somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩রা ডিসেম্বর, ইন্টারনেট ক্যু এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই ;(বিটিআরসির বক্তব্য:তৃতীয় আপডেট)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুবাই এর WCIT 12 এর যোগদানের প্রাক্কালে বিটিআরসির গতকাল ২রা ডিসেম্বর এর বক্তব্য:
WCIT 12 নিয়ে গতকাল ২রা ডিসেম্বর ২০১২ তে একটি পাবলিক ডায়লোগের আয়োজন করে, BTRC। যদিও বিভিন্ন ধরণের আইটিআর বা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশন নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বা পদক্ষেপ কোন কিছুই উন্মুক্ত করেনি BTRC। BTRC চেয়ারম্যান, সুনীল কুমার বোস আন্ত:রাষ্ট্রীয় কন্টেন্টের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং এই বিষয়ে আরো কঠোর সরকারী নিয়ন্ত্রণের উপর তিনি জোর দেন।এই ডায়লোগে অংশগ্রহণকারীরা স্পষ্টতই জানান যে WCIT 12 এই জাতীয় ইস্যুগুলোকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বা আলোচনা করার উপযুক্ত জায়গা নয়। বিশেষ করে সেইসব প্রস্তাবনাগুলো, যেগুলো “সেন্ডিং পার্টি পে মানে যে তথ্য পাঠাবে সেও খরচ করবে”, “কোয়ালিটি অফ সার্ভিস বা সেবার মান” এবং “বাধ্যতামূলক আইটিআর বাধ্যবাধকতা” এসবের সুপারিশ করে। বাংলাদেশ সরকারের এইসব প্রস্তাবনা ও সুপারিশের সাথে যুক্ত না থাকাই উত্তম বলেই তারা মনে করেন। কেননা এগুলো শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেট এক্সেসের মূল্য বৃদ্ধি, অনলাইনে মানবাধিকার হ্রাস, বাক-স্বাধীনতার খর্ব করা, প্রাইভেসী অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে। আর সব মিলিয়ে বিশ্ব ইন্টারনেটের যে মুক্ত অবস্থা এবং অর্জন তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনাও রাখে।

অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রস্তাবনা এবং সুপারিশের বিষয়ে BTRC আদৌ আলোকপাত বা বিবেচনা করবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কেননা সক অর্থেই সময় খুবই কম ছিল (বাংলাদেশ টিম ইতোমধ্যে WCIT তে যোগ দিতে দুবাইয়ে পৌছে গেছে)। BTRC চেয়ারম্যান মন্তব্য করেছিলেন যে , বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদল যে কোন ধরণের ITR পরিবর্তনে সই করার আগে, অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনা করবেন।


তথ্যসূত্র: অংশগহণকারী, সৈয়দা গুলাশন ফেরদৌস জানা।

এক্সক্লুসিভ: জুলিয়ান এ্যাসেঞ্জ কথা বলছেন, উইকিলিকস, ব্র্যাডলি ম্যানিং, সাইবার পাংক্স, সার্ভেইলান্স রাষ্ট্র নিয়ে; কৃতজ্ঞতা: ডেমোক্রেসি নাউ এবং রেজাউর রহমানকে, যিনি এই লিংকটি দিয়েছেন খুব উপযুক্ত সময়ে।

এই লিংক এবং এ্যাসেঞ্জের বক্তব্য আপনাদের সাথে শেয়ার করা জরুরী বলে মনে করছি, বিশেষত যারা বিশ্ব ইন্টারেনট এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। আবার এজন্যও জরুরী কেননা আমরা এই ইন্টারনেট বিশ্বের অংশীদ্বার। যে ধরণের সিদ্ধান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হোক না কেন সেটা অনুধাবন করা দরকার।

শিরোনামে চমকে গেলেন? প্রশ্ন জাগছে ইন্টারনেট নিয়ে আবার কি হল? এখানে কোন ধরণের ক্যু হতে চলেছে? বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, জনপ্রিয়, উন্মুক্ত যোগাযোগ মাধ্যমটির পতন কি তবে আসন্ন?

