somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জালালের গল্প ও আমাদের ধর্মীয় অজ্ঞতা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজ্ঞতা দুটি ভিন্ন বিষয়। কুসংস্কার হল কোন বিষয়ে যুক্তিহীন বিশ্বাস। আর অজ্ঞতা হল কোন বিষয়ে জ্ঞানহীনতা।
আমাদের সমাজে যে সব বিষয় ধর্মীয় কুসংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার প্রায় সবগুলোই ধর্মীয় অজ্ঞতা। এখন জালালের গল্পের বিষয়ে আসি। বিভিন্ন সৃষ্টিকোণ থেকে সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন হতে পারত সমাজে নারীদের অবমূল্যায় বা শিশু নির্যাতন বা ধরে রেখে ধর্ষন বা সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, গ্রাম্য রাজনীতি ইত্যাদি। তবে আমার আলোচনার বিষয় হল ধর্মীয় দিক।

প্রথম অংশ
জালালের গল্পের প্রথম অংশে দেখানো হয়েছে একটি শিশু। যাকে ড্যাগে নদীতে পাওয়া গেছে। তারপর থেকে গ্রামে বেশি বেশি মাছ ধরা পড়ছে। সবার ধারণা হল শিশু বা জালালের জন্য এসব হচ্ছে। পর থেকে সবাই নিজের কল্যাণের জন্য জালালের পা ধোয়া পানি নিতে থাকল। যে জালালকে বাড়িতে নিয়ে গেল সে বলতে থকল ছেলেটি ফেরেস্তা বা গায়েব জানে। পরে কলেরা হচ্ছে এ অভিযোগে এবং গ্রাম্য রাজনীতির কারনে তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে এসবের কোন ভিত্তি নেই। এগুলো ধর্মের যুক্তিহীন বিশ্বাস বা কুসংস্কার নয়। বরং ধর্মীয় অজ্ঞতা কেননা এসব কোন কথা ইসলাম ধর্মে নেই।

সূরা আনআম এর ৫০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “বল! আমি তোমাদের ইহা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও আমি জানি না, এবং তোমাদেরকে ইহাও বলি না যে, আমি ফেরেস্তা, আমার প্রতি যা অহি হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি; বল! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? তোমরা কি অনুধাবন করো না?”

কুরআনে সূরা হুদ এর ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “আমি তোমাদের বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে, আর না ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমি অবগত, এবং আমি ইহাও বলি না যে, আমি ফেরেস্তা। তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয় তাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ তাদের কখনই মঙ্গল করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে, তা আল্লাহ সম্যক অবগত। তাহলে আমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব।”


কোন নবী গায়েব জানত না, তারা ফেরেস্তা ছিল না বা তারা মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণও করতে পারত না। ওই রকম কোন মানুষের পক্ষে এরুপ কাজ সম্ভব নয়।

উপরের আয়াতগুলো থেকে বলা যায়। জালালের গল্প সিনেমায় গ্রামের লোকদের যেসব বিশ্বাস বা কাজ দেখানো হয়েছে। এসব গ্রামের লোকদের ধর্মীয় কুসংস্কার নয় বরং ধর্মীয় অজ্ঞতা। কেননা এরুপ কোন কথা ইসলামে নেই।

দ্বিতীয় অংশ
এখানে জালাল কিশোর। সে যার বাসায় থাকে তার সন্তান দরকার এজন্য সে একজন তান্ত্রিককে ডেকে আনে। যে বাচ্চা দেয়ার জন্য অনেক তন্ত্রমন্ত্র পরে। পাশাপাশি সরলতার সুযোগ নিয়ে মহিলাটিকে ধর্ষনও করে। পরে জালালকে বাচ্চা না হওয়ার জন্য দায়ী করে তাকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এখানে জালালকে নির্যাতনও করা হয়।

আল্লাহ বলছেন, “যমীন ও আসমানের বাদশাহীর অধিকর্তা আল্লাহ তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন,আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন,যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছু জানেন এবং সবকিছু করতে সক্ষম।” [সুরা শুরা:৪৯-৫০]


শেষ অংশ
এখানে জালাল যুবক। সে যে লোকের অশ্রয়ে থাকে সে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে পরে তার বাচ্চা হয় এবং সে মারা যায়। বাচ্চাটিকে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তাকে উঠাতে গিয়ে জালালের সলিল সমাধি হয়। ধর্ষণ বা শিশুকে ভাসিয়ে দেয়া ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।

বলা হচ্ছে, ‘‘আল-কুরআন, ৭:৩৩’’ আল্লাহ সকল ধরনের অশ্লীলতা পরিহারের নির্দেশ প্রদান করে বলেন, “আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচারণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন- যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।’’


আরো বলা হচ্ছে, “আর সংরক্ষিত মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা এমন জাতিদের মধ্য থেকে হোক, যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না। আর যে ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে অস্বীকার করবে, তার জীবনের সকল সৎ কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এবং আখেরাতে সে হবে নিঃস্ব ও দেউলিয়া।” সূরা-মায়িদা, আয়াত- ৫।

মানুষ ধর্মীয় অজ্ঞতা থেকে নানা অন্যায় করে থাকে। তবে ধর্মীয় জ্ঞান থাকা লোকও করে। কিন্ত বেশি ভাগ সময় ধর্মীয় অজ্ঞতা থেকেই হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×