বাংলালিংক এর দিন বদলের বিজ্ঞাপনটি আমার খুব প্রিয় । হেই দিন কি আর আছে দিন বদলাইয়া গেছে
না , দিন আসলেই বদলাইয়া গেছে । প্রথম আলোর নতুন স্লোগান বদলে যাও বদলে দাও । দিন বদলের এই সময়ে আমরা কি আসলেই
বদলাতে পেরেছি কিংবা আদৌ বদলানোর চেষ্টা করছি ? আমি প্রায়ই ভাবি .............................
হিসাব মিলাতে পারি না । চিন্ত্া ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায় ।আজও অনেক নারী এসিড দগ্ধ হয় , যৌতুকের কারনে অত্যাচার সহ্য করতে হয় নারীদের , আজও নারীদের শুনতে হয় তুমি নারী , সব সহ্য
করতে হবে ।
আমরা কি পারবো বদলাতে আমাদের মানসিকতা ? প্রথমত আমরা মানুষ , নারী কিংবা পুরুষ । কিন্তু আমাদের সমাজ নারীদের আজ ও মানুষ ভাবে না । সমান সংখ্যক ক্রোমোজম আছে নারী ও পুরুষের শরীরে
এক জোড়া ক্রোমোজম সংখ্যায় শুধু ভিন্নতা আছে ।
কোথাও কোমোজম সংখ্যার ঘাটতি নেই ।
ক্রোমোজম সংখ্যার ভিন্নতার কারনে নারী শারীরিকভাবে কিছুটা দূর্বল । কিন্তু মানসিকভাবে দূর্বল আমাদের
সমাজ আমাদের মানসিকতা । বেগম রোকেয়া বলেছিলেন -
স্বীকার করি যে শারীরিক দুর্বলতাবশত নারীজাতি অপর জাতির সাহায্যে নির্ভর করে । তাই বলিয়া পুরুষ প্রভূ
হইতে পারে না । কারন জগতে দেখিতে পাই , প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিকট কোন না কোন সাহায্য প্রার্থনা
করে , যেন একে অপরের সাহায্য ব্যতীত চলিতে পেির না । তরুলতা যেমন বৃষ্টির সাহায্য প্রার্থী , মেঘ ও সেইরুপ তর ুর সাহায্য চায় জলবৃদ্ধির নিমিত্ত নদী বর্ষার সাহায্য পায় , মেঘ আবার নদীর নিকট রীনি ।
তবে তরংগিনী কাদম্বিনীর স্বামী না কাদম্বিনী তরংগিনীর স্বামী ? এ স্বাভাবিক নিয়মের কথা ছাড়িয়া কেবল
সামাজিক নিয়মে দৃষ্টিপাত করিলেও আমরা তাহাই দেখি ।
কেহ সুএধর কেহ তন্তুবায় ইত্যাদি । একজন ব্যারিষ্টার ডাক্তারের সাহায্য প্রার্থী , আবার ডাক্তার ও ব্যারিষ্টারের
সাহায্য চাহেন । তবে ডাক্তারকে ব্যারিষ্টারের স্বামী বলিব , না ব্যারিষ্টার ডাক্তারের স্বামী ? যদি ইহাদের কেহ কাহাকে স্বামী বলিয়া স্বীকার না করেন , তবে শ্রীমতি গন জীবনের চিরসঙ্গী শ্রীমানমিগকে স্বামী ভাবিবেন কেন?
আমরা জানি সন্মান দিলে সন্মান পাওয়া যায় , ভালবাসা দিলে ভালবাসা পাওয়া যায় । নারী পূরুষ একে অপরের সহায়ক ।
শুধুমাএ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীকে তার প্রাপ্ত সন্মান দিলে একটি দেশ তথা জাতি , সর্বোপরি সভ্যতার উন্নয়ন ঘটবনো সম্ভব ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী পুরুষ বৈষম্য
বাংলাদেশের জনগনের একটি বিশাল অংশ নারী । পুরুষ ও নারীর অন্পুাত ১০০:১০৫.২১ । বাংলাদেশের সংবিধানের ১০,১৯,২৭,২৮,২৯ নং ধারায় রাষ্ট্র ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের
বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে । নারী অধিকারের বিষয়টিকে মানবাধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে মানুষের
মৌলিক অধিকার ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমতা নিশ্চিত করনের উদ্দেশ্যে আর্ন্তজাতিকভাবে জাতি
সংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) প্রতিষ্টিত হয়েছে । বাংলাদেশ এ সনদ অনুমোদন
পরবর্তী ২৪ বছর পার করলেও এদেশের নারীরা তাদের অধিকারে ক্ষেত্রে বৈষম্য এর শিকার যা তাদেরকে
এখন ও পিছিয়ে রেখেছে ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী বৈষম্য- যে কোন জাতিসত্ত্বার উন্নয়নে প্রথমেই যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন তা হলো শিক্ষা । বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারি পর্যায়ে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া সত্তেও নারীরা
পিছিয়ে আছে । স্কুলে ভর্তি এবং শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ার হার ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়েশিশুর বেশি ।
তাছাড়া উপবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আবশ্যক শর্তগুলো না মানায় নারী শিক্ষার গুনগত মান হ্রাস পাচ্ছে ।
সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা সত্তেও এ ক্ষেত্রে ও দেখা যাচ্ছে বৈষম্য ।
স্বাস্থ্যসেবায় নারী বৈষম্য - স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে নারীনা যথেষ্ঠ বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে । বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির
তথ্য অনুযায়ী মায়েদের নিরাপদ প্রসবপূর্ব সেবার জন্য সরকারের ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় শতকরা ৪৯
ভাগ এবং প্রসব পরবর্তী সেবার জন্য মাএ শতকরা ১৮ ভাগ । তাছাড়া ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের কারনে গ্রাম্য
নারীরা মৃত্যবরন করছে ।
কর্মক্ষেএে নারী বৈষম্য - কর্মক্ষেএে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি । পারিশ্রমিকের
ক্ষেএে বৈষম্য , কাজ বন্টনে বৈষম্য , তথ্যের অভাবে নারী উদ্যোক্তারা পিছিয়ে আছে । এক সমীক্ষায় দেখা
গেছে নারীরা পুরুষদের তুলনায় ১৩% বেশি সময় পারিশ্রমিকসহ এবং বিনা পারিশ্রমিকে গ্রামে মোট শ্রমের ৫৫% ও শহরে মোট শ্রমের ৫০% শ্রম দান করে ।কিন্তু অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে
নারীরা চিরকাল অবহেলিত ।
জাতীয় সংসদে বৈষম্য - জাতীয় সংসদে নারী বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট । রাষ্ট্রপ্রধান ও বিরোধীদলীয় প্রধান নারী
হওয়া সত্তেও জাতীয় সংসদে এখনো নারী সদস্য সংখ্যা খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি । ২০০৮ ব্যতিত
পূর্বের সংসদ নির্বাচন গুলোতে নারী প্রার্থীতার সার্বিক হার ২% এর বেশি ছিল না ।
রাজনীতি ও প্রসাশনে নারী –পুরুষ বৈষম্য - স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতিবীদ হিসেবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের অভাব ও পুরুষের বিরুপ মনোভাবের কারনে বিঘিœত হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া । তাছাড়া নীতিমালা প্রনয়ন ,প্রশাসনিক , বিচার বিভাগীয় ও আইনী কাঠামো ইত্যাদী ক্ষেত্রে নারীর প্রতিনিধিত্ব এখন ও অনেক কম ।
১ম ও ২য় শ্রেনীর সরকারী চাকরিতে নারীর অংশগ্রহন মাএ ৮% ,তৃতীয় শ্রেনীর চাকরীতে ১২% , এবং চতুর্থ
শ্রেনীর চাকুরীতে মাএ ৬% যা নারীকে ক্রমান্বয়ে শেকড়হীন ও নড়বড়ে করে তুলেছে ।
সিধান্ত গ্রহনে নারী পুরুষ বৈষম্য - আমাদের দেশের নারীরা স্বাধীনতার পুর্ন উপভোগ করতে পারে না সিধান্ব
গ্রহনের অভাবে । সামাজিক সাংস্কৃতিক বাধার কারনে এখনো নারীদের সিধান্ব পুরুষরাই নেয় ।
বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও এজেন্সির নীতি নির্ধারনী কাঠামোতে - যেমন গর্ভনিং বোর্ড , নিবাহী কমিটি , স্থানীয় প্রকল্প
প্রনয়ন , সরকার কাঠামো এবং বাস্তবায়ন ও পরীক্ষন কমিটিতে পুরুষের তুলনায়
নারীর অংশগ্রহন অত্যন্ত কম ।
ইহা ছাড়াও তথ্যের অধিকারের ক্ষেত্রে , মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষ্যমের শিকার হয় ।
একটি জাতির উন্নয়নের জন্য বৈষম্য কখনই সুফল বয়ে আনতে পারে না । নারী পুরুষ সমভাবে কাজ করলেই
দিন বদলানো সম্ভব , একটি জাতির উন্নয়ন সম্ভব ।
শুধুমাএ মানসিকতা উদার করে নারীকে মানুষ হিসাবে ম্বীকৃতি দিয়ে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ , ভালবাসা , সহমর্মিতা জাগ্রত করনের মাধ্যমে একটি জাতির দিন বদলানো সম্ভব ।
আমি আশাবাদী নারী তার প্রাপ্ত সন্মান পাবে , দেশ ও জাতি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে ।
দিন বদলে যাবে
”এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে , এই দিনেরে নিবো আমরা সেই দিনের ও কাছে ”
শারমিন আক্তার রুপা
সমাজকর্মী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



