বাংলাদেশে ৯০ হাজার ২৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বা ১১ হাজার ১৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে গত বছর। সরকারি হিসাবে এ অর্থ মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ১১ শতাংশ, আর বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী ১৪ শতাংশ। গত বছর আসা এই প্রবাসী-আয় ওই বছর পাওয়া বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় সাড়ে ছয় গুণ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে অন্তত ১৩ গুণ বেশি।
গত মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী-আয় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। এর ফলে বিশ্বে প্রবাসী-আয়ের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হবে সপ্তম।
তবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাঁরা এই রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন, সেই প্রবাসীদের জন্য কিছুই করছে না রাষ্ট্র। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, সরকার মুখেই কেবল প্রবাসীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে বিদেশে যেতে-আসতে শুধু বিমানবন্দরে যে ভোগান্তি হয়, তা দূর করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। পদে পদে আরও কত দুর্ভোগ যে আছে, তা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কত সংখ্যক কর্মী বিদেশে যান, সেই তথ্য সংরক্ষিত আছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি)। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪০ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। আর একই সময়ে মোট ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪৭ দশমিক ৬৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে।
অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রবাসীরা বলছেন, প্রবাসীদের বিশেষ নাগরিক সুবিধা দিতে ২০০৮ সালে একটি নীতিমালা করে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, যাঁরা বছরে ন্যূনতম পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার দেশে পাঠান, তাঁদের বিশেষ কিছু নাগরিক সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই নীতিমালা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এত দিন ওই নীতিমালার বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে খুব শিগগির এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের এই আচরণের মধ্য দিয়েই আজ মঙ্গলবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০১২। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘আইন মেনে যাবো বিদেশ, অর্থ এনে গড়বো স্বদেশ’।
অভিবাসনবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) রামরুর পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীতিমালাটি বাস্তবায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এতে সব প্রবাসীই সম্মানিত বোধ করবেন।’
প্রবাসীদের সুবিধা দিতে নীতিমালা: ২০০৮ সালে ‘রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদান নীতিমালা’ করে সরকার। নীতিমালার প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থ হতে অর্জিত। তাদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই নীতিমালা করা হলো।’
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবছর যাঁরা এক লাখ ডলারের (৮০ লাখ টাকা) ওপরে পাঠাবেন, তাঁরা ‘ক’ শ্রেণীতে এবং যাঁরা পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ ডলার পাঠাবেন, তাঁরা ‘খ’ শ্রেণীতে বিশেষ কিছু সুবিধা পাবেন। এ জন্য তাঁদের মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ডধারীদের জন্য অভিবাসন ও শুল্ক কাজে বিমানবন্দরে একটি বিশেষ কাউন্টার থাকবে। কার্ডধারী ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি হাসপাতালে কেবিন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তান ভর্তি, জমি, ফ্ল্যাট নিবন্ধনে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া বিভিন জাতীয় অনুষ্ঠানে দূতাবাসের দাওয়াত, দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল ও জলযানে আসন সংরক্ষণের অগ্রাধিকার, পাসপোর্ট নবায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।
নীতিমালা কাগজে আটকা: নীতিমালায় বলা আছে, সুবিধাপ্রত্যাশী নির্বাচনের জন্য প্রতিবছর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। ১ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দূতাবাসে আবেদন এবং ১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দূতাবাসে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি অক্টোবরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন করবে। এরপর ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের এক বছর মেয়াদি কার্ড দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নীতিমালা করার পর একবার সরকার বিজ্ঞাপন দেয়। সে সময় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে আড়াই শ জনকে ‘ক’ শ্রেণী এবং সাড়ে নয় হাজার প্রবাসীকে ‘খ’ শ্রেণীর কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর চার বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ আছে।
মালদ্বীপপ্রবাসী ইয়াছিন হোসেন, কাতারপ্রবাসী রেজাউর রহমান, মালয়েশিয়াপ্রবাসী মনিরুল ইসলাম, সৌদিপ্রবাসী রায়হান মিয়াসহ প্রবাসী অনেক বাংলাদেশির অভিযোগ, বিরূপ প্রকৃতি, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, মালিকদের প্রতারণা, নির্যাতন—সবকিছু সহ্য করে তাঁরা দেশে টাকা পাঠান। কিন্তু কোনো কাজে দূতাবাসগুলোতে গেলে তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না। আর বিদেশে যাওয়ার আগে পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে, রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল এবং প্রতারক এজেন্সি, অতিরিক্ত খরচ, সরকারি ছাড়পত্র—সব ক্ষেত্রে সীমাহীন ভোগান্তি তো আছেই।
রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কাজটি কেন আটকে আছে, জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘দূতাবাস থেকে কাগজপত্র আসাসহ যাচাই-বাছাই এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগে যায়। তবে আমরা আগের বছরগুলোরসহ ভবিষ্যতে নিয়মিত এই কার্ড দেওয়ার কাজ এগিয়ে এনেছি। খুব শিগগির আমরা প্রবাসীদের সেগুলো দিতে পারব।’ তিনি দাবি করেন, এখন বিমানবন্দরে হয়রানি অনেক কম হচ্ছে।
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের
আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কে কাকে বিশ্বাস করবে?
করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।
সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন