somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মসজিদ-মন্দির দুটোই থাকবে

০১ লা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ এলাকার বিরোধপূর্ণ জমিতে হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের সহাবস্থানের পক্ষে রায় দিয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্নৌ বেঞ্চ। তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত এ বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ২ দশমিক ৭৭ একর জমিটি মামলার তিনটি পক্ষ_সুনি্ন ওয়াক্ফ বোর্ড, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে বলা হয়েছে। মন্দিরের বাইরের সম্পদ পাবে সুনি্ন ওয়াক্ফ বোর্ড। ওই জমি থেকে রামের মূর্তি সরানো যাবে না। আর সীতারাসইয়া মন্দিরের মালিক হবে নির্মোহী আখড়া। সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হবে তিন
মাসের মধ্যে। এই তিন মাস ওই জমিতে স্থিতাবস্থা চলবে। এই রায়ের ফলে মন্দির ও মসজিদ দুটি যথাস্থানেই থাকছে। কোনো ধর্মীয় স্থাপনাই সরিয়ে নিতে হবে না।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতি সিবাগত উল্লাহ খান, সুধীর আগারওয়াল ও ধর্ম বীর শর্মার বিশেষ বেঞ্চ ভারতীয় সময় বিকেল ৪টায় ওই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা শুরু করেন। সহিংসতার আশঙ্কায় কয়েক দিন আগেই পুরো অযোধ্যাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়। ভারতের অন্যান্য স্পর্শকাতর এলাকায়ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। উগ্রপন্থী হিন্দুরা ১৯৯২ সালে ওই জমিতে থাকা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেললে ভারতজুড়ে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়। অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয় সেই দাঙ্গায়। গতকাল রায় ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আমরা দেশের সব ধর্মের মানুষকে শান্ত থাকতে এবং ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে সব ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অনুরোধ জানাচ্ছি।'
হাইকোর্টের ওই রায়ের পরও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ থাকছে। এ জন্য ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান দুই পক্ষ এরই মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। আর সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে চলে আসা এ মামলা অমীমাংসিত থেকে যাবে আরো কিছুদিন।
প্রায় এক হাজার ৪০০ পৃষ্ঠার রায়ের মূল সারাংশ লেখা রয়েছে ১২৫ পৃষ্ঠায়। রায় পর্যালোচনা করে আইনজীবীরা বলছেন, রামমন্দির ভেঙে মসজিদ পুনর্নির্মাণের দাবি খারিজ হয়ে গেল। একইভাবে মসজিদের জায়গায় মন্দির গড়ার দাবিও টিকল না। বিচারপতি সিবাগত উল্লাহ খান তাঁর রায়ে বলেন, সম্রাট বাবর ওই জমিতে বাবরি মসজিদ গড়েছিলেন, তবে তা মন্দির ধ্বংস করে নয়। এ ছাড়া ওই জমিতে তিন পক্ষের স্থাপনাতেই প্রবেশ করার জন্য আলাদা দরজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে।
রায় ঘোষণার পর অনেকটা নাটকীয়ভাবে হিন্দু মহাসভার একদল আইনজীবী আদালতের বাইরে মিডিয়া সেলে প্রবেশ করে রায়ের কপি পড়তে শুরু করেন। সে সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে রায় নিয়ে প্রথম দিকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুই পক্ষ থেকেই সুষ্ঠুভাবে রায়ের কপি পাঠ করে শোনানো হয়।
আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাম জনতা ভূমি ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট নৃত্যগোপাল দাস মহারাজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, 'আদালত আজ একটি ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন। হিন্দুদের জন্য আজ অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন।' তবে বাবরি মসজিদের একটি অংশের জমির মালিকানা হিন্দুদের দাবি করে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া আদালত রামলালার মন্দির সরানোর নির্দেশ না দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হিন্দু মহাসভার আইনজীবী সাবেক মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।
অন্যদিকে সুনি্ন ওয়াক্ফ বোর্ড ওই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। বোর্ডের প্রধান আইনজীবী জাফরি জিলানি জানিয়েছেন, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। অবশ্য ওই রায়ের ব্যাপারে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ভাঙার আগে ওই জমি সুনি্ন ওয়াক্ফ বোর্ডের হাতে ছিল।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও ভারত সরকারের সাবেক কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ত্রিপাঠি এই রায় প্রদান স্থগিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে দেন।

ওয়েবসাইটে এবং টেলিভিশনে রায়
ভারতে এই প্রথম কোনো মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদালতের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়। এই রায়ের জন্যই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন আদালত। রায় ঘোষণার ৫৫ মিনিটের মধ্যে রায়ের কপি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে আইনজীবীরা রায়ের কপি পড়ে শোনানোর সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তা সরাসরি সম্প্রচার করে। রায়ের খবর প্রচারের জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্টের বাইরে একটি মিডিয়া সেন্টার বসানো হয়। ভারতের বিভিন্ন ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলের প্রায় ৩০০ সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নজিরবিহীন নিরাপত্তা
এই রায় ঘোষণা উপলক্ষে এক মাস ধরেই অযোধ্যা ও এর আশপাশের এলকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। রায়ের ঘোষণার সাত দিন আগে মোতায়েন করা হয় প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী। উত্তর প্রদেশজুড়ে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। রায়ের পর যাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ভারতের চারটি মেট্রো সিটি দিলি্ল, মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম দেশবাসীকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানান। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও টেলিভিশন চ্যানেলে বিবৃতি দিয়ে আদালতের রায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রেক্ষাপট
ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৌজাবাদ জেলার অযোধ্যার ২ দশমিক ৭৭ একর আয়তনের এ জমি নিয়ে বিবাদের শুরু ১৮৪৮ সাল থেকে। প্রথম মামলা হয় ১৯৪৯ সালে। এরপর ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালেও এ ইস্যুতে মামলা হয়। ১৯৯২ সালে হিন্দু করসেবকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। ওই ঘটনায় তৎকালীন বিজেপি সরকার সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি লিবারহানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর ১৭ বছর পর ২০০৯ সালে প্রতিবেদন দেয় কমিটি। তবে সেই প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বশেষ
রায়ের পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গতকাল রাতেই প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাসভবনে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এক জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা। একই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিও তাঁর বাসভবনে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন বলেও খবর পাওয়া যায়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই বিবৃতি দিয়ে আদালতের রায় মেনে নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। একইভাবে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও সবার ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরামর্শ দেন। রায়ের পর রাত ৯টা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

রায়ে যা আছে
- তিন পক্ষ জমির ভাগ পাবে
- আরো তিন মাস স্থিতাবস্থা চলবে ওই জমিতে
- বাবর মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেননি
- আপিল করবে হিন্দু-মুসলমান দুই পক্ষই
- সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ মনমোহনের
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×