এই মুহুর্তে ইন্টারেনট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিওন। ২০১৫ যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩ বিলিওনে। হ্যা, বাস্তবতা হল ইন্টারনেট এই দুনিয়ার অর্থনীতির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হাতিয়ার। ইন্টারনেট সামাজিক পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার। ইন্টারনেট জনমানুষের যোগাযোগ এবং যূথবদ্ধতার হাতিয়ার, ইন্টারনেট উন্নয়ন এবং বিকাশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হাতিয়ার। পূর্বে এই শক্তিশালী গণ-মাধ্যমটিকে বশিভূত করার চেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে নানাভাবে। আসছে ৩রা ডিসেম্বর দুবাইয়ের আর্ন্তজাতিক টেলকমিউনিকেশন এর বৈশ্বিক সম্মেলনে নির্ধারিত হবে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। নির্ধারিত হবে ইন্টারেনট কি শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের, উদ্যোক্তাদের, উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে থাকবে? নাকি হয়ে উঠবে মুনাফালোভী, বাক-স্বাধীনতা রুদ্ধকারী একটি মাধ্যম।

কিভাবে?

গুগল আফ্রিকার পলিসি ম্যানেজার খালেদ কৌবা এই নি:শব্দ ক্যু নিয়ে বলছেন, “ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন সর্ম্পকে আমরা কেবল ভালোভালো কথাই শুনি, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক শুভ পরিবর্তন সাধন করেছেন, কাঠামোগত উন্নয়নে উৎসাহ দিয়েছেন, এটি ইউনাইটেড ন্যাশনস এর একটি অঙ্গ-সংগঠন ইত্যাদি আরো অনেক কিছু”।

প্রশ্ন জাগে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?


সমস্যাটা হল, প্রথম থেকেই এই সম্মেলন এবং এর উদ্দেশ্য ধোঁয়াশচ্ছন্ন। ইন্টারনেট এখন পর্যন্ত মাল্টি স্টেকহোল্ডার গর্ভনেন্সে চালিত। এবং এটি বহুমূখী স্বতস্ফূর্ত উদ্যোগের একটি বিষয়, জনমানুষের দ্বারাই এই মাধ্যম বিকশিত হয়েছে এবং আজকের পর্যায়ে এসেছে। খালেদ বলছেন,“আইটিইউ সর্ম্পকে যেসব ভালোভালো কথা শোনা যায়, তার ঠিক বিপরীত কাজটাই তারা করছেন, যেমন তারা ইন্টারেনেটের মূল্য বাড়াবার তদবির করছেন। এতে যারা সবচেয়ে দরিদ্র তাদের কাছে ইন্টারনেট পৌছাবার গতি আপনাআপনি শ্লথ হয়ে যাবে এবং এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার উদ্যোক্তাদের আরো অনেক বেশি কষ্ট হবে তাদের বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে”।

ডিজিটাল বিভাজন দূর কর বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা ইউএন এর অঙ্গসংগঠনের এই পদক্ষেপ কেমন আত্ম-প্রতারক একবার চিন্তা করে দেখেন।

এই মাধ্যম তৈরি হয়েছে নীচ থেকে উপরের (বটম-আপ) পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং জনমানুষের চেষ্টায়, শক্তিতে এবং অংশগ্রহণে। ফলে এখনি আপনি চাইলে নিজে একটা ওয়েব সাইট খুলে নিজের ব্যবসার কথা জানাতে পারেন, সেবা দিতে পারেন এভাবেই ফেইসবুক, গুগল, ওয়ার্ডপ্রেস, টুইটার, সামহ্যয়ারইন এগুলো তৈরি হয়েছে।

আবার অন্যদিকে বিশ্বের এক নায়কতান্ত্রিক নিপীড়ণমূলক দেশগুলোর মধ্যে ক্রমাগতভাবে কন্টেন্ট ফিল্টারিং এবং সার্ভেইল্যান্সের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত এই ধরণের রাষ্ট্রের সংখ্যা ৪০ এ পৌছেছে। ফলে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয়ভাবে বাক-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশ হুমকির মধ্যে রয়েছে।

নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগে কিভাবে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে? কিভাবে বাক-স্বাধীনতা আরো হুমকির মুখে পড়ল?

