somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষারে একটু দূর থেইকা দেইখা!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা মানেই ক্ষমতা, গোপনে সাম্রাজ‍্য্যের অভিলাস। মানব ইতিহাসের সকল লেখিয়ের কাহিনীই তাই। হয় ক্ষমতা বয়ান করতে লিখছে, অথবা লিখা ক্ষমতাবান হইছে। ক্ষমতারে ছোট কইরা কেবল রাষ্ট্র, সমাজ ক্ষমতা হিসেবে দেইখেন না। মরার পর খ্যাতিমান হওয়াও ক্ষমতার স্বপ্ন। এর আগে যখন বলার টাইম ছিল তখন মনে মনে লিখা, মনে মনে রাইখা স্মৃতি সংরক্ষণ কইরা একই ঘটনাই ঘটছে।
রিসেন্ট টাইমে আসলে আধুনিক রাষ্ট্র ও স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় চিন্তা করলে অনুমান করা যায় যে একটি ঐতিহাসিক সময়ে কোন একটি গোষ্ঠী আরেকটি গোষ্ঠীর সাথে সম্প‍র্ক এমন হয়েছিল যে সহবস্থান/সহভাষা সম্ভব হয়নি। একটা ভাষা আরেকটা ভাষাকে এমনভাবে দমন করছিল যে আরেকটা ভাষা সেইটা মানতে পারে নাই। লড়াই হইছে।
তবে ভাষার জন্য শহীদ হবার ঠিক পরেই রয়েছে ভাষাকে মুক্ত করার কাজটি, এজন্য নিয়মিত ভাষা ভাঙ্গনের কাজটি সচেতনভাবে করতে হয়। ভাষা যা যা দিয়ে জাকড়াইয়া ধইরা রাখে তারে নিয়মিত ভাঙ্গনের কাজ করা। এইটারে অনেকেই দেশভাগের মত দেখতে পাইতে পারেন, কিন্তু এত ডিফেন্সিভ ফিল করার কারণ নাই। এইটা সাহসের জায়গা না, এইটা গ্রোথের জায়গা। এইটা ভাষা, জমিনের কাঁটাতারের বেড়া না। এইটার খেলা আরো সূক্ষ।
যদিও এই ধরণের সচেতনতা মার খায় আরেক ধরণের সচেতনতার কাছে। সেটাকে বুঝতে হবে ভাষার সীমানা সংরক্ষণের বিষয়টির দিকে খেয়াল করে। রাষ্ট্র আসলে ভাষার অনুকরণেই সীমানা তৈরি করে, তারপর ভাষাকেই সীমানা দিয়ে ঘিরে ফেলে। সীমান্ত হত্যাও চলে নিয়মিত। ভাষার সীমানা রক্ষার জন্য নানান সৈনিক তৈরি হন, উপর মহলের নি‍র্দেশনায় সীমানায় প্রস্তুত থাকেন, এদের মধ্যে নানান হায়ারা‍র্কি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সাম্রাজ‍্য‍্য্য থাকবে আর হায়ারা‍র্কি থাকবে না তাতো হয় না। হায়ারা‍র্কি উদযাপণের জন্য নানান উৎসব থাকবে, রিচুয়াল থাকবে খুবই স্বাভাবিক। ফলে নানারকম গোলাগুলি করে তারা ভাষাকে প্রমিত করেন এবং মারতেও থাকেন।
