
বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগে গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক চেইন শপ স্বপ্নকে দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আজকে স্বপ্নের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বলা হয় অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়, হয়রানি বন্ধ না করা হয়; তবে তারা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবে।
গুলশানে এই সংবাদ সম্মেলনে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, “বনানী ১১ নম্বর আউটলেটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন। তারা বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগগুলো আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।”
বার বার স্বপ্নে এমন অভিযানকে ‘কোনো একটি চক্রের কাজ’ বলে দাবি করেন তিনি।
আমরা জানি না এ অভিযোগের কতটা ভিত্তি আছে। তবে সত্যিই যদি কোনও চক্রের কাজ হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার ব্যাপার! আবার বার বার অভিযানের পরও তারা কেন অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে না?
সাব্বির বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের চেইন শপে মার্কেট লিডার আমরা। বাজারে ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে স্বপ্নের। আমাদের ক্রেতা দিন দিন বাড়ছে। কোনো একটি চক্র এই ব্যাপারে তৎপর আছে বলে আমাদের ধারণা।”
“এভাবে চলতে থাকলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করা বন্ধ করতে বাধ্য হব,” বলেন তিনি।
কোনও চক্র যদি সক্রিয় থাকে তবে স্বপ্নের উচিত তাদের সনাক্ত করতে এগিয়ে আসা। তা না করে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
তিনি বলেন, “তারা কোকের এক্সপায়ারড ডেট ফেইক বলেছে। এখানে কোকের প্রতিনিধিরা আছেন। তারা বলেছে, যে এগুলো স্ট্যাম্পিং করে বসানো হয়নি। এখন একজন মানুষের হঠাৎ করে মনে হল যে এখানে ফেইক ডেট বাসানো হচ্ছে, তার ভিত্তিতে কোক, পেপসি, স্প্রাইট এই ধরনের পণ্যকে ভিত্তি করে জরিমানা করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত কোকের ডেট ফেইক বলেছে। ভাল কথা—খুব সাধারণভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায়, ফেইক ডেট বসালে বসাবে কোকাকোলা। কেননা সব কোম্পানি তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বাজার থেকে তুলে নিয়ে নতুন পণ্য দেয়। তো স্বপ্নকে কি পাগলা কুকুরে কামড়েছে যে তারা ফেইক ডেট বসিয়ে বিপদ টেনে আনবে? অভিযোগটা বড়ই অদ্ভুত!
“টেটলি কোম্পানির চা পাতা, এসিআই কোম্পানি ডিস্ট্রিবিউটর। এখানে প্যাকেটজাতকরণের ডেট আছে। উনাদের বক্তব্য হচ্ছে, এখানে কেন প্রোডাকশনের ডেট নেই। তাই জরিমানা করলেন। বিপণন কোম্পানি ডেট না দিলে আমরা কীভাবে দেব?”
এটি কিন্তু নতুন কিছু নয়। প্রায়ই দেখা যায় এমন অভিযানের সময় প্যাকেটে কেন উৎপাদন তারিখ নেই, মেয়াদ তারিখ নেই, মূল্য নেই, উপকরণের বর্ণনা নেই, এই সব অভিযোগে দোকানিকে হেনস্থাসহ জরিমানা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে উৎপাদক বা সরবরাহকারীকে না ধরে দোকানদারকে ধরা কতটা যৌক্তিক? বিএসটিআই কী করে? শত শত পণ্য তো আর এতটা যাচাই করে দেখা সম্ভব নয়। আবার অনেক সময় নামকরা প্রতিষ্ঠানের হলে আস্থার সঙ্গে যাচাই-বাছাই না করেই মালামাল ক্রয় করা হয়।
আমদানি করা জুসের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার বিষয়ে সাব্বির বলেন, “ফেরিয়র জুসের অরেঞ্জ ফ্লেভার ও লেমন ফ্লেভার দুটো আলাদা। আপনারা জানেন বিভিন্ন পণ্যের ফ্লেভার আলাদা হওয়ার কারণে কিন্তু দাম ভিন্ন হয়ে যায়। যখন ফ্লেভার চেইঞ্জ হবে তখন পণ্য আলাদা হবে এবং বারকোড আলাদা হবে।
“উনারা চেকও করলেন না যে ফ্লেভার আলাদা, তাই দাম আলাদা। বরং দাম কেন আলাদা তাই জরিমানা করে দিলেন। উনারা আমাদের বক্তব্যও শুনলেন না।”
ভ্রাম্যমাণ আদালত মনে হয় স্বাদান্ধ! তাদের কাছে কমলা আর লেবুর স্বাদ একই লাগে!
গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা বেঁধে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন করেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক।
“বুড়া গরুর মাংস আর কচি গরুর মাংসের দাম এক না। ঢালাওভাবে দাম ঠিক করলে হবে?”
