুলের ডালার ফ্রেম বানাবে, কে দেব দাড়– গাছের পাতা ছিড়ে আনবে, কে ফুলের মালা গাথবে। কে সুই সুতা আর কাগজ –মার্কার নিয়ে আসবে। সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেয়া হল। চলছে কাজ। এদিকে রাকসু ভবনের সমকালের মহড়া কক্ষে চলছে স্বাধীনতার গান। ওদের ওপর কোন দায়িত্ব পড়ে নাই। আমি অনুশীলনের তমাল, সুজন তিনজনে মিলে ফুলের ডাালা বানালাম। দেবদাড়– গাছের পাতা দিয়ে ডালাটি কে তৈরী করলাম। তারপর কাগজের মাপ দিয়ে ... লাগালাম। ওদিকে ..কাগজে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট’ লেখাটি লিখছে। এদিকে ফুলের মালা গাথা শেষ। ডালাও প্রস্তুত। এবার ডালাটিতে কাগজ বসিয়ে চতুর্পাশ্বে ফুলের মালা দিয়ে সেলাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডালা প্রস্তুত করা হল। ডালাতে কাগজের ওপর ফুলের মালা সেলাইয়ের কাজ করলো গণশিল্পীসংস্থার বাসুদেব। একাজ করতে করতে প্রায় সাড় আটটা বেজে গেল। সবশেষে আমরা সবাই যে যার হলে ফিরলাম রাত নয়টার দিকে। বলা হলো সকাল সাড়ে আটটায় রাকসু ভবনের সামনে সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে। পরদিন সকালে অর্থাৎআজ সকালে আমি আটটা ৩২ মিনিটে রাকসু ভবনে উপস্থিত হলাম। দেখি ঠিক আটটা ৩০মিনিটে শোক পথযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আমি দৌড়ে পথযাত্রার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। পথযাত্রাটি চলছে । শহীদ মিনার, শেরই বাংলা বঙ্গবন্ধু হল ছাপাখানা মেডিকেল হয়ে জোহা হলের সামনের পথ ধরে ক্যাম্পাসের সর্বশেষ এলাকা বধ্যভূমিতে যাচ্ছি। পথযাত্রায় আছি আমরা ৬২জন। পথযাত্রা চলা অবস্থায় আমরা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের নানা উদ্দীপনামূলক গান গাচ্ছি। এদিন যারা শহীদ হয়েছে তাদের জন্য আমরা কিছুই দিতে পারিনি। শুধু রাত নয়টা পর্যন্ত ফুলের ডালা বানানো, আর শীতের সকালে দেড় কিলোমিটার পথ হেটে হেটে বধ্যভূমিতে গিয়ে ফুলের স্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। আমরা করি না। শহীদদের প্রতি আমাদের যে দায় সেটা আমরা এই কষ্টটুকুই মাত্র স্বীকার করছি। তোমরা যে দেশস্বাধীনের জন্য শহীদ হয়েছো আমরা সে দেশ নির্মাণ করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের ক্ষমা করো। পথযাত্রায় যে গান গাওয়া হচ্ছিল শরীরের পশম দাড়িয়ে যাচ্ছিল। বার বার চেতনায় আঘাত হানছে। কেন যে প্রতিদিন এ চেতনা আমাদেরকে নাড়া দেয় না। প্রতিদিন এ চেতনা নিয়ে আমাদের দিনটি শুরু করলে আমাদের লক্ষ্যস্থলে পৌছতে পারবো।
শাকির আহমাদ
দুপুর ১২:০৬
শের ই বাংলা হল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