ভাষার সার্বভৌমত্ব নামক "পবিত্র" যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই যুদ্ধের সেলিবে্রশন হয়, জীবিত ও নিহতরা নানান পদক লাভ করেন। বিপ্লবীদের নানান কুখ্যাতি জোটে। যদিও উভয় পক্ষই অর্থনৈতিকভাবে জিতেন খুব কম। ফলে এসবক্ষেত্রে নিওলিবারেল এন্টারপ্রেনারশিপ উত্তম পন্থা, বাংলাদেশে লেইখা কোটিপতি হওয়া লোকের সংখ্যা দুভ‍র্াগ্যজনকভাবে কম। এইটা যোগ্যতার বিষয় না, এইটা মা‍‍র্কেট সম্প‍‍র্কে কম ধারণা থাকার ফলাফল, সাম্রাজ্যর জন্য খুব খারাপ...আমার সবাই রাজা-র মা‍‍র্কেট তৈরি করেন...তা না হলে সাম্রাজ্য বড় হবে না। আবার ভাষার সার্বভৌমত্বও রাখবেন তা না হইলে তো সাম্রাজ্য টিকবে না।
এই কালে ভাষা; মানুষের ভেতরের রাষ্ট্রগঠনের, বাজার গঠনের মূল হাতিয়ার। বিংশ এবং একবিংশ শতকেও ২১শে ফেব্রুয়ারি এই আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের বেসিক উদাহরণ। অত্যন্ত গুরুত্বপূণ‍র্ উদাহরণ। এই উদাহরণের তীব্র জাতীয়তাবাদী ব্যবহার এবং আন্ত‍র্জাতিক ব্যবহার থেকেও রাষ্ট্র অনেক পেছানো এখনো।
ইংরেজি শিক্ষা, আইইএলটিএস, টোফেল, অথবা জাপানের জেপিএলটি এন ১-৫ এসব আসলে ভাষা রাষ্ট্রে প্রবেশের পাসপোটর্। সেই পাসপোটর্ নিজে নিজে নিতে পারেন? নিজেরে নিজে পাসপোটর্ ইস্যু করতে পারেন? ইস্যু করার প্রতিষ্ঠান লাগে তাইনা? এইটা ক্ষমতার আরেকটা রূপ, গুরুত্বপূণর্ রুপ।
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যত ক্ষমতাবান হবে ততই বাংলা ১-৫ এমন পরীক্ষার প্রচলন হবে। ইন্ডিয়া চায়না সম্প্রতি এমন উদাহরণ হবে বলে আমার ধারণা। অন্যদিকে নিয‍র্াতিত, নতুন ক্ষমতাপ্রাথ‍র্ী ভাষারা নানানদিক দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।
তবে ভাষা নিজেই সাম্রাজ্যবাদী। সে নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করতে চায়। এইটা তার আজন্ম লক্ষ্য
ভাষাজনিত সবাই (ফেইসবুকার, গবেষক, সৈনিক, ভাষাবীদ, কবি, সাহিত‍্য্যিক, লেখক পাঠক-গণ...) সবাই কোন না কোনভাবে এই সাম্রাজ্যর ছোটবড় নানান রোল এ নিবেদিত। জাইনা কিংবা না জাইনা; এই যে বেসিক বায়াস নিজের ভাষার প্রতি কাজ করে সেইটা মজার, প্রমিত-র ডমিনেশনে থাকলে, মানে ঢাকায় আইসা হয়ত মিউমিউ ফিল করবেন, আবার সমভাষার লোকের লগে মিলা কইবেন, হ প্রমিত বালের একটা ভাষা, আঙ্গোটাই বেস্ট।
আবার ব্যবসাটাও আছে; যেমন মনে করেন আঞ্চলিক ভাষাকে জন পরিসরে মযর্াদা প্রদান ও প্রমিত-রে ক্ষমতার জায়গা থেকে সরাইতে বহু লোকের কষ্ট আর চেষ্টা আছে, বিগত তিন দশকে। কিন্তু সেইটারে নিউলিবারেল বুদ্ধি ফেইসবুক দেইখা নিজের প্রয়োজনমত আত্মস্থ কইরা খারার উপর্ে বেইচা দিল। ভাষার মাসে আঞ্চলিক উচ্চারণের সেলিবে্রশন নিয়া এ্যাড তো নিশ্চয়ই দেখছেন আশা করি। আঞ্চলিকতাকে ছোট করা বা সেলিব্রেট