somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা ও ফোবিয়া

০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈকালে হাঁটছিলেম, সামনে দেখি এক মা তার ২ আণ্ডাবাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি গ্যাদা বড়ই সুশীল, মায়ের আঙুল ধরে চুপচাপ হাঁটছে। আরেক গ্যাদা বড়ই উচাটন, বার বার মায়ের লাগাম হতে ছুটে এদিক ওদিক লম্ফঝম্ফ করছে। একে সামাল দিতে মা হিমশিম খাচ্ছে।

শুনলুম মা দুষ্ট ছানাকে বলছে- আমার আঙুল ছাইড়া বারে বারে এদিক সেদিক গেলে তরে আসমান থাইকা পঙ্খীরাজ ঘোড়া নাইমা আইসা তুইলা নিয়া যাইব। বন্দী কইরা রাখব। আর কখনো ছাড়ব না। তুই আর আমাগো মুখ দেখবি না।

তাই না শুনে দুষ্ট ছানা আতংকে ভয়ে ভেউ ভেউ করে কান্না শুরু করল, সেই কান্না আর কিছুতেই থামে না। আমি যতক্ষণ ওদের আশেপাশে ছিলেম, দুষ্ট ছানা ভয়ার্ত চিৎকারে এলাকা মাথায় তুলে রেখেছিল।

আমার তখন কিছু ব্যাপার মনে পড়ে যায়, যা নিয়ে কিছুদিন পূর্বে কিছু স্টাডি করেছিলেম।

গায়িকা Adele ছোট থাকতে একদা সৈকতে আইসক্রিম চুষতে চুষতে রোদে চান করছিলেন। তখন এক seagull পংখী উড়ে এসে তাকে আঁচড়ে কামড়ে আইসক্রিম ডাকাতি করে নিয়ে চম্পট দেয়। শিশুর জন্য ব্যাপারটা ভীতিকর ছিল এবং তিনি সেই স্মৃতির দরুন বড় হয়েও seagull এর ভয়ে পারতপক্ষে আর সী-বীচ মাড়ান না।

টুইলাইট সহ অনেক মুভির নায়িকা ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টকে বাল্যকালে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দেয়া হয়। ঘোড়া গা ঝাড়া দিয়ে তাকে ভূপাতিত করলে তার হাত ভেঙে যায়। সেই কষ্টকর স্মৃতির দরুন তিনি এখনো ঘোড়া দেখলে পলায়নের পায়তারা কষেন।
অপরাহ উইনফ্রের বাল্যকালে তার ঠাকুমা দিবানিশি চুইংগাম চিবাত এবং তারপর সেগুলো মুখ থেকে বের করে সারি বেঁধে টেবিল ও বিছানায় সেঁটে রাখত। এই ঘৃণ্য বিতৃষ্ণাকর দৃশ্য দেখতে দেখতে তার মধ্যে তীব্র চুইংগাম ভীতি সৃষ্টি হয় যা এখনো বিরাজমান এবং তার সহকর্মীদের সাথে নিয়মিত ঝগড়ার কারণ।

অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসেন একদা নিদ্রাভঙ্গ হয়ে তার মুখমণ্ডলে সানন্দে বিচরণরত একটি তেলাপোকা আবিষ্কার করলে পর তার মধ্যে আজীবনের জন্য তেলাপোকা ভীতি সৃষ্টি হয়। (ঘটনাক্রমে এহেন অভিজ্ঞতা আমারো আছে। তেলাপোকা সর্বভুক। আমার মশারিবিহীন নিদ্রার সুযোগ নিয়ে একবার ঠোঁট ও আরেকবার আঙ্গুল ভক্ষণরত অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়ায় আমি তেলাপোকাকে হাত দিয়ে পিষে দিয়েছিনু)

আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেইট, জুলিয়াস সিজার, চেংগিস খান, নেপোলিয়ন, হিটলার, মুসোলিনির মতো নিষ্ঠুর মানবহন্তারক বীর বাহাদুর বা স্বৈরাচারীরা বিলাই এর ভয়ে কাঁপত।

আমাদের প্রিয় বিখ্যাত সাহিত্যিক নাট্যকার চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ মাকড়সার তীব্র ভয়ে আক্রান্ত ছিলেন। উনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক একাধিক বইয়ে উল্লেখ করেছেন ব্যাপারটা। টয়লেটে মাকড়সা দেখে জরুরত না সেরেই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পলায়ন করেছেন অনেকবার। এই ভীতি তাঁর ভাই মু. জাফর ইকবাল এর ও আছে বলে উল্লেখ করেছেন।

অমন অস্বাভাবিক ভয়কে বলে ফোবিয়া। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, অধিকাংশ ফোবিয়া সৃষ্টি হয় অল্প বয়সে, নেতিবাচক কষ্টদায়ক ভীতিকর অভিজ্ঞতার দরুন। এবং পিচ্চিদের বড় হওয়ার সাথে সে ভয়ও বড় হয়, সে যতই জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞানী বীর বাহাদুর হোক না কেন, সে ভয় থেকে আজীবন বেরিয়ে আসতে পারে না অধিকাংশই। এবং ফোবিয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবন যাপন বড়ই বাধাগ্রস্ত হয়। সেই তুলনায় বয়স্করা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে সাধারণত কাটিয়ে উঠতে পারে।

ব্যাপারটা অনেকটা মাটির জিনিস বানানোর মতো। মাটি নরম থাকা অবস্থায় তাকে ইচ্ছামতো আকৃতি দেয়া যায় কিন্তু মাটি পুড়ে শক্ত হয়ে যাওয়ার পর আকৃতি পরিবর্তন সুকঠিন।

কাজেই পিচ্চিদের অমূলক ভয় দেখানো বা অতিরিক্ত শাস্তি দেয়া খুবই অনুচিত। মানসিকভাবে অথর্ব হয়ে পড়তে পারে। আমি ঐ মাকে বললাম- আপনে কইতে পারতেন চুপচাপ হাত ধইরা হাঁটলে তরে চলকেট দিমু খেলনা দিমু।

মা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে হাসলেন। বললেন- আর ভুল অইব না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×