এক বেজায় ধনী আর ভীষণ শক্তিশালী রাজার বিশ্বাস, দুনিয়াতে তাঁর মতো ক্ষমতাশালী মানুষ দুটি নেই। একদিন তাঁর বেজায় চিন্তা হল, তিনি যা ভাবেন তা অন্যেরা আঁচ করতে পারছে কি না।
তখনি তাঁর মন্ত্রী-আমলা-চাকর বাকর, সবাইকে ডেকে বললেন, তিনি কী ভাবছেন, ওরা বলুক। অনেকে অনেক রকম বলল বটে, তবে কারো জবাবেই রাজা খুশি হলেন না।
রাজা তাঁর দেওয়ানকে হুকুম দিলেন, তাঁর মনের কথা আঁচ করতে পারে, এমন কাউকে চাই। ঠিক একমাসের মধ্যে এই আশ্চর্য মানুষটিকে চাই।
দেওয়ান বিশ্বভুবন তন্নতন্ন করে খুঁজে সারা। এদিকে মাস শেষ হয় হয়, তিনি তো মরিয়া হয়ে উঠলেন। তাঁর ছিল এক মেয়ে। সে বলল, ঠিক দিনে ঠিক মানুষটিকে সে হাজির করবে। এ কথা শুনে দেওয়ান খানিক খুশি হলেন। বললেন, 'বেশ তো! দেখা যাক কাকে হাজির করো তুমি!'
কাজটি তিনি মেয়েটিকে সঁপে দিলেন।
দিনটি যখন এল, মেয়ে এনে হাজির করল এক বোকাসোকা মানুষকে। সে তাদেরই রাখাল। মেয়ে বাপকে বলছে, ওকে রাজার কাছে নিয়ে যেতে। দেওয়ান তো মেয়ের কাণ্ড দেখে মূর্ছা যান যান। কিন্তু মেয়ে বলছে এই বোকাসোকা রাখালই সংকট তরাবে। দেওয়ানের তো আর কিছু করারও নেই। তিনি মেয়ের ওপর আস্থাও রাখেন। অগত্যা রাখালকে নিয়েই দরবারে গেলেন।
দরবারে সবাই হাজির। রাজাও অপেক্ষা করছেন। দেওয়ান রাখালটিকে রাজার সামনে আনলেন। রাখাল যখন রাজার চোখে তাকাল, রাজা একটা আঙুল তুললেন।
রাখাল তুলল দুটো আঙুল।
রাজা তুললেন তিনটে আঙুল।
রাখাল জোরে জোরে মাথা নাড়ছে আর পালাবার চেষ্টা করছে।
রাজা হেসে বাঁচেন না। তিনি খুব, খুব খুশি। দেওয়ানকে দারুণ প্রশংসা করলেন। কি বুদ্ধিমান মানুষকেই যে এনেছেন তিনি। দেওয়ানকে অনেক বখশিসও দিলেন।
দেওয়ান ঘাবড়ে হতভম্ব। কি যে ঘটে গেল, কিছুই তো বোঝেননি তিনি। মিনতি করে বললেন, রাজা একটু খোলসা করে বুঝিয়ে দিন।
রাজা বললেন, 'যখন একটা আঙুল তুলেছি, আমি শুধিয়েছি, আমি একাই কি রাজা? দু'আঙুল তুলে ও মনে করিয়ে দিল, ভগবানও আছেন। আমার যত ক্ষমতা, তাঁর অন্তত সেটুকু ক্ষমতা আছে। তারপর জিগ্যেস করলাম, তিন নম্বর রাজা কেউ আছেন কি? ও প্রবল ভাবে জানিয়ে দিল, নেই। লোকটা আমার মনের কথা ধরে ফেলেছে। আমি ভাবতাম, আমি একাই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ধরি। ও মনে করিয়ে দিল, আরেকজনও আছেন, তিনি ভগবান! তবে তৃতীয় কেউ নেই।'
তারপর যে-যার ঘরে গেল। রাতে দেওয়ান বোকা রাখালকে শুধোচ্ছেন, রাজার সঙ্গে তার কি মনের কথা হল!
রাখাল বলছে, 'প্রভু! আমার নিজের মোটে তিনটে ভেড়া। আপনি রাজার কাছে নিলেন আমাকে, রাজা একটা আঙুল তুললেন। বুঝলাম, একটা ভেড়া চান। তা এত্ত বড় রাজা! আমি দুটো দিতে চাইলাম। তিনটে আঙুল তুলে যখন জানাল, যে তিনটে ভেড়াই চায়, মনে হল বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এটা। তাই ভাগতে চেষ্টা করছিলাম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