করা এই ভাষা-রাষ্ট্র-অর্থনীতি সাম্রাজ্যর নানান প্রায়োগিক কৌশল। এই যে লিংক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এই ভাষাসাম্রাজ্যকে টলিয়ে দেবে এমনটা মনে করার একটা শিশুতোষ আশা আমার ছিল, কেননা সহজ ট্রান্সলেটর ভাষা রুপান্তরের কাজটি বেশ দারুণভাবেই করছে। সামনে আরো দক্ষভাবে করবে, তবে; একটা বিরাট তবে এখানে আছে। প্রোগ্রামিং ভাষাটি কিন্তু ইংরেজি। মেশিনের ভাষা শুণ্য এক না, জিরো ওয়ান; তাই খুব খিয়াল কইরা। এখানেও সাম্রাজ্য আছে, উদ্ভাবনের সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ‍্য্যে আমরা মানে এই বঙ্গ ভাষা সাম্রাজ্য অনেক পিছায়া আছি, কতটা এবং কীভাবে টের পাইতাছি তা অবশ্য অনুসন্ধানের দাবী রাখে। আর যারা মনে করেন সে্যাশাল মিডিয়ার কারণে আপনারা কম পড়েন তারা মনে হয় একটু ভুল করছেন, ইতিহাসে তারা সবচেয়ে বেশি পড়তাছেন। নুতন স্টাইলে পড়তাছেন কিন্তু পড়তাছেন; ভাষা বিরাট একটা মাকর্েট বেবি।
লোকালি যারা সাম্রাজ্য বিস্তার চান তারা ইন্টারনেটে বাংলার ভাষা মাকর্েট বিস্তারে কাম যারা করছেন তাদের ভালোমত স্বীকৃতি দেন, টাকা পয়সা দেন, ভাষা সাম্রাজ্যর নিজস্ব হেজিমনির এধরণের এডাপটেশন যারা আগে করছেন তাদের আরো বেশি কইরা দেন, এরা সবাই আপনার সৈনিক। এসব যতবেশি করবেন , ঠিকমত করবেন ততবেশি এই শতকের ভাষা সাম্রাজ্য রাজনীতিতে আগায়া থাকবেন।
এখন আসি তাদের বিষয়ে যার ভেতরে রাষ্ট্র নাই, যার ভেতরে সাম্রাজ্য নাই, তার কী হবে? তার নানান ভাষায় দক্ষ হওয়া একটা গুরুত্বপূণর্ পথ। মাতৃভাষা ও প্রযুক্তির ভাষা দিয়া শুরু করেন। প্রযুক্তি কোন ভাষায় কথা বলে সেটা বুঝেন। মা-এর ভাষার কথা বলেন আপনারা, খুব ঠিক। অনেক আবেগ, যুক্তি ও এডাপটেশন আছে এইটাতে, কিন্তু প্রযুক্তি যখন মা-এর মতই কাছাকাছি বার তারচেয়েও বেশি তখন মা কিন্তু কম্পিটেশন পইরা গেছে। বুঝেন তো বিষয়টা? আর একটা ভাষা শিখাবেন না, বহু রকমের ভাষায় হাঁটা শিখাবেন শিশুদের। যত বেশি সাম্রাজ্যে হাঁটবে ততই তো বুঝবে দুনিয়ার খেলাধুলা।
আর বেশি কইরা শিখাইবেন ভাষা থেইকা দূরত্ব করা। চুপ থাকা, দেখা। যত চুপ তত বেশি দেখবো। সামনে দেখনেওয়ালা লোকদের খুব জরুরত হইবো।
ভালোবাসা
২১ শে ফেব্রুয়ারি, শুধু বাঙলা ভাষা না, পৃথিবীর ইতিহাসে অসামান্য একটা দিনের শুরু
এখন চতুথ‍র্ শক্তিশালী ভাষা পাওয়ার, মনে রাইখেন কথাটা

শরৎ চৌধুরী, হিগাশি হিরোশিমা, জাপান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×