somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বামহাত ফ্যাক্ট

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাম হাত দিয়ে লিখে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ১০ বছর ধরে চাকরি এবং সংসার করতে আমার কোন অসুবিধা না হলেও শুধুমাত্র বামহাতী বলে প্রায়ই অনেকে বেয়াদব হিসেবে সম্বোধন থাকেন এবং এটার সাথে নিজেকে অনেকটা মানিয়েও নিয়েছি কিন্তু ইদানীং যা হচ্ছে তা আর মেনে নিতে পারছিনা।
# গতকাল অফিস থেকে রিক্সা করে ফিরলাম, না পরিবহন ধর্মঘাটের কোন অসুবিধা হয়নি, অসুবিধা হল ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে; রিকশাওয়ালা বাম হাত থেকে ভাড়া নিবেন না, প্রয়োজনে সে ভাড়া নিবেনা কিন্ত বাম হাত থেকে ভাড়া নিবেনা। আমি তাকে বললাম আমার হাতে সমস্যা তাই বাম হাত দিয়েই নিতে হবে। কিন্ত সে আমার কথায় কর্নপাত না করে টাকাটা আমাকে সিটের উপর রাখার উপদেশ দিল সেখান থেকে ভাড়া নিবে। আমিও নাছোড়বান্দা ভাড়া নিলে বাম হাত দিয়েই নিতে হবে। এই নিয়ে বাক বিতন্ডায় ভালই লোক হল তারাও তাকে বলল কিন্তু সে একই কথা। যাইহোক গতকালের রাস্তার অবস্থা বিবেচনা করে এবং একজন বয়স্ক লোকের অনুরোধে রিক্সাওয়ালার কথা মেনে নিয়ে চলে আসলাম।
কিন্তু গতকাল থেকে মাথার মধ্যে একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হল "বাম হাত দিয়ে আয় করা টাকা নেওয়া যাবে কিন্তু বাম হাত থেকে টাকা নেওয়া যাবেনা" কোন দেশে বাস করছি আমরা।

## না এটা শুধু কালকের ঘটনা না প্রায়ই হয়। গত বৃহস্পতিবার সোবহানবাগের একটা স্নাক্সের দোকান থেকে স্নাক্স কিনে যখন টাকা দিচ্ছিলাম সেই দোকানের মালিকেরও একই কথা ছিল ডান হাত দিয়ে কেন টাকা দিচ্ছিনা,ধর্ম কর্মের জ্ঞান নাই এক্কেবারেই।

## অনেকদিন আগের কথা আইসিডিডিআরবিতে জয়েন করছি কিছুদিন হল। Tanvir Ahmed ভাইয়ার নেতৃত্বে একটা রিসার্চ কাজ করছি আমরা। আমাদের কাজ ছিল ঢাকা শহরের হেলথ ফ্যাসিলিটি লিস্ট এবং ম্যাপিং করা। তো আমি আর আমার এক কলিগ একটা ফার্মেসিতে গেলাম সেখানে আমি যখন ভিজিটিং কার্ড নিচ্ছিলাম সেলসম্যানের কাজ থেকে তখন ফার্মেসি মালিক চিতকার করে বলে উঠলেন উনি একজন মাস্টার্স পাশ ছেলে ওর হাত থেকে আমি কেন বাম হাত দিয়ে নিচ্ছি, আমার হাতে সমস্যা এটা আমার আগেই বলে দেওয়া উচিৎ ছিল তাইলে কার্ডটা সে টেবিলের উপরে রেখে দিত আমি সেখান থেকে নিয়ে নিতাম। এটা শুনে আমার কলিগ প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলেন এবং অন্যান্য কলিগদের জানিয়েছেন তারা যাতে এর একটা বিহিত করেন। যাইহোক আমি ওনাদেরকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছিলাম সেদিন এটা ভেবে যে কি লাভ এদের সাথে ঝামেলা করে এরা বুঝেনা তাছাড়া এখানে ঝামেলা করলে হয়তো আমাদের কাজের পরিবেশ নস্ট হতে পারে।

## না এটা ভাববেন না যেন রিক্সাওয়ালা, স্নাক্সের দোকানদার কিংবা ফার্মেসিওয়ালা অশিক্ষিত মুর্খ লেখাপড়া জানেনা তাই হয়ত এরা এসব করে থাকে। শিক্ষিত লোকেরা কিন্ত আরও বেশী চড়াও এসব ব্যাপারে।

## অগ্রনীব্যাংক, আইসিডিডিআরবি শাখায় একজন ভদ্রলোক ছিলেন তিনিও আমাকে বাম হাত দিয়ে চেক দেওয়ার কারনে কথা শুনিয়েছিলেন ভদ্রলোক কিন্ত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। আমার গায়ের রক্ত পানি করে আয় করা টাকা আমাকে দিবেন তাতে আবার ডানহাত বামহাত।

## জীবনে একজন ডাক্তারকে পেয়েছিলাম যিনি বাম হাত দিয়ে টাকা দেওয়ার কারনে খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন মুখে কিছু না বললেও চোখ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ব্যাপারটা পছন্দ করেননি।

