অনেক রাত হয়েছে আপনি ঘুমাবেননা , কালকে তো অফিস আছে তাইনা ।
রাত হউক সমস্যা নেই, তোমার সব গল্প শুনে তবেই ঘুমাবো ।
ততক্ষনেতো ভোর হয়ে যাবে ।
একদিন ভোর হলে কিছু হবেনা, এমনিতেত আর ভোর দেখিনা কোনদিন, আজ না হয় দেখলাম ।
হা হা হা, অফিসে যাবেন না ।
তা যাব, সমস্যা হবেনা ।
সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল একদিন । আম্মা বিকেল বেলা গাড়ি নিয়ে ওনার বোনের বাসায় গেলেন । বাসায় আর কেউ নেই , আমি ঘুমাচ্ছিলাম । যাবার সময় আমাকে ডেকে বললেন দরজা লাগিয়ে দিতে, বাসায় কেউ নেই । আমি উঠে আসলাম, আর তখনই আমার মাথায় শয়তানি চেপে বসল । আম্মা যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম । আস্তে করে নিচে নেমে আসলাম । দেখলাম আশরাফুল গেটের কাছেই দাঁড়ানো । আশেপাশে নিচে আর কাউকে দেখা যাচ্ছেনা । তাকে ইশারায় উপরে আসতে বললাম ।
সে বাসায় ঢোকার পর দরজা লাগিয়ে দিলাম । আশরাফুল কেমন থতমত খেয়ে গেল, বলল কি ব্যাপার কি হইছে । তার কথার কোন উত্তর না দিয়েই আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম ।
সেও সাড়া দিল । বাসায় কেউ নেই সেও এটা জানে । জড়ানো অবস্হাতেই আমার রুমে চলে আসলাম । কখন যে কিভাবে দুজনের শরীর থেকে সব কাপড় নেই হয়ে গেল সেটা টের ও পেলামনা । নারী পুরুষের চিরন্তন খেলায় মেতে উঠলাম আমরা । দুজনই আনাড়ি, তাই ভয় ভয় লাগলেও, আনন্দের মাত্রা কোন অংশে কম ছিলনা । উদ্দাম উত্তেজনা, কষ্টমাখা আনন্দ । শেষে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন শুয়ে ছিলাম । কি যে শান্তি লাগছিল বলে বোঝাতে পারবনা । কোন কথা ছিলনা কারো মুখে । একসময় আশরাফুল উঠে কাপড় পড়ে চলে গেল । আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
এই ঘটনার পর থেকে আমি কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম । সেই ঘোর আমার মরে যাবার আগ পর্যন্ত আর কাটেনি । আমার অন্য কোন কিছুই আর ভাল লাগছিলনা । খালি আশরাফুলের সঙ্গ পাবার জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম মনে মনে । এই ঘটনার পর নানা কাজে তার বাসায় আসার পরিমান আরো বেড়ে গেল । আম্মার কাজ কর্ম করার জন্য তার আগ্রহ প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে । খালি জানতে চায় কিছু লাগবে কিনা , কোন কাজ আছে কিনা , সে আসলে আমি দরজা খুলে দিই, একবার দুজন দুজনের দিকে তাকায়, তারপর দুজনই চোখ নামিয়ে নিই । কেউ আর কারো দিকে তাকাতে পারিনা , যদিও মনের চোখে জানি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি । একসময় আমি সরে গিয়ে আম্মাকে ডাক দিই । সামনে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ আমি তাকে ছুতে পারছিনা , এইটা আমি সইতে পারছিলামনা ।
সময় যেন আমাদেরকে সুযোগ করে দেয়ার অপেক্ষায় ছিল । সপ্তাহখানেক পর আম্মা বললেন তিনি আর চাচা বাড়ি যাবেন, আমি যাব কিনা । অন্য সময় হলে বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে যেতাম, আজকে তার প্রশ্নই উঠেনা । আমি কাঁচুমাচু ভাব নিয়ে বললাম না, আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা, আপা সহ থাকব । আম্মা একটু অবাক হলেও পরে নিজে থেকে বললনে, থাক তোর যাবার দরকার নেই, তুই ও গেলে বাসা একেবারে খালি হয়ে যাবে । তুই থাক, তোর ভাই আর আপার দেখাশোনা করবি । ওদের খাবার দাবারের যেন কোন কস্ট না হয় । আমি সাথে সাথে মাথা নেড়ে সায় দিলাম । সে রাতে খুশীতে আর আবেগে আমার ঘুম হলোনা ।
