somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা বিষয়ক ভবিষ্যতবাণী

১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা নিয়ে সবাই ভবিষ্যতবাণী শুনতে চায় এবং আশার আলো দেখতে চায়। কিন্তু আমি বিশেষ কোরে স্বাস্থ্যখাতের সাথে জড়িতদের বলব, মানবকে ভবিষ্যতবাণী দিয়ে আশার আলো দেখিয়ে নিজের পায়ে কুড়োল মারার দরকার করে না।

চীনে যখন কোভিড-১৯ এটাক হোল, তখন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক'জন বিশেষজ্ঞকে শুধানো হোল- এই ভাইরাস কি বাংলাদেশে আসবে বা প্রাণনাশ করবে?

তাঁরা বললেন- না বাংলাদেশে মহামারী বা প্রাণনাশ হবে না।

তাঁদের কথার উপর ভিত্তি কোরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিবর্গও গণমাধ্যমে বলে ফেললেন- করোনা বাংলাদেশের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না।

পরে যখন করোনা টিকি ছাড়িয়ে গুপ্তকেশ ছেঁড়া শুরু করল তখন স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন উঠল- বিশেষজ্ঞ এবং দায়িত্বশীলরা তাহলে কী ভবিষ্যতবাণী করল? তারা ক অক্ষর গোমাংস? অযোগ্যদের এক্ষণে ছিঁড়ে ফেলা দরকার।

যারা ছিঁড়ে ফেলতে পাগল হোল, এরা অধিকাংশই কোভিড-১৯ এর মাধ্যমেই জীবনে প্রথম করোনা ভাইরাসের নাম শুনেছে। এবং অধিকাংশই আর কোনো ভাইরাসের নাম বলতে পারবে না। কিন্তু কোভিড-১৯ শুনে শুনে অনেক বকলমও নিজেকে আজ ভাইরোলজিস্ট ঠাওরায়।

তাঁদের খিদমতে আমার নিবেদন, মানবজাতির উপর করোনা ভাইরাসের বড়সড় এটাক এই প্রথম নয়। এর আগেও করোনা ভাইরাসের দুটি টাইপ অনেক মানবকে দিয়ে পটল তুলিয়েছে।

একটি হল সার্স (SARS) করোনা যা ২০০২-২০০৪ এ চীন ও তার আশেপাশে ৭৭৪ মানবকে কতল করেছে, মৃত্যুর হার ১০%। আরেকটি মার্স (MERS) করোনা যা মধ্যপ্রাচ্যে ২০১২,'১৫,'১৮তে ৮৫৮ মানবকে ঘুম পাড়িয়েছে, মৃত্যুর হার ৩৭%! যেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৬.৮%।

তো যাঁরা সেই ভবিষ্যতবাণী প্রদানকারীদের ছিঁড়ে ফেলতে উদগ্রীব, সেই নব্য ভাইরোলজিস্ট ভাইবোনেরা, আমরা দেখতে পাচ্ছি সার্স করোনা আর মার্স করোনার কতলশক্তি হালের কোভিড-১৯ করোনার চেয়ে অনেকটা বেশি!

তারপরও আমরা কোভিড-১৯ এর নাম এত্ত বেশি শুনছি কারণ সার্স আর মার্স ছিল যথাক্রমে চীন এবং সৌদিআরব এর আশেপাশে সীমাবদ্ধ। আর কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে। যা করোনা ভাইরাসের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

আর এখানেই প্যাঁচটা লেগেছে। যে বিশেষজ্ঞদের আমরা ছিঁড়ে ফেলতে চাচ্ছি, উনারা আগে থেকেই সার্স মার্স সম্পর্কে জানতেন। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বলে করোনা চৈনিক ও আরবীয় এলাকার বাইরে কখনো মহামারী ঘটায় নি।

কাজেই যাঁরা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন করোনা বাংলাদেশের টিকি টাচ করবে না, তাঁরা একচুয়ালি ইতিহাস ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই বলেছিলেন। এটা শুধু বাংলাদেশে না, উন্নতবিশ্বের বিশেষজ্ঞরাও ভেবেছিলেন করোনা চীনের বাইরে এসে উনাদের ধরবে না।

কিন্তু কোভিড-১৯ কীভাবে তার পূর্বসূরি সার্স ও মার্সের রেকর্ড ভঙ্গ কোরে সব বর্ডার অতিক্রম কোরে পুরো মানবজাতিকে খেয়ে দিল আর বিশ্বের তাবৎ বিশেষজ্ঞদের বিব্রতকর বেকায়দা পরিস্থিতিতে ফেলল?

এর উত্তর হোল- মিউটেশন। অর্থাৎ ভাইরাসটির জিন (RNA) গঠন পরিবর্তন হোয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণা কোরে যতদূর জানা গেছে তদনুযায়ী ভাইরাসটি সেই সার্স করোনা এবং বাদুড় সংক্রমণকারী একটি করোনার শংকর। এই শংকরায়ণ প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে নাকি বায়োটেরর কোনো গ্রুপের কীর্তি, তার সুরাহা এখনো করতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা।

যাকগে যা বলছিলাম, এই যে মিউটেশন বা জিন পরিবর্তন হোল, এর ফল হতে পারে খুবই বিচিত্র ও ভয়াবহ। এর ফলে ভাইরাস হয়ে উঠতে পারে অধিকতর শক্তিশালী, প্রাণনাশী, টেকসই, তাপসহ, অধিক সংক্রামক, ওষুধ-প্রতিরোধী এবং ভ্যাক্সিন বানানো হয়ে ওঠে সুকঠিন। আবার উল্টোও হতে পারে, মিউটেশন হোয়ে ভাইরাসটি হতে পারে ধ্বজভঙ্গ।

যেহেতু জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য এভাবে বদলে যেতে পারে যেকোনো সময়, কাজেই একে নিয়ে কোনো নিশ্চিত ভবিষ্যতবাণী করা যায় না। সুতরাং যারা বিভিন্ন সময় প্রশ্ন করেন-

★ করোনা কবে শেষ হবে?
★ করোনা যার একবার হয়েছে তার কি আর হবে?
★ করোনা শুধু ঠাণ্ডায় বাঁচে নাকি গরম পরিবেশেও বাঁচে?
★ করোনা কী শুধু বয়স্কদের মারে না তরুণ যুবকদেরও মারতে পারে?
★ করোনাতে কি শ্বাসকষ্ট হবে নাকি ডায়রিয়া বা হার্টে সমস্যাও হবে?
★ করোনার ওষুধ বা ভ্যাক্সিনের কতদূর?

এগুলোর কোনো নিশ্চিত উত্তর বা ভবিষ্যতবাণী নেই। কেউ ভবিষ্যতবাণী কোরে বিব্রত হতে যাবেন না। ছিঁড়ে যেতে পারেন।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×