somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাও তবে কাঁচকলা, খাও তবে ঘন্টা। (ফেসবুকীয় রঙ্গ)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সুপ্রিয় ব্লগার ডঃ এম আলী ১৭ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১:৪২ শেষবার মন্তব্য করেছিলেন। তারপর আর উঁনাকে ব্লগে দেখা যাচ্ছে না- আশা করি উঁনি সুস্থ ও ভাল আছেন।)
বুভুক্ষুদের খাদ্য তালিকায় বাঙালির সংযোজন
অবাঙালি বন্ধুরা মজা করে বলেন- "তোমাদের বাঙলা ভাষা খুব মজার"।
"কেন" ?
"তোমরা বল পানি খাচ্ছি। আরে, পানি কী খাওয়া যায় "?
একটু হেসে বলি, ঠিকই , তবে আমরা আর কী কী খাই সেটা যদি জানতে পারো, তবে জীবনে কখনোই ক্ষুধার্ত থাকবে না ।
"সে কিভাবে" ?

ই যে আমরা বাঙালিরা 'জল কিংবা পানি খাই'। শুধু খাই না, আমরা কেউ কেউ 'ডুবে ডুবে জল খাই' তবে এ জল খাওয়া সে জল খাওয়া নয়। আর, শুধু জল কেন, বাঙালি দুধ খায়, চা খায়, কফি খায়, শরবত খায়। হ্যাঁ,হ্যাঁ, যেটা ভাবছেন, সেই শরাবের সাথে বোতলও খায়।
কেবল তরল পদার্থ ? বাঙালি সিগারেট খায়, বিড়ি খায়, চুরুট খায়, গাজা,হাশীশ, কোকেন সব খায়। দুর্বল পেটরোগা মানুষ, কোন কিছু খেলে হজম হয় না, সেও কিন্তু ' গ্যাসের সিরাপ খায়'। খাওয়ার কি শেষ আছে ? কর্তাব্যক্তিরা সুযোগ পেলে অধস্তনের 'চাকরি খায়'। বিপদে পড়ে 'খাবি খায়'।
সর্বভূক বলা যাবে কিনা জানিনা, তবে বাঙালি নিশ্চিতভাবেই বহুভূক, বিচিত্র ভূক। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে খাওয়া- খাওয়ির বিচিত্র ফিরিস্তি।
জানেন কি, বাঙালির গাড়ি 'তেল' খায় ? বিশ্বাস না হলে ড্রাইভারদের জিজ্ঞেস করুন। তাঁরা বলে দেবেন কোন মডেল তেল বেশি খায়। আকাশে ঘুঁড়ি 'গোত্তা খায়', মাটিতে লাট্টু বনবন করে 'পাক খায়'।

আর খাবে নাই বা কেন ? আর কোন্ ভাষায় কোন্ কবি খাওয়া নিয়ে সাড়ম্বরে কবিতা লিখেছেন ?
"খাই খাই কর কেন, এস বস আহারে,
খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে"।


যাঁরা বিশ্বসাহিত্যের ভুরিভোজের খোঁজ খবর রাখেন, তাঁরা বলতে পারবেন , এরকম 'খাই খাই' কবিতা অন্য কোনো ভাষায় আছে কিনা।
বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি তো কাব্য জীবন শুরু করেছিলেন খাওয়ার কবিতা দিয়ে।
"আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি,
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে,
হাপুস হুপুস শব্দ
চারিদিক নিস্তব্ধ
পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।"


সুতরাং এই বাঙালি পরের মুখে 'ঝাড়ি খাবে', বন্ধুদের কাছে 'সিল খাবে', ভয়ে 'থতমত খাবে', এতে আর আশ্চর্য কি ?
এই বাঙালি এর সাথে ভুল করলে 'বকা খাবে' না, আর ভালোবেসে 'চুমু খাবে' না তা কি হয়? ছেঁড়া চটি পরে 'হোঁচট খাবে' না ?

পায়েস মিষ্ঠান্নে ভোজ সেরে বাঙালি যদি আয়েস খায় আর মাঠে গিয়ে 'হাওয়া খায়', কাজ করতে 'হিমশিম খায় ', আর পা পিছলে 'আছাড় খায়', এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে ?



বাংলাতেই জন্মেছেন শ্রেষ্ঠ ভোজনরসিক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, যাঁর রসবোধ আর রসনা দুটোই খুব সরস ছিল। তাঁর একটি কবিতার শিরোণাম 'হেমন্তে বিবিধ খাদ্য'। সরস পদ্য রচনা করেছেন বিভিন্ন খাদ্য নিয়ে। আম, আনারস, তপসে মাছ- কী নেই তালিকায় ! তোপসে মাছ এর দুটি লাইন,
কুড়ি দরে কিনে নেই দেখে তাজা তাজা,
টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকা তেলে ভাজা।


বিতাগুলো পড়লে পেটরোগা দুর্বল লোক 'ভির্মি খাবে'। পেটুক বাঙালি অবসরে 'দোল খায়', বৌএর কাছে 'মুখ খায় ', জুতো, গুঁতো সবই খায়।
ভক্তিরসের গানের জন্য যিনি অধিক পরিচিত, সেই কান্তকবি রজনীকান্ত সেন লিখে ফেললেন-
"যদি কুমড়োর মতো চালে ধরত,
পান্তোয়া শত শত,
আর সরষের মত হত মিহিদানা,
বুঁদিয়া বুটের মতো"

