somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রতিবাদের ভাষা: আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না... উঠুন! জাগুন!! যে যেভাবে পারেন প্রতিবাদ করুন!!!

০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম যেদিন শুনলাম ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক বাংলাদেশ, কতটা খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবনা। আমার দেশে হবে ক্রিকেটের বিশ্বকাপ!! মাঠে গিয়ে খেলা দেখব বিশ্বকাপের ম্যাচ! নানা দেশ থেকে দর্শকেরা আসবে আমাদের দেশে খেলা দেখতে। সারা বিশ্ব জানবে বাংলাদেশের নাম।

কিছুদিন পর যখন জানলাম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশেই তখন আনন্দের সীমা রইলো না। অলিম্পিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখি, বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখি, এবার আমার দেশেই দেখব সরাসরি! ভাবতেই লাফিয়ে উঠছিলাম কিছুক্ষণ পর পর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ব দেখবে বাংলাদেশ শুধু দারিদ্রতার দেশ নয়, শুধু বন্যা-ঘূর্নিঝড়ের দেশ নয়। বাংলাদেশের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। নিজস্য ঐতিহ্য। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বাংলাদেশের আছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন যেখানে আছে বিরল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশের আছে আদিবাসীদের বৈচিত্রময় অনন্য সুন্দর ঐতিহ্য। হাজারো রঙের ছটায় বর্ণিল আমার এই দেশকে নতুনভাবে দেখবে সারা বিশ্ব! সারা বিশ্বের বিস্ময় আমার বাংলাদেশ!

কিন্তু বিধাতার মনে হয় আমার সুখ সহ্য হলো না। তিনি এমন ব্যবস্থা করলেন যে এখন আমাকে কেউ ফ্রি টিকেট দিলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে যাবনা।

কিসের জন্য যাব? কেন যাব? কাদের দেখতে যাব? বচ্চন পরিবারকে দেখতে? রাহাত ফতেহ আলীর গান শুনতে? ভারতীয় ৫৮ জন শিল্পীর নাচ-গান দেখতে? আমার দেশে, আমার মাঠে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে এটাই দেখতে যাব? না। কখনোই না।

পত্রিকা মারফত জানা গেছে, ভারত বলেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা বাংলাদেশ নিজেদের ইচ্ছেমত করতে পারবে যেহেতু তারা সমাপনী অনুষ্ঠান করবে। বিসিবি অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের 'এটিএন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট' ও ভারতের 'উইজক্রফট' কে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা যৌথভাবে আয়োজন করবে। উইজক্রফট কে মূলত কারিগরী সহয়তার জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এটিএন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট- যার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, পুরো অনুষ্ঠানটি সাজাচ্ছে ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে! অমিতাভ বচ্চন, তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ সহ মোট ৫৮ জন আসবে নাচা-গানা করতে! বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে কেবল 'ইভা রহমান' থাকেবন যিনি কিনা মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী!! কেন? আমাদের কি সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশীদ আলম, সুবীর নন্দী, শাকিলা জাফরেরা নাই? আমাদের কি লালন, শাহ আব্দুল করিমের মত বিশ্বমানের বাউল নেই? তাদের গান তো সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়!! আমাদের কি হাবিব, অর্নব, বাপ্পা, জেমসের মত আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী নেই?

পুরো বিশ্ব দেখবে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় ওপেনিং সিরেমনিতে ভারতীয়রা পারফর্ম করছে, তারা তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরছে? বিশ্ব কি ভাববে? বাংলাদেশের কোনো ভালো শিল্পী নেই, বাংলাদেশের তুলে ধরার মত ঐতিহ্য নেই!!

কেন এই নির্লজ্জতা? কেন এই নিচু মানসিকতা? কেন নিজের স্বকীয়তাকে বিলীন করে দেয়া? কিসের স্বার্থে? কার স্বার্থে? আমরা কি চেয়ে চেয়ে দেখবোই শুধু?