এই কথাটা মানতে পারলাম না! আপনারা বুইড়া গরু কোথায় দেখেন? দেশে এখন গরু দিয়ে কেউ হাল চাষ করে না, গাড়ি টানে না, কলু ঘানি ঘোরায় না। দেশে যে সব গরু পাওয়া যায় সব কচিই হয়, মাংসের জন্যই তা পালন করা হয়ে থাকে। ভারতীয় গরু হলে ভিন্ন কথা, খাঁটি দেশি গরুর মাংসই দুদিন আগে কিনলাম ৪৪০ টাকা করে। ঢাকায় ৪৫০টাকা কেজি ঠিকই আছে, কিন্তু তাতো পাওয়া যায় না। তাহলে ঘটনা কী দাঁড়াল?
পেঁয়াজে ওজনে কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “বনানীতে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখালাম, সেখানে প্যাকেটজাত কোনো পেঁয়াজই ছিল না।”
কেজি হিসেবে বিক্রি করার সময়ও ওজনে কম দেয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল অভিযান চলার সময় কি কোনও ক্রেতা কেজি হিসেবে পেঁয়াজ কিনেছিলেন? যদি না কেনেন তা হলে কিসের ভিত্তিতে বলা হল পেঁয়াজ ওজনে কম দেয়া হয়। পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যগুলো আউটলেটের গুদামে ছিল জানিয়ে সাব্বির বলেন, “আপনারা জানেন, স্বপ্নের আউটলেটগুলো বেশি বড় নয়, ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার বর্গফুট। আমাদের এখানে যেসব পণ্যের ডেট এক্সপায়ার হয়, সেগুলো আমরা আলাদা করে রাখি। লিখে দেই ‘নট ফর সেল’, তার মানে প্রোডাক্টগুলো বিক্রি হবে না। পরে সাপ্লায়ার বা ভেন্ডররা আসলে এগুলো নিয়ে যাবে।
“এটা শুধু স্বপ্নে নয়, বাংলাদেশের সব সুপার স্টোরেই হয়। তো এটাতে দোষের কী হল, আমরা বুঝতে পারলাম না।”
হ্যাঁ এটা সবাই করে। ড্যামেজ পণ্য গোডাউনের এক কোণে স্তূপ করে রাখা হয়। ফখরুদ্দিনের সময় বহু পরিবেশক হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। ঘরে ঢুকে নষ্ট পণ্য দেখলেই সে আসামি! ব্যবসা করতে গেলে পণ্য নষ্ট হবেই, প্রতিদিনই মার্কেট থেকে বাতিল পণ্য ফেরত নিয়ে আসা হয়, পরে সেগুলো একসাথে করে মূল পরিবেশকের কাছে পাঠানো হয় বা তাদের প্রতিনিধিরা এসে সেসব পুরিয়ে ফেলে। এই পদ্ধতিগুলো কি ভ্রাম্যমাণ আদালত জানে না? আর যদি এই পদ্ধতি তাদের অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে কী প্রক্রিয়ার বাতিল মাল দোকানে বা পরিবেশকের গোডাউনে রাখতে হবে তার নির্দশনা দেয়া জরুরি। কিন্তু তা না করে ঢালাওভাবে ঘরে নষ্ট কিছু দেখলেই, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা কোনও ক্রমেই ঠিক নয়।
কয়েক বছর আগে ফরমালিনের অভিযোগে পাইকারি হারে আম, লিচু বুলডোজার দিয়ে ডলা হল। যে সব যন্ত্রপাতি দিয়ে ফরমালিন সনাক্ত করা হত তাতেই গলদ! কোনও পার্সেন্টের ব্যাপার ছিল না। অর্থাৎ ব্যাপক হারে ফরমালিন মেশানো ফল তো ধরতই, শরীরে সহনীয় মাত্রার হলেও ধরত, সহজ কথা ফরমালিনের উপস্থিত থাকলেই ধরত। তখন কেউ কেউ দেখলেন তাদের নিজ হাতে ফলানো ফলেও ফরমালিনের উপস্থিতি! অথচ তারা ফলে ফরমালিন মেশাননি, তবে? এগিয়ে এলেন কৃষিবিজ্ঞানীগণ, জানালেন ফল নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিজে থেকেই সামান্য পরিমাণ ফরমালিন তৈরি করে আর আমরা সেই ফরমালিন ধরতে পেরে নাচা শুরু করলাম।
আমাদের ব্যবসায়ীরা দুনম্বরিতে ওস্তাদ এটা যেমন ঠিক, তেমনি ব্যবসায়ি হলেই সে দুনম্বর তেমন দৃষ্টিতে দেখা অনুচিত। আমরা চাই বাজারে সুষ্ঠু নজরদারি, কিন্তু কেউ অহেতুক নাজেহাল হোক সেটি কাম্য নয়। সমাজে ভীতি ছড়িয়ে সাফল্য আনা যায় না।
বোল্ড অংশ এবং ছবি বিডি নিউজ ২৪ ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



