somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসার বইয়ে অরুচিকর অনুবাদঃ কোটি টাকা অপচয়! ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নতুন বৎসর আসতে আর মাত্র কয়েক দিন। বিগত কয় বৎসর ধরে ১লা জানুয়ারি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয় হচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু সকল চেষ্টা,পরিকল্পনা,উচ্ছ্বাস ভণ্ডুল হতে চলেছে কিছু দুষ্টচক্রের কারণে। স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা ১ল জানুয়ারিতে হাতে বই পেলেও হাতে পাচ্ছে না মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। কেননা মাদ্রাসার পাঠ্য বইয়ে অশ্লীলতা,রাজনৈতিক নোংরামি,রাজাকারের উত্তরসূরি তৈরির উপকরণ ঠেসে দেয়া হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই এই বইগুলো বণ্টন করা হলে সমাজে একটা বড় ধরণের প্রতিক্রিয়া তৈরি হত। সব দোষ গিয়ে পড়ত সরকারের ওপর—বলা হত সরকার ইচ্ছা করেই এসব করেছে। মানুষ বুঝতে চাইত না মাদ্রাসার বইগুলো মুনতাসির মামুন বা জাফর ইকবাল লেখেন না। অপপ্রচার করা হত বুদ্ধিজীবী,সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু কথা হল সরকার কেন এতটা নির্লিপ্ত! তারা কি জানে না রাজাকার,হেফাজতিরা প্রতিক্ষণে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। না কি সরকারের ভেতরেই ভূত ঘাপটি মেরে বসে আছে? আর কত দিন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন তারা? কেন মাদ্রাসা বিষয়ে সরকার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয় না—আওয়ামী লীগ সরকারের গায়ে গন্ধ বেশি, অথচ দেখা যাচ্ছে এদের চেয়ে রাজাকার মানসিকতার লোকেরা সব সময় এগিয়ে থাকছে।

দেখা যাক মাদ্রাসার পাঠ্য বইয়ে কী আছে। আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই হিসেবে ছাপা হওয়া মাদ্রাসার দাখিল স্তরের নবম-দশম শ্রেণির আল হাদিস বইয়ের ৫৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘একদা এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি আমার মায়ের কাছে প্রবেশ করতে অনুমতি প্রার্থনা করব? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন লোকটি বলল, আমি তো তার খাদেম। হজরত রসুলুল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে অনুমতি চাও। তুমি তোমার মাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পছন্দ করো?’ এ ধরনের অযৌক্তিক, ইসলাম অবমাননাকর, ব্যঙ্গাত্মক ও রসাত্মক মনগড়া উক্তি করা হয়েছে মাদ্রাসার সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণির চারটি পাঠ্যবইয়ের অন্তত ১০টি জায়গায়। বইগুলো হচ্ছে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির আকায়েদ ওয়াল ফিক্হ, নবম ও দশম শ্রেণির কুরআন মজিদ ও তাজভিদ এবং আল হাদিস। বিনামূল্যের এসব বই আগামী জানুয়ারি (২০১৮ সাল) থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার কথা। তার আগেই মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে ধরা পড়ল এ ধরনের অশ্লীলতা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের পাঠ্যবই নিয়ে সরকার বিব্রত হয়েছিল। এবার ২০১৮ সালের পাঠ্যবই নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে।

এই চার শ্রেণির চার বিষয়ের ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৬ কপি পাঠ্যবই দেশের সব উপজেলায় পাঠানোও হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্টদের নজরে আসায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পাঠ্যবইগুলো দেশের সব জায়গা থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন করে ছাপার কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একবার ছাপাতে সরকারের খরচ হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ৯৪ হাজার ২০২ টাকা। আর দেশের সব জেলা ও উপজেলা থেকে মাদ্রাসার এই চারটি পাঠ্যবই ফেরত আনতে খরচ হচ্ছে আরও ৮০ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৯৪ হাজার ২০২ টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে গচ্চা গেছে। এটি দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা। এখন আবার নতুন করে ছাপাতে আরও প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ থেকে একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির চার পাঠ্যবই সংশোধন করে দিতে হবে। অর্থাৎ এই সকল শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির এক তারিখে বই উৎসবে অংশ নিতে পারছে না।

