রাত ২ টা ২৩ মিনিট।
পড়ার রুমে হাতে গোনা দশ কিংবা বারজন পড়ছে। অনেকে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেও বটে। ঘুমের কাছে যাদের আত্নসমর্পণ, তাদেরই এই দশা।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈশাখী বৃষ্টি। টাপুর টুপুর বৃষ্টি নয়, মুষলধারে। বৃষ্টির ঝাপসা এসে আমাকে অনেকখানি ভিজিয়ে দিয়েছে। আজ পূর্ণিমা রাত। কিন্তু কালো মেঘ এসে তার শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলেছে। আকাশে চাদের কোন চিহ্ন খুজে পাওয়ায় মুশকিল।
ছারপোকার কামড় থেকে বাচার জন্য যারা মসজদিরে বারান্দায় ঘুমিয়েছিল, বৃষ্টির অত্যাচারে কাথা-বালিশ নিয়ে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে হয়েছে। রুমে ফিরে দেখতে হবে, আমার বিছানার নিচে এক হাটু বৃষ্টির পানি জমেছে। এক হাটু হয়তবা হবে না, তবে কমও নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে জুতা রোদে শুকাও, পানি ছেকে ফেল, রুম পরিস্কার কর, মামাকে ডাক ইত্যাদি ইত্যাদি। ঝামেলার যেন শেষ নেয়। প্রথমতো ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো কার্পেটে মোড়ানো। সুখ যেন উপচে পড়ছে।কিন্তু এই এক মাসে যা দেখলাম, তাতে তো রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম। তথাকথিত ছাত্র রাজনীতিবিদদের অত্যাচারের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমি থাকি গণরুমে। এক রুমে আঠারজন, অবশ্য আমিসহ। এদেশের কোন যৌথ পরিবারে এত লোক আছে কিনা, আমার জানা নেই।
এটা গেল এক দিক, তারপর রুমে না আছে শৃঙ্খলা। এখানে নিজের বলতে আমার কিছুই নেই। সব কিছু জনগনের সমপত্তি। যার যখন ইচ্ছা অনুমতি ছাড়াই সবকিছু ব্যবহার করতে পারে, এমনকি জামা-কাপড়ও। রুমের সবাই যেন অদ্ভূত এক সম্পর্কের জালে আবদ্ধ।
শুনেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছারপোকার জন্য বিখ্যাত। এখানে এসে রীতিমতো তার প্রমাণও হাতে-নাতে পেয়ে গেলাম। ছারপোকার সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি, এমন কোন একটি রাত কাটিয়েছি কি না আমার মনে পড়ে না ।
শুধু কি ছারপোকা, ঘড়ির কাটা রাত ১২ টা ছুই ছুই করতেই শুরু হয়ে যাই বড় ভাইদের মোবাইলে প্রেয়সীর সাথে গল্প। প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত চলে তাদের ভালোবাসার লেনদেন। কখনও রাগ বা অভিমান,আবার কখনও বা প্রেমের সাগরে হাবুডুবু। ইচ্ছা করলেই কিছু বলা যাই না।
বাইরে এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ল্যামপোষ্টের আলোতে গাছের ভেজা পাতাগুলো চিক চিক করছ। ক্যাম্পাসে আসার পর এই প্রথম এত সুন্দর একটি বৃষ্টি ভেজা রাত দেখলাম। ভেজা রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো পড়ে থাকে। রাস্তার পাশে জমে থাকা পানিতে ক্যাম্পাসটা অসম্ভব সুন্দর দেখায়।
রাত গভীর হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর হয়ত সূর্যের ঘুম ভাঙবে। একটি বৃষ্টি ভেজা রাতের নির্মম পরিসমাপ্তি হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হবে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গন। বাড়বে মানুষের কর্মব্যস্ততা। এগিয়ে যাবে জীবন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