খালেদ খুব চমৎকার করে পরিষ্কার করেছেন, “ এতদিন ধরে, ইন্টারনেটে তথ্য প্রবাহ কোন ধরণের বানিজ্যিক রেগুলেশন ছাড়াই সফলভাবে প্রবাহিত হয়েছে। ইউরোপীয়ান টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কস অপারেটরস এসোসিয়েশন এর এটি ভালো লাগেনি। তারা প্রস্তাব করেছে (খুবই শক্তিশালী সদস্য হিসেবেই কিন্তু; বিষয়টা বুঝতে হবে) এই সফল ব্যবস্থার বদলে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীগুলো আন্ত: বানিজ্যিক একটি ফরমাল ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এর ফলে “সেন্ডার পেস মানে প্রেরণকারীকে ব্যয় বহন করতে হবে”।

তাতে লাভ হবে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীগুলোর, তারা এই খরচ উঠিয়ে আনবে কার কাছ থেকে? গ্রাহকদের কাছ থেকে। ফলে এর ধরণটা হবে আর্ন্তজাতিক ফোন কলের চার্জের মত। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা যেসব দেশে বা লোকেশনে লাভজনক মনে হবে না সেইসব জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখবে। সরকার প্রলুব্ধ হবে আপাত লাভে, উচ্চ টার্মিনেশন রেট থেকে রাজস্ব আয় করতে। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার উদ্ভাবকরা এখন পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যোগাযোগ করতে পারেন, বিশ্বা বাজারে নিজেদের উপস্থাপণ করতে পারেন। এই প্রস্তাবনা সফল হলে তারা কোথায় যাবেন? সাধারণ ব্যবহারকারীরা কোথায় যাবেন?

এবার আসি বাক-স্বাধীনতা প্রসঙ্গে, খোদ আমেরিকার, ফেডারাল কমিউনিকেশনস কমিশনের কমিশনার মি. ম্যাকডল বলেন,” এই ধরণের সিদ্ধান্ত কয়েকটি বিষয়কে ত্বরান্বিত করবে:

১. সাইবার সিকিউরিটি এবং ডাটা কন্ট্রোল আর্ন্তজাতিক নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
২. সব বিদেশি ফোন কোম্পানীগুলো “আর্ন্তজাতিক” ইন্টারনেটের জন্য চার্জ করবে। যা এখন পর্যন্ত ফ্রী।
৩. পূর্বে যা দেখা যায়নি এমন বানিজ্যিক নিয়ন্ত্রণের বন্যা হবে। নানারকম শর্ত, ট্যারিফ, নিয়ন্ত্রণ বাড়তেই থাকবে।
৪. আন্ত:সরকার নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং এর যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটকে সচল রেখেছে, তাদের উপর নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।

লক্ষ করার মত বিষয় হল, চায়না এবং রাশিয়া ইন্টারনেট পুন:রেগুলেট করার বিষয়ে খুবই উৎসাহী। কেননা সারা বিশ্বে ইন্টারনেট যে বিপ্লবের সূচনা করেছে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়ন্ত্রণকামী রাষ্ট্রগুলো ইন্টারেনটে কন্টেন্ট, ব্যবহারকারী সবকিছুকে আরো নিয়ন্ত্রণে আনার কোন চেষ্টাই বাদ রাখবে না। বাক-স্বাধীনতা কোথায় যাবে? বিরোধী মত কোথায় যাবে?

