somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেজার্ট সাফারি , সাথে শারজাহ সাফারি !

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"তোমার লেক্সাসটাত পুরোনো মডেলের " ! এই একটা কথার খেসারত দিতে হয়েছিল আমাদের পরবর্তী ঘন্টা খানেক । ডেজার্ট সাফারিতে যাবার জন্য এক পাকিস্তানি চালকের গাড়িতে চেপে বসেছিলাম আমরা । হেলেদুলে চালানো চালক কে যখন বেশিরভাগ গাড়িই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল , তখন জামিল বলে বসল ঐ কথা , আর তার কিছুক্ষন পর শুরু হল গাড়ির শক্তি পরীক্ষা । গাড়ির ভেতরে বিশেষ কায়দায় ধরে বসার জন্য পাইপ বসানো আছে । অল্পকিছুক্ষন আগে লাঞ্চের বদলে বার্গার আর কোক খাওয়া আমাদের চলছে গাড়ির ভেতরে টিকে থাকা তথা বাড়িটাড়ি না খাওয়ার প্রানপন লড়াই আর সাথে জামিল কে গালাগালি ।

নানা রকম প্যাকেজের মাঝে আমরা সাফারির প্রিমিয়াম প্যাকেজ নিয়েছিলাম । এতে খাওয়া নাকি দিবে সবার আগে, বসাবে সবার সামনে, নাচানাচি দেখা যাবে কাছ থেকে আর উটের পিঠে চড়ে ছবি তুলতে দিবে ! শহুরে ইট পাথরের দুবাই ফেলে একসময় আমরা নেমে এলাম মরুভূমিতে ।

দুবাই, আবুধাবী কিংবা শারজা - এদের সবকিছুই আসলে মরুভূমি । যত আকাশছোঁয়া প্রাসাদ কিংবা যা কিছুই তারা বানিয়েছে সবই তো আসলে মরুভূমির উপরেই । বলা চলে আস্তে আস্ত মরুভূমির পরিমান কমছে, যেমনটা আমাদের চাষের জমি কিংবা বন ।

দুবাই এর ডেজার্ট সাফারি আর আমাদের দেশে গাজীপুরের রিসোর্ট এ ঘুরতে যাওয়া আসলে একি টাইপ ব্যাপার । শহরের শেষ সীমায় সবুজের সমারোহে হারিয়ে যাওয়ার মতই দুবাই এর উপকন্ঠে মরভূমি দেখার জন্য ডেজার্ট সাফারি । মনে মনে আমি ভেবেছিলাম হয়ত এমন কোন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখান থেকে চারপাশে কিছুই আর দেখা যাবেনা, কেবল বালি আর বালি ! আদৌ ব্যাপারটা তা না । গাড়ি যখন বালির খাদ থেকে বালির টিলার উপর উঠে আসছিল তখন ঠিকি শহরের উঁচু বিল্ডিং চোখে পড়ছিল ! মরুভুমির বুকে কিছুদূর পরপর একটা এলাকা নিয়ে এক একটা সাফারি অপারেটরের আস্তানা । সেখানে চাইলে রাত্রি যাপনের জন্য ছোট ছোট কটেজ, একটা স্টেজ আর ছবি তোলার কিছু আয়োজন । সবগুলো আসলে একি টাইপের ই ।

আমাদের ড্রাইভার তার সম্ভারে থাকা এক একটা কারিশমা দেখাতে দেখাতে এগিয়ে চলছে । স্পিডিং করে হার্ড ব্রেক, পুরো গাড়ির চারপাশ বালুতে ঢেকে যাওয়া, ধুম করে টিলার উপর থেকে বালির খাদে লাফ দেয়া , নানা কসরত একটার পর একটা । আমরা ভাবতেছি কখন যে শেষ হবে এই যাত্রা ।

রিসোর্ট এ পৌঁছার পর সে আরেক ব্যাপার । আমাদের প্রিমিয়াম প্যাকেজ তাই আমরা উটের পিঠে চড়ে ছবি তুলতে পারব আর ১০ মিটার চড়তে পারব । এর বেশি গেলে আলাদা টাকা । উটের পিঠে চড়ে ছবি তুলে আমরা ১০ মিটার গিয়ে নেমে পড়লাম ! বেচারা উটের রাখাল খুবই মনোক্ষুন্ন হয়েছে ব্যাপারটাই । পানি স্ন্যাকস কোক ফান্টা খাবার শেষে শুরু হল শো । শুরুতেই এক যুবক নানা রকম নৃত্য পরিবেশন করে গেল ।

বেলী ডেন্স ই মূল আকর্ষন এই ডেজার্ট সাফারির । এইটা যে মানুষের কেন এত ভাল লাগে এই যুগে এসেও সেটাই আমি বুঝলামনা !!! যারা ডেজার্ট সাফারি পর্যন্ত গিয়েছে, জগত সংসারের সব ড্যান্স অনলাইনে আগেই তাদের দেখা হয়ে যাবার কথা ;)

সাফারির খাওয়া দাওয়াটা খুব ভাল ছিল , দিনশেষে এটাই হচ্ছে আসল কথা , আর সবচেয়ে শান্তির ব্যাপার ছিল ফিরতি পথের নিস্তরঙ্গ যাত্রা , নাহলে খবর ই ছিল ।

