ফার্মগেটের ওভারব্রিজটা থেকে নেমে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল আসগর আলী। এইবারও ধরা না পরার খুশির হাসি নাকি অন্য কিছু সেটা বোঝা গেল না। প্রায়ই এই কাজটা করে সে। বিশেষ করে প্রচন্ড ভীড়ের সময় ভীড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। চেংড়া একটা ছেলে দেখে তার পিছু নেয়। তারপর নিজের কাজটা খুব সফলতার সাথে সমাধা করে। কেউ তাকে সন্দেহ করে না। সন্দেহ না করার অবশ্য অনেক কারন আছে। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছে আসগর আলী। একেতো বয়সটা তার খুব অনুকূলে, ষাট-বাষট্টি বছরের মুখে দাড়ি গোবেচারা চেহারার কেউ এরকম করতে পারে সেটা কেউ চিন্তায়ও আনতে পারে না।
কিছুদিন আগেও আসগর আলীর মুখে দাড়ি ছিল না। দাড়ি রাখার কারনে কেউ অবশ্য জিজ্ঞেস করেনি। একেবারে ছোট মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে কিছুদিন আগে। দাড়ি রাখাটা তাই সবাই স্বাভাবিকতা হিসেবে ধরে নিয়েছে। মসজিদেও যায় নিয়মিত কিন্তু দিনের কোন একসময় ফার্মগেটের এই কাজটা না করলে শান্তি পায় না মনে। জানে খারাপ কাজ। খুব বেশি রকম খারাপ। অনেকবার নিজে নিজে তওবা করেছে সে কিন্তু শোধরাতে পারে নাই। জীবনের এই পর্যায়ে এসে এরকম একটা চক্রে পরে যাবে এটা যদি আসগর আলী আগে জানত তাহলে হয়তো এই বয়সটাতে আসতে চাইতো না সে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড ভয়ে থাকে, যদি ধরা পরে যায়। কিন্তু আবার সে নেশাটা চেপে বসে মনের মধ্যে, যেন এর থেকে পরিত্রান নেই তার। হেরোইন বা ইদানিংকালের ইয়াবার নেশা কিরকম জানে না আসগর আলী কিন্তু সে নিশ্চিত সে নেশাটাও এ নেশার মতো ভয়াবহ না।
আবারও ব্রীজটার দিকে পা বাড়ায় আসগর আলী। একটু আগে ধরা না পরে কাজটা করতে পারলেও দাওটা বড় ছিল না। ভীড়টাও বাড়ছে। আবার হলিক্রস স্কুলটাও ছুটি হয়েছে। ভীড়ের একটু দূরে দাঁড়িয়ে চ্যাংড়া টাইপের একটা ছেলে পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল। অন্যান্য সাধারন মানুষের মতো মিশে গেল ভীড়ের মধ্যে। সুযোগমতো ভীড়ের মধ্যে চ্যংড়া ছেলেটাকে আড়াল করে হাত চালিয়ে দিল ছেলেটার সামনের মেয়েটার পিঠে। মেয়েটা বোধহয় টের পায়নি। তাই এবার আরো একটু চাঞ্চ পেয়ে হাত চালাতে চেষ্টা করল মেয়েটার বুকে। ঝট করে ঘুরে গেল মেয়েটা। খুব খারাপ একটা গালি দিতে গিয়ে থেমে গেল। ‘বাবা আপনি!’ স্তম্ভিত মেয়েটার হাতে তখন আসগর আলীর হাত ধরা।
আসগর আলী ভুত দেখার মতো চমকে উঠল। তার হাত ধরে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে সে যে কিছুদিন আগে বিয়ে দেয়া ছোট মেয়েটার একমাত্র ননদ, যে আসগর আলীকে বলেছিল ‘আমার তো বাবা নেই তাই ভাইয়ার মতো আমিও আপনাকে বাবা বলে ডাকব।’
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



