
ধর্ষকেরা কি সব প্রতিযোগিতায় নেমেছে? সংবাদপত্রের পাতা খুললে মনে হয় যেন এরা সবাই বিশ্বকাপ খেলার মত মেতে উঠেছে। দেশে একটা হুজুগে অপরাধ কমে তো আরেকটি মাথা চারা দিয়ে ওঠে। কখনও ছেলে-ধরা কখনও গুম কখনও এসিড নিক্ষেপ—আর এখন চলছে ধর্ষণের প্রতিযোগিতা! এগুলোকে সাময়িক উত্তেজনা থেকে দুর্ঘটনা বলার উপায় নেই। কেননা সাম্প্রতিককালে দলগত ধর্ষণ ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। এসব একেবারেই পরিকল্পনা করে করা এবং তা আর শুধু ধর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। তারা যৌন নির্যাতন করে ক্ষান্ত দিচ্ছে না, শারীরিকভাবেও নির্যাতন করছে। এবং তা প্রায়ই হত্যা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে।
ইদানীং আবার নতুন এক রাস্তা বের করেছে জানোয়ারগুলো— অপকর্ম ঘটিয়ে তার ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিচ্ছে। নারীকে কত রকমভাবে হেনস্থা করা যায় তার কিছু বাকি রাখছে না। নির্যাতিতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হতে বাধ্য করা হয়। রংপুরে এক গৃহবধূকে (১৮) ধর্ষণের পর তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই গৃহবধূ বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রতিবেশী বন্দে আলী মিয়ার ছেলে হাসান আলী (২২) ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী।
এদিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় তিনি ওই রাতেই ধর্ষক হাসান আলীর বাড়িতে যান। এসময় ধর্ষক হাসান ও তার স্বজনরা মিলে তার মাথার চুল কেটে দিয়ে মারধর করেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় রোববার তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রিয় পাঠক আরেকবার পড়ুন! হয়ত নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না, কিন্তু এটিই সত্য! নির্যাতিতা মেয়েটির পাশে যে লোকটিকে তখন সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন যার বুকে সে শেষ আশ্রয় খুঁজবে সেই পতি-দেবতাটি তাকে তখন মারধোর করে তাড়িয়ে দেয়! আমরা একবার নিজেকে সেই মেয়েটির আসনে বসিয়ে যদি ভাবতে পারতাম, তাহলে পৃথিবীটা অন্য রকম হতে পারত। যার নিজের কোনও দোষ নেই অন্যের লালসায় শিকার হবার কারণে তাকে আর কত কাল কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হবে! স্বামীটিকে আর কী দোষ দেব, আমাদের সমাজটাই তো এমন! যে সব হারায় তার পাশে না থেকে আমরা তামাশা দেখি! ধর্ষক বুক ফুলিয়ে বীর-দর্পে হাঁটে, আমরা নির্যাতিতার চরিত্র বিশ্লেষণে উঠেপড়ে লাগি!
আমাদের কথা হল যে সব জঘন্য অপরাধী হাতে-নাতে ধৃত বা স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের বিচার-বিশ্লেষণ করে সরকারি অর্থের অপচয় কেন? তাৎক্ষণিক চূড়ান্ত শাস্তি দিয়ে দিলে এমন ধরণের অপরাধ সমাজ থেকে কমে যেত। আমাদের ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে মনে হয় আদালতে বিচার কার্যক্রম চলতে পারে তাদের, যেন নির্দোষ ব্যক্তি শাস্তি না পায় অর্থাৎ যদি কোনও রকম দ্বিধা থাকে যে সে-ই অপরাধী কি না। কিন্তু যাদের অপরাধ সম্পর্কে একেবারেই নিশ্চিত তাদের পেছনে জনগণের অর্থ ব্যয়ের যুক্তি কী থাকতে পারে মাথায় আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



