somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যরকম বিচার- একটি রুশীয় রুপকথা

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তুলার এক প্রত্যন্ত জনপদে বাস করত ওরা দু’ভাই। ভাগ্যের ফেরে তন্মধ্যে একজন ছিল বেশ ধনী আর অন্যজন যথার্থই গরিব। ধনী ভাইয়ের নাম ছিল শাশা আর গরীব ভায়ের নাম মিশা।
কোন এক শীতের সকালে প্রচন্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে মিশা বাইরে বেরুল আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠের খোজে। তার ছোট্ট ভাঙ্গা কুটিরে শীতের হাত থেকে বাচতে উনুন বা ফায়ার প্লেস জ্বালানোর জন্য একটুকরো কাঠও অবশিষ্ট ছিল না।
তার নিজের কোন ঘোড়া ছিলনা। ঘরের বাইরে এক হাটু তুষারের মধ্যে দাড়িয়ে বহুদুরের বনের পথের দিকে তাকিয়ে সে ভাবল ,“এতদুর হেটে যেতে যেতেই আমি মারা পড়ব। এর থেকে শাশার কাছে গিয়ে অনুরোধ করিগে ওর ঘোড়াটা ধার দেয়ার জন্য।”
সে তার ভাইয়ে কাছে গিয়ে পৌছুলে, ভাই যেন তাকে দেখেও না দেখার ভান করল।
দায়টা তার সেহেতু, সে বেশ নরম গলায় নিজের কষ্টের কথা বর্ননা করে শাশার কাছে অনুরোধ কর ওর ঘোড়াটা কয়েক ঘন্টার জন্য ধার দিতে।
এমন অনুরোধে শাশা মনে মনে বেশ নাখোশ হলেও তার অনুরোধ প্রত্যাখান করল না,“ ঠিক আছে দাদা তুমি ঘোড়াটা নিতে পার। তবেসুযোগ বুঝে বেশী বেশী মাল চাপিয়ে দিও না,” শাশা বলল।“চাওয়া মাত্রই ঘোড়াটা দিয়ে দিচ্ছি বলে ভেবোনা, যখন চাইবে তখনই আবার তোমাকে একটা কিছু দিয়ে দিব। তোমার মত কাউকে একটা কিছু দিলে সে আবার আরেকটা কিছুর জন্য হাত বাড়ায় ,যতক্ষন পর্যন্ত আমাকে পথে না বসাবে ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের শান্তি নেই । আমি হয়তো বুঝেও উঠতে পারবনা তোমরা কখন আমাকে রাস্তার ভিখিরি বানিয়ে দিয়েছ।”
মাশা প্রতিউত্তরে কিছু না বলে ঘোড়াটা নিয়ে বাড়ির বাইরে আসতেই মনে পড়ল,সে ঘোড়ার লাগাম চাইতে ভুলে গেছে।
“এখন আর তার কাছে ফিরে গিয়ে লাভ নেই। আমি জানি আমার ভাই ওটা আমাকে দিবেনা।”মাশা নিজের মনে মনে বলল।
অগত্যা সে তার স্লেজ এর দড়িখানা ঘোড়ার লেজের সাথে বেশ কষে বেঁধে বনের পথে এগিয়ে চলল।
স্লেজ ভর্তি কাঠ নিয়ে নিয়ে ফেরার পথে মাশা ঘোড়াকে তাড়া দেয়ার জন্য মনের ভুলে চাবুক দিয়ে আঘাত করতেই উত্তেজিত ঘোড়া স্বভাব বশত প্রচন্ড গতিতে সামনে এগুতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি! টাস্! করে তার লেজটা ছিড়ে গেল!
লেজ বিহীন ঘোড়া দেখে শাশাতো রেগে আগুন! সে তার ভাইকে উচ্চস্বরে তীব্র ভৎর্সনা করে বলল;
“হতচ্ছাড়া তুই আমার ঘোড়ার লেজ ছিড়েছিস!ভাবিসনা তোকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব, আমি এর আদালতে গিয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করে আসল।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
য়তো অল্প কিছুদিন কিংবা হতে পার বেশ ক’দিন বাদেই আদালত থেকে সমন আসলে দু’ভাই হাজিরা দিতে শহরের উদ্দে্েযশ রওনা হল।
তাদের গ্রাম থেকে শহর বেশ দুরে । পথে হাটতে হাটতে গরিব মাশা নিজের মনে বলল;
“একজন হতদরিদ্র ব্যক্তি যাচ্ছে একজন ধনীর বিরুদ্ধে আইনী লড়াই লড়তে! ঠিক যেন এক রোগা পটকা ব্যক্তি কুস্তি লড়তে যাচ্ছে বিশাল দেহী এক মানুষরুপী দৈত্যের সাথে:জয় যেখানে অসম্ভব! সন্দেহ নেই যে হাকিম নিশ্চিত আমার বিপক্ষে রায় দিবে।”
একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে সে হেটে যাচ্ছিল হাতল ছাড়া একটা নড়বড়ে সেতুর উপর দিয়ে। অন্যমনস্কতার জন্য আচমকা সে পিছল খেয়ে সেতু থেকে নীচে পড়ে গেল! ঠিক সেই মুহুর্তেই সেতুর নীচে বরফভর্তি নদীর উপর দিয়ে এক ব্যাবসায়ী তার বৃদ্ধ অসুস্থ পিতাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছিল ডাক্তার দেখাতে।ওদিকে মাশা পড়বিতো পড় ঠিক গিয়ে ঠিক গিয়ে পড়ল সেই বুড়ো লোকটার ঘাড়ের উপর। সে সামান্যতম আহত না হলেও বুড়োটা এমন আঘাত সইতে না পেরে তদন্ডেই মারা গেল!
