নানা কারণেই আমাদের বিভিন্ন সময়ে দলিল ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। কিন্তু দলিলপত্র ঘাঁটার অভ্যাস নেই এমন লোকদের জন্য দলিলের ভাষা উদ্ধার করা সহজসাধ্য কাজ নয়। কেননা, বাংলা দলিল কিংবা চুক্তিপত্রে অনেক শব্দ আছে, যেগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়। আবার এমন সব শব্দও আছে, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কথাবার্তায় খুব কম ব্যবহূত হয় কিংবা আমাদের সঙ্গে তাদের পরিচিতি কম। দলিলে ব্যবহূত এ রকম কিছু শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি নিচে তুলে ধরা হলো—
সাং = সাকিন, সাকিম। সাকিন বা সাকিম শব্দের অর্থ ঠিকানা, বাসস্থান।
গং = অন্যরা, সমূহ। অমুক [ব্যক্তিনাম] ও অন্যান্য বা তার সহযোগীগণ। যেমন: যদি লেখা থাকে আবদুল কাদের গং, তাহলে বুঝতে হবে যে আবদুল কাদেরের সঙ্গে আরও অনেকে আছেন।
মোং = মোকাম। এর অর্থ আবাস, বাসস্থান হলেও মূলত বাণিজ্য স্থান বা বিক্রয়কেন্দ্র বোঝাতেই এটি ব্যবহূত হয়।
কিঃ = কিস্তি। কিন্তু শব্দটি দফা, বার, ক্ষেপ এই অর্থেও ব্যবহূত হয়।
এজমালি/ইজমালি = যৌথ, সংযুক্ত, বহুজনের একত্রে। যেমন: এজমালি সম্পত্তি বলতে যৌথ মালিকাধীন সম্পত্তিকে বোঝায়।
কিত্তা/ কিতা = আববি ‘ক্বত্বহ’ শব্দজাত। এর অর্থ অংশ, জমির ভাগ, পদ্ধতি।
ছানি = আরবি শব্দ, অর্থ দ্বিতীয়বার। পুনর্বিবেচনার প্রার্থনা। যেমন: ছানি মামলা।
ছোলেনামা = মীমাংসা, আপোষ/আপস। ছোলেনামা মানে আপস-মীমাংসাপত্র।
জঃ = জমা। সাধারণ অর্থে ‘জমা’ বলতে সঞ্চিত, রাশীকৃত, স্তূপীকৃত হওয়া বোঝায়। কিন্তু ভূমি আইন ও দলিল-দস্তাবেজে এটি ভিন্ন অর্থ বহন করে। যেমন: জমা মানে পুঁজি, মোট, খাজনা, রাজস্ব, বার্ষিক কর [হাওলার বার্ষিক জমা ১০ টাকা]। আবার ‘জমা ওয়াশিল’-এর অর্থ আয়-ব্যয়ের হিসাব; ‘জমা ওয়াশিল বাকি’ মানে দেয় খাজনার কত আদায় বা লভ্য খাজনার কত আদায় হয়েছে এবং কত বাকি আছে তার হিসাব; ‘জমা খারিজ’ অর্থ যৌথ খতিয়ানের জমা থেকে কোনো সহমালিক বা অংশীদারের আবেদনক্রমে তার অংশ আলাদা করে যে নতুন জমা ও খতিয়ান সৃষ্টি করা হয়।
খারিজ = সাধারণ অর্থে বাতিল করা হয়েছে এমন বোঝায়। ভূমি আইনে একজনের নাম থেকে অন্যজনের নামে জমির মালিকানা পরিবর্তন করে নেওয়াকে বোঝায়।
তমঃ = তমসুক। আরবি শব্দজাত, যার অর্থ দলিল, ঋণ-স্বীকারপত্র বা খত। অর্থাৎ কর্জ গ্রহীতা যে লিখিত পত্র, বিশেষত সরকারি স্ট্যাম্প বা কাগজমূলে কর্জদাতার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। বন্ধকী তমসুক মানে হলো বন্ধকনামা বা বন্ধকী বা বন্ধকী খত।
দং = দরুন, বাবদ, দখল।
নিম = ফারসি শব্দ। এর অর্থ অল্প, অর্ধেক, অধস্তন বা অধীন ইত্যাদি।
নং = নম্বর বা সংখ্যা অর্থে বোঝানো হয়।
পঃ = পঞ্চম বা পাঁচের স্থানীয়।
পোঃ = পোস্ট অফিস বা ডাকঘর বোঝানো হয়।
মহঃ = মহকুমা। ব্রিটিশ আমলে জেলার একটি প্রশাসনিক অংশকেই মহকুমা বলা হতো।
মুসাবিদা = খসড়া তৈরি করা। মুসাবিদাকারক মানে যিনি দলিল লেখেন।
হিঃ = হিসাব শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ
চৌঃ = চৌহদ্দি। চৌহদ্দি শব্দের অর্থ হচ্ছে চারধারের সীমানা।
তঃ/তপঃ = তফসিল, তহশিল।
তামাদি = ফারসি শব্দ। এর অর্থ নির্ধারিত সময়সীমা।
বিতং = বিস্তারিত বিবরণ, কৈফিয়ত, বৃত্তান্ত অর্থে ব্যবহূত হয়।
মাং/ মাঃ = মারফত। মারফত মানে মাধ্যম, অর্থাৎ যার হাত দিয়ে বা মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়।
সহঃ = সহকারী, যিনি কাজে সহযোগিতা করেন।
সুদিখত = একশ্রেণীর বন্ধকী দলিল।
হলফ = সত্য বলার জন্য যে শপথ করা হয়। হলফকারী মানে যিনি সত্যায়ন করেন।
Click This Link
জেনে রাখুন, দলিলের বিভিন্ন রকম শব্দের অর্থ ও ব্যবহার
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।