## স্কুল জীবনের প্রথম ইংলিশ ক্লাশ শুরু হয়েছিল ইংরেজি স্যারের থাপ্পড় খেয়ে অপরাধ ছিল বাম হাত দিয়ে বই ধরছিলাম। তবে স্যার অবশ্য পরে আমাকে সরি বলেছিলেন আমি যখন বললাম আমার ডান হাতে অসুবিধা।

## বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম এবং শেষ অপমানজনক ঘটনার শিকার হই রোকেয়া হলের ততকালীন প্রভোস্ট ম্যাডামের কাছ থেকে। ওনার সাথে প্রথম সাক্ষাতের দিন উনি আমার সাথে যে ব্যবহার করেছিলেন সেটা শুনে আমার ডিপার্টমেন্টের সেই সময়ের চেয়ারম্যান স্যার বলেছিলেন, সবকিছু বাদ দিলাম মেয়েরা মায়ের জাত আর উনি একজন হয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের সাথে কিভাবে এরকম ব্যবহার করলেন"।

## ছোটবেলায় দেখতাম অনেকেই আমার হাতের জিনিস খায়না কারণ যেই হাত দিয়ে আমি প্রাকৃতিক কাজ করি সেই হাত দিয়েই আবার বাকি সব কাজ করি। আমার আত্মীয়
স্বজনদের মধ্যে অনেকেই আমার হাতের মাথা কিছু খেতেননা।

## বিয়ের পরে আমার শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয় আমার বাসায় এসে আমার হাতের রান্না কিছু খেতেননা, বাইরে থেকে এনে দিলে খেতেন।

## গালিবের ডানহাত ভাল হলেও ক্রাচের কারনে ওর ডান হাত সবসময় আটকা থাকে তাই চাইলেও অনেক সময় ও ডানহাত ব্যবহার করতে পারেনা। বিশেষকরে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় কারও সাথে হ্যান্ডশেক করতে হলে ওকে বামহাতই বাড়িয়ে দিতে হয় মানুষ হাত হয়তো মিলায় কিন্ত তারা যে ব্যাপারটা পছন্দ করেনা সেটা তাদের আচরণ দিয়ে ঠিক বুঝিয়ে দেন।

## বাম-ডানের ক্যাচাল বলতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চলে যাবে তবুও শেষ হবেনা তাই আর বেশী লিখতে চাইনা। তবে এখানে একটি ব্যাপার খুবই স্পষ্ট বামহাতি নিয়ে যাদের বেশী সমস্যা তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ধর্মীয়মনা। কাল যে রিক্সাওয়ালা ছিল সেও যেমন দাড়িওয়ালা টুপি পড়া ছিল তেমনি ছোটবেলার সেই ইংরেজী স্যারও দাড়িওয়ালা টুপি পড়া লম্বা জামা পড়া ছিলেন। সবাই ব্যাপারটাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন, ধর্মে নাকি ডানহাত দিয়ে এই ধরনের কাজগুলো করতে বলা হয়েছে।

## ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, জানিনা ধর্মে কি ব্যাখা আছে ডান-বাম নিয়ে। তবে আল্লাহ যখন বিভিন্ন রকমের মানুষ তৈরী করেছেন ব্যাখ্যাও নিশ্চয়ই ভিন্নভিন্ন কিছু আছে। ব্যাপারটা আগে তেমন আমলে না নিলেও ইদানীং মনে হয় আল্লাহর কাছে যদি সরাসরি চাওয়া-পাওয়ার ব্যবস্থা থাকত নবী রাসুলগণের মত তাহলে আমি আল্লাহকে বলতাম কিছুক্ষণের জন্যে ঐ মানুষগুলোর ডানহাত অকেজো করে দাও যাতে তারা বুঝতে পারে একটি হাত না থাকাটা কতটা কষ্টের, কতটা কষ্ট করে একজন মানুষকে চলতে হয় যার শরীরের একটি অংশ কাজ করেনা। না সারা জীবনের জন্যে চাইতাম না, কারণ সারাজীবন ধরে আমি কিংবা আমার মত মানুষেরা যে কষ্ট পায় সেটা কেউ পাক আমি তা চাইনা, আমার বিশ্বাস আমার মত মানুষেরাও সেটা চাইবেননা।

বি দ্রঃ আমার কলিগ,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল জীবনে (প্রোভস্ট ছাড়া) কেউ কখনো আমাকে বামহাতি বলে ছোট করেননি, বরং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ, সহপাঠী, ছোট ও বড় ভাইয়া আপুরা এবং রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ছাড়া বাকি সব হাউজটিউটর, রুমমেট, হলমেট সবাই আমার চলার পথে উতসাহ দিয়েছেন। এছাড়া শ্বশুরবাড়ির কেউ কখনো আমাকে বামহাতি বলে ছোট করেননি।

জীবনের গল্প
শারলিন আক্তার মুন্নী
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×