somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – দ্বাদশ পর্ব

৩১ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপেক্ষায় আর প্রতীক্ষায় আমাদের এক একটা দিন কেটে যাচ্ছে, তোর আগমনী অপেক্ষা নানা ভাবনা জুড়ে । তোর মামনীর ডাক্তার জানিয়েছিলেন খুব সতর্ক থাকতে, তোর নড়াচড়া ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে, সিচুয়েশন অনুযায়ী তখন ব্যবস্হা নেয়া হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তোর মামনিনে দেখে ডাক্তার পরীক্ষা করার পর বললেন এমনিয়োটিক ফ্লুইডটা যেকোন সময় হঠাৎ করে কমে যেতে পারে, তুমি খুব সতর্ক থাকবে। প্রতিদিন বাসায় ফিরে তোর নড়াচড়া উপভোগ করাটা আমার অন্যতম একটা মজার কাজে পরিনত হল, তুই ও খুব সুন্দর সাড়া দিচ্ছিস, সেটাও টের পাচ্ছি, মাঝে মাঝে গান ছেড়ে দিলে সেটায় তোর রেসপন্স আরো খুব ভাল ভাবে টের পাওয়া যায়।

জানুয়ারির পনের তারিখে আবারও আলট্রাসনো করানো হল এবং এবার এমনিয়োটিক ফ্লুইডের যে পরিমান দেখা গেল সেটা ঠিক বিপদ সংকুল না হলেও বেশ কম পরিমানে। তবুও ডাক্তার এত জলদি সিজার করতে রাজি হলেননা। একটা ভ্রুনের বেড়ে উঠার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল মায়ের পেট। এখানে পর্যাপ্ত বৃদ্ধীর পর পৃথিবীতে আগমন হলে সেটাই সন্তানের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক। গর্ভাবস্হার শেষ দিকে এক একটা দিনই ভ্রুনের বৃদ্ধীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংগগুলোর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য এটা অনেকাংশে জরুরী। ডাক্তার হিসেব নিকেশ করে জানালেন আমরা আরো অপেক্ষা করব, তবে আপনারা খুবই সতর্ক থাকবেন।

নরমালি ডাক্তার রা ডেলিভারীর যে ডেট দিয়ে থাকেন তার কিছুদিন আগেই অনেক ক্ষেত্রে ডেলিভারী হয়ে যায় বা করে ফেলতে হয় নানা শারীরিক কারনে। ডাক্তার যখন জানাল যেকোন দিন দরকার হলে সিজার করে ফেলতে হবে তখন তোর মামনীর মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরতে শুরু করল।

১৯শে জানুয়ারি ! এই দিনটি আমার খুব প্রিয়, বছরে ৩৬৫ দিন থাকলেও কেবল মাত্র এই দিনটিকে আমার একান্ত নিজের মনে হয়, আমার জন্মদিন বলে কথা !!

২০০১ সালের কথা। ভার্সিটি জীবনটা সবে ভাল লাগতে শুরু করেছে। কাছের বন্ধুরা এক একজন এক এক জায়গায়। নতুন বন্ধু হচ্ছে, সিনিয়র ভাইয়াদের সাথেও বন্ধুতা গাঢ় হচ্ছে।

১৮ই জানুয়ারী আর কিছুক্ষন পরেই শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই ১৯শে জানুয়ারী, আমার জন্মদিন। এই দিনটা আমার অনেক প্রিয় একটা দিন, একান্ত নিজের মনে হয়। রুমমেটদের কারো খেয়াল আছে কিনা জানিনা।
এশার এর নামায শেষ করে উঠলাম তখন পোনে বারোটা হবে। হঠাৎ বাসার দরজায় নক- এত রাতে কে আবার।

সুবীর ভাই এসে ঢুকল, আমিত অবাক এত রাতে। ঘটনা কি, বলল আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে তাই চলে আসলাম। দরজা লাগাতে গেলাম, বলল মুন্নারা আসতেছে । কথা বলতে বলতে আমিও ভুলে গেছিলাম জন্মদিনের কথা। বারটা বাজার অল্প আগে হইহই করে ঘরে ঢুকল মুন্না, রনি, বিশ্ব,হীমু ভাই।

সবাই এক সাথে বলে উঠল শুভ জন্মদিন। আমার রুমমেটদের ও মনে পড়ল। ভাইয়ারা বলল কিরে তোরা কেক টেক আনিস নাই। আসলে ওমন কোন প্রিপারেশনও ছিলনা। মুন্না ভাই বলল ব্যাপারনা আমরা নিয়ে এসেছি। কেকের প্যাকেট এগিয়ে দিল।