সকালে আম্মা চলে গেলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে । দশটার মধ্যে আপা আর ভাইয়াও বের হয়ে গেলেন, সন্ধ্যার আগে আর ফেরার কোন চান্স নেই । ঐ একটা সপ্তাহ মনে হয় আমরা হানিমুন এ ছিলাম । যখন তখন সে আমার কাছে ছুটে আসত, কিংবা আমি তাকে ডেকে নিয়ে আসতাম । বাসায় কেউ নেই, মনে হত এটাই যেন আমাদের সংসার । আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতাম , ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে খেতাম। আমার জীবনের সব থেকে সুখের ঐ একটা সপ্তাহ । স্বামী স্ত্রীর মত করে পার করে দিয়েছিলাম সময়টা আমরা ।
সপ্তাহ খানেক পর আম্মা চলে আসলেও সে নেশা থেকে আমি আর বের হতে পারিনি । ভয়ডর চলে গিয়েছিল । রাতে শোয়ার আগে বাসার দরজা আমি চেক করতাম লাগানো আছে কিনা, আম্মায় বলে দিয়েছিলেন, রুটিন কাজ । সে সুযোগটাই কাজে লাগাতাম মাঝে মাঝে । আশরাফুলও ঐ সময় চালাকি করে সিঁড়ি ঘরের আর নিচ তালার গ্যারেজের সব লাইট বন্ধ করে রাখত, আর তার রুমের দরজাটা খুলে রাখত । সবাই ঘুমিয়ে গেলে বেশ কয়েকদিন আমি রাতে নিচে নেমে এসে আস্তে করে আশরাফুলের রুমে ঢুকে মশারির ভেতরে চলে যেতাম । কোন কথা হতোনা আমাদের মাঝে, শুধু শরীরটাকে বিলিয়ে দিতাম শরীরের মাঝে । ক্লান্তি নিয়ে আস্ত করে বাসায় ফিরে আসতাম। এভাবেই প্রায় দুমাস চলে গেল ।
হঠাত একদিন মনে পরল নারী দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া অনুপস্হিত আমার মাঝে গত দুমাস ধরে । সেদিন গোসল করতে গিয়ে বমিও করলাম । আমার মাথায় যেন বাজ পরল । বাথরুমে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষন এর নিচে বসে থাকলাম । বার বার মনে হতে লাগল, হায় হায় এটা কি হয়ে গেল । এখন আমি কি করব । কাকে কি বলব । অস্হিরতা বেড়ে গেল ।
বিকেলে আস্তে করে নিচে নেমে আসলাম । আশরাফুলকে ডেকে গেটের বাইরে নিয়ে গেলাম । অন্য কোন কথা না বলে সোজা বলে ফেললাম আমি প্রেগন্যান্ট । আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি । বিষ্ফোরিত হয় হয় অবস্হা । সে ঘামতে লাগল, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি । তোতলাতে আরম্ভ করল ।
বললাম এখন আর এই নিয়ে টেনশন না করে চল আমরা বিয়ে করে ফেলি । না হলে আরেকটা কাজ করতে পারি আমি আম্মাকে বলি যে তোমারে বিয়ে করতে চায় । তার মুখ দিয়ে না শব্দটা বের হয়ে আসে । আমি বললাম কেন, তখন সে বলে আম্মা রাজি হবেনা । আমি বলি যে আমি রাজি করাবো । তখন সে বলে এইটা বললে আমারে চাকরি থেকে বের করে দিবে । সে বলে আজকে রাতটা সময় দাও আমি চিন্তা করি , গর্ভ নস্ট করা যায় কেমনে সে খোজ খবর নিয়ে দেখি । আমি বললাম, কাজটা ঠিক হবেনা, আর সেটা করতে গেলেও আম্মার কাছে ধরা খেয়ে যাব । তার চেয়ে বিয়ের কথা বললেই সবচেয়ে ভাল হবে ।
আমি এখন খাওয়াব কি, থাকব কই , আমার বাড়িতে বললে বলবে আমার এখনও বিয়ের বয়স হয় নাই । হঠাত করে অন্য এক আশরাফুল আমার চোখের সামনে চলে আসল । তার মুখ দিয়ে নানা রকম ধানাইপানাই টাইপের কথা বার্তা বের হতে লাগল । এইবার আমার চোখ বিষ্ফোরিত হবার দশা । একি, এই ছেলে এখন এসব কি বলছে । আমি ওরে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, আর ও এখন এইগুলা কি বলছে । তুমি কি করবা সকালের মধ্যে আমারে জানাও, এই বলে আমি বাসায় চলে আসলাম । রুমে বসে ভাবতে লাগলাম গর্ভ নস্ট করে ফেলাটাই মনে হয় ভাল হবে কোন না কোন ভাবে । আশরাফুলের আসলেই এখনও বিয়ে করার সময় হয়নি, বয়স আর আয় রোজগাড় এর কথা চিন্তা করলে ।
