আমি একসময় ফুটবল খেলতাম এ কথা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম! পৃথিবীতে সবচেয়ে ছোট ফুটবল ক্যারিয়ার যদি কারও থেকে থাকে সেটি সম্ভবত আমার। কি অবাক হচ্ছেন? আমার বর্তমান বয়স ২৪+, কিন্তু ফুটবল খেলতে নেমেছি আমি শেষ কবে তা আমার মনেই পড়েনা। সম্ভবত ৩য় শ্রেণীতে থাকতে শেষ ফুটবল খেলেছিলাম। তারমানে ৯ বছর বয়সেই আমার ক্যারিয়ার শেষ... এরপরেও ফুটবল মাঠে আমি নেমেছি তবে খেলতে নয়, সোজা ইংলিশ এ যাকে বলা হয় Referee, সেই হিসেবে। সেদিক থেকে আমি ‘ইউনিক’ কারণ হচ্ছে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আমি 'রেফারি গিরি' করেছি... (যে বয়সে অন্য সবাই মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়)। ওটা অন্য গল্প হয়ত আরেকদিন বলব।
ফুটবল খেলার সময়ের কিছু কথা বলি... একেক দলে খেলতাম ৩ জন করে। মাঠের সাইজটা সহযেই অনুমান করতে পারবেন আশা করি! আমাদের দল গুলোর নাম ছিল বাহারি... ‘ট্রোজান হর্স’, ‘ব্ল্যাক পার্ল’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য ও বয়সে এ নাম গুলো আমাদের মাথায় আসার কথা নয়। তাহলে নাম গুলো আসল কোথা থেকে? হুমম... এবার তাহলে পাপন দা’র কথা বলতে হয়। উনি ছিলেন আমাদের ফুটবল গুরু, আমাদের চেয়ে ঢেড় বড়। যা বলতেন তা ছিল আমাদের কাছে শীরধার্য, ব্যাপক ‘সেবা’র বই পড়তেন। আমার তাকে অগাধ জ্ঞানী লাগত। আমাদের ফুটবল দলের নাম গুলো ছিল ওনার মস্তিষ্কপ্রসূত।
তো উনি আমাদের পাড়ার সমবয়সি ৯ জনকে ৩ দলে ভাগ করে খেলা ছাড়লেন। বললেন, প্রাইজও নাকি দেবেন, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে।
উৎসাহের সাথে খেলতে নেমে গেলাম আমরা। কিন্তু মাত্র ৩ জন থাকাতে খেলাটা ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’র মত হয়ে দাড়াল। সবাই নিজের ইচ্ছামত খেলতে লাগলাম। গোলকিপার কেউ হতেই চায়না, সবাই আমরা স্ট্রাইকার! তাই গোল হতে লাগল হরদম। ৩ জনকে কাটাতে পারলেই গোল। যাই হোক আমি অন্য দুজনের চেয়ে সামান্য লম্বা হওয়াতে নেতামি শুরু করলাম। বললাম, না এভাবে চলতে পারেনা। সোহাগকে জোড় করে বানালাম গোলকিপার (ও ছিল আমাদের দলের সবচেয়ে খাটো...), নিজে হলাম স্ট্রাইকার আর রনিকে দেওয়া হল মিডফিল্ড। ছক কষে খেলা যাকে বলে আরকি... ফল মিলল হাতে হাতে, ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেলাম আমরা। নেতামী করতে যেয়ে বেশ কিছু ‘ফুটবলিয়’ ইংরেজী শিখতে হল আমাকে। বল অন্য পক্ষের পায়ে লেগে মাঠের বাইরে গেলে ‘থ্রো’ করতে হয়, তো রনি প্রায়ই গুলিয়ে ফেলত ‘থ্রো’ জানি কি... হাত দিয়ে করে নাকি পা দিয়ে? ফাউল করলে ’ফ্রি কিক’ করতে গেলেও ও ‘সিউর’ হয়ে নিত আমার কাছ থেকে কোনটা ব্যবহার করবে হাত না পা! এই ছিল আমাদের ইংরেজি আর ফুটবল জ্ঞান!
যাই হোক আমরা ফাইনালে উঠলাম (৩ দলের ভিতরে)। আশ্চর্য কান্ড খেলা দেখতে পাড়ার অনেকেই এল। নিজেদের রিতিমত ‘হিরো হিরো’ মনে হচ্ছিল... টানটান উত্তেজনার ম্যাচ ‘টাইব্রেকার’ পর্যন্ত গড়াল। আমি আর রনি গোল করতে পারলাম... এবার ও দলের সবচেয়ে তাগড়া মহিউদ্দিন এল ‘শট’ নিতে, আমাদের বিরুদ্ধে। আমাদের ভরসা ছিল গোলকিপার সোহাগের উপর... বললাম কিছু দেখার দরকার নাই শুধু বলটা ঠেকা, যেভাবেই হোক। এটি ঠেকাতে পারলেই আমরা জিতব। ভয়ংকর গতিতে মহিউদ্দিন ছুটে এল বলে শট নিতে, আমি আধ বোজা চোখে দেখলাম সোহাগ দুইহাত আর মুখ দিয়ে বলটা ঠেকিয়ে দিয়েছে... বিজয়োল্লাশে ফেটে পড়লাম আমরা... কিন্তু এ কি আমরা বাকিরা আনন্দে শূন্যে ভাসছি আর সোহাগ মাটিতে গড়াচ্ছে কেন? দৌড়ে ছুটে গেলাম তার কাছে... বেচারা বল ঠেকাতে পেরেছিল ঠিকই তবে বেশ জোড়ে তার নাকেও আঘাত করেছিল সেটি... ও অজ্ঞান হয়নি ঠিক তবে শ্বাস নিতে বেশ কিছুক্ষন বেগ পেতে হয়েছিল। যাই হোক ৬ টাকা দামের (ও বয়সের জন্য মহা মূল্যবান) পিতলের মেডেল পেলাম আমরা। তাতেই খুশি আমরা।
ফুটবল ক্যারিয়ারটা বোধহয় আরও এগোত আমার কিন্তু সোহাগের ওই ব্যাপারটা বাবা আর মা’কে যথেষ্ঠ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল (সব বাবা, মা’ই এত্ত অল্পতে কেন যে ভয় পায়?)... আমার ফুটবল খেলার উপর কড়া ভাবে নিশেধাজ্ঞা জাড়ি করলেন তারা... আমিও ভদ্র ছেলে সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম... আহা জাতি বোধহয় একজন অসামান্য ফুটবলার’ই হারাল...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



