somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভালোবাসা ও মায়ের বোবা কান্না

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা একটা চরম স্বার্থপরতা, হীনমন্যতা ও নিমক হারামীও বলা যায়। কিন্তু তথাকথিত এই সভ্য সমাজের মানব সমাজ এই হীনমনতাকে অনেক উচ্চ স্থানে তুলে রেখেছে। এটা এই সমাজে বড়ই সমাদৃত ও আলোচিত। যারা এর থেকে দূরে আছে তারা রক্ষনশীল ও আদিজাত। এদের দ্বারা কিছুই হবার নয়। এরা চরম বিরক্তির কারনও বটে।

সারা বাড়ী জুড়ে সাজ সাজ রব। আনন্দের হিল্লোল বয়ে চলেছে। চতুর্দিক থেকে অতিথিদের আগমন সেই আনন্দের মাত্রাকে করেছে আরও অনেক বেশী উজ্জ্বল। একটি আনন্দঘন মুহুর্ত। যদিও এই সাজ সাজ রবে আপাত দৃষ্টিতে কোন খুত চোখে পড়ছে না তথাপিও লোকের কান ভারি হওয়ায় কোন বিরাম নেই। সামাজিক একটা প্রলেপ আজ পড়তে যাচ্ছে কিন্তু তাতে কি! অসামাজিক ভাবে এর শুরু অনেক আগে থেকেই হয়ে গেছে। এতে অবশ্য কোন সমস্যা নেই, হরদম এই রকম ঘটে চলেছে, তাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে একটি অস্বাভাবিক কাজ।

এতক্ষন ইনিয়ে বিনিয়ে যা বলছিলাম তা হচ্ছে একটি বিয়ের কথা। দুটি জীবনের কেন্দ্র আজ একিভুত হচ্ছে। দুটি বৃত্তের কেন্দ্র আজ একই বিন্দুতে স্থাপিত হতে যাচ্ছে। আজ থেকেই ঐ দুটি বৃত্তের কেন্দ্র ও ব্যাস একে অপরের মাঝে একাকার হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে একটি বিশেষ কিছু রয়েছে যার কারনে এতে এত্ত হৈ হুল্লোড়। ভিন দেশি, বিন ভাষা ভাষি, এবং ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন দুজনের আজ মিলন হচ্ছে তাই এই বিয়ের গতি প্রকৃতি সাধারন বিয়ের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।

বাংলার কোন এক অজোপাড়া গাঁয়ের এক দুঃখিনি মায়ের উষ্ণ কোল থেকে বেড়ে ওঠা এক ছেলে। তিল তিল করে যাকে আজ এত্ত বড় করে তুলেছেন সেই মা, তিনিও আছেন এই বিয়েতে। হাজার মাইল পথ উড়ে এসেছেন তিনি। সাথে যিনি আছেন তিনি সেই গতর খাটা বাবা, যার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার ফসল এই গুনধর ছেলে। তারাও আজকের বিয়ে উপোভগ করছেন বেশ করে।

মেয়ে পরের ঘরে চলে যায় আর ছেলে পরের ঘর থেকে সঙ্গিনী এনে বাবা-মায়ের আদরের ছায়ায় আবার নতুন ঘর তোলে। এমনই একটি স্বপ্নে বিভোর ছিলেন মা ও বাবা। সুখ স্বপ্ন বুনে গেছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। সন্তানের ব্যাক্তিগত জীবনের সাফল্য সেই স্বপ্নকে দিন দিন আরও মজবুত করছিল। সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌছুতে একদিন সেই ছেলে প্রানের স্বদেশ ছেড়ে কোন এক বিদেশে পাড়ি জমালো। এর পর থেকে মা বাবা দুজনে মিলে তাদের স্বপ্নের তুনীরে আরও কত নতুন পালকের সংকোলন করেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। ছেলের সাফল্যের ধারা বইতে থাকে। আর মাতাপিতার বুক খানা গর্বে ফুলে উঠতে থাকে। স্বপ্ন গুলো এই বুঝি খাপের খাপ মিলে গেল। ছেলের পরিনয়ের কথা ভাবতেই মায়ের ঠোটের কোনে নিজের অজান্তেই ছোট্ট একটা মুচকী হাসি ফুটে উঠে, সাথে সাথে ভেষে উঠে সলাজ হাস্যোজ্জল কোন এক রমনীর মুখ। ভেবে রাখেন নিজ হাতে ছেলেকে আর তার বউকে ঘরে তুলবেন। এই স্বপ্নের সাথে বাবাও এসে যোগ করেন আরও অনেক কিছু। এভাবেই কাটে জীবন। সময় গড়িয়ে সময় এগিয়ে আসে, ছেলেটার একটা ব্যাবস্থা আর না করলেই নয়।

