উপরের গল্পটির যদি একটি নির্মম পরিসমাপ্তি দেখতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে ইরানি পরিচালক আসগার ফারহাদি’র সর্বশেষ চলচ্চিত্র “Nader and Simin, A Separation” । ইরানি পরিচালক বলতে এতদিন শুধু মাজিদ মাজিদি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহি, মহসেন মকমলবাফ ইত্যাদি কয়েকজনকেই বুঝতাম। কিন্তু এই ছবিটি দেখার পরে সেরা পরিচালকদের তালিকায় আর একজন কে স্থান দিতে হল। গল্প নির্বাচন আর মেকিং, কোনটিতেই আসগার ফারহাদি অন্যদের চেয়ে কম নন।
সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে তেহরানে বসবাসরত একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে নিয়ে। Nader(Peyman Moaadi ) এবং Simin(Leila Hatami ) এর ১৪ বছরের সংসার। এগার বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে Termeh। Nader এবং Simin এর সংসার প্রায় ভাংগনের মুখোমুখি। কেননা Simin তার স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে ইউরোপে চলে যেতে চায়, একমাত্র মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু Nader এর বৃদ্ধ বাবা Alzheimer নামে এক কঠিন রোগে আক্রান্ত। সে কিছুতেই দেশ ছাড়তে রাজি নয়। বাধ্য হয়ে Simin পারিবারিক আদালতে ডিভোর্স এর জন্য গেল। কিন্তু উপযুক্ত কারণ না পেয়ে আদালত তা বাতিল করে। তারপর Simin সংসার ফেলে চলে গেল তার মায়ের কাছে।
Nader তার বাবাকে দেখাশোনার জন্য Razieh নামে এক অন্তসত্ত্বা নারীকে পরিচারিকা হিসেবে রাখল। তারপর ঘটনা মোড় নিল আর এক দিকে। মিথ্যা অর্থ চুরির দায়ে Razieh কে অপমান করে তাড়িয়ে দিল Nader। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সিড়িতে পরে পেটের বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেল Razieh’র। আদালতে মামলা করল Razieh। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশ্চিত এক থেকে তিন বছরের কারাদন্ড। বাবাকে বাচাতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল Termeh। যাই হোক এক পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে মামলা থেকে মুক্তি পেল Nader।
গত মার্চ মাসে মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্রটি রীতিমত ঝড় তুলেছে। বার্লিন ইন্ট্যা. ফিল্ম ফেস্টে এটা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার হাতিয়ে নিয়েছে। ডারবান, সিডনী, ইয়েরেভেন, মেলবোর্ন ফিল্ম ফেস্টটিভাল সহ প্রায় ২১ টি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টে এটি পুরস্কার জিতেছে। শুধু তাই নয়, IMDB’র টপ ২০০ চলচ্চিত্রে নিজেকে স্থান করে নিয়েছে। তাছাড়া আগামী বছর অস্কার এর জন্য এটি ইরানের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটিও ইতোমধ্যে পেয়ে গেছে।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় ও সিনেমাটোগ্রাফি এক কথায় অসাধারণ। চলচ্চিত্রটির অধিকাংশই Handheld শট। এডিটিং কত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বোঝার উপায় নেই। এটি সিনেমাকে এক অদ্ভূত গতি এনে দিয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টার সিনেমাটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখের পলক পরবে না।
তবে শেষ কথা, সিনামাটি যেমনি হোক, শেষ দৃশ্যে আপনার চোখের দু’ফোটা পানি পড়তে বাধ্য। কেন বলছি? তা আজ আর বলব না। নিজে দেখে নিবেন।
আমার স্মৃতিতে এখনো, নিষ্পাপ মেয়েটির চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুগুলো ভাসছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