ভেবে দেখুন, যে ভাষায় কাব্যরসের সঙ্গে রসনার এত রসালো মাখামাখি, সে ভাষায় যদি কেউ 'তাড়া খায়' , 'মার খায়' 'ঘুঁষি খায়' কিংবা 'আদর খায় ', সে খাওয়া কি খুব অস্বাভাবিক?
মাস্টারের 'বেতের বাড়ি খায়' আবার মায়ের হাতে 'কানমলা' খায়।
তবে সব খাওয়া ছাড়িয়ে কিছু বাঙালি মহা উদ্যোমে 'ঘুষ খায়'। খেতে খেতে পেট মোটা হয়, ব্যঙ্কে টাকার পাহাড় হয়, বিশ্ব জুড়ে বাড়ি হয় তবুও তারা বুভুক্ষের মত ঘুষ খায়। এই বাঙালি আবার মাঝে মধ্যে অদৃশ্য 'বাঁশ খায়'।

সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, " যে ভালো রাঁধতে পারে না, সে ভালো সাধু হতে পারে না। মন শুদ্ধ না হলে ভালো সুস্বাদু রান্না হয় না "।

বাংলা ভাষায় তাই ভাবের প্রকাশে খাওয়ার কোনো অভাব নেই। খাপে খাপে 'খাপ খাওয়া', তেলে জলে 'মিশ খাওয়া', 'মাল খেয়ে' 'টাল খাওয়া', বোকা বনে 'ধোঁকা খাওয়া , খাওয়া নিয়ে একেবারে 'ঘোল খাওয়া'র ব্যবস্থা !

~ দশ ইচ্ছার কম নয় ২০টি হলে ভাল হয়।

অনেক দিন আগে এক বিদেশিনী মহিলার একটা লেখা পড়েছিলাম। তিনি মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বই লেখার জন্যে বিভিন্ন দেশে ঘুরেছিলেন। আমাদের দেশেও বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করার সময়ে কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে বাঙালি জাতি নাকি ব্রেকফাস্ট খাওয়ার সময়ে লাঞ্চের কথা ভাবে, আর লাঞ্চ খেতে খেতে চিন্তা করে ডিনারে কী খাবে। তাই তো বাঙালি 'দুধও খায়' আবার 'তামাকও খায়'। কেউ কেউ চুপিচুপি 'টাকা খায়' , পকেটমার ধরা পড়ে 'মার খায়', কারা যেন 'ঘুষ খায়' ! ভীড়ের মধ্যে 'ধাক্কা খায়' । ফুটবল মাঠে 'গোল খায় '।

সুকুমার রায় ঐজন্য রায় দিয়ে দিয়েছেন,
এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা
খাও তবে কাঁচকলা, খাও তবে ঘন্টা।


তাহলে বলুন তো, বাঙালিরা 'পানি কিংবা জল খাবে', এতে অন্যায় কী আছে ?
এই ব্যাপারে আপনার কী রায় ?

(লেখক কতৃক সম্পাদনা ও সংযোজন করা হয়েছে)
মূল লেখায় কৃতজ্ঞতা মনিকা আচার্য


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পত্রিকায় লেখা প্রকাশের ই-মেইল ঠিকানা

লিখেছেন মি. বিকেল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৩৩



যারা গল্প, কবিতা, সাহিত্য, ফিচার বা কলাম লিখতে আগ্রহী, তাদের জন্য এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা, সাহিত্য পাতা ইত্যাদির ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হলো। পত্রিকায় ছাপা হলে আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার দায়ভার কি সেনাবাহিনী নেবে? তাদের সমালোচনাকে অনেকে সেনাবাহিনীর সমালোচনা মনে করছে কেন?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২৯

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখনও আমাদের জন্য গর্ব এবং আস্থার জায়গা। কারণ দুর্নীতির এই দেশে একমাত্র সেনাবাহিনীই সেই প্রতিষ্ঠান যার আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সুনাম এখনও আছে। কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু বছর আগে তার “শ্রীকান্ত” উপন্যাসে ইন্দ্রকে দিয়ে সর্বকালীন এবং সর্বজন গৃহীত একটি উক্তি করিয়েছিলেন, সেটি হলো,- ”মরার আবার জাত কি”!

মৃতদেহ সৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: শেষ রাতের সুর (পর্ব ২)

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০

রাফি সাহেবের পড়ে যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত। সকালের মিষ্টি রোদ গাজীপুরের এই ছোট্ট গ্রামে যখন পড়ছে, তখনই কাজের লোক রহিমা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। সিঁড়ির নিচে রাফি সাহেব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসকামী বিরোধী রাজনীতিবিদদের জন্য পাঁচ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয়.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০১


..... বলেছেন নাগরিক জাতীয় পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ মিয়া বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ও ফখরুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন। নাগরিক জাতীয় পার্টির নেতারা নিজেদের পচানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×