আমরা যখন খেলেছি তখন বাংলাদেশের ফুটবলের মান আরো ভালো ছিল। চীন, ইরান, সৌদি আরবের মতো দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য ছিল আমাদের জাতীয় দলের। এশিয়ার সেরা দশটি দলের মধ্যে থাকার লক্ষ্য নিয়েই খেলেছি সব সময়। আর স্বপ্ন! স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপ খেলার। বাছাই পর্বে গ্রুপের শেষ ম্যাচে কোরিয়াকে হারিয়ে আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। সুবাদে আমাদের হাতে বিশ্বকাপের টিকিট। খেলোয়াড়ি জীবনে এমন একটা স্বপ্ন সব সময় তাড়িয়ে বেরিয়েছে আমাকে। স্বপ্নটা পূরণ হয়নি বলেই হয়তো ঘুমের ঘোরে এখনো তা মাঝে মাঝে হানা দেয়।
শৈশবে আমার কাছে ফুটবল ছিল স্বপ্নের খেলা। মাঠে বল নিয়ে ছুটতে পারার মতো আনন্দ আর কিছুতেই পেতাম না। সারা বিকেল মাঠ দাপিয়ে বাসায় ফিরতাম। রাতে ঘুম আসত না, কাল ওদের হারাতেই হবে, এভাবে আমি একটা গোল করবই, ইস! আজকে ওই সুযোগটা কিভাবে নষ্ট করলাম_এমন হাজারো কল্পনা ভিড় করত মনে। সকালে স্কুলে গিয়েও একই ছটফটানি, কখন বাসায় ফিরব, বই-খাতা রেখে কখন মাঠে যাব। সেই মাঠেই জীবনের বড় একটা সময় পার করে এসেছি। ক্যারিয়ারে প্রতিটি ম্যাচই আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রতিটি ম্যাচেই ভালো খেলার তাগিদ নিয়ে খেলতে নেমেছি। সে সময়ে আমাদের জাতীয় দলটাও বেশ শক্তিশালী ছিল। আমি, মুন্না, কায়সার, খুরশিদ বাবুল, ওয়াসিম ভাই আমরা যারা একসঙ্গে খেলেছি তাদের সবার মধ্যেই দারুণ একটা স্পিরিট কাজ করত। সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে দারুণ সমঝোতা ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম খেলার যে ধারাবাহিকতা, সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছিলাম। এশিয়ার বড় দলগুলোর সঙ্গেও লড়াই করার মানসিকতা ছিল। তাই বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নটা কখনোই অলীক বলে মনে হয়নি। এখনকার ফুটবলাররা যে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও দেখতে পারবে না, এমন কথা বলছি না। কিন্তু তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। পার্থক্য হলো, আমাদের সময়ে ভিত্তিটা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পরিচর্যার অভাবে এখন সেটা ভেঙে পড়েছে।
তাই একসময় আমরা যে স্বপ্ন দেখেছি, এখনকার তরুণরা তার থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘোচার বদলে কেবল বেড়েছেই। কোরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্নে নিজে হয়তো গোল পাইনি। কিন্তু তাতে কী! প্লেমেকার হিসেবে আসল কাজটা অর্থাৎ গোলটা তো বানিয়ে দিয়েছি। বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়াই আসল কথা। নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব সেখানে গৌণ। এমন স্বপ্নই দেখতাম একসময়। কিন্তু এমন মধুর স্বপ্ন এখন আর মধুর বলে মনে হয় না, শুধু জ্বালাই বাড়ায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