না! আমরা প্রতিবাদ করবো। আমরা সোচ্চার হব এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা কয়জন ঠিক করেছি এটিএনের অফিসের সামনে বা বিসিবির অফিসের সামনে মানববন্ধন করব। প্রতিবাদ করবো। তারপরেও যদি এর পরিবর্তন না হয়, তাহলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্জন করব।

আপনারা আসুন আমাদের সাথে। বাংলাদেশের এই অপমানের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করি আসুন। বিসিবিকে মেইল করে জানান আপনার আপত্তির কথা। সবাই মিলে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই এর প্রতিকার পাবো।

বিসিবির সাথে যোগাযোগ করুন।
Phone: +880 2 803 1101-4
Fax: + 880 2 803 1199
Email: [email protected]

তাদেরকে মেইল করুন। আপনার সব আত্বীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব যারা খবরটা জানেনা, তাদেরকে জানান। সোচ্চার হন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

যদি এতকিছুর পরেও এটিএন তাদের সিদ্ধান্ত বদল না করে তাহলে তাদেরকে বলবো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশে নয়, ভারতের কোনো শহরে করুন। আমরা ঢাকাকে ভারতের কোনো শহর বানাতে দিবনা।

সূত্র: আমারব্লগ
----------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------

এছাড়া আরও একটি সংযোজন:

যারা এই লেখাটি পড়বেন , নিশ্চিত করেই বলতে পারি তারা হয় থাকবেন কম্পিউটারের সামনে না হয় মোবাইলে নাগরিকব্লগ সামনে থাকা অবস্থায় । লেখাটি শেষ হবার পর কি করবেন তাও মনে মনে কল্পনা করে নেই । কেউ ক্রোধে উন্মত্ত হবেন । কেউবা হবেন বিষাদগ্রস্থ কিংবা কেউ হবেন প্রতিবাদী । এসব “হতে পারে” আবেগের অনুমান নির্ভর কল্পনা করবার কিছু কারণ রয়েছে। কেননা , আমরা আমাদের আবেগের বেশীর ভাগ সময়টাই নিস্ফল ক্রোধ দ্বারা পেঁচিয়ে নিয়ে “ধুর শালা” শব্দে শেষ পর্যন্ত জলাঞ্জলী দেই । আমাদের এই নিজের কাছেই নিজের পরাজিত হবার এমন অসংখ্য গল্প রয়েছে । সেসব এখানে বললে স্থান সংকুলান হবে না হয়ত ।

আপনারা তো এর মধ্যেই জেনেছেন যে আর কিছুদিন পরেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে । বাংলাদেশ , ভারত এবং শ্রীলংকা এই প্রতিযোগিতার স্বাগতিক দেশ হিসেবে পুরো প্রতিযোগীটির আয়োজন করবে । বাংলাদেশে কয়েকটি খেলা অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটিই এখানে হবে । সেটি হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান । এটা আমাদের জন্য এক বিশাল সুযোগ আমাদের দেশকে পুরো পৃথিবীর সামনে তুলে ধরবার জন্য । একসময় ভাবতাম খুব সম্ভবত যে কয়টি দেশ ক্রিকেট খেলে সে কয়টি দেশের কিছু মানুষই এর নাম জানেন ও এদের মধ্যে সামান্য কিছু লোক ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে ওঠেন । কিন্তু কিউইদের সাথে সিরিজ জয়ের পর যখন রাশিয়ার বন্ধু আর্থার টেক্সট করে “ব্রাভো টাইগার” বলেন, কিংবা সোমালিয়ান কলিগ ওমার কিংবা ঘানার কলিগ ও’জে যখন জানতে চান আশরাফুলের কথা অথবা সাকিবের কথা , তখন মানতে বাধ্যই হতে হয় , ক্রিকেট আর তার আঁতুড় ঘরে নেই । ক্রিকেট শাখা আর প্রশাখা মেলে ধরেছে পুরো পৃথিবীতে । উন্মাদনায় মাতিয়েছে কোটি মানুষকে । সে কারণেই আমাদের সামনে বড় একটি সুযোগ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে তুলে ধরা । বাংলাদেশের নদী , ঘন সবুজ , রয়েল বেঙ্গল টাইগার , পাহাড় , কক্সেস বাজার তথা আমাদের দেশজ সংস্কৃতির সব কিছুই এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা সম্ভব ।