আমি আসলে আমার তখনকার অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারবনা। সবাই মিলে কেক কাটলাম। হীমু ভাই বাঁশী বাজিয়ে শুনালেন। আড্ডা দিয়ে রাতে আবার তারা চলে গেলেন।

এর আগে আসলে কখনো আমি জন্মদিনে কেক কাটিনি। জন্মদিনে বাসায় যেটা হত তা হল আমাদের ভাই বোন সবার জন্মদিনে আম্মু বিরিয়ানী রান্না করেন আর সন্ধ্যায় নিজ হাতে কেক বানিয়ে সেটা পরিবেশন করেন। কলেজ লাইফে ঐ দিন কাছের বন্ধুদের নিয়ে কোন ফার্স্টফুডে গিয়ে বার্গার খাওয়া - এত দিন এই ছিল বিশেষ এই দিনটার রুটিন।

এইবারই প্রথম বাসার বাইরে। বাসার বাইরে প্রথম জন্মদিনটি যে আমার কাছে এত বেশী আবেগপূর্ণ হয়ে থাকবে আমার কল্পনায়ও তা ছিলনা। আরজু সবসময় একটা কথা বলে বাস্তব কল্পনার ও আগে চলে, এ যেন তাই হল।

জন্মদিনে তারা যে আমাকে অতটা অবাক করে দিবেন, আমার মাঝে অমন ভাললাগা মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিবেন আমি সেটা কল্পনাও করিনি। তারপর থেকে প্রতিটা জন্মদিনে সে অনুভূতিটাই যেন ফিরে ফিরে আসে।

সিলেটে আমরা দশ বন্ধু হলে না থেকে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। প্রতিমাসে একটা করে স্পেশাল খাওয়া দাওয়া আর বছরে দশটা জন্মদিনে আমরা ব্যাপক মজা করতাম। প্রতিটা জন্মদিনের জন্য আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম, সে দিন রাতের হইচই এ বাড়ীওয়ালাও কিছু বলতেননা। সন্ধ্যায় কাছের সব বন্ধুদের নিয়ে চলত খানাপিনা।

জুনিয়র ব্যাচ ও হয়ে গিয়েছিল কয়েকটা তখন, তখন এই আয়োজনের ব্যাপ্তি ছিল আরও মজার। আমার সময়জ্ঞান, অলসতা এগুলি এমনিতেই আমার বন্ধুদের মাঝে বিরক্তির পাশাপাশি ব্যাপক বিনোদনের উৎস হয়ে গিয়েছে ততদিনে। আমি সময় দিলে তারা জানে এর সাথে আধাঘন্টা যোগ করে নিতে হবে। ২০০৩ সালে সেটা নতুন মাত্রা পেল। জন্মদিনে জুনিয়র ফ্রেন্ডরা অনেকে উইশ করল মোবাইলে। আলাদা আলাদা ভাবে করাই জানলামনা যে তারা এক জায়গা থেকেই করেছে। পরে ম্যাসেজ পাঠাল ভাই পার্টি কখন। আমি সবাইকে রিপ্লাই দিলাম ওয়ান এ এম এ চলে আসিস সবাই।

রাত দেড়টার দিকে পোলাপান এসে দরজা ধাক্কা দিল। দরজা খুলেই বললাম কিরে তোরা আসার কথা দুপুরে এখন কেন হাজির হইছস, একসাথে এতগুলা থাকবি কিভাবে। একজন মোবাইলে ম্যাসেজ বের করে দেখাল কি লিখস পড়। ওয়ান এএম লিখস তাকাইয়া দেখ !!!

আমিত পুরা টাসকি !!! ওয়ান পিএম লিখতে গিয়ে ওয়ান এএম !!!
তোরা একবারও ফোন দিয়া জানবি না ?? ভাই তুমি লিখছ, আমরা ভাবলাম এখন পার্টি, তাই চলে আসছি !!!
তারপর থেকে যা হল আমি কাউরে কোন টাইমে আসতে বললে আগে জানতে চাই ভাই এ এম, না পি এম !!!!

