somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

A Separation: ভালোবাসা আর ত্যাগের দ্বান্দিক যুদ্ধ

০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কল্পনা করুন, আপনি একজন বিবাহিত পুরুষ। দীর্ঘ ১৪ বছরের সংসার আপনার। সংসারে রয়েছে আপনার স্ত্রী, পবিত্র ও নিষ্পাপ একটি কন্যা আর দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত আপনার বৃদ্ধ বাবা। অর্থের প্রাচুর্য না থাকলেও, সংসারে প্রেম ভালোবাসার কমতি নেই। কিন্তু আপনার স্ত্রী এই সংসারে থাকতে রাজি নই। একমাত্র মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের চিন্তায় বিভর আপনার স্ত্রী চায়, স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমাতে। আপনার স্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল। কিন্তু আপনি বৃদ্ধ বাবাকে রেখে এক মুহূর্তের জন্যও বিদেশে যেতে প্রস্তুত নন। ফলে আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটি আপনাকে ডিভোর্স দেবার সিদ্ধান্ত নিল। একবার ভেবে বলুনতো, কি করবেন আপনি? একদিকে আপনা্র, যার সাথে জীবনের একান্ত মুহূর্তগুলো কাটিয়াছেন, সেই প্রিয়তমা স্ত্রী আর একমাত্র মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যত অন্যদিকে আপনার বৃদ্ধ বাবা। কোনটিকে বেছে নিবেন আপনি? বৃদ্ধ বাবাকে নাকি স্ত্রী-সন্তানকে? উত্তর যাই হোক, সন্দেহ নেই, এটি যে কোন মানুষের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা।
উপরের গল্পটির যদি একটি নির্মম পরিসমাপ্তি দেখতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে ইরানি পরিচালক আসগার ফারহাদি’র সর্বশেষ চলচ্চিত্র “Nader and Simin, A Separation” । ইরানি পরিচালক বলতে এতদিন শুধু মাজিদ মাজিদি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহি, মহসেন মকমলবাফ ইত্যাদি কয়েকজনকেই বুঝতাম। কিন্তু এই ছবিটি দেখার পরে সেরা পরিচালকদের তালিকায় আর একজন কে স্থান দিতে হল। গল্প নির্বাচন আর মেকিং, কোনটিতেই আসগার ফারহাদি অন্যদের চেয়ে কম নন।
সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে তেহরানে বসবাসরত একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে নিয়ে। Nader(Peyman Moaadi ) এবং Simin(Leila Hatami ) এর ১৪ বছরের সংসার। এগার বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে Termeh। Nader এবং Simin এর সংসার প্রায় ভাংগনের মুখোমুখি। কেননা Simin তার স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে ইউরোপে চলে যেতে চায়, একমাত্র মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু Nader এর বৃদ্ধ বাবা Alzheimer নামে এক কঠিন রোগে আক্রান্ত। সে কিছুতেই দেশ ছাড়তে রাজি নয়। বাধ্য হয়ে Simin পারিবারিক আদালতে ডিভোর্স এর জন্য গেল। কিন্তু উপযুক্ত কারণ না পেয়ে আদালত তা বাতিল করে। তারপর Simin সংসার ফেলে চলে গেল তার মায়ের কাছে।
Nader তার বাবাকে দেখাশোনার জন্য Razieh নামে এক অন্তসত্ত্বা নারীকে পরিচারিকা হিসেবে রাখল। তারপর ঘটনা মোড় নিল আর এক দিকে। মিথ্যা অর্থ চুরির দায়ে Razieh কে অপমান করে তাড়িয়ে দিল Nader। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সিড়িতে পরে পেটের বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেল Razieh’র। আদালতে মামলা করল Razieh। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশ্চিত এক থেকে তিন বছরের কারাদন্ড। বাবাকে বাচাতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল Termeh। যাই হোক এক পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে মামলা থেকে মুক্তি পেল Nader।
গত মার্চ মাসে মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্রটি রীতিমত ঝড় তুলেছে। বার্লিন ইন্ট্যা. ফিল্ম ফেস্টে এটা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার হাতিয়ে নিয়েছে। ডারবান, সিডনী, ইয়েরেভেন, মেলবোর্ন ফিল্ম ফেস্টটিভাল সহ প্রায় ২১ টি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টে এটি পুরস্কার জিতেছে। শুধু তাই নয়, IMDB’র টপ ২০০ চলচ্চিত্রে নিজেকে স্থান করে নিয়েছে। তাছাড়া আগামী বছর অস্কার এর জন্য এটি ইরানের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটিও ইতোমধ্যে পেয়ে গেছে।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় ও সিনেমাটোগ্রাফি এক কথায় অসাধারণ। চলচ্চিত্রটির অধিকাংশই Handheld শট। এডিটিং কত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বোঝার উপায় নেই। এটি সিনেমাকে এক অদ্ভূত গতি এনে দিয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টার সিনেমাটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখের পলক পরবে না।
পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা যদি দেখতে চান, তবে সিনামাটি দেখুন। সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা যদি দেখতে চান, তবে সিনেমাটি দেখুন। ধর্মের প্রতি ভালোবাসা যদি দেখতে চান, তবে সিনামাটি দেখুন। সততা আর ত্যাগের উদাহরণ যদি দেখতে চান, তবে সিনামাটি দেখুন।
তবে শেষ কথা, সিনামাটি যেমনি হোক, শেষ দৃশ্যে আপনার চোখের দু’ফোটা পানি পড়তে বাধ্য। কেন বলছি? তা আজ আর বলব না। নিজে দেখে নিবেন।
আমার স্মৃতিতে এখনো, নিষ্পাপ মেয়েটির চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুগুলো ভাসছে।
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×