মাদ্রাসা স্তরের নবম-দশম শ্রেণির আল হাদিস বইয়ের ১৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে, ‘আক্কেলপুর গ্রামে কাজী ও শেখ বংশের লোকদের মধ্যে দীর্ঘ কলহের পর গতকাল মারামারি হলো।’ইচ্ছাকৃত শয়তানি এটা! শেখ সাহেবের পরিবারকে নিয়েই ব্যাঙ্গ করা হয়েছে, বুঝতে অসুবিধা আছে? মাদ্রাসাবোর্ডের লেখকরা ইচ্ছে করে ‘আল হাদিস’ বইয়ে স্পর্শকাতর এই লাইনটি রচনা করেছেন। একইভাবে বইয়ের ৩২৮ নম্বর পৃষ্ঠায়, ‘প্রথমত মদকে একটি নেয়ামত ও আকর্ষণীয় পানীয় হিসেবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।’ মদ যেখানে ইসলামে ‘হারাম’ সেখানে মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে মদের এই গুণগান সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই বই হাতে পেলে সবাই কী বলত? শত ভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়, এটা সমাজে,রাষ্ট্রে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।

দাখিলের নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মজিদ ও তাজভিদ বইয়ের ১৭৮তম পৃষ্ঠায় ২৮তম পাঠ/রুকুতে ‘আলোচ্য আয়াতের বাহ্যিক অর্থদ্বারা বুঝা যায়, যেভাবে ইচ্ছা এবং যে কোনো রাস্তা দিয়ে স্ত্রী সহবাস করা যায়।’ ভেবে দেখুন নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের শেখানো হচ্ছে স্ত্রী সহবাস বিষয়ে এবং...! একই বইয়ের ৪২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় নেতার শর্তাবলিতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘একজন নেতা হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা পুরুষ হওয়া। কোনো মহিলা ইসলামি সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে পারবে না।’ এই লাইনের মাধ্যমে মাদ্রাসা বোর্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকেই অস্বীকার করেছে। হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু ইসলামি দল দেশে নারী নেতৃত্ব চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল। মাদ্রাসা বোর্ড তাদের পাঠ্যবইয়ে এই লাইন রচনার মাধ্যমে সেই বিষয়টিই বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে।

দাখিল স্তরের অষ্টম শ্রেণির আল আকায়েদ ওয়াল ফিক্হ বইয়ের ২৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বময় ক্ষমতা তথা আইন, বিধান, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, শাসন চলবে আল্লাহতায়ালার নামে; অন্য কারো নয়।’ কী বুঝলেন এসব কাদের রাজনীতি শেখানো হচ্ছে? একই বইয়ের ৬৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘আল কুরআন মুসলমানদের সংবিধান’। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং এর একটি সংবিধান রয়েছে। তাহলে দেশের সংবিধানের কি হবে?

দাখিল স্তরের সপ্তম শ্রেণির আল আকায়েদ ওয়াল ফিক্হ বইয়ের ৭৭ নম্বর পৃষ্ঠার নবম লাইনে লেখা হয়েছে ‘হাছিনা বেগম’ এবং ১৪ ও ১৫তম লাইনে লেখা হয়েছে ‘হাছিনা বেগমের’। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, পাঠ্যবই কিংবা প্রশ্নপত্রে স্পর্শকাতর নাম যেখানে এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেখানে মাদ্রাসা বোর্ড পাঠ্যবইয়ে এই স্পর্শকাতর নাম লিখে কি করে? তাদের মতে, মাদ্রাসা বোর্ড ইচ্ছে করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম বিকৃত করে পাঠ্যবইয়ে ছাপানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

যারা নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য, জঙ্গি তৈরির উদ্দেশ্যে দেশের কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করল, তারা কি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? দেশের জনগণের টাকায় খেয়াল-খুশি মত মতবাদ প্রচারের অধিকার তাদের কে দিয়েছে? এই অপকর্মের হোতাদের ধরে শাস্তি দেয়া হোক—যত টাকার অপচয় তারা করেছে পেটে পাড়া দিয়ে বের করা হোক। আর সরকারের যে সব তেলে তেলে ভুঁড়িওয়ালা কর্তা সাহেবরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল তাদের উচিত শিক্ষা দেয়া হোক, ছাড় পেতে পারে না বর্তমান সরকারও ।

ছবিঃগুগল
সূত্রঃভোরের কাগজ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×