এতদিন ইন্টারনেট গর্ভনেন্স হয়ে এসেছে মাল্টিপার্টি এবং মাল্টিস্টেক হোল্ডার। এখন এগুলিকে রাষ্ট্রীয় এবং আর্ন্তজাতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার স্বার্থ কাদের?

ইন্টারনেটের মুক্তিকামীরা বলছেন, “সাইবার ক্রাইম এবং সাইবার সিকিউরিটির ধোঁয়া তুলে আরো বেশি সার্ভেইল্যান্স, আরো বেশি কন্টেন্ট ফিল্টারিং আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে সরকার, কেননা মুক্ত ওয়েবের শক্তি তারা দেখে ফেলেছে”।

আর্ন্তজাতিক কো-অপারেশনের নাম দিয়ে আসলে রাষ্ট্রগুলি একটি আর্ন্তজাতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করতে চাচ্ছে, তবে সেখানেও বৈষম্য কম নেই। রাশিয়া উজবেকিস্তানের প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হ্রাস করবে ভারতের, বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোর বাক-স্বাধীনতা। ইন্টারনেটের মত মাল্টিস্টেক হোল্ডার চালিত একটা ব্যবস্থাকে আর্ন্তজাতিক আইনের আওতায় এনে স্বার্থসিদ্ধি হবে কার?

প্রস্তাবনাগুলোর সমস্যা কোথায়?

১. এই ধরণের আইন পাশ হলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য এগুলি হবে বাধ্যতামূলক। বড় লোকের জন্য সুবিদাজনক আইন গরীবের জন্য কি?
২. রাশিয়া এবং ইরান প্রস্তাব করছে ইন্টারনেট ট্রাফিককে রদ করার নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য। তাহলে বাক-স্বাধীনতা কই? বাকীরা কি করবে?
৩. স্পাম হিসেবে যদি বিরোধী মতকে চিহ্নিত করা হয় তাহলে কথা বলার জায়গা কই?
৪. অনলাইন ক্রাইম হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারের থাকবে বহুমুখী নিয়ন্ত্রণ আর বল প্রয়োগের ক্ষমতা। কোন সরকার কোনটাকে অনলাইন ক্রাইম বলে মনে করবে?
৫. ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া কেবলমাত্র সরকারী আমলাতান্ত্রিক স্তরেই বিন্যস্ত হলে, ব্যবহারকারী, সিভিল সমাজ, অন্যান্যভাবে যুক্ত মানুষেরা কোথায় যাবে?


দেখা যাচ্ছে যে ইউএন এর মানবাধিকারের ১৯ নং আর্টিকেলের স্ব-বিরোধিতা করছে স্বয়ং ইউএন এর একটি অঙ্গ-সংগঠন।
১৯৩টি রাষ্ট্র মিলে সিদ্ধান্ত নিবে ইন্টারেনেটের ভবিষ্যতের, মানুষের যোগাযোগের ভবিষ্যতের। দেখা যাচ্ছে শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রস্তাবনায় দূর্বল রাষ্ট্রের প্রস্তাবনা খারিজ হয়ে যাবার সম্ভাবনা।
শোনা যাচ্ছে ৯০টি রাষ্ট্র ইতোমধ্যে এই নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। ইউএন এর অন্য সংগঠনের মত এখানে ভেটো দেবার কোন সুযোগ নেই। এই ৯০টি রাষ্ট্র মেজরিটি থেকে মাত্র ৭টি ভোট পিছিয়ে। প্রায় ৭ বিলিয়ন মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে টেলিকমিউনিকেশন স্বার্থ আর মুক্ত ওয়েবে ভীত রাষ্ট্ররা?

কোথায় বাংলাদেশ?

২০১০ এ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়।
২০১২ এর খবর হল, আইটিইউএর বাৎসরিক ইনডেস্কে বাংলাদেশ নেই। কেননা তারা বাৎসরিক রিপোর্ট জমাদানের ডেডলাইন মিস করেছেন।
আসন্ন সম্মেলেন যোগাযোগ মন্ত্রী এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন।
কি হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? কি তাদের প্রস্তুতি? কিচ্ছু জানা নেই। তারা কি দেশের অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলেছেন, পরামর্শ করেছেন? ইন্টারনেট ছিনতাই হবার পক্ষে না বিপক্ষে তারা?