তবে জীবনে অনেক বড় পাওয়া আমার এই সব বন্ধুরা (সিনিয়র-জুনিয়র সহ) । সময় আমাদের কাছে কোন বিষয় নয়। আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে। অথবা ভাল লাগছেনা- সবসময় জানি কেউ না কেউ আছেই পাশে , শুধু বলার বাকী চলে আয় অথবা আমি আসছি।

অবাক হইনা যখন দেখি সুইডেন থেকে মাইনুল বন্ধুটি ঠিক রাত বারটায় ফোন দিয়ে উইশ করে, কানাডা থেকে বাংলাদেশ আসার পথে কুয়েতে যাত্রা বিরতীর সময় চান্স পেয়ে সুবীর ভাই বলে শুভ জন্মদিন। হাজার ব্যস্ততার মাঝে বন্ধুরা যখন উইশ করতে ভোলেনা, তখন শুধু আমার লোভ বেড়ে চলে, এই লোভ বেঁচে থাকার ,আরও অনেক দিন এই প্রিয় মানুষ গুলিকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে।
বড় হবার সাথে সাথে তোর দাদা দাদির জড়তাও যেন কেটে যেতে থাকে। এখন প্রতিটি জন্মদিনে তোর দাদি নিয়ম করে উইশ করেন, পাশে থেকে দাদাও তাই। যখন শুনেন বন্ধুরা সহ কেক কাটছি, জানি ভাল লাগাটা তাদেরও ছুঁয়ে যায়। তোর চাচা আর ফুফির পাঠানো গিফট টা পরম মমতায় গায়ে জড়ায়, আর মনে মনে আওড়ে উঠি লাইফ ইজ বিউটিফুল।

জীবন মানেই পাওয়া আর না পাওয়ার এক বিরাট সরল অংক। স্কুলে থাকতে দেখেছি যে সরল অংকটি যত বেশী জটিল আর কঠিন মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তার ফলাফল হয় এক অথবা শূণ্য। একটাইত জীবন, ফলাফল এক ধরে নিয়েই আগানো যাক- মনে মনে সবসময় এই ভাবনাটাকেই প্রশ্রয় দিতেই ভাল লাগে।
যাই হউক, আমার জন্মদিনটি যতই এগিয়ে আসতে থাকে তোর মামনির কামনা তত প্রখর হতে থাকে, সে বলেই ফেলে ১৯ শে জানুয়ারি যেন তোরও জন্মদিন হয় । যদি সিজারের দরকার পরে সেটা যেন ১৯ তারিখেই হয়, তাহলে নাকি এর চেয়ে সুন্দর আর কোন উপহার আমার জন্য হতে পারেনা।
তোর মামনির কাছ থেকে শুনতে শুনতে আমিও মনে মনে অমনটাই ভাবছি, ব্যাপারটা কি দারুন হবে চিন্তা করে দেখ, দুজনের জন্মদিন যদি একই তারিখে হয়। অবশ্য সে সাথে আমি আল্লাহর কাছে এটাও চাচ্ছি শুধু আমাদের চাওয়ার জন্যই যেন অমনটা না হয়, কারন এই সময়ে মাতৃগর্ভের একএকটা দিন তোর পরিপূর্ণতার জন্য অনেক জরুরী, গর্ভাবস্হার পুরো সময়টা মায়ের গর্ভে থাকার চেয়ে ভাল আর কিছুই হতে পারেনা। সুস্হ তুই ই যে আমাদের আরাধ্য ।
এবার ১৯ শে জানুয়ারি সম্পূর্ণ অন্য রকম আমার জন্য । এই প্রথম তোর মামনি আর আমি একসাথে আছি জন্মদিনে, সাথে আছেন তোর দাদা দাদি, চাচা আর ফুফু। রাতে তারা নানা আয়োজনে শুরু করল দিনটি। এ ভাললাগা লিখ বোঝানোর নয়, তুই ছিল আমাদের সাথে, তোর মামনির সাথে নিবিঢ় বন্ধনে। এবারের জন্মদিনের অন্যতম সারপ্রাইজিং ছিল আমেরিকা থেকে আমার খালা তোর এক দিদি মনি সেদিন আমার জন্য এক বক্স চকলেট পাঠিয়ে দিলেন। বক্স খুলে আরো বেশী আবাক হবার পালা, সেখানে দেখি তোর জন্য সুন্দর দুটি ড্রেসও পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।তোর মামনির ইচ্ছাটা পূরণ না হলেও অপেক্ষার এই সময়টা দারুন উত্তেজনায় আনন্দময়ই ছিল আমাদের কাছে।



আমাদের তুই (To The Child) – একাদশ পর্ব
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×