শিমুলতলার সাপ বিদ্রোহ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
তারা ঘরমুখো হলেন। সন্ধ্যায় হাঁস-মুরগি খোয়াড়ে ফেরার সে দৃশ্যর মত। যদিও তারা ঘরে যেতে চান না। তবুও তাদের যেতে হবে। এটাই যে নিয়ম। সাপের বিষ দাঁত ভাঙ্গার বিভৎসতার দৃশ্য তাদের ব্রেনে ফ্রেম বন্ধি হয়ে থাকে।
কিছু লোক থেকে গেলেন কারণ বিভৎসতা আর হিংস্রতাকে তারা পছন্দ করলেন। আর আমরা এও জানি জমায়েত হওয়া প্রতিটা মানুষই হিংস্রতা পছন্দ করেন। কারণ মানুষের ইতিহাস যে হিংস্রতারই ইতিহাস। শিমুলতলার মাঠ খালি হল। কিছু বিষহীন সাপ সর্পরাজ হওয়ার আশায় থেকে গেলেন। আর কিছু সাপ নিজের বিষ হারিয়ে আর কোন যাওয়ার জায়গা নেই বলে সমপর্ন করলেন নিজেদের। আর পাগলের সুখ মনে মনে কথাটির মত তারা ভেবে নিলেন বিষ দাঁত আবার গজাবে!
ঘাবরাবেন না। এত কেবল শেষ দৃশ্যটি বর্ণনা করলাম। শুরুর দৃশ্যগুলো অনেক ঝলমলে ছিল। ঠিক বিয়ের শাড়ীর মত। ছিল আবেগ আর দাবি আদায়ের সংগ্রামের দৃশ্য। আপনারা যারা জানেন তাদেরকে আবারও বলছি। সাপ নিয়ে একটি লোকজ মিথের হাজিরা আছে আমগো সমাজে। সেটা কি? সেটা হল, আপনি যদি কোনদিন কোন সাপকে হত্যা করেন, নির্যাতন করেন বা তার সঙ্গীটিকে মেরে ফেলেন। তাহলে সে সাপের কোন না কোন বংশধর কোন না কোন দিন সে প্রতিশোধ নিবে। শুধু সময় আর সুযোগের অপেক্ষামাত্র।
তেমনি কিছু সাপ তাদের পূর্ব পুরুষের ঋণ শোধ করতে এবং স্বজাতি হত্যা ও নির্যাতনের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্যের রাজার কাছে। রাজা আসে রাজা যায়। বিচার আর হয় না। আঁতাত হয়। ক্ষমতার হিসাব হয়। গোপন সন্ধি হয়। এই সর্প সমাজ রাগে ক্রোধে ফুসতে থাকে। ঘৃণার লালা ঝরে তাদের চোখ মুখ দিয়ে। বিষ আরো তীব্রতর হতে থাকে। নীল থেকে আরো নীল। প্রত্যেকে নীলকণ্ঠ হয়ে ওঠে। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকলেও সবার চাওয়া একটাই।
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার প্রতিনিধি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শিমুল ফোটা এক সকালে শিমুলতলার মাঠে একদল সাপ ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। কোন কিছু পরোয়া না করে। ঘণ্টার আওয়াজ পৌঁছে যায় কান থেকে মগজে, রক্তে এবং রগের ভেতর। এতদিন বিভিন্ন গর্তে, গাছে, আড়ালে আবডালে যে সাপরা নিজেদের ক্রোধ আর ঘৃণা নিয়ে বসে ছিল চুপিসারে। সেদিন তারা দলে বলে একা একা...রাস্তায় বেড়িয়ে আসতে থাকলো। জলের, ডাঙ্গার এবং আকাশের সাপরা একত্রিত হতে থাকে। ওরা আসছে, বাঁধ ভাঙ্গা নদীর পানির মতন দ্রুত লয়ে ছুটে আসে তারা। মরন ছোবল নিয়ে মাথা উঁচু করে এরা দাঁড়িয়ে গেল। তাদের পা দেখা যাচ্ছিলো। 'সাপের পা গজিয়েছে রে...দেখে যা..' বলে চিৎকার করতে থাকলো শিমুল তলার মাথায় বসে থাকা পাখির দল। ‘কি সাপের পা দেখা গেছে? তাইলে সম্ভব। এবার হবে রে এবার হবে’ বলে বুড়ো তালগাছ চিৎকার করে।
সাপের দল গান বাঁধতে শুরু করলো। নয়া সময়ের টাটকা গান। এক সুর আর এক দাবির গান। সকল বিষাক্ত আর বিষহীন সাপেরা একত্রিত হতে থাকলো। আওয়াজ বাড়তে থাকে দ্রুত। হুলুস্থুল ব্যপার সেপার। সর্প শ্রেণীভুক্ত অন্যরাও এতে সামিল হলেন। আর এরই মধ্যে কিছু দুমুখো সাপ ঢুকে যেতে দেখলাম।
আর ওদিকে রাজ দরবারে খবর পৌঁছে যায়। রাজা মসাই মহা চিন্তিত! নাওয়া খাওয়া মাগার বন্দ! তার থোতা মুখ ভোতা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এই সাপেরা তো ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। টেনশন বেড়ে যায় রাজ দরবারে। শুরু হয় রাজকূট এর কাজ। ওঝা আর সাপুরিয়া ছাড়া সাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। রাজ্যের ওঝা আর সাপুরিয়াদের ডাকা হল। গোপন সভায় বসলেন রাজা ও তার মন্ত্রীরা। সাপুরিয়ারা মত দিলেন, ‘একটা দুটো পাঁচটা সাপ হইলে কথা ছিল। এত দেখি লাখ লাখ সাপ! এদের বিষ দাঁত ভাঙা সম্ভব না। ‘রাজকূটে শেষ বলে কথা নাই, তেমনি অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই’... বললেন রাজা। এ কথাতেই কি করতে হবে বুঝে গেলেন বাকিরা।
একটা একটা করে ওঝা আর সাপুরিয়া শিমুল তলায় আসতে থাকলো। প্রথমে তারা দূর থেকে বুঝে নিলেন বিষয়টা। দু’একজন মিশে গেলেন সাপদের দলে। বদলে ফেলেন নিজের রঙ। তারা বললেন ‘হ্যাঁ তোমাদের ন্যায্য দাবি। আমরাও আছি তোমাদের সঙ্গে। রাজাকে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। এ বিদ্রোহ যুক্তি সঙ্গত। কোন রকম আঁতাত মানবো না।’ এভাবেই ওঝা আর সাপুরিয়ার দল মিশে গেল। বাড়তে থাকে ওঝার সংখ্যা। সাপুরিয়ার বীণ বাজা শুরু হয়ে যায়।
ঝমে ওঠে সাপের খেলা। বাইরের রাজ্যগুলোতে শুরু হয় কানাঘুষা। সেখানেও কিছু সাপ জেগে ওঠে।
রাজাও একদিন ঘোাষণা দিলেন আমিও আছি তোমাদের সঙ্গে। গরম তেলে পানি ফেলার মত অবস্থা হল। রাজার বিপক্ষের দলগুলো পড়ে গেল বেকায়দায়। কি করবে বুঝে ওঠতে পারে না তারা। রাজ্যের ক্ষমতায় থাকতে হলে সর্পকুলের অভিশাপ নিয়ে চলা যাবে না। এ ভাবনা করতে থাকে তারা। তারা মীর জাফর খুঁজতে থাকে। কিন্তু ততক্ষনে অনেক বেশি দেরি হয়ে যায়। কারণ ততদিনে রাজা মীর জাফর পেয়ে যায়।
রাজার প্রতিদন্ধিরা কুৎসা রটাতে থাকে। সর্প সমাজকে দুইভাগে বিভক্ত করে দিতে চায়। তারা সফলও হয়। এবার যেন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়ে সর্পকুলের মাঝে।
আর এ সুযোগটা রাজা আরো ভালো করে কাজে লাগান। সাপুড়িয়ারা এ সুযোগে একটা একটা সাপ ধরে বিষ দাঁত ভাঙতে শুরু করে। মূলত তাদেরই বিষ দাঁত ভাঙ্গা হল যারা সামনের সারিতে ছিলো। গানের সুর আর তাল মিহিভাবে চেঞ্জ হতে থাকে। বার্ণিশ হতে থাকে। ভোতা হতে থাকে অনুভূতি। রবীন্দ্র সংগীতের সুর শিখতে শুরু করে সবাই। সাপুরিয়ারা মহাখুশি। ভালো এনাম পাওয়া যাবে রাজার কাছ থেকে। আর যে সাপগুলোর বিষ দাঁত ভাঙ্গতে পারেনি। তারা পলায়ন পর্বে গেল। কারণ তারা জানে এ বিষের মূল্য আছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। তাই তারা গর্তে ফিরে যেতে থাকলেন চুপিসারে। দুমুখো সাপগুলো থেকে গেল । আর থাকলো বিষহীন কতগুলো সাপ।
একদিন ঘুমের ঘরে এই স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেদিন খুব করে চাচ্ছিলাম ঘুম যেন না ভাঙ্গে। কয়েকবার ঘুম ভাঙ্গলো। আবার ঘুমানোর ট্রাই করলাম। কারণ শিমুলতলার সাপ বিদ্রোহর স্বপ্নটা ভালোই লাগছিলো। বাংলা সিনেমার মত লাগছিলো...নাগকে মেরে ফেলার প্রতিশোধ নিতে নাগিন মানুষ রুপে ঘুরে বেড়াতো...এরকম গল্পের সিনেমার কথা মনে পড়ে যায়। সেদিন বাসায় ফিরে রাজনাকে বললাম ‘সাপ নিয়া একটা লেখা লিখুম।’ সে বলল ‘কি লেখা?’ আমি তাকে স্বপ্নের ঘটনাটা জানালাম। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল ‘এই গল্প তো শুনেছি বহু বছর আগে। সব সাপরা বিদ্রোহ করেছিল মানুষের বিরুদ্ধে। আরে তুমি স্টার জলসায় ‘বেহুলা’ সিরিয়ালে দেখ নাই। এই ঘটনা নিয়া পর্ব হইছিল।’
আমি শুধু বললাম ‘বাহ মজা তো...তাহলে সাপদের বিদ্রোহ নতুন কোন ঘটনা না। যুগে যুগে মহান সর্পকুল বিদ্রোহ করে আসছেন।
৮/৩/২০১৩
রুপনগর
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট
পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।