ইন্টারনেট বাঁচাতে জেগে উঠতে হবে মানুষকেই। ইন্টারনেট ব্যবহার করে এর বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদে সামিল হোন। এখনি প্রতিরোধ করুন যাতে ৩রা ডিসেম্বরের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে না যায়। সরকার বা আর্ন্তজাতিক চক্র কাউকেই সাইবার ক্রাইমের ধোঁয়া তুলতে দেবেন না। নিজেরা দ্বায়িত্বশীল ব্যবহারকারী হোন, অপব্যবহারকারীদের প্রতিহত করুন।

প্রতিবাদ করুন অন লাইনে, অফ লাইনে, রাজপথে। স্মারক লিপি দিন, আপনাদের মতামত জানতে বাধ্য করুন।
ইন্টারনেটকে ছিনতাই হবার হাত থেকে রক্ষা করুন।
দেখুন ইন্টারনেট ক্যু, যুক্ত হোন, প্রতিবাদ করুন। ছড়িয়ে দিন।


এইবারের ব্লগ দিবসের আলোচনায়, প্রেরণায় যুক্ত হোক ইন্টারনেট এর মুক্তি।

আগামী কাল একটা আলোচনা সভার আয়োজন করেছে, VOICE and Internet Society (ISOC),

এই শিরোনামে: World Conference on International Telecommunications
(WCIT) 2012 and Bangladesh: Challenges for Freedom of Expression Online
তারিখ: ২৮/১১/১২
সময়: সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট, রমনা ঢাকা

কৃতজ্ঞতা: এই পোষ্টটির চেতনা তৈরিতে সহায়তা করেছেন সেলিম রেজা নিউটন, শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি জুলিয়ান এসেঞ্জের "সাইবার পাঙ্ক" বইটি অনুবাদ করছেন। যেটা এই লেখার চেতনার জায়গায় খুবই কাজে এসেছে। অনুবাদকৃত বইটি পাওয়া যাবে সামনের ২১শে বইমেলায়।

আরো দেখুন:
ইন্টারনেট ক্যু, ইন্টারনেট ছিনতাই
তথ্যসূত্র:
http://www.protectinternetfreedom.net/
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

ভয়েস এবং আইসোক আয়োজিত পাবলিক ডায়লোগ:
গতকালের পাবলিক ডায়লোগে অংশ নেন: সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ, বিটিআরসিএর প্রাক্তণ চেয়ারম্যান, সুমন আহমেদ সাবির ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, ড. মাহফুজুল ইসলাম, প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি, ড. সৈয়দ ফয়সাল হাসান, প্রেসিডেন্ট ইন্টারনেট সোসাইটি, বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টার, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নির্বাহী প্রধান ভয়েস, রেজাউর রহমান লেনিন, রিসার্চ ফেলো ভয়েস, সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস, প্রধান নির্বাহী পরিচালক সামহ্যায়ার ইন, এবং আমি।


মারগুব মোর্শেদ বলেন, "2012 WCIT শেষ কথা নয় এবং মানুষের এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের চেষ্টা চলতেই থাকবে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি নতুন ভবিষ্যত নির্মাণ এখানেই শেষ হবে না." বাংলাদেশে ইন্টারনেট পরিকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । প্রয়োজন মানুষের তথ্য এক্সেস সহজতর করা, তথ্য যে অধিকার সেটা প্রমাণ করা। তিনি নিয়ন্ত্রণের বদলে খোলা পরিবেশ তৈরী করার ডাক দেন।