কিন্তু ছেলে নিজেই নিজের ব্যাবস্থা করে ফেলবে তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেন নি কোন দিন। হঠাৎ একদিন জানতে পারেন সুদুর প্রবাসেই কোন এক বিলেতি মেয়েতে মন রেখে এসেছে ছেলে। ধড়াশ করে যেন স্বপ্ন মালার সংযোগ সুতোটা ছিড়ে গেল। মা তার পরেও হতাশ হতে চান না। তিনি বাংলার মেয়ে, এখানে স্বপ্নেরা ভাংতে ভাংতেই গড়ে উঠে। মনের গহীনে লুকানো কষ্টকে অনেক করে চেপে রেখে আবার স্বপ্ন বুনতে শুরু করলেন। ছেলে যাকে পছন্দ করেছে তাকে নিয়েই হোক জীবনের স্বপ্ন দেখা।
বাংলাদেশ! এ আর কি দেশ!! এদেশের শিশু থেকে বুড়োরা দেশটাকে “উন্নয়নশীল” দেশ বলে জানে। দেশের পাঠ্যপুস্তকও তাই বলে। কিন্তু বহির্বিশ্বে এই দেশকে সবাই “তৃতীয় বিশ্বের” অধীনস্ত অন্যতম গরীবতম দেশ হিসেবেই জানে। অন্যদিকে মেয়ের যে দেশে বসবাস, সেদেশের অবস্থান “প্রথম বিশ্বের” নাগালে এসে ছুঁই ছুঁই করছে। শুধু কি তাই? এদেশের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের একটি বিশাল অংশ ঐ ছেলের বঙ্গমাটির সন্তান। তাই বলে ছেলে যে এদেশে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের একজন তা কিন্তু নয়। উচ্চতর পড়াশোনার দরুন তার স্থান এর চেয়ে কিঞ্চিত উপরে। কিন্তু তাতে কি! গায়েঁর মোড়ল আধার রাতে কোটিপতী গ্রামবাসীর পা চাটতেও দ্বিধা করে না। কারন টাকা যেখানে কথা বলে সেখানে আর সবাই শ্রোতা। যে কারনে, প্রথা মত বরের বিয়ে করে কনে কে নিয়ে আসার মোরদ আর হয়ে উঠেনি বরং উলটো বর তার মা-বাবা কে বহুদুর থেকে উড়িয়ে এনে কনের বাড়ীতেই বিয়ে করতে গেল।

বাস্তবিক জীবনের বিষাদ রসের আগাম অনুমান সব সময় করা সম্ভব হয় না। যার কারনেই হয়তো মানুষ স্বপ্ন দেখা থামাতে পারে না। হুড়মুড় করে স্বপনের প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ার পর আবারো সেই প্রাসাদকে টেনে তোলার যে স্বপ্ন মা দেখেছিলেন তা দিন দিন সুদুর পরাহত হতে লাগলো। জীবনে অনেক বিয়েতে গিয়েছেন মা। এর সব গুলোই ছিল পরের বিয়ে। বিয়ের দিন গিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকতা সেরে খানাদানা সেরে আবার চলে এসেছেন। রীতি মত দর্শক যাকে বলে। কিন্তু সেসকল বিয়েতে অভিভাবকদের চরম ব্যাস্ততা, সাজানো গোছানো, সবদিক তদারকি করা, নিজের মনের মাধুরী দিয়ে সন্তানের বিবাহিত জীবনের সুচনায় মুখ্য অবদান রাখার দৃশ্যগুলো দেখে নিজেকে সেই অভিভাবকদের কাতারে একদিন দেখবেন এমন স্বপ্ন যে ভেঙ্গে গেল তা টের পেলেন বিয়ের দিন। নিজের ছেলের বিয়ের সাথে আগের অন্যের বিয়েগুলোর সাথে কোন প্রকার ফারাক করতে পারলেন না। মনে হলো যেন কোন এক আত্বীয়ের বিয়ে খেতে এসেছেন।

চারিদিকে বর-কনে কে নিয়ে চলছে তুমুল হৈচৈ, ছবি তোলা, এটা করা, সেটা করা। আনন্দের কোথাও কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু পাশেই এক কোনে নির্বিকার বসে আছেন বাবা-মা, তাদের সামনে ভাষাগত এক বিরাট দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে যোগ হয়েছে কৃষ্টি-কালচারের দেয়াল, গ্রাম্য সরল জীবনের বিপরীতে উন্নত দেশের শহুরে জীবনের দেয়াল। তাই চরম ইচ্ছে থাকা সত্বেও এতগুলো দেয়াল টপকে এই আনন্দের সাগরে ঝাপ দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। এই আনন্দে আসে পাশের নির্জীব চেয়ার টেবিল গুলোর যেমন কোন ভাগ নেবার কোন জো নেই, আজ তাদেরও হয়েছে সেই দশা। আপন ছেলের বিয়েতেও যেন তারা দূর থেকে আরও দুরের কেউ।

বিয়ে শেষেও ঐ দেয়ালগুলো যেন টপকানো গেল না। তারা যে ভাষায় কথা বলেন সে ভাষা এরা কেউ জানে না। বায়ান্নর রক্তের গন্ডি যে ঐ বাংলার মাটি পেরিয়েই শেষ তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন যখন দেখলেন বর-কনে কথা বলে তৃতীয় আরেক ভাষায়। মুখ ফুটে শুধু এইটুকু বললেন “ছেলের বউ যা বলে তার কিছুই আমি বুঝি না” ওরা ভালোবেসে নিজেদেরকে বেছে নিয়েছে কিন্তু এ কেমন ভালোবাসা যা তিরিশ বছরের নাড়ী ছেড়া কষ্টের অবদানকে লাথি মেরে দূরে ঠেলে দেয়? এ কেমন ভালোবাসা যা একজন মায়ের কলিজাকে ছিড়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়? এ কেমন ভালোবাসা যা বাবার শ্রমের মুল্যকে ধুলো কনার সাথে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়? এই যদি হয় ভালোবাসা তাহলে হৃদয়ের যে টানে তিরিশটি বছর দরদ ভরে তীল তীল করে ছেলে কে বড় করেছেন সেই হৃদয়ের টান এবং দরদকে কি বলে? আমি সেই মায়েদের নিরব চিৎকারে এই প্রশ্নগুলো শুনেছি। তোমরা কি কেউ পারবে এর জবাব দিতে। আমার জানা খুব প্রয়োজন, তোমাদের দেয়া উত্তর নিয়ে আমি সেই মায়েদের কাছে ফেরত যাবো। এতে যদি তাদের বুকের উপর থেকে কষ্টের পাথরটা একটু সরে আসে!!


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:১৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×