পরদিন সকালে আমি আমার জীবনে আরেকটি ভয়ংকর সংবাদ শুনতে পেলাম । ড্রাইভার উপরে এসে আম্মাকে জানাল আশরাফুল নাকি সকালে তার ব্যাগ আর সব কাপড়চোপড় নিয়ে চলে গেছে । সে আর আসবেনা । আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । আম্মা উচ্চস্বরে কতক্ষন তার চৌদ্দ গোষ্ঠিকে গালাগালি করলেন । আমার মাথায় কিছুই ঢুকলনা, আমি চারপাশে সব ঝাপসা দেখতে লাগলাম । নিজের রুমে এসে বিছানায় বসলাম কিছুক্ষন । বুঝতে পারছিনা আমি এখন কি করব । আমার কি করা উচিত । আম্মাকে সব খুলে বললে কি প্রতিক্রিয়া হবে সেটা অনুমান করতে পারছিলামনা । মাঝখানের রুমে এসে শুনি আম্মা কাজের বুয়াকে বলছে , হারামজাদা মোবাইল ও বন্ধ করে ফেলছে । তার সাথে যোগাযোগ করার ও কোন পথ আমি খুজে পেলামনা ।
দুই দিন চলে গেল । ঠিক জানিনা কিসের উপর ভর করে আমি এই দুদিন পার করলাম , ভয়ংকর দুদিন । এর মাঝে আম্মার মোবাইল থেকে সুযোগ পেলেই আমি আশরাফুলের মোবাইলে কল করার চেষ্টা করেছি । প্রতিবারই সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে । আমি বুঝে গেলাম, আমার জীবনে আশরাফুল আর কখনো আসবেনা । সে যৌবনের ভাবাবেগের কারনেই আমার সাথে মিশেছে, আমি তাকে সুযোগ করে দেয়ার পর আমার শরীর উপভোগ করেছে, এটা সত্য উপভোগ আমিও করেছি । আমার প্রতি তার ভাল লাগা ছিল, তবে সেটা অতটা ছিলনা যেটার জন্য সে যুদ্ধ করতে পারবে । আমার কি করা উচিত, কি করা উচিত না, কোন কূল কিনারা আমি খুজে পাচ্ছিনা ।
বিকালে আম্মা আমাকে বললেন ছাদের গাছগুলোতে পানি দিয়ে আসতে । সাথে আশরাফুলকে বেশ কিছু গালিও দিলেন, কারন পানি দেয়ার এই কাজটা সেই করত । লিফটে উঠার সময় আমার চিতকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছিল, এই সেই লিফট যা সাক্ষী আমাদের উদ্দামতার ।
ছাদে উঠে আমার মনে হল আর নিচে ফিরে যাবার কোন মানে হয়না । নিচে আমার জন্য আর কিছু নেই । ব্যাপারটা জানার পরপরই নিশ্চিতভাবে আম্মা আমাকে বের করে দিবেন । চাচা হয়ত হাতে কিছু টাকা দিয়ে ড্রাইভারকে বলবেন বাসে তুলে দিয়ে আসতে । মামা বাড়িতেও আর জায়গা হবে বলে মনে হয়না । বেঁচে থাকার সব মানে একেবারেই উড়ে চলে গেছে আমার কাছ থেকে । কি নিয়েই বা বাঁচব আমি, যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন বুনেছি সে আমাকে পরিত্যাগ করে ভয়ে পালিয়ে গেছে । ডিসিশান নিয়ে নিলাম কি করব আমি । বালতিতে পানি নিলাম । গাছগুলোতে ঠিক মতন পানি দিলাম , আমার চোখ গলেও পানি পরছে তখন । পৃথিবীটা ঝাপসা হয়ে আসছে ।
পানি দেয়া শেষ করে আমি বালতি আর মগ হাতে নিয়েই ছাদের রেলিং এ উঠে আসলাম । আসে পাশের বিল্ডিংগুলোর ছাদে কেউ নেই । কেউ আমাকে দেখছেনা । আমি নিজেকে শূন্যে ভাসিয়ে দিলাম ।
বাসার সামনের রাস্তা রক্তে ভেসে গেল । লাল বালতিটা ফেটে গিয়ে দূরে পরে আছে । রাস্তায় চলতে থাকা দুটা রিক্সা আমার সামনে এসে থেমে গেল । তাদের চিতকারে ড্রাইভার বের হয়ে এসে খালাম্মা বলে চিতকার দিল । আরো লোকজন এসে হাজির হল । আম্মা দৌড়াতে দৌড়াতে নেমে আসলেন । বিলাপ শুরু করে দিলেন । ওনার বিলাপ ও ওনার কথার মত, গালাগালির মতন বেসুরো । আম্মা ড্রাইভারকে জলদি একটা সিএনজি ডাকতে বললেন । এই পরিস্হিতিতেও উনি ওনার গাড়ি বের করতে বললেননা, রক্ত লেগে গাড়ি নোংরা হয়ে যাবে ভেবে । তখনও আমি বেঁচে আছি । আমার প্রতি তার ভালবাসা ভালই ছিল, সিএনজিতে তিনি উঠলেন, সাথে ড্রাইভারও । হাসপাতালে নেয়া হল, স্যালাইন লাগানো হল তখনও আমি বেঁচে ছিলাম ।
রক্ত বন্ধ করা যাচ্ছেনা, শরীর থেকে সব রক্ত বলতে গেলে বেরিয়ে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে আমি পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলাম । একসময় ডাক্তার আমাকে মৃত ঘোষনা করে দিল ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০