ব্যাবসায়ী তার বাবার এমন করুন মৃত্যুতে প্রথমে হতবিহŸল হয়ে পরলেও পরমুহুর্তেই মাশার জামার আস্তিন চেপে ধরে চিৎকার করে বলল; “ হতভাগা তুই আমার বাবাকে মেরে ফেলেছিস্। এখুনি চল্ আমার সাথে আদালতে। তোকে আমি সারাজীবন জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।”
প্রতিউত্তরে মাশার কিছুই বলার ছিলনা। তার শুধু মনে হল, 'এই মুহুর্তে সেই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ।”
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রথমটার চেয়ে দ্বীতিয় অপরাধটা অনেক বেশী গুরুতর। এবার মনে হয় আমার কোন মুক্তি নেই । সারাজীবন হয়তো জেলের ঘানি টানতে হবে। আঃ কেন যে আমি এত দুর্ভাগা!” নিজের মনে কথাগুলো বলতে বলতে মাশা কপাল চাপড়াচ্ছিল।
হঠাৎ পথের মাঝে ছোটখাট একটা ভারী পাথর পড়ে থাকতে দেখে কিভেবে সে সেটাকে তুলে তার পুরোনো ছেড়া রুমাল দিয়ে পেচিয়ে কোটের ভিতর লুকিয়ে রাখল।
“রেখে দেই এটা কাজে লাগলেও লাগতে পারে! হাকিম যদি আমাকে দোষী সাব্যাস্তই করে তবে গরু ছাগলের মত পড়ে পড়ে মরার থেকে এই পাথর ছুড়ে ওদেরকে মারবে না হয় নিজেই আত্মহত্যা করব।” মাশা ভাবল।
তারা হাকিমের এজলাসে আসতেই হাকিম বাদী পক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনতে চাইল।
বাদী পক্ষের কথা শোনার পরে বুদ্ধিমান হাকিম এবার মাশার কাছে তার সপক্ষে কোন বক্তব্য থাকলে পেশ করতে বললেন।
মাশা কাঁদতে কাঁদতে তার করুন জীবনের গল্প ও তার এইসব ঘটানার পেছনে দায় না থাকার বিষয়ে সবিস্তারে বর্ণনা করল...
ব পক্ষের কথা শুনে অবশেষে হাকিম তার রায় পড়ে শোনালেন;
-আজ থেকে শাশার ঘোড়াটা ততদিন পর্যন্ত মাশার কাছে থাকবে যতদিন না এর লেজ ফের গজায়!”
আর ব্যাবসায়ীকে বলল,“ ও যেমন অপরাধ করেছে তার শাস্তি তেমনই হতে হবে।মাশা গিয়ে সেই সেতুর নীচে বরফের ওপর দাড়াবে ঠিক যেখানে তোমার বাবার মৃত্যু হয়েছে । আর তুমি সেতুর উপর থেকে মাশার ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পড়ে ওকে খুন করবে: ঠিক যেভাবে তোমার বাবাকে ও মেরেছে!”
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
রায় ঘোষনা হবার কিছুক্ষন বাদেই শাশা মাশার কাছে এসে বলল, যাক ভাই যা হবার হয়েছে ভুল মনে হয় আমারই ছিল। আমার ঘোড়ার লেজ দরকার নেই। লেজ ছাড়াই ওটাকে দেকতে ভাল লাগছে!
“ কি যে বল দাদা!’ মাশা বলল। “শুনলে না হাকিম কি বলল;শাস্তি যেটা পেয়েছি সেটা মাথা পেতে নিচ্ছি। আজ থেকে তোমার ঘোড়াটা আমার কাছেই থাকবে, যদ্দিন না ওাঁর ফের লেজ গাজায়।”
“এর থেকে তোকে আমি কিছু টাকা দিচ্ছি। লক্ষি ভাই আমার ;আমার ঘোড়াটা আমাকে ফিরিয়ে দে।”
“ ঠিক আছে তুমি যখন বলছ। পরে আবার আমাকে দোষ দিও না।”
মাশা তার ভাইকে ঘোড়াটা ফিরিয়ে দিল। বিনিময়ে শাশার বেশ কয়েকটা রুবল গুনতে হল।
ওদিকে ব্যাবসায়ী তার কাছে এসে বেশ মোলায়েম স্বরে বলল;“ভুলে যাও ভাই যা হয়েছে।আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি । মরে যাওয়া বাবাকে তো আর ফিরে পাবনা।
অযথা তোমাকে শাস্তি দিয়ে কি হবে।”
“আরে না না! কি বলছ ভাই ? হাকিমের আদেশ কলে কথা। চল আমাকে নিয়ে সেই সেতুর নীচে,তুমি সেতুর উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আমাকে হত্যা করবে।” মাশা বলল।
“আমি তোমাকে খুন করতে চাইনা। এর থেকে আসো আমারা বন্ধুত্ব পাতাই। চাইলে তোমাকে আমি এখুনি শ’খানেক রুবল দিতে প্রস্তুত।’ ব্যাবসায়ী এবার বেশ করুন স্বরে মিনতি করে বলল।
মাশা খুশী মনেই টাকাটা বুঝে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিল।
আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে গরিব মাশা জোড় গলায় গান গেতে গেতে বাড়ির পথে রওনা হল।

* মুল লেখা থেকে খানিকটা কাট-ছাট ও রুপান্তর করা হয়েছে।
ভাষান্তর ও রুপান্তরঃ শেরজা তপন
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×