পরদিন আমাদের গন্তব্য শারজাহ । ট্রাভেলার হিসেবে আমি খুব বাজে প্রকৃতির । আমার টার্গেট থাকে কোন একটা জায়গায় গেলে সেখানকার সম্ভাব্য সবকিছু একেবারে দেখে আসা, যাতে ঐ জায়গায় আর যাবার ইচ্ছা না হয়, অন্য কোন জায়গায় যেতে পারি । শারজাহ পরিকল্পনায় যখন সাফারি পার্কের কথা বললাম শুরতে বন্ধুরা গাইগুই করলেও পরে সে পথেই আমরা গেলাম ।

আফ্রিকার বাইরে বৃহত্তম আফ্রিকান সাফারি - এই থিম নিয়ে তৈরি শারজাহ সাফারি । আট বর্গকিলোমিটার এলাকা বিস্ত্বত, ১২০ প্রজাতির প্রাণীর মুক্ত বিচরন । বলা চলে পুরো আফ্রিকান সাফারির একটা মিনি ভার্সন । শেখদের সব কিছু বড় করে করার শখ, এটা দেখলে আবার ও সে কথাই প্রমানিত হয় । এক লাখ আফ্রিকান গাছ লাগিয়ে, আফ্রিকা থেকে মাটি এনে , তারা বানিয়ে ফেলেছে আফ্রিকার নামকরা সব সাফারির রেপ্লিকা । এ কর্মযজ্ঞ না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন । ন্যাশনাল জিউগ্রাফিতে আপনি আফ্রিকার যেসব অঞ্চলের কথা শুনে থাকবেন তার সবগুলোই এখানে পাবেন । সাভানা থে সেরেংগাটি কিংবা জাঞ্জিবার , দেশের কথা ভাবলে মৌরিতানিয়া থেকে তানজানিয়া , কেনিয়া থেকে কালাহারি ! এইসব দেখে মনে হবে লাইফে টাকা থাকলে কি না করে ফেলা যায় :)
মরুভূমির বুকে জাস্ট টাকার জোরে পুরো আফ্রিকা বানিয়ে ফেলেছে । প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগেছিল এটা গাড়িতে করে ঘুরে দেখতে !

সেখান থেকে বের হয়ে আমরা যাব শারজাহ শহরে । শাকিল ভাই লাঞ্চ না করে বসে আছেন আমরা কখন আসব । পথে দুই রাশিয়ান লিফট চাইল , তাদেরকে কোথাও যাতে নামিয়ে দেই যেখান থেকে ট্যাক্সি/বাস কিছু একটা পাওয়া যাবে । জানা গেল তারা জব করে মরিশাসের কোন এক কোম্পানিতে, কিন্তু থাকে দুবাইতে, কারন কোন ট্যাক্স দেয়া লাগেনা ।

দুবাই আবুধাবীর মত ঝা চকচকে না হলেও শারজাহর মাঝে একটা সরল সৌন্দর্য আছে । আর শারজাত তো মনে হয় আমাদের কত চেনা একটা শহর , ক্রিকেটের কল্যানে । শারজাহ স্টেডিয়াম দিয়েই চিনি এই শহরকে আমরা সেই কবে থেকে । শহরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ইউনিভার্সিটি সিটি , অনেক বিদেশী ভার্সিটির ক্যাম্পাস আছে সেখানে ।

ভার্সিটির শান্ত সৌম্য সিনিয়র শাকিল ভাই, সদা হাসিমুখ যার । প্রায় একযুগ পরে দেখা হবে আমাদের । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় হয় । সবাই না খেয়ে অপেক্ষায়, শাকিল ভাই গুগল ম্যাপে এক রেস্টুরেন্টের লিংক পাঠিয়ে বললেন সোজা সেখানে যাও, আমিও আসতেছি । বান্নু বীফ নাল্লী পোলাও এ গিয়ে হাজির হলাম আমরা । মজাদার নাল্লী পোলাও খেতে খেতে সন্ধ্যা । কত আলাপ, আর দুবাইতে কোথায় কি খাব, কই যাব সব গাইড লাইনের পাশাপশি ভাই বললেন দেশে ফেরার আগে আরেকবার যেন শারজাহ ঘুরে যাই, দুবাই থেকে মাত্র ৪০ কিলো যেহেতু । নানা দিকে ঘুরাঘুরিতে সে সময় আর করতে পারি নাই , যদিও প্রতিদিন ই শাকিল ভাইয়ের সাথে কথা হত কি খাব, কই খাব এইসব নিয়ে :)

দুবাই ফিরে আসলাম রাতে । এসে দেখি আমার ফেসবুক একাউন্ট লক । শারজাহ সাফারিতে থাকা কালীন একটা চেক ইন দিয়েছিলাম , তানজানিয়ায় আছি, আফ্রিকান সাফারিতে । ফেসবুক জানাল একাউন্টে সাসপিশাচ একটিভিটি হচ্ছে , এই আফ্রিকা এই দুবাই । অলরেডি লগ ইন আছে এমন একটা পিসি থেকে লগইন না করলে তারা ফেসবুকে ঢুকতে দিবেনা !!!





সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৪৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×