somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনাভাইরাসঃ চারটি উপায়ে শেষ হতে পারে করোনাযুদ্ধ

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুল লেখকঃ অধ্যাপক দেবী শ্রীধর
চেযারম্যান, গ্লোবাল পাবলিক হেলথ, ইডেনবার্গ ইউনিভার্সিটি।
প্রকাশিতঃদি গার্ডিয়ান
**************************
অনুবাদকঃ মোহাম্মদ সোহাগ
----------------------------------------------------------
পরিবর্তনশীল বিশ্বে চীন দেশে নতুন এক ভাইরাসের উথান ঘটে। দেশটি দ্রুত ভাইরাসটি সনাক্ত করে এবং ভাইরাসটির বিস্তার রোধে অভূতপূর্ব এক অভিযানে নামে। এবং নিশ্চিত করে যে খুবই কম সংখ্যক সংক্রমক ব্যক্তিই দেশটির বাহিরে ভ্রমন করে। তাইওয়ান, হংকং, দক্ষিন কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর দ্রূত আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্তকরণ, রোগীর সংস্পর্শকারী ব্যক্তিদেরকেও চিহ্নিত করণ এবং পৃথকীকরণের ব্যবস্থার মাধ্যম রোগটির বিস্তার রোধ করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ অাপাতত- টেস্ট, সনাক্তকরণ এবং পৃথকীকরণ এই তিনটে পদক্ষেপের মাধ্যমে ভাইরাসটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সার্স-কোভ_২ বা নোভেল করোনাভািরাসটি চীনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ফাঁকি দিযে পুরো বিশ্বে ছড়িযে পড়ে। শুরুদিকে অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানদের খামখেয়ালির কারণে ভাইরাসটি সহজেই কমিনিটি ট্রান্সমিটিং এর মাধ্যমে বহুজনকে সংক্রমিত এবং হসপিটালাইজিং করে। ফলে কিছু রোগী মারাও যায়। ভাইরাসটির ভয়ংকর দিক হচ্ছে এটি রোগীর শরীরে সিম্পট্রম দেখা যাবার পূর্ব থেকে রোগটি ছড়াতে পারে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত রোগীদের মাত্র ৫% কে হসপিটালাইজিং করার প্রয়োজন পড়ে। এবং এদের মধ্যের মাত্র ৩০% রোগীর আইসিইউ দরকার পড়ে। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের মাত্র ০.৬-১.২% রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বে এখন প্রায় ১ মিলিয়ন করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্টেই এই সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষের মত এবং প্রাণহানির সৃংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মত। যা চীনকে ছাড়িয়েছ যেখানে ৮০ হাজার সংক্রমনের সাথে প্রানহানি মাত্র ৩হাজারের মত। মোট অাক্রান্তের অর্ধেকের বেশি ইউরোপের। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশসমূহ এখন একই পথে রয়েছে। সেনেগাল, লাইবেরিয়া ও নাইজেরিয়া ভাইরাস মোকাবেলার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের ঘোষনা দিয়েছে, যদিও দেশসমূহ অস্বাভাবিক ভাবে উপকরণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং টেস্টিং ক্ষমতার অপ্রতুলতায় ভুগছে। অন্যদিকে ব্রাজিল, মেক্সিকো ও ভারতের মত দেশসমূহ সম্ভাব্য ঝুঁকিকে অস্বীকার করছে। আমরা সত্যিকারভাবে এখনও জানি না, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ ভাইরাসটিতে অাক্রান্ত। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এন্টিবডি টেস্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে যা সঠিক ভাবে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তাছাড়া লক্ষন প্রকাশের অাগ থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। তাই কত শতাংশ লোক ভাইরাসটির বাহক ত জানা সত্যই দুষ্কর। শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি কি অনাক্রম্য নাকি প্রচন্ড ছোঁয়াচে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তাহলে এখন সামনে কি হবে? বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপ ও মডেলের উপর ভিত্তি করে ভাইরাসটি মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক কার্যকম সচল করতে সামনে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তার সম্ভাব্য চারটি ধারনা তুলে ধরা হল।
প্রথমত, সকল দেশ একযোগে বর্ডার বন্ধ করে কঠোর ভাবে টেস্টিং করার হার বৃদ্ধি করে ভাইরাসটির বাহকে চিহ্নিত করা ও পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করা। ছোট ছোট বুথের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে সাধারন মানুষ নিজেদেরকে টেস্ট করার জন্য ব্যবস্থা করা। যদিও ভাইরাসটির যেভাবে ছড়াচ্ছে তা এই পদক্ষেপ বাস্তব সম্মত মনে নাও হতে পারে তবে এটি তিনটি কারণে গ্রহন করা যেতে পারে কারণ কোভিড-১৯ এর লক্ষণ অনেক সময় খুবই দুর্বল তাই এটা রোধ করাও দুষ্কর, তাছাড়া একটা কার্যকরি ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য দশকের মত সময় প্রয়োজন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও লকডাউনে কমতে থাকবে ফলে একই ব্যক্তি পুনরায় আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। নিউজিল্যান্ড এরই মধ্যে এই মডেলটি অনুসরন করে ভাইরাসটি প্রতিরোধ চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে ভ্যাকসিন অাবিষ্কার পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যার জন্য দেশসমূহ কে কমপক্ষে ১২-১৮ মাসের মত দীর্ঘ লকডাউনের ব্যবস্থা করা। এবং আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরন যেমন শয্যা, ভেন্টিলেটর, পিপিই এর মজুদ বৃদ্ধি করা। কিন্তু এই ব্যবস্থারও রয়েছে সীমাবদ্ধতা কারন স্বাস্থ্যখাত এরই মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছে, অর্থনীতি ও সামাজিক খাতও লকডাউনে ভেঙ্গে পড়েছে। পুনঃপুন লকডাউনে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাশাপাশি শিশুশ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। বিশেষত দরিদ্র দেশসমূহতে বহুলোক করোনার পাশাপাশি অপুষ্টিতে ভুগে অন্যান্য সাধারন প্রতিরোধ সক্ষম রোগে ও খাদ্যাভাবে মারা যাবে।

তৃতীয়ত হচ্ছে, দক্ষিন কোরিয়ান মডেল গ্রহন করা। যেখানে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি বড় পরিসরে টেস্টিং, সনাক্তকরণ এবং সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক তিনসাপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরন ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এটি যদিও দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ তবুও এটা অনেকাংশে কার্যকরি। এতে সীমিত অাকারে অর্থনৈতিক কার্যক্রমও চালু করা যাবে। যার পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং অ্যাপও তৈরি করা হচ্ছে যার মাধ্যমে করোনা অাক্রান্ত রোগীর ভৌগলিক অবস্থান চিহ্নিত করা হবে পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনকেও মনিটরিং করা যাবে। অর্থাৎ আগামী পৃথিবী হয়ত ফিজিক্যাল ডিসটেন্স নামক একটি অবধারিত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাবে। ফলে ঘর থেকে শুরু করে অফিস পর্যন্ত বিভিন্ন কাঠামোতে একটা বিরাট পরিবর্তন হয়ত আসছে সামনে। যার মানসিক পূর্ব প্রস্তুতিরই অংশ হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি।

চর্তুথত হচ্ছে আমরা কি কোভিড-১৯ কে একটি সাধারণ জ্বরের বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ হিসেবেই দেখবো নাকি মহামারির কারণ হিসেবে দেখবে। যদি সাধারণ জ্বরের কারণ হিসেবে দেখি তবে সাধারন চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকে ভালো হবে যা এখনও হচ্ছে আর যখন অবস্থার অবনতি হয়ে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে পরিণত হয় তখন ভেন্টিলেটর বা আইসিইউ সেবা প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার মত মেডিকেল ট্রিটমেন্ট কে স্বীকৃতি দেয়া। এতে রোগটি ছড়াবে তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর হয়ত আমাদের ইমুনিউটি সিস্টেম রোগটি প্রতিরোধে কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। তবে এর জন্য দরকার দ্রুত রোগ সনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা ও স্বাস্থ্যখাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। উন্নত বিশ্ব তা হয়ত দ্রুত করতে পারবে তবে দরিদ্র দেশের জন্য কারণ চিকিৎসা ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাবে শুধু মাত্র করোনার জন্য।

অাপাতত সহজ কোন সমাধান নেই। কয়েক মাসের মধ্যেই সরকার সমূহ একটি উভয় সংকটে পড়তে যাচ্ছে একদিকে স্বাস্থ্যখাত ও সামাজিক দ্বায় অন্যদিকে ভঙ্গুর অর্থনীতি। সামনের বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের অর্ধেক হচ্ছে ভ্যাকসিন অাবিষ্কার করা, চিকিৎসা করা, দ্রুত রোগ সনাক্ত করা অন্যদিকে বাকি অর্ধ হচ্ছে পর্যাপ্ত কিট উৎপাদন, বিতরন, মেডিকেল সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×