সুমন আহমেদ সাবির, "ITU এর জন্য অকপটতা এবং মাল্টিস্টেক হোল্ডার দৃষ্টিভঙ্গী একরকম হুমকি। কিন্তু এই ভাল উপায়েই ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা সচল রাখতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির চর্চা multistakeholder ভিত্তিক এবং এখানে বৃহৎ সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, মিডিয়া, একাডেমিয়া এবং ব্যবহারকারীদের মতামতের মাধ্যমে হতে হবে। তিনি সকল প্রকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার দাবি জানান।

ডঃ মাহফুহ ইসলাম বলেন, " ITU- এর ভূমিকা মানুষের পক্ষে না হয়ে কিছু কিছু ব্যক্তিদের স্বার্থের পক্ষে। যে শুভ পরিবর্তন সচল রয়েছে, অর্থাঁ বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে, এটা মূখ্যত মানবাধিকার এবং এটা সমুন্নত রাখতে হবে।

ডঃ সৈয়দ ফয়সাল হাসান বলেন, " ITU স্থানীয় বানিজ্যিকে নিরুত্সাহিত করবেএবং আউটসোর্সিং এবং ই বানিজ্যের ক্ষেত্রে অবরোধ তৈরি হবে." তিনি উল্লেখ করেন যে, ইন্টারনেট অর্থনৈতিক উপার্জনে অবদানকারী একটি ক্ষেত্র। এই সময় আমাদের স্বার্থেই অর্থনৈতিক গতি সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে ইন্টারনেট multistakeholders ভিত্তিক হতে হবে।"

আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, "ইন্টারনেট পুরো বিশ্বের। এর সাধারণ ব্যবহার করার জন্য আমাদের সবার সমান অধিকার আছে. আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের এই পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে ব্যবহারকারীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনলাইনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা তাদের জন্মগত অধিকার। তিনি সংশোধনি ব্যবস্থা বিরোধিতা দাবি জানান এবং সরকার পদক্ষেপ নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আহবান করেন।"

রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, "WCIT সম্মেলন 2012 জনগনের অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই নানাভাবে রদ করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক মান ঠিক করার কোন সৎ উদ্দেশ্য ছিল না। এই যে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা গণতান্ত্রিক বা অ - গণতান্ত্রিক শাসন নিজ নিজ পদ্ধতিতে নির্বিচারে ব্লক করছে সাইবার অপরাধের কথা বলে, ফিল্টারিং এবং নজরদারি করছে; যার আমরা বিরোধিতা পর্যন্ত করতে পারছি না; সেটা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।"

সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা বলেন, " ইন্টারনেটে দ্বায়িত্বশীল আচরণের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাক-স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা। কিন্তু মত প্রকাশের এবং যোগাযোগের এই বৃহত্তম মাধ্যমটিকে এভাবে জনবিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা না করে, মানুষের কথা না ভেবে রুদ্ধ করা হলে তা মানবাধিকারেরই লংঘন হবে"।


আমি বলেছি, "এটা মানবতার প্রতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সুবিধাভোগী গ্রুপ দ্বারা সংগঠিত আঘাত। মানুষই ইন্টারনেটের আজকের যেই রূপ সেটাকে তৈরি করেছে এবং মানুষই ইন্টারনেটকে মুক্ত করতে পারে। "


সভায় সুপারিশ করা হয় যে ইন্টারনেট ব্যবস্থা হতে হবে স্বচ্ছ এবং বহু - স্টেকহোল্ডার পদ্ধতিতেই। স্থানীয় সুশীল সমাজের একটি উন্মুক্ত ও আবশ্যক অংশগ্রহণ সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় পরামর্শমূলক ভূমিকা, জ্ঞান ও গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সহ দক্ষতা, উপর ক্ষমতা বিল্ডিং এগিয়ে যেতে হবে, দ্রুত একটি স্বল্পমেয়াদী এডভোকেসি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ আসন্ন সম্মেলনে কি ভূমিকা নেবেন, কি ধরণের প্রস্তুতি এবং প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলি নিয়েও খোলামেলা আলোচনার সুপারিশ করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩০
১০৯টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×