কিন্তু, আদতে এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না । কেননা , উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একটি ভারতীয় কোম্পানী উইজক্রফটের কাছে । সাথে আছে বাংলাদেশের আরেকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী এ টি এন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। আপনাদের এই দুইটি কোম্পানী সম্পর্কেই একটু সামান্য ধারণা দিয়ে রাখি । বাংলাদেশের ATN ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে ATN বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের । যে লোকটি আজকাল নিজের নামের সাথে ডক্টর উপাধিটি লাগিয়ে নিয়েছে । এই লোকের প্রধান ও একমাত্র কাজ হচ্ছে যেখানেই সুযোগ পাবে সেখানেই তার স্ত্রী ইভা রহমানের গান ছেড়ে দিবে এবং তাকে প্রমোট করবে । এই ইভা রহমানের গান শুরু হলে মনে হয় দৌড় দিয়ে পালাই। আর তার রুচি ও পরিশীলতার প্রমাণ লোকটির কিদ্ভুত চুলের কাটিং দেখলেই সহজেই বোধগম্য হয়ে যাবে। তাতেও আমাদের কোন আপত্তি থাকার কথা না। বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আমাদের একটি ইভেন ম্যানেজমেন্ট সংস্থা আয়োজন করার দায়িত্ব পেয়েছে- এ তো এক গর্বের কথাই বটে। কিন্তু সমস্যা বাধছে তখনই, যখন দেখি এই মাহফুজকে ইন্ডিয়া উড়ে যেয়ে ৫৮ জন ইন্ডিয়ান সেলিব্রিটিকে দিয়ে আমাদের দেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাজানোর মতো অবিবেচক দেশবিরোধী আচরণের পাঁয়তারা কষছে।

আর উইজক্রফট ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কম্পানী ভারতে অনেক ইভেন্ট পরিচালনা করেছে । ভারতীয় চিত্র জগতের শিল্পী ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ইভেন্ট তারা পরিচালনা করে থাকে । তাদের অভিজ্ঞতা কিংবা কাজ করবার পদ্ধতি নিয়ে আমি বেশী আলোচনাতে যাচ্ছি না । সেটা অন্য প্রসঙ্গ । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ATN ইভেন্ট এবং WIZCRAFT ইভেন্ট যৌথ ভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেও মূল চালিকা শক্তি থেকে যাচ্ছে WIZCRAFT কোম্পানীর কাছেই । আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী মুল অনুষ্ঠানের আগের দিন ও পরের দিন মানে ১৬ , ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারীতে এই দুই ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানী অনুষ্ঠান পরিচালনা করবে। এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ভারতীয় চিত্র জগতের খ্যাতিমান চিত্রনায়ক ও নায়িকাদের নিয়েই এই উদ্বোধনী ও বাকি দুইদিনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হবে । সে সিদ্ধান্তের ফলাফল স্বরূপ পুরো বচ্চন পরিবার মানে অমিতাভ , জয়া বচ্চন , অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে ঢাকা আসবেন আগামী ১৭ই ফেব্রুয়ারী । এই আলোচনার জন্য সম্প্রতি মাহফুজুর রহমান ভারতে গিয়েছিলেন । এই বচ্চন পরিবারসহ আরো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতীয় চিত্র জগতের কিছু চেনামুখদের । এদের মধ্যে রয়েছেন সালমান খান , বিপাসা বসু , সনু নিগাম , প্রিয়াংকা চোপড়া , গোবিন্দ , অক্ষয় কুমার , সাইফ আলী খান , রাহাত ফতেহ আলী খান সহ মোট ৫৮ জনের এক বহর । তাদের ঢাকা পৌঁছাবার কথা রয়েছে আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারী । ভাগ্যিশ পাকিস্তান আয়োজনে নেই । হয়তোবা সেক্ষেত্রে যোগ হতো পাকিস্তানী মুজরা কিংবা বেলুচিস্তানী নাচ অথবা তাদের কাওয়ালী দল ।

এইতো গেলো এসব খবর । কিন্তু প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে যে , কেন এসব হচ্ছে ? কিভাবেই বা হচ্ছে ? লন্ডনে কতবার শুনতে হয়েছে বাংলাদেশ বন্যার দেশ , গরীবদের দেশ । পৃথিবীর যে দেশেই গিয়েছি এই কথাগুলো অবজ্ঞা ভরে শুনতে হয়েছে , একসময় প্রতিবাদ করতে হয়েছে তীব্র ক্রোধে ও উন্মত্ততায় । কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আজ দেশকে রিপ্রেজেন্ট করবার এই সুবর্ণ সুযোগটুকুও কি ভারতীয় দাদাদের কাছে তুলে দিতে হবে ? তাদের সিনেমার উদ্দাম নৃত্য আর ভারতীয় সংষ্কৃতি গ্রাস করতে করতে ঢুকে গেছে আমার আর আপনাদের ঘরের প্রতিটি বায়ুমন্ডলে আর বুকের নিঃশ্বাসে । পাশের বাসার যে ৫০ বছরের চাচীকে বাংলা নাটক নিয়ে গল্প করতে দেখে এসেছি ৮ বছর আগে , আজ তিনি পান খেতে খেতে নাকি হিন্দি সিরিয়াল নিয়ে সাত সকালে এসেই ঘরে তর্ক জুড়ে দেন । সারাটা দিন নাকি তার উৎকন্ঠায় কাটে কি হবে আজকের পর্বে ।

আজ আমার মা-খালারা পত্রিকা খুলেই পড়া শুরু করেন হিন্দী সিরিয়ালের টাইম-টেবিল। পাড়ার মেয়েরা তাদের আড্ডার মূল বক্তব্যতে সেসব সিরিয়াল নিয়ে তর্কের খই ফোটান । তারা যখন আরো বলে ওঠেন-

- এই দেখেছিশ , সামিরা কি করে তার জিজুকে বশ করলো ?
- এই দেখনা উর্বশী কি কামিজ পড়েছে । ওম্মা , রাজস্থানী চুড়িদার !!!
- কাভেরী কি গনেশকে ভালোবাসার কথা বলবে ?
- কি হবে ওই সিরিজের ? কি হবে ওমুক সিরিজের ?
- ও আল্লাহ !!! সালমান আমার জান্টু…
- আমির খানের নতুন ছবি কবে আসবে ?
- শাহরুখ খান কি স্মার্ট , উনি একবার ছুঁয়ে দিলে জীবন স্বার্থক হয়ে যেতো !!
- আমি এই ঈদে “চাক ভুম চাক ভুম” সিরিজের প্রিয়ার মত শাড়ী কিনেছি

এই অবস্থার মধ্যেও এই দুঃখী দেশটির কাছে এত বড় একটি সুযোগ এসেছে । তাদের কাছে সুযোগ এসেছে পুরো পৃথিবীকে দেখানো যে , তোমরা দেখ , আমাদের কক্সবাজারের মত সমুদ্র সৈকত রয়েছে , আমাদের জাফলং , ছাতকের মত অসম্ভব সুন্দর অঞ্চল রয়েছে । আমাদের সুন্দরবনের দীর্ঘ শ্যামল আর সবুজ বন , পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড় আছে । আমাদের অসংখ্য নদী রয়েছে স্বপ্নের মত । সেখানে আছে রূপালী ইলিশ । আমাদের আছে ছোট ছোট স্বপ্নের মত ছোট ছোট গ্রাম আর গ্রামের সহজ মানুষেরা । আমাদের আছেন আব্বাস উদ্দীনের আর আব্দুল আলীমের রেখে যাওয়া সুর , রুনা লায়লা , সাবিনা ইয়াসমীন , আব্দুল হাদী , খুরশিদ আলম , রফিকুল ইসলাম , আবিদা সুলতানা। আমাদের হুমায়ুন ফরীদি আছে , আমাদের আবুল হায়াত , আলী জাকের , ফেরদৌসী মজুমদার , মামুনুর রশীদের মত শক্তিশালী অভিনেতা আছে্ন । আমাদের আছে আইয়ুব বাচ্চু , জেমস । আমাদের আছেন অর্ণব , ফরিদা পারভীন । আমাদের আছেন জুয়েল আইচ । আমাদের আছেন বি বি রাসেল ।

এসব রেখে আমাদের ইন্ডিয়ান প্রিয়াংকা চোপড়া কিংবা বিপাসা টিপাসাকে দেখতে হবে কেন ? সেসবের জন্য তো অসংখ্য পর্ন সাইট ইন্টারেনেটে রয়ে গেছে । সাইফ আলী খান কোন লাট সাহেব হয়ে গেছে কিংবা অমিতাভ বচ্চন কোন অবতার এসে গেছে যে আমার দেশকে দেখানো বাদ দিয়ে তাদের পশ্চাৎদেশের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ? এই দৈন্যতা কেন ? শুধু আমাদের বেলাতেই কেন এমন হয় ? কেন এত বড় একটা ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট অশিক্ষিত বিজাতীয় সংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন মধ্যস্বত্বভোগী মাহফুজুর রহমানের মত একটা বিবেকহীণকে দিতে হবে ? কেন ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্ব দিতে হবে WIZCRAFT এর মত একটা বেনিয়ার দলকে ?

কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ সাউথ আফ্রিকায় হয়ে গেলো। তারও আগে হয়েছে যৌথ পরিচালনায় কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ , অস্ট্রেলিয়াতে হয়েছে অলিম্পিক। আপনারা যদি মনে করতে পারেন তাহলে দেখবেন , সেসব আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই ছিলো নিজেদের সমাজ , ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির গল্প ও বিভিন্ন ভাবে তার প্রকাশ । একটি অনুষ্ঠান কি শুধু আয়োজন করতে হবে বলেই করে বা করা হয় ? এইসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে ঐ দেশটি পরিচিত হয় । মানুষের আগ্রহ জন্মে সে দেশটির প্রতি । ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগ করে , শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে , মানুষ বেড়াতে আসে । অথচ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভারতে। কিন্তু সব খানেই বলবার সময় সেই ভারতকেই এগিয়ে নিয়ে এসে বলা হচ্ছে যে , "ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে" হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ ।

"উইজডেন ম্যাগাজিন" বলেন , "স্পিন ক্রিকেট ম্যগাজিন" বলেন , "অল আউট ক্রিকেট ম্যাগাজিন" বলেন , সবখানেই ভারতকে আগে ধরে রেখেছে । আমি নিজেই তা পড়েছি এবং বিস্মিত হয়েছি । ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাগাজিনগুলোয় এই বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রীলংকা সফরের জন্য বিভিন্ন কোম্পানী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে অথচ আঁতিপাতি করে খুঁজেও বাংলাদেশের নাম নেই । মানুষ মনে করছে যেন বিশ্বকাপ হচ্ছে ভারতেই । আর সে প্রচারণায় আরো এক চামচ ঘি দিয়ে দিলো বাংলাদেশের প্রশাসন। সরকার। আমাদের ভীনদেশী সংস্কৃতির তোষনকারী নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। কোনো উদ্যোগ নেই । নেই দেশকে পরিচিত করবার প্রয়াস। এক লোটাস কামালের মত আওয়ামীলীগের এক দালালকে বসিয়ে রাখা হয়েছে চেয়ার দিয়ে ।

কত টাকা খেয়েছেন লোটাস কামাল? কত টাকা খেলে দেশকে এভাবে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেবার ঔদ্ধত্য করা যায় ? কত টাকা প্রশাসনের ওইসব কুকুরের দলের পেটে ঢুকলে এভাবে দেশকে সবার সামনে ধর্ষন করা যায় ?

শুধু টাকার পরিমানটা বলেন । শুধু টাকার অংক জানতে চাই ।

এই টাকা আমরা দরিদ্র বাঙালীরা ভিক্ষে করে জোগার করব । এক বেলা ভাত না খেয়ে সে চালের টাকা , ভিক্ষুক তার এক দিনের ভিক্ষের টাকা , পতিতা তার একজন খদ্দেরের টাকা , জেলে তার ১০ টি মাছের টাকা , উকিল তার একটি মামলার টাকা , ইঞ্জিনিয়ার তার একটি ক্লায়েন্টের টাকা , ব্যাবসায়ী তার একমাসের মুনাফার টাকা , শিক্ষক তার রোজগারের একটি অংশ , হেরোইন খোর তার একবেলা হেরোইনের টাকা , পিয়ন তার মাসের বেতনের একটি অংশ । শিক্ষক তার একটি ছাত্রের টাকা , ছাত্র তার টিফিনের টাকা , ছিনতাইকারী তার একটি ছিনতাইয়ের টাকা , পকেট মার তার একবার পকেট মারের টাকা , দালাল তার একটি দালালীর টাকা , চাকুরীজীবি তার বেতনের অর্ধেক , গৃহীনি তার সংসারের টাকা , টিভি অভিনেতা তার একটি নাটকের টাকা , সিনেমার নায়ক তার একটি সিনেমার টাকা , পরিচালক তার একটি পরিচালনার টাকা , রিকশাওয়ালা তার ৫ ঘন্টার পরিশ্রমের টাকা , ঠেলা গাড়িওয়ালা তার এক কাপ চায়ের টাকা , দোকানদার তার পরিশ্রমের রোজগার , মজুরের টাকা , তাঁতীর টাকা , মুচির টাকা , শ্রমিকের টাকা -

সব মিলিয়ে আপনাদের উদরপূর্তি করব । এসব রক্তের টাকা দিয়ে আপনি আপনার মধ্যস্বত্বভোগী দালাল সাম্রাজ্য আরো বিস্তৃত করবেন। স্ত্রীর জন্য শাড়ী কিনে দেবেন। গাড়ি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটবাড়ি কিনে নেবেন। এসব টাকা দিয়ে আপনি নারী কিনে নেবেন। কিনে নেবেন শরীর। দরকার হলে আমার পশ্চাৎদেশ পেতে দেব। আরো অনেকেই আছেন , সবার পশ্চাৎদেশ পেতে দেব। আসুন ধর্ষন করে যান । যদি তাতেও আপনাদের মনে সামান্য শান্তি আসে। সুখ আসে।

তবু দয়া করে দেশকে ধর্ষন করবেন না জনাব । এই দেশটা বড়ই অভাগা । কান পাতলে তার হু হু কান্নায় পাথরেরও রক্ত ঝরে । একটি বারের মত দেশটিকে মাফ করে দিন জনাব ।

একটি বারের জন্য । করজোড়ে ভিক্ষা চাই ।


ফেইসবুকে প্রতিবাদ গ্রুপ.. এখানে

*** ব্লগার ধীবর ভাই ও অন্যমনস্ক শরৎ ভাইয়ের পরামর্শে এই পোস্টটির কিছু শব্দ এডিট করা হলো। তার মানে এই নয় যে পোস্টটির কনটেন্ট থেকে আমরা একচুল পরিমাণ বিচ্যুত হয়েছি। কোন বিশৃঙ্খলা নয়, আবেগের অতিশয্যে মাথাগরম কুৎসিত মন্তব্য থেকে যেন আমরা বিরত থাকি। আমাদের ক্ষোভ শক্তিতে পরিণত হোক- এটাই এই মূহুর্তের চাওয়া।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩১
৪৫৩টি মন্তব্য ২০৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×