-----------------------------------
গরু জবাই হয়েছে। তিন চার'শ লোক উৎসবের মতো খাচ্ছে।তাদের মনে এক ধরণের বন্য উন্মাদনা।খাওয়া-দাওয়া করে সবাই টেঁটা বল্লম নিয়ে শিকারে বের হবে।তবে কোন বাঘ হরিণ শিকার নয়, মানুষ শিকার।টেঁটা বল্লম নিয়ে আদিম কায়দায় প্রতিপক্ষ উপর ঝাপিয়ে পড়বে তারা। শিকারে বের হওয়ার আগে,দোয়া করা হয়,মুরুব্বিদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেওয়া হয়,শিকারের পরামর্শ নেওয়া হয়।মুরুব্বিরা তরুণ যুবকদেরকে মানুষ শিকারের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আলোচনা করেন,নানা কায়দা কানুন বাতলে দেন।
#
আজ(১৬/১১/২০১৮) ও এমনই সেজেগুজে, পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়িতে চরম মধ্যযুগীয় কায়দায় দু দল লোক মানুষ শিকারে লিপ্ত হয়েছিল।সর্বশেষ তারা চার জন মানুষকে অতি সফল ভাবে শিকার করেছে।কুঁচ বর্শা দিয়ে যেভাবে মাছ শিকার করা হয় ঠিক তেমন ভাবেই
টেঁটা বিদ্ধ করা হয় সৃষ্টির সেরা জীব চার জন মানুষ কে।
#
বামতাত্ত্বিক লেখক মানিক বন্দোপধ্যায়ের "প্রাগৈতিহাসিক" গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিখু যেভাবে
তার আশ্রয়দাতা ও অন্নদাতাকে বর্শা দিয়ে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করেছিল,যে বন্যতা ফুটিয়ে তুলেছিল লেখক এখানেও ঠিক একই বন্যতা ও দস্যুতা নগ্নভাবে
প্রকাশিত হচ্ছে
#
এসব নৃশংসতা, বন্যতার প্রধান কারণ:
**নষ্ট রাজনীতি
**স্হানীয় নেতাদের ইন্ধন
**গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার
**সামন্তযুগীয় মনোভাব
**দীর্ঘ দিনের শত্রুতা
**উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা/লুটপাটের মন মানসিকতা
**রক্তের উগ্রতা
**প্রতিশোধ স্পৃহা
প্রতি বছর টেঁটা যুদ্ধে লাশ হচ্ছে নিরিহ মানুষ।রক্তের এই হুলিখেলা থামছেনা।শুধু মাত্র এই নিষ্ঠুর নোংরামির জন্যে সারা দেশে আমরা লজ্জিত,অপমানিত।
#
অথচ সারা বাংলাদেশে যা নেই আমাদের রায়পুরায় তা আছে।আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমানের বাড়ি এই রায়পুরায়,বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান,বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ,সাবেক মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু,সাবেক ঢা:বি:ভিসি আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক,ইউনেস্কো পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক ড.আলাউদ্দিন আল আজাদ,বরেণ্য কৃষকনেতা ফজলুল হক খোন্দকারের বাড়ি এই গর্বিত রায়পুরায়।
#
তবে কেনো আমরা এতোকাল এই লজ্জা বয়ে বেড়াচ্ছি?তবে কেনো এই গর্বিত জনপদ আজ সমগ্র জাতির কাছে নতজানু?আমরা আর কতকাল অমানুষ হয়ে থাকবো?
----- অ-মানবের পোস্ট থেকে ।।