স্কুল জীবনে রকিব হাসান’র ‘তিন গোয়েন্দা’ ছিল আমাদের বন্ধু মহলের হার্টথ্রব। কে কার আগে নতুন বই কিনব তার একটা নীরব প্রতিযোগিতা কাজ করত আমাদের মধ্যে। তো বই পড়তে পড়তে আমাদের হঠাত মনে হল, কিশোর, রবিন, মুসা যদি গোয়েন্দা হতে পারে তাহলে আমরা কেন হতে পারব না? আমরা কি ওদের চেয়ে কম বুদ্ধিমান? নাকি ওদের চেয়ে ভাত কম খাই? যে ভাবনা সেই কাজ শুরু, গোয়েন্দা’দের রহস্যময় জগতে নাম লিখিয়ে ফেললাম আমরা বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে ছিলাম অঞ্জন, দীপ, রাজু, আমি আরও কয়েকজন...
যাই হোক সমস্যা দেখা গেল ‘রহস্য’ নিয়ে। কোথাও তো কোন রহস্য খুজে পাই না। বুঝতে পারলাম না আমদের মত এত্ত বিখ্যাত গোয়েন্দা’দের কেন কেউ ভাড়া করেনা? তো আমরা সবাই তক্কে তক্কে থাকলাম কোথাও যদি রহস্য পাওয়া যায়। কিন্তু রহস্য তো আর ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ প্রতিযগিতা না যে এসে আমাদের ‘নক’ করে বলবে, “ভাই আমি একটা রহস্য, আমাকে সমাধান করেন!” তবে সৃষ্টিকর্তা মহান উনি ঠিকই আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন।
কিছুদিনের মধ্যেই রহস্য পিপাসু এক বন্ধু এসে খবর দিল ‘করনেশন স্কুল’র (খুলনা’র স্বনামধন্য মেয়েদের স্কুল) সামনে যে পরিত্যক্ত বাড়ীটা আছে সেটার সদর দরজা নাকি আজ ও খোলা দেখে এসেছে। বিশাল একটা খবর আমাদের জন্য, রহস্যর গন্ধ পেলাম নাকে। কারণ হল ঐ বাড়ীর দরজা আমরা সবসময় বন্ধই দেখে এসেছি। তাহলে দরজা খুলল কে? নানা ধরনের ভাবনা মনের ভিতর খেলে গেল আমাদের মুহূর্তের মধ্যে। নিশ্চয় কোন ‘মাফিয়া ডন’ এর পিছনে আছে... কিন্তু আমরা যেখানে গোয়েন্দা’র খাতায় নাম লিখিয়েছি সেখানে অপরাধ করে কার সাধ্য? ক্লাশ ব্রেকের মধ্যেই ঠিক করে ফেললাম, আমরা কয়েকজন যাব সরেজমিন তদন্ত করতে ‘টিফিন’র সময়ে। গোপনীয়তা যেন ফাঁস না হয় এজন্য আমরা ৫ জন যাব ওখানে।
অবশেষে এল সেই বহু আকাঙ্খিত ‘টিফিন পিরিয়ড’। আমরা খুব তাড়াতাড়ি পৌছে গেলাম সেই ভাঙ্গা বাড়ীর সামনে। আসলেই গেট খোলা। কেমন প্রাচীন গন্ধ বাড়ীটাতে। আমরা গোয়েন্দা তারপরেও কেন জানি বুক কাপতে লাগল দিনের আলোতেও। ভিতরে ঢুকলাম কাঁপা কাঁপা পায়ে। শ্যাওলার আস্তরন পড়া একটা বাড়ী। ভিতর থেকে খুটখাট শব্দ আসছে। তবে কি কোন ‘চোরাকারবারী’ এখানে আস্তানা গেড়েছে? আচ্ছা ওদের কাছে যদি অস্ত্র থাকে? ভয়ে পেট গুলিয়ে এল। কিন্তু মুখে কেউ কিছু স্বীকার করলাম না। হঠাৎ অঞ্জন বেরসিকের মত বলল, “আমার বাসায় যেতে হবে, ভাত খাবার টাইম এখন।” বলেই ব্যাটা সুরুৎ করে বেড়িয়ে গেল। আমরাও পালাব পালাব করছি যখন ঠিক তখনি এক বুড়ো লোক পিছন থেকে ডেকে বলল, “বাবারা একটু ভিতরে আসত আমার খাটটা একটু ধইরা বাইরে আইনা দাও।” মাথায় বাজ পরলেও এমন অবাক হতাম না আরকি। কই আমরা ‘মাফিয়া ডন’ খুজে বের করতে আসলাম আর এসে পেলাম খাট সরানোর কাজ!!!! উনি ছিলেন ও বাড়ীর কেয়ারটেকার।
ঐ বাড়ীর বাইরে আসা মাত্র পড়লাম এক বড় ভাইয়ের হাতে। তিনি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বললেন, “কি ব্যপার সৌরভ মেয়েদের ছুটির টাইমে স্কুলের সামনে ঘুরঘুর করতেছ যে, ঘটনা কি?” এমনিতেই একটু আগের ঘটনায় আমি ‘বজ্রাহত’ তারপরে এই ব্যাটার কথা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতই লাগল।
এই দুঃখজনক ঘটনার পর আর গোয়েন্দাগিরী করা হয়